#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ৩৮
সেদিনের পর থেকে সজীব বাড়িতে কথা বলার সেই আগ্রহ আর প্রকাশ করে না। বাড়ি থেকে কেউ কল দিলে রিসিভ করে সামান্য কিছু ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে ব্যস্ততা বলে কেটে দেয়। সজীব মা-বাবা বুঝতে পারে যে সজীব রাগ বা অভিমান করে আছে কিন্তু তবুও কিছু বলে না। কারণ তাদের ধারণা আস্তে আস্তে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু তারা একটা কথা কখনো ভাবে না যে সজীব পাঁচ বছর অপেক্ষা করে বৃষ্টিকে বের করেছে। সুতরাং সে কীভাবে এতটা তাড়াতাড়ি মনের ভিতর থেকে তাকে বের করবে?
পনেরতম রমজানের দিনে মিতু হঠাৎ করে সজীব কে দুপুরে নামাজের সময় নিজের কাছে ডাকলো। সে নামাজ পড়ে এসেছে তবে সজীব এর আসতে একটু দেরি হয়ে গেল তবুও এসেছে।
” সজীব বললো, কি খবর তোমার? ডাকছিল? ”
” হ্যাঁ, কেমন আছো? ”
” এইতো চলে মোটামুটি, তোমার কি খবর?”
” একটুও চলে না। ”
” কেন? ”
” তোমার সাথে বৃষ্টি আপুর সমস্যা সমাধান হয়েছে নাকি এখনো চলছে? ”
” সমস্যার কিছু নেই তবে আমাদের দুজনের হয়তো আর একসাথে থাকা হবে না। একটার পর একটা বিপদ মোকাবেলা করতে করতে ক্লান্ত লাগে। ”
” রোজা রেখেছ সবগুলো? ”
” হ্যাঁ তুমি? ”
” তেরোটা রেখেছিলাম কিন্তু গতকাল আর আজকে রাখিনি। ”
” কেন? ”
” ছুটিতে আছি, মাথা মোটা এটা বলা লাগে? ”
” ওহহ আচ্ছা। ”
” একদিন আমার বাসায় ইফতার করতে হবে এখন কবে যাবে বলো? ”
” তোমার ছুটি শেষ হোক তারপর একদিন দাওয়াত দিও তখন গিয়ে খেয়ে আসবো। ”
” সত্যি তো? ”
” কখনো মিথ্যা বলেছি কি? ”
” মেলা মেলা ধন্যবাদ সাহেব। ”
★★
বৃষ্টির এই চলতি মাসে অনেক টাকার সমস্যা হচ্ছে, গতমাসের বাড়ি ভাড়া এখনো বাকি। সজীব এর খালা আসার সময় বৃষ্টি অফিসের মেয়েদের থেকে চার হাজার টাকা ধার করে খরচ করেছে। বাবার ওষুধ কিনতে হবে আবারও, নিজের ব্যবহার করা কাপড় সবগুলো পুরাতন প্রায়। ছোট বোন মিষ্টি বলেছিল তার জন্য ঈদের নতুন কাপড় দিতেই হবে। মা-বাবাকেও তো কিছু দিতে হবে কিন্তু এতকিছু কীভাবে কি করবে সেটাই বুঝতে পারছে না। এখন সবসময় এ-সব চিন্তা করে প্রহর পেরিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ভাবে এটাই কি জীবন? এতটা সংগ্রাম করে পৃথিবীতে বাঁচতে হয়? গতকাল অফিস থেকে ফেরার পথে আবারও মামুনের সাথে দেখা হয়েছে। মামুন বারবার সুযোগ খুঁজে বৃষ্টির সাথে ফ্রী হয়ে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু বৃষ্টি ভালো মন্দ দুটো কথা বলেই চলে যায়। মামুন পিছনে দাঁড়িয়ে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আরো একবার ব্যর্থ কবার আফসোস করে।
একুশে রমজানের ইফতার শেষে বৃষ্টি নামাজ পড়ে ছাঁদে দাঁড়িয়ে ছিল তখন হঠাৎ করেই সজীবের নাম্বার থেকে কল আসলো। বৃষ্টি প্রথমটা অবাক হয়ে গেল কারণ অনেকদিন সজীব কল দিয়ে বিরক্ত করে না কিন্তু কারণটা অজানা। বারবার বৃষ্টি নিজেই কল দিতে চেয়েছে কিন্তু যেখানে বৃষ্টি নিজের মুখে সজীব কে কল দিতে নিষেধ করেছে সেখানে সে কল দিলে কেমন হয়? তাই দ্বীধা দ্বন্দ্বের নিরসনে আর কল দিয়ে কথা বলা হলো না। রিসিভ করবে কি করবে না সেটা ভাবতে ভাবতে প্রথম কল কেটে গেল। বৃষ্টির মনটা খারাপ হয়ে গেল কারণ এখন যদি সজীব কল না করে তাহলে তাকে ব্যাক করতে হবে। কিন্তু তার কষ্ট করতে হলো না, সজীব দ্বিতীয় বার কল দিল আর বৃষ্টি সাথে সাথে রিসিভ করলো।
” হ্যালো । ”
” কেমন আছো বৃষ্টি? ”
” এই তো চলছে, তুমি কেমন আছো? ”
” যতটা কষ্টে থাকলে তোমরা সবাই খুশি হবে আমি তারচেয়েও বেশি কষ্টে আছি। ”
” মানে কি? তোমার কষ্ট চাই মানে? ”
” কিছু না বৃষ্টি, যারা আমার একান্ত আপনজন তারা সবাই আমার কষ্টের আশা করে। ভালবেসে আমার নিজের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করে না কেউ, তাই বললাম। ”
” তোমার কি মনে হয় যে আমি খুব সুখে আছি? ”
” মনে করার কিছু নেই, তোমার রাগ, অভিমান, জেদ সবকিছুই অনেক বেশি মাঝে মাঝে তোমার অবহেলা মনের মধ্যে এত বড় বড় গর্ত করে যে তার সামনে দাঁড়াতে নিজেরই ভয় লাগে। মাঝে মাঝে হঠাৎ করে গভীর নিস্তব্ধ রাতে ঘুম ভেঙে যায়। বুকের মধ্যে চিন করে ব্যথা অনুভব করি, মাথার কাছে বৈদ্যুতিক পাখা খটাখট শব্দ করে। তখন সেই ছাড়া ছাড়া অর্থহীন মায়াবী ভাবের স্বপ্ন দেখতে দেখতে হঠাৎ আচমকা শক্তে জেগে উঠি। বহুদিনের সেই পরিচিত বিছানায় শুয়ে আছি, এ কথা বিশ্বাস করতে পারি না কেন। গলা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে প্রচুর পরিমাণে তৃষ্ণা বোধ হয়। খাটের নিচে প্লাস্টিকের বোতল ভর্তি পানি, হাত বাড়িয়ে টেনে নিয়ে ইচ্ছে মতো পান করা যায় অথচ ব্যর্থ মনে ইচ্ছে হয় না! ”
” কি করো এখন? ”
” সুয়ে আছি তুমি কি করো? ”
” আমি ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছি, এ সময় সুয়ে আছো কেন? শরীর খারাপ নাকি? ”
” এখনো সঠিক জানিনা তবে পরশু সন্ধ্যা বেলা চকবাজার মেডিকেলে গেছিলাম একটা ডাক্তার দেখানোর জন্য, মাঝে মাঝে মাথা প্রচুর ব্যথা করে। অজ্ঞান হয়ে যাবার উপক্রম হয়ে যায় তাই ডাক্তারের কাছে যাওয়া। ”
” ডাক্তার কি বললো? ”
” অনেক গুলো পরীক্ষা করলো, সবগুলো রিপোর্ট দিতে পারে নাই। দুটো টেস্ট নাকি ঢাকা থেকে করে আনতে হবে তাই সপ্তাহ খানিক সময় লাগবে। ”
” কতদিন থেকে এমন সমস্যা? ”
” জেল থেকে বের হবার পর থেকেই। দোয়া করো যেন তাড়াতাড়ি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে পারি তাহলে যাদেরকে বিরক্ত করি তারা সবাই খুশি হবে। আর সকলের খুশিতে আমি নিজেও খুশি হতে পারবো। মা-বাবার কাছে কল দিলে তারা অভিযোগ করে যে তাদের এত বছরের সন্তান স্নেহের ভালবাসা আমি নাকি একটা মেয়ের জন্য ভুলে গেছি। আর যাকে নিয়ে এত অভিযোগ সে কিন্তু আমার দিকে ফিরেও তাকায় না কতটা হাস্যকর। ”
” তুমি মরার কথা বলার জন্য কল করেছো? যাতে করে আমার খারাপ মনটা আরো বেশি খারাপ করে দেওয়া যায়? তুমি ভাবছো তোমার মৃত্যুর কথা শুনে আমি বলবো, সজীব তুমি মরলে আমিও মরে যাবো, তাই না? ”
” হাহাহা হাহাহা হাহাহা! ”
” হাসছো কেন? ”
” একটা চিরন্তন সত্য কথা হচ্ছে কি জানো বৃষ্টি? এই পৃথিবীতে প্রেমিক প্রেমিকা একটু হলেই বলে আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। কিন্তু তাদের সেই কথা তারা রাখতে পারে না কারণ দুজনেই আলাদা করে আলাদা হয়ে অন্য মানুষের সাথে বেঁচে থাকে। কিন্তু মাঝখান থেকে তাদের দুজনের দুচোখ ভর্তি স্বপ্ন গুলো মারা যায়। একসাথে কথা বলতে বলতে তারা হাজার রকমের স্বপ্ন দেখে আর তাদের বিচ্ছেদের পরে সেই স্বপ্ন গুলো হারিয়ে যায়। নতুন করে নতুন সঙ্গীর সাথে স্বপ্ন দেখা শুরু করে, আবারও একটা নতুন অধ্যায় শুরু করে। ”
” আমি তেমন কিছু মিন করে বলিনি, তবে এটা সত্য যে আমি তোমাকে ভিষণ মিস করি। ”
” একটা কথা বলার জন্য ফোন করেছি। ”
” কি কথা? ”
” ঈদের পরে আমি এ শহর ছেড়ে চলে যাবো তাই তার আগে তোমার সাথে একবার দেখা করতে চাই, কিছু সময়ের জন্য হলেই চলবে। ”
” ওহহ আচ্ছা, ঠিক আছে কবে দেখা করবে? ”
” তুমি বলো। ”
” বৃষ্টি খানিকক্ষণ ভেবে ভেবে বললো, যেদিন তোমার আমার অফিসে ঈদের বন্ধ দেবে সেদিন দেখা করলে মনে হয় ভালো হবে। কাজের চাপ কম থাকবে তাছাড়া রোজা রেখে অন্যসব দিনে কষ্ট হয়ে যায়। ”
” ঠিক আছে তোমার যেমন ইচ্ছে। ”
” রাতে খাবে কখন? ”
” জানিনা, এখন আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে যাবো, তারপর যখন হঠাৎ করে জেগে উঠবো তখন ইচ্ছে করলে খেতে পারি। আর যদি ইচ্ছে না করে তাহলে আবার একেবারে সেহরির সময় খাবো। ”
” তুমিও গভীর রাতে জোৎস্না দেখো? ”
” অনেক… আকাশ ভেঙ্গে অজস্র স্নান সব অপূর্ব জোৎস্না হয়। যেখানে সুয়ে আছি তার দক্ষিণের ছোট জানালা দিয়ে জোৎস্নার আলো এসে সারা ঘর নরম আলোয় চকচক করে। ভাবি, একা একা বেড়ালে খুব ভালো লাগবে কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় পাশে কেউ একজনের খুব দরকার। মনটা বিষন্ন ভগ্নহৃদয় করে নিজেকে বইয়ের শব্দের মতো গুটিয়ে ফেলি। যেন বাইরের পূর্নিমার আলোয় চকচক করা উথালপাথাল চাঁদের সঙ্গে আমার ভালবাসার দৃশ্য নেই।”
” ভিতর থেকে বৃষ্টির বাবা বৃষ্টিকে ডাক দিল তখন বৃষ্টি সজীব কে বললো, বাবা ডাকছে তাই এখন রাখছি পরে আবারও কথা হবে। ”
” ঠিক আছে ভালো থেকো সবসময়। ”
” চেষ্টা করবো। ”
|
|
বৃষ্টি তার বাবার কাছে গেল, বৃষ্টির মা বাসায় নেই তিনি মিষ্টিকে নিয়ে একটু নিচে গেছে। বৃষ্টি ভাবলো বাবা যেহেতু একা আছে তাই কোনকিছু প্রয়োজন হয়েছে বলে ডাকছে। কিন্তু বৃষ্টির বাবাকে কোনকিছু বলার মতো প্রস্তুতি নিতে দেখা যাচ্ছে না। বৃষ্টি তার বাবার কাছে এসে বললোঃ-
” আমাকে ডাকছিলে বাবা? ”
” হ্যাঁ, আমার পাশে একটু বস তো মা। ”
” বৃষ্টি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বললো, সারাদিন অফিসে বসে থাকতে থাকতে কোমর ব্যথা করে বাবা। তাই বাসায় আসলে আর বসতে ইচ্ছে করে না বরং একটু হাটাহাটি করতে ভালো লাগে। ”
” সজীব এর সাথে তোর কি আর কোন যোগাযোগ আছে? না মানে সে কি আর কল করেছিল? ”
” প্রথম প্রথম তো আমি নিষেধ করেছিলাম বলে আর কল দিত না কিন্তু একটু আগে কল দিছিল খানিকটা কথাও হয়েছে। ”
