#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ৪৪ (শেষ)
” বৃষ্টি বললো, মিতু কি বাড়িতে গেছে নাকি চট্টগ্রামে আছে? ”
” চট্টগ্রামে আছে! ”
” আচ্ছা আগে কথা শেষ করো। ”
” সজীব রিসিভ করে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে শুধু বলল, বৃষ্টির সাথে ঘুরতে বের হয়েছি তোমার সাথে পরে কথা হবে। ”
” বৃষ্টি আবার বললো, বিকেলের দিকে মিতুদের বাসায় গেলে কেমন হয়? ”
” সজীব অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো, সত্যি সত্যি কি তুমি তার বাসায় যেতে চাও? ”
” হ্যাঁ চাই, কেন কোন সমস্যা? ”
” নাহহ। ”
” বৃষ্টি সজীব এর ডান হাতটা জড়িয়ে ধরে বললো, তাহলে এমন করছো কেন? তুমি আমি দুজনেই একসাথে যাবো তারপর তার সাথে দেখা করে চলে আসবো। ”
” আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে। ”
★★
সারাদিন ঘোরাঘুরি করে দুজনেই ক্লান্ত, আসরের খানিকটা আগে সজীব আর বৃষ্টি মিতুর সাথে দেখা করতে গেল। মিতু বাসার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল, যেহেতু সজীব আগে একবার এসেছিল তাই বাসা চিনতে অসুবিধা হয়নি।
রুমের মধ্যে গিয়ে সজীব এর খুব কাছ ঘেঁষে বৃষ্টি বসে রইলো। সজীব এর মোবাইল হাতে নিয়ে দুজনে যেসব ছবি সারাদিন ধরে তুলেছে সেগুলো দেখতে লাগলো। একটা হাত সজীব এর ডান উরুর উপরে আরেকটা হাত দিয়ে মোবাইল টিপছে। মিতুর দৃষ্টি সেদিকে একবার পরলো, তারপর সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাশের রুমে চলে গেল।
সকাল বেলা নাস্তা তৈরি করা ছিল সেগুলো গরম করে দেয়া হয়েছে। সারাদিন অনেক কিছু খেয়ে খেয়ে পেট ভরে গেছে তবুও ঈদের দিন তাই হালকা করে কিছু মুখে দিল। মিতু সারাক্ষণ বৃষ্টির দিকে আর সজীব এর দিকে তাকিয়ে রইলো। বৃষ্টি না থাকলে আজ হয়ত সজীব নামের মানুষটাকে নিজের করে নিতে পারতো। কিন্তু ভাগ্যে যখন নেই তখন তার জন্য আফসোস করে কষ্ট বাড়িয়ে লাভ কি?
মাগরিবের আজান এর কিছুক্ষণ পরে তারা বাসা থেকে বের হবার প্রস্তুতি নিল। বৃষ্টি একদম কাহিল অবস্থা হয়ে গেছে, শরীরে সামান্য শক্তি পাচ্ছে না। সজীব তাই আগে বেড়িয়ে গেল, গলির মাথায় গিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে আসবে। বাসার সামনে এসে কল দিলে বৃষ্টি নামবে।
” সজীব বেরিয়ে গেল তখন বৃষ্টি মিতুকে তার কাছে ডেকে যত্ন করে পাশে বসালো। তারপর বললো, মিতু তুমি কি আমার উপর রেগে আছো? ”
” ছি ছি আপু, কি বলেন? আপনার সাথে রাগ করবো কেন? ”
” আমি একটা মেয়ে তাই আরেকটা মেয়ের অনুভূতি সামান্য হলেও বুঝতে পারছি। তোমার চোখে মুখে সজীব এর জন্য ভালবাসা ঝলকে ঝলকে দেখা যাচ্ছে। একটু পর পর সেই ভালবাসা অপূর্ণতার জন্য বিষাদ হয়ে যাচ্ছে। আমরা এখান থেকে চলে গেলে তুমি বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে অনেক কান্না করবে। তাই না? ”
” মিতু চুপচাপ বসে আছে। ”
” বৃষ্টি মিতুর একটা হাত ধরে বললো, সজীব আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে মিশে গেছে। সজীব এর আগে আমি আরেকটা মানুষকে ভালবাসতাম সত্য কিন্তু তাকে ছেড়ে স্বাভাবিক হতে পেরেছি। সজীব কে ছেড়ে দিলে স্বাভাবিক হতে পারবো কিনা জানিনা কারণ ভাঙ্গা মনে আর কত সইবো? ”
” আপু সজীবকে আপনি ছাড়া কেউ সুখী করতে পারবে না, আপনার সামান্য একটা হাসি সজীব এর সারাদিনের কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। আপনার ক্ষুদ্র একটু অবহেলা তার কাছে পৃথিবী অন্ধকারের কারণ। ”
” তোমাকে খুব ভালবাসে এমন কেউ আছে? ”
” আমাদের এই বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় একটা ছেলে আছে তাদের বাসা মাদারীপুর সে আমাকে অনেক পছন্দ করে। ”
” ছেলে কেমন? ”
” কেন আপু? ”
” তাকে নিজের ভবিষ্যত ভালবাসার মানুষ হিসেবে তৈরি করতে পারবে? ”
” বাড়িতে চলে যাবো আপু, মা-বাবা যেখানে বিয়ে দেবে সেখানে বিয়ে করবো। নিজে পছন্দ করে যাকে চাইলাম সে যখন ভাগ্যে নেই তখন আর এ বিষয় নিয়ে কিছু ভাবার নেই। ”
” সেটাও একটা ভালো বিবেচনা। ”
” একটা কথা বলবো আপু? ”
” বলো। ”
” মামুন নামের একজন আপনাদের দুজনের পিছনে ষড়যন্ত্র করছে। হয়তো সে চেষ্টা করছে আপনাদের মাঝে বিশাল একটা দেয়াল সৃষ্টি করতে। ”
” সেটা আমি বুঝতে পারছি আগেই। ”
” সাবধানে থাকবেন সবসময়, যদি পারেন আপনারা তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নেন। ”
” দোয়া করো সেটাই যেন করতে পারি। ”
” আপনাদের জন্য সবসময় দোয়া রইল। ”
” ভালো থেকো সবসময়। ”
★★
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে, বৃষ্টির বাবা খাটের উপর শুয়ে আছেন কিন্তু বৃষ্টি এখনো ফেরেনি তাই একটু চিন্তা করছেন। মিষ্টি তার পাশে বসে আছে, টিভিতে ঈদের বিভিন্ন নতুন অনুষ্ঠান হচ্ছে। বৃষ্টির মা সকালের নাশতা গরম করে মিষ্টি আর স্বামীর দিকে এগিয়ে দিলেন।
” বৃষ্টির বাবা বললো, বৃষ্টি আর সজীব কি ফিরবে না নাকি? একটা বার কলও করলো না। ”
” তুমি এতো চিন্তা করো কেন? হয়তো তাড়াতাড়ি চলে আসবে নাহলে তো কল দিয়ে জানাতো। ”
” তবুও মেয়েটা তো একা একা কখনো এভাবে বাইরে ছিল না তাই না? ”
” সজীব তো সাথে আছে তাহলে চিন্তা কিসের? ”
” আচ্ছা বাদ দাও এসব, মামুন ছেলেটা এসেছিল কেন? ”
” মামুনের মা দুপুরের খাবার খেয়ে নাকি আবারও অসুস্থ হয়ে গেছে। অবস্থা বেশি ভালো না তাই তাকে আবার ঢাকা নিতে হতে পারে। মামুন এসেছিল বৃষ্টির সাথে কথা বলে ক্ষমা চাইতে, তার মা নাকি অনেক অসুস্থ। ”
” বৃষ্টির কাছে ক্ষমা কিসের? ”
” তার ধারণা সে এতদিন বৃষ্টিকে বিরক্ত করেছে তাই বৃষ্টি হয়তো তার প্রতি বিরক্ত। মামুন চায় তার মা সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক, সে আর কাউকে কোনদিন বিরক্ত করবে না। ছেলেটার কথা শুনে মনে হলো সে তার মা’কে অনেক ভালবাসে। ”
” বৃষ্টি সকাল বেলা বলেছিল আজকে নাকি সজীব এর খালার বাসায় যাবে। কি করেছে কে জানে? মেয়েটা এবার যেন আর কষ্ট না পায়। ”
বৃষ্টির বাবা চুপ করে রইলেন।
★★★
বাসায় এসে বৃষ্টি জানলো যে মামুনের মা দুপুরের পর থেকে অসুস্থ তাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে ঢাকা নিতে হবে আর এসব কথা মামুন নিজে বলে গেছে। বৃষ্টি আর সজীব দুজনেই বামুনের মায়ের জন্য আফসোস করতে লাগলো।
সজীব এর পরিবার রাজি হয়েছে এ খবর বৃষ্টি মায়ের মাঝে তেমন আলোড়ন তৈরি করলো না তবে বৃষ্টির বাবা অস্ফুটে বললো, আলহামদুলিল্লাহ।
বৃষ্টি থ্রি-পিস নিয়ে ওয়াশরুমে গেল শাড়ি পরিবর্তন করে আসার জন্য আর সজীব তার শিক্ষকের পাশে বসে আছে। দু একটা কথা বললে তেমন ক্ষতি নেই কিন্তু তবুও কেউ কিছু বলছে না।
মাগরিব পার হয়ে গেছে অনেক আগে। বৃষ্টি নিজের হাতে দুকাপ চা বানিয়ে আনলো তারপর সজীব আর বৃষ্টি চা হাতে ছাঁদে চলে গেল।
” বৃষ্টি বললো, রাতে খাওয়া দাওয়া করে তারপর বাসায় যেও ঠিক আছে? ”
” সারাদিন হাবিজাবি খেয়ে খেয়ে পেট ফুলে যাচ্ছে আজকে আর কিছু খাবো না। ”
” বাসায় তো একাই আছো তাই না? ”
” হুম ”
” আমাকে নিয়ে যাবে? ”
” চলো তাহলে! ”
” ইসস সখ কতো? তোমার বাড়িওয়ালা যদি তখন জিজ্ঞেস করে, কে আমি? তখন? ”
” তাও ঠিক কথা। ”
” চলো না কক্সবাজার যাই? ”
” তারপর? ”
” সেখানে গিয়ে বন্ধের দুতিন দিন ঘুরে আসবো তুমি আর আমি। ”
” এখন ঈদের জন্য সেখানে প্রচুর পর্যটক সেখানে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হবে। এত টাকা হয়তো তোমার আমার কাছে নেই বৃষ্টি। ”
” ঠিক আছে। ”
” আজকে সারাদিন অনেক আনন্দে কাটলো, আমি চাই সারাটাজীবন আমাদের এভাবেই কাটুক। ”
” হুম সত্যি সত্যি এতটা আনন্দ আগে কোনদিন পেয়েছি কিনা জানিনা সজীব। ”
” আগামীকাল কোথাও ঘুরতে যাবে? ”
” তুমি বের করো! ”
” আচ্ছা রাতে ভেবে দেখি! ”
” ঠিক আছে। ”
” এবার তাহলে আসি? ”
” বাসায় গিয়ে রকি আর শফিক ভাইকে কল দিয়ে সবকিছু জানাবা। বলবে যেকোন সময় বিয়ে হয়ে যেতে পারে তাই চট্টগ্রাম আসতে। ”
” আচ্ছা ঠিক আছে। ”
” সাবধানে যেও, বাসায় গিয়ে একটা কল দিও।”
#সমাপ্ত
বিঃদ্রঃ- একটা ভালো গল্প হচ্ছে কবিতার ছন্দের মতো, আপনি যত চাইবেন তত লিখতে পারবেন। তাই একটা ভালো এবং সবার প্রিয় গল্পের কোন শেষ থাকতে নেই। খাবার খেতে গেলে যেমন পেট ভর্তি হয়ে গেলে আর খেতে ইচ্ছে করে না। ঠিক তেমনি যদি গল্পটা মন ভর্তি করে দেয় তাহলে আর পড়তে চাইবেন না। তাই অন্তরে অতৃপ্তি রেখে সমাপ্ত করলাম। সবাই ভালো থাকবেন সবসময়, আর নতুন গল্প পড়ার দাওয়াত রইল।
ভালবাসা অবিরাম।
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)