#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ১৮
” থাকাটা কি খুব জরুরি ছিল ? ”
” অনেক রাত হয়ে গেছে তাই তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়াটা বোধহয় উচিৎ ছিল । ”
” বোধহয় উচিৎ ছিল , এই কথাটা ভাবার কারণে কিন্তু তোমার কাঁধে মামলা ঝুলে আছে জানো তো ?”
” তাই বলে একটা মেয়েকে সাহায্য করবো না ? সে তো পথে বিপদের সম্মুখীন হতে পারতো । ”
” হুম তা ঠিক তবুও নিজের কথা মাঝে মাঝে ভাবতে হবে সাহেব । ”
” আচ্ছা একটা কথা ছিল । ”
” বলো । ”
” আমি কিন্তু তোমাকে সকাল বেলা মেসেজ করে বলিনি যে আমি বাসায় যাচ্ছি । কিন্তু তুমি তোমার লেখা দুই লাইনের মেসেজের ভিতরে লিখেছো যে ‘বাড়িতে গিয়ে একটা কল দিও’ কিভাবে জানলে ? ”
” তাইতো সজীব ভাই , কত সাবধানে চুরি করো তবুও টের পাই । অনুমান ছিল আমার কারণ আমি গতকাল রাতে তোমাকে কল দিছিলাম তখন মিতুর ছোটবোন কল রিসিভ করেছিল । তখন বুঝতে পারছি যে তুমি ওই বাড়িতে আছো আর সকাল বেলা যখন কল দিছো তখন বাসায় যাচ্ছো এটা তো সামান্য কমন সেন্স । ”
” ওহহ আচ্ছা । ”
” আচ্ছা ওই মেয়ের বিষয়টা যেহেতু শেষ তাই সেটা নিয়ে তুমি আমি কথা বৃদ্ধি করবো না । এখন বলো মা-বাবা সবাই কেমন আছেন ? ”
” আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে , কিন্তু বৃষ্টি মিতুর বিষয়টা এখনো শেষ হয়নাই । ”
” মানে কি ? ”
” সে তোমার সাথে কথা বলতে চায় , আমার মতো সজীব কাকে ভালবাসে সে একটু তাকে দেখতে চায় তাই আমি তাকে কথা দিয়েছি । ”
” আমার কথা সে যানে ? ”
” হ্যাঁ অবশ্যই , তুমি আমার ভালবাসা তাই সেটা না জানিয়ে পারি ? ”
” ভালো করছো , খুলনা কবে যাবে ? ”
” আগামীকাল সকালে । ”
” আমি তোমার সাথে রাগারাগি করেছি তারপর তুই তুই করে কথা বলেছি মন খারাপ লাগে না ? ”
” হুম লাগে । ”
” আমার মন যখন তোমার সাথে কথা বলতে চায় , তখন আমার সেই মূহূর্তেই চাই । যে সময়ে চায় ঠিক সেই সময়ই মানুষটাকে না পেলে রাগ হয় , অভিমান হয় । আর তখন তুমি যদি আমার অভিমান কিংবা রাগটাকে গ্রহণ করতে না পারো উল্টা আবার আমার সাথে রাগারাগি করো তাহলে তুমি ভালোবাসতে পারোনি !”
” আমি রাগ করিনি তোমার উপর । যে মানুষটা সারাক্ষণ তোমার সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করতে থাকে , তোমাকে নিয়ে ভাবতে থাকে , স্বপ্ন দেখে । সেই মানুষটা তোমার সাথে রাগ করবে সেটা কিভাবে ভাবলে তুমি ? ”
” নিজের মানুষটাকে কেউই এক মূহূর্তের জন্য হলেও আড়ালে দেখতে চায় না । সব সময়ই চায় প্রতিটা মূহূর্তই মানুষটা একান্তই নিজের হয়ে থাকুক । তার জন্য অপেক্ষা করুক । ”
” অনেক ভালো লাগলো মেডাম । ”
” কি ? ”
” নিজের মানুষ ভাবার জন্য । ”
” আমি বন্ধু ভেবে বলেছি আর কিছু না । ”
” এতো মানুষ থাকার পরও কেউ একজন আমার উপর রাগ অভিমান করে আর এটা যদি আমি বুঝতে না পারি তাহলে তো হপ্পে না । আমি জানি তুমি আমাকে ভালবাসো কিন্তু অদ্ভুত ভাবে দুরে রেখে শাসন করছো । ”
” বারবার একই ভুল কেন করো ? দেখো আমি কিন্তু তোমাকে বারবার বলছি যে আমি তোমাকে জীবনে জড়াতে চাই না । তবুও যদি আমাকে নিয়ে তোমার কল্পনার রাজ্যে স্বপ্নের ঘর তৈরি করো তাহলে সেটা তোমার জন্য বোকামি । কারণ যেকোন সময় যদি আমার বিয়ে হয়ে যায় তাহলে তখন কিন্তু আমাকে কোনো দোষ দিতে পারবে না । ”
” আমি কখনও তোমার প্রতি দোষ রাখবো না , যদি সত্যি সত্যি তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করো তাতে আমি কষ্ট পাবো ঠিকই কিন্তু কখনো মুখোমুখি হয়ে কৈফিয়ত চাইবো না । তবে আমি আমার জীবনের সম্পুর্ণ ভালবাসা তোমার জন্য রেখে দিলাম । যদি না পাই তাহলে নিস্তব্ধ রাতের আধারে প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখবো । ”
” আমি যা কিছু করিনা কেন , আমি যতদিন একা একা আছি ততদিন কিন্তু তুমিও একা । ভুলেও কোন মেয়ের কথা মাথায় আনবে না তবে যেদিন কাউকে বিয়ে করবো সেদিন থেকে মুক্তি পাবে তুমি । তাই অন্য কাউকে নিয়ে ভাবার সময়টা তুমি আমার সামনে করবে না তাহলে তোমার ঘাড় থাকবে কিন্তু তুমি থাকবে না । ”
” তাই হবে । ”
” আমার সময় প্রায় শেষ তাই এখন রাখছি ছুটির পরে আমি আবার কল দেবো । ”
” ঠিক আছে , ভালো থেকো তাহলে ? ”
” আচ্ছা ঠিক আছে তুমিও বাসায় গিয়ে গোসল করে খাওয়া দাওয়া করে নিও । আল্লাহ হাফেজ । ”
” আল্লাহ হাফেজ । ”
★★
মোবাইল রেখে বৃষ্টি নিজের চেয়ারে বসে আছে আর মরিয়ম তার সামনে আরেকটা চেয়ার পেতে বসা । কল কাটার সাথে সাথে মরিয়ম জিজ্ঞেস করলাে ,
” কিরে সজীব ভাই কি বলে ? ”
” কোন বিষয় ? ”
” রোমান্টিক বিষয় । ”
” আমি কি প্রেম করার জন্য কথা বলি নাকি ? ”
” তো ? ”
” তো তোর মাথা , আমি তাকে বন্ধু মনে করে কথা বলি সবসময় । ”
” তোর চোখ তো সেটা বলে না ”
” কি বলে আমার চোখ ? ”
” তুই তাকে অনেক ভালবাসিস । ”
” মোটেই না তবে অন্য কারো সাথে দেখতে পারিনা কেমন যেন হিংসা লাগে । ”
” সুপারভাইজার ছেলেটা তোর প্রতি টার্গেট করে আছে মনে হয় তাই না বৃষ্টি ? ”
” আমারও তাই ধারণা । ”
” বেশি বিরক্ত করলে সরাসরি জিএম স্যারের কাছে বিচার দেবো , তুই শুধু হ্যাঁ বলবি । ”
” আমার এসব দ্বন্দ্ব ভালো লাগে না , ভাবছি হঠাৎ করে নাকফুল পরে আসবো আর সবাই কে বলবো আমার বিয়ে হয়ে গেছে । ”
” হাহাহা হাহাহা তুই এত ভয় পাস নাকি ? ”
” ভয় না তবে কৌশল । ”
” সজীব ভাই যদি সত্যি সত্যি আমাদের লাইনে জব নিতে পারে তাহলে তখন কি করবি ? সারাদিন কাজ রেখে তাকিয়ে থাকবি ? চোখ টিপ দিবি , মাথা নিচু করে মুচকি হাসি দিবি , আমি দুর থেকে দেখে দেখে মজা নেবো । হিহিