_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি । #_পর্ব = ১৩

0
282

#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ১৩

– বৃষ্টি বললো , একদম দাঁত বের করে হাসবে না তাহলে তোমাকে খারাপ লাগে ।

– সজীব বললো , আগে তো জানতাম না আচ্ছা ঠিক আছে এখন থেকে আর ওভাবে হাসবো না ঠিক আছে মেডাম ?

– হুম এত রাতে ছাঁদে কি করো ?

– রকি আর আমি বসে আছি নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করা রাতের আকাশ দেখতে তো মোটামুটি ভালোই লাগে আমার কাছে ।

– খেয়েছ রাতে ?

– হ্যাঁ ছোট খালার বাসায় গেছিলাম সেখানে ডিনার করে আসলাম । তুমি কি তোমার চিংড়ি মাছ আর পুঁইশাক রান্না করছো ?

– হুম , আচ্ছা শোন বাবা ঘুম থেকে ওঠার পরে যখন তোমার কথা বললাম তখন বেশ উত্তেজিত হয়ে গেল যা বলে বোঝাতে পারবো না । তোমাকে কালকেই দেখা করতে আসতে হবে কিন্তু নাহলে তো বাবার শান্তি নেই ।

– আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই , শশুর শাশুড়ীর কাছে প্রতিদিন যেতে আপত্তি নেই ।

– নাহহ সেটা সম্ভব না তুমি কাল এসে দেখা করে যাবে তারপর আর কখনো আমাদের এই গলিতে আসবে না ।

– কেন ?

– আমি চাইনা তোমার সাথে আমার খুব বেশি দেখা কিংবা কথা হোক । সন্ধ্যা বেলা বলেছি মনে আছে তোমার ? হয়তো মনের মধ্যে থেকে কখনো সরাতে পারবো না কিন্তু ভালবেসে কোনদিন কাছে টানবো না সেটা চন্দ্র সূর্যের মতো সত্য ।

– তাহলে এই যে কল দিয়ে সুন্দর করে কথা বলা এটা কি দয়া নাকি অনিচ্ছা ?

– বন্ধু ভেবে কথা বলা তবে তুমি যদি না চাও তাহলে কখনো কল দিয়ে বিরক্ত করবো না ।

– আর যদি চাই ?

– বন্ধু ভেবে কথা বলবো ।

– আমি যদি তারচেয়ে বেশী কিছু মনে করি ?

– ভুল করবে সেটা , হঠাৎ করে যখন আমার অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যাবে তখন খুব কষ্ট পেতে হবে তোমাকে ।

– অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে কিন্তু আমাকে করলে সমস্যা কি ?

– সমস্যা নেই কোন কিছু আমি কথার কথা বলছি ।

– কিন্তু আমি জানি সমস্যা আছে ।

– কি জানো তুমি ?

– আমি একটা ধর্ষক , খুনি তাই আমার মতো মানুষ কে দয়া বা অনুশোচনা করা যায় । কিন্তু ভালবেসে জীবন সঙ্গী করে সারাজীবন সমাজের কিছু মানুষ এর নিন্দা শুনে তার পাশে থাকা যায় না ।

– শুধু শুধু ভুল বুঝো কেন ?

– ভুল বুঝিনি বৃষ্টি , আমি তোমার কাছে মোটামুটি প্রিয় একজন মানুষ ঠিকই কিন্তু প্রিয় থেকে প্রিয়জন করবে না সেটা জানি । আমার সাথে জীবন বাঁধলে তুমি হয়তো সুখ পাবে শান্তি পাবে কিন্তু কখনো সম্মান পাবে না । তাই আমার মতো মানুষের সাথে জীবন জড়াবে না বুঝতে পারছি । কথা দিচ্ছি আজকের পর থেকে কখনো ভালবাসার দাবি করবো না । ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না তাই তোমার ভালবাসা এ জীবনে পাওয়া হলো না ।

– ধুর এসব উল্টো পাল্টা ইমোশনাল কথা শুনতে একদম ইচ্ছে করে না । রাখলাম ।

– আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থেকো সবসময় ।

– তুমিও ।

★★
★★

সজীব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আস্তে আস্তে ছাদের কোণে গিয়ে দাড়াল । ব্যাস্ত শহরের মাঝে একটা নিস্তব্ধ শহর এখন দাঁড়িয়ে আছে । কর্ণফুলী বন্দরে হাজার পাওয়ারের বিশাল বিশাল বাতির আলোয় পুরো এলাকা আলোকিত । কিন্তু সবগুলো আবার লালচে-ধূসর রঙের ঘোলাটে বাতি ।

– রকি বললো , সজীব চল রুমের মধ্যে গিয়ে ঘুমিয়ে পরি নাহলে সকালে অফিসের জন্য উঠতে পারি না ।

– সজীব বললো , মনটা খারাপ হয়ে গেল , বৃষ্টি তো এখনো আমাকে মেনে নিতে চায় না । আমার এই অপ্রত্যাশিত কলঙ্ক দূর করে দিয়ে হয়তো আমাকে ভালবাসার চাদরে ঢেকে রাখতে পারবে না । আমি এখন একটা স্বপ্ন হারানো মরুভূমির পথিক , যে কিনা ভাগ্যের ছোঁয়ায় বেঁচে আছে ।

– তোর এই কলঙ্ক কিন্তু তোকেই দুর করতে হবে ।

– কিন্তু …!

– কোন কিন্তু নেই চল আগে এখন রুমে গিয়ে নিশ্চিত হয়ে ঘুমাবি ।

– হ্যাঁ চল , কতদিন বালিশে মাথা রেখে ঘুমাতে পারিনি মনে নেই ।

– আমি আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছি সজীব , এখন আর রাতভর জেগে থাকা হয়না ।

– হ্যাঁ সেটাই , ব্যাচেলর জীবন থেকে বেরিয়ে বোঝা যায় পৃথিবী কতটা আপন না পর । তখন মা-বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ইচ্ছে মতো খরচ করা যায় । আর এখন নিজে আয় করে চলতে হবে তারউপর আবার তাদের দায়িত্ব নিতে হবে । বিলাসিতা জীবন থেকে হারিয়ে যাবে বাস্তবতার সম্ভারে ।

★★

রুমের মধ্যে এসে তাড়াতাড়ি বাতি বন্ধ করে শুয়ে পরলাে । এখন আর বেশি কথা বাড়ানো যাবে না তাহলে রকি ঘুমাতে পারবে না । খুলনা শহরে থেকে রকি আর সজীব প্রায়ই এক খাটে ঘুমাতাে। আজকে অনেক দিন পরে সেই একসাথে ঘুমানোর চেষ্টা চলে । সজীব চোখের পাতা মেলাতে পারে না চোখে জ্বালাপোড়া অনুভূতি হয় । এতদিন ধরে বৃষ্টির জন্য ভালবাসা সমুদ্রের ফেনার স্তূপ হয়ে ভেসে যাবে সেটা মানা যায় না । ভালোবাসা হারিয়ে মানুষ যতটা মরে, ভালোবাসার অভাবে এর চেয়ে বেশি মানুষের মন মরে । ভালোবাসার মানুষের অবহেলা অনেক বেশি কষ্ট দেয় । তার চেয়েও বেশি কষ্ট পায় নিজের জন্য । নিজের মনের আবেগ , অনুভূতি , ভালোবাসা প্রিয়জনকে বুঝাতে না পারার কষ্ট কত তা বুঝে যাদের ভিতরে আবেগগুলো ধুমরে মুচড়ে দেয় । পৃথিবীতে সবার মনের একটাই আকুতি, তা হচ্ছে যদি সে আমার কষ্টটা একটু বুঝত । আসল কথা হচ্ছে আমাদের দেহ মরার চেয়ে মন মরার যন্ত্রনা অত্যাধিক বেশি ।

রাতে কখন ঘুমিয়ে ছিলাম জানিনা , মোবাইলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো আমার । কোনরকমে সাঁতরে সাঁতরে মোবাইল ঘুমের মধ্যে খুঁজে বের করে রিসিভ করে সজীব বললো ;- হ্যালো !

– বৃষ্টি বললো , কোই তুমি ?

– সজীব বৃষ্টির কণ্ঠ শুনে চোখ ডলে বললো , আমি তো বাসায় ঘুমাচ্ছি ।

– সত্যি সত্যি কি তুমি আমাদের অফিসে চাকরি করবে না ?

– মনে হয় না ।

– কেন ?

– তুমি যেখানে আমার থেকে দুরে গিয়ে থাকতে চেষ্টা করছো সেখানে আমি বারবার তোমার সামনে গিয়ে বিরক্ত করতে চাই না । গতকাল রাতে তোমাকে ফাজলামো করে অন্য অফিসে চাকরি নেবার কথা বলেছিলাম । কিন্তু তোমার সাথে কথা বলার পরে সত্যি সত্যি সিদ্ধান্ত নিলাম ।

– আমি অফিসের ভিতরে , তোমার সাথে পরে কথা হবে ।

– ঠিক আছে , আমি হয়তো বিকেলের গাড়িতে বাড়িতে চলে যাব । তাই ভাবছি একটু পরে ফ্রেশ হয়ে স্যারের সাথে দেখা করতে যাবো তোমাদের বাসায় ।

– বিকেলেই যেতে হবে ?

– হুম থেকে কি লাভ বলো ?

– আচ্ছা ঠিক আছে যা ভালো লাগে করো ।

– হুম ধন্যবাদ ।

★★

ভালোবাসার মানুষের সাথে ঝগড়া করে যতটা কষ্ট পায় মানুষ তার চেয়ে বেশি কষ্ট পায় প্রিয়জনকে দেখতে না পেয়ে, তার সাথে কথা বলতে না পেরে । তাইতো সবাই চায়, ঝগড়া হোক তবুও কথা হোক ।

সজীব বিছানা থেকে উঠে প্রথমে রকির কাছে কল দিল কিন্তু রকি রিসিভ করে নাই । তাই ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে টেবিলে খাবার রাখা আছে সেগুলো খেতে শুরু করলো ।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে তৈরি হয়ে বৃষ্টিদের বাসায় রওনা দিল । রাস্তায় নেমে একটা রিক্সা নিয়ে সোজা নিউমুরিং পানির টাংকি । স্যার যেহেতু অসুস্থ তাই তিনি বাসায় থাকবেন সবসময় ।

– সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে রুমের সামনে গিয়ে দেখে দরজা খোলা আছে । স্যার বিছানায় আধাশোয়া অবস্থায় আছে , সজীব দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো , আসসালামু আলাইকুম স্যার ।

– স্যার তাকিয়ে দেখে সজীব দাঁড়িয়ে আছে , সামান্য অপরিষ্কার ভাষায় বললো , ওয়া আলাইকুম আসসালাম ভিতরে আসো ।

– সজীব ভিতরে গিয়ে খাটের পাশে একটা চেয়ারে বসে বললো , কেমন আছেন আপনি ?

– আলহামদুলিল্লাহ চলে যাচ্ছে দিনকাল , তুমি কেমন আছো ? গতকাল রাতে এসেছিলে তখন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম । ডাক্তার নাকি ঘুমের মধ্যে ডাকতে নিষেধ করেছে তাই ওরা আমাকে ঘুমের মধ্যে ডাকে না কখনো ।

– জ্বি স্যার জানি আমি , বৃষ্টি গতকাল বলছিল ।

– একটু কষ্ট করে দেখ তো খাটের নিচে বিস্কিটের প্যাকেট আছে । বের করে খাওয়া শুরু করো ।

– না স্যার আমি মাত্র নাস্তা করে আসলাম , তারপর আপনাদের কেমন চলছে দিনকাল ?

– শত বিপদের মধ্যে ভালোই ছিলাম , কিন্তু ইদানীং স্থানীয় মামুন নামের একটা ছেলে বৃষ্টির পিছনে লেগেছে ৷ তোমার আন্টির কাছে বলেছে কয়েকবার তিন চার দিন আগে বাসায় আসছিল আমার সাথে কথা বলতে ।

– আমি গতকাল রাতে তাকে দেখেছি আর কথাও হয়েছে সামান্য কিন্তু কি চায় সে ?

– বৃষ্টি কে বিয়ে করতে চায় ।

– বলেন কি ?

চলবে….!

ভালো থেকো সবসময় ।

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here