” ছেলেটা জেলে যাবার পর থেকে শুধু কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছে, আর ওর খালার কোন দোষ নেই। কারণ সে জেনে শুনে আমাদের মতো পরিবারে তাদের একটা মাত্র সন্তান বিয়ে করাবে কেন? যাদের মাত্র একটা ছেলে থাকে তাদের অনেক আশা ভরসা থাকে। ”
” এসব কথা বলতে বা শুনতে ভালো লাগে না বাবা তাই বাদ দাও এসব কথা! ”
” সজীব কি তোকে এখনো বিয়ে করতে চায়? ”
” সে চাইলে তো হবে না বাবা, তার মা-বাবার মনে কষ্ট দিয়ে সে আমাকে বিয়ে করুক সেটা আমার কামনা নয়। আর যতটুকু আশা বা স্বপ্ন ছিল সবই সেদিন ভেঙ্গে গেছে। একটু কষ্ট হচ্ছে কিন্তু রাফসান এর মতো এটাও আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। ”
” এটা কিন্তু তোর মনের কথা না। ”
” বৃষ্টি নিজের চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারছে না, তার বাবার সামনে চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেল। বৃষ্টি লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো, সব কথা মন থেকেই বলা যায় বাবা। ”
” বৃষ্টির বাবা দেখলেন যে মেয়ে কেঁদে ফেলছে আর তার সামনে পানি লুকাতে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তাই তিনি বললেন, ঠিক আছে তুই তাহলে ছাঁদে গিয়ে আরো কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি কর। তারপর অজু করে এশার নামাজ ও তারাবী নামাজ পড়ার চেষ্টা কর। ”
বৃষ্টি কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল, বাবা মেয়ের উভয়ই গভীর ভালবাসা উপলব্ধি করতে পারলো। দিন দুনিয়ার মালিক হয়তো আসমানে বসে তাদের এই চোখের পানির সাক্ষী হলো।
★★
আজ ২৮শে রমজান রোজ বৃহস্পতিবার।
বৃষ্টিদের অফিস সহ ইপিজেড এর মধ্যের প্রায় ৯৫%
গার্মেন্টস আজকে বন্ধ দেবে। বাকি গুলো একদিন দুদিন আগে বন্ধ দিয়েছে তবে এরা সবাই আজকে দিচ্ছে কারণ সবার ধারণা এ বছর ত্রিশ রোজা পূর্ণ হবে। তাই সবাই আজকে বা আগামীকাল গ্রামের বাড়ি রওনা দিয়ে চলে যাবে। শনিবার যদি ঈদ না হয় তাহলে সবাই রবিবার ঈদ করবে।
বৃষ্টি মরিয়মের কাছে শুনেছে ঈদের যেদিন ছুটি দেয়া হয় সেদিন সবাই নাকি অনেক সুন্দর করে সাজগোছ করে আসে। কাজের চাপ তেমন থাকে না, সবাই বাড়িতে যাবার আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। সবাই সারাবছর চাকরি করে এই সময় মাত্র সপ্তাহ খানিক এর জন্য প্রিয় মানুষের কাছে ঈদের আনন্দ কাটাতে ছুটে যায়। সজীব এর অফিসও আজকে বন্ধ দেবে আর আজকে তো সজীব এর সাথে দেখা হবে। তাই বৃষ্টি ভাবলো আজকে শাড়ি পরে অফিসে যাবে। শাড়ি পরার বুদ্ধিটা মরিয়মের, কারণ মরিয়মও নাকি শাড়ি পরে আসবে তাই বৃষ্টিকেও শাড়ি পরে অফিসে যেতে বলেছে।
আজকে অফিস চালু হবে সকাল সাতটায়, কারণ বিকেলে ছুটি হবে তিনটায়। ছুটির পরে বাসায় গিয়ে সবাই যেন আজকে রওনা দিতে পারে তাই এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রায় গার্মেন্টসে। বৃষ্টি সরাসরি শাড়ি পরে বাসা থেকে বের হলো না, কারণ সামনে মামুনের সাথে দেখা হতে পারে। আবার শাড়ি পরে অফিসে যেতে লজ্জাও করে তাই একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে তাতে শাড়ি ব্লাউজ নিল। মনে মনে চিন্তা করে যে যখন নামাজ টাইম দেবে অথবা এগারোটার দিকে যদি সামান্য অবসর পাওয়া যায় তাহলে সেই সময় শাড়ি পরে নিবে। আর যদি সময় সুযোগ না পায় তবে আর পারবে না।
অফিসে এসে বৃষ্টি দেখলো প্রথম ঘন্টা দুই কাজ ভালো হয়েছে, তারপর থেকে সবাই আস্তে আস্তে গতি কমিয়ে দিয়েছে। সবাই একটা করে কাজ করে আবার এদিক সেদিক তাকিয়ে গল্প করে। মরিয়ম সকাল বেলাই শাড়ি পরে এসেছে, তাই সে সাড়ে দশটার দিকে বৃষ্টিকে নিয়ে তিন তলায় মেয়েদের নামাজ পড়ার যায়গা গেল। অফিসে যেসকল মেয়েরা যোহর, আসর, মাগরিবের নামাজ পড়ে তারা এখানে এসেই নামাজ পড়ে।
মরিয়ম সেখানে বৃষ্টিকে নিয়ে গিয়ে নিজের হাতে ধরে শাড়ি পরিয়ে দিল। বৃষ্টির কাজ তার সাথে আরেকটা সাপোর্টার আছে তাকে করতে বলে এসেছে। নীল রঙের শাড়ি সজীব খুব পছন্দ করে সেটা বৃষ্টি জানে কিন্তু তার নীল রঙের শাড়ি নেই। তাই মিষ্টি কালার এর শাড়ি নিয়ে এসেছে, শাড়ির সাথে মিলিয়ে চুড়িও এনেছে। প্রায় বিশ মিনিট ধরে চেষ্টা করে বৃষ্টির শাড়ি পরা সমাপ্ত হয়ে গেল।
” মরিয়ম বললো, তোকে দেখে তো আমারই প্রপোজ করতে ইচ্ছে করছে বৃষ্টি, জানিনা এখন তুই লাইনে গেলে কত ছেলে মেশিন বন্ধ করে তাকিয়ে থাকবে। ”
” বৃষ্টি খানিকটা লজ্জা পেয়ে মনে মনে বললো, যার জন্য শাড়ি পরা হয়েছে সন্ধ্যা বেলা তার সাথে যেন দেখা করতে পারি তাহলেই হবে। ”
লাইনে আসার পরে সত্যি সত্যি সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। বৃষ্টির চেহারা এমনিতেই অনেক সুন্দর, তারমধ্যে আবার মিষ্টি কালারের শাড়ি পরে পুরো চোখ আকর্ষণ করে। রসকষহীন কাঠখোট্টা নতুন পিএম স্যার এসে কিছুক্ষণ কথা বলে গেল।
ঈদের বোনাসের টাকা আগেই দেয়া হয়েছে তাই নামাজের পর সবাইকে বেতন দিয়ে আড়াইটা বাজে ছুটি দিয়ে দিল।
বৃষ্টি অফিস থেকে বেরিয়ে সজীব এর নাম্বারে কল দিল, সজীব এর ছুটি হয়নি এখনো তবে আধা ঘণ্টার মধ্যে হয়ে যাবে বলে ধারণা করা যায়। বৃষ্টি অফিস থেকে বেরিয়ে ভাবলো, আজকে তাহলে সজীব এর অফিসের সামনে গেলে কেমন হয়? আবার নিজের ভাবনার জন্য নিজেই লজ্জা পেয়ে বললো ধুর এসব কি ভাবছি?
সুন্দরী মেয়ে হয়ে সাজগোছ করে রাস্তার দাঁড়িয়ে থাকা অস্বস্তিকর কারণ অনেক মানুষ আড়চোখে তাকিয়ে থাকে। তারচেয়ে বরং হাঁটাহাঁটি করে সময় পার করা অনেক ভালো। মরিয়ম তার সাথে আছে কিন্তু তবুও বৃষ্টির যেন অস্বস্তির সীমা নেই। সজীব যখন আসলো তখন পৌনে চারটা বাজে, সজীব আসার পরে মরিয়ম চলে গেল। কারণ তার জন্য শিহাব দাঁড়িয়ে আছে, তারা এখন আগ্রাবাদ যাবে আখতারুজ্জামান শপিং কমপ্লেক্স কিংবা লাকি প্লাজা মার্কেটে।
সজীব প্রথমে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, আজকে হঠাৎ করে অন্য রকম বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে। রূপে গুনে মনোমুগ্ধকর একটা তরুণী তার সামনে লজ্জায় লাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
#চলবে…
#লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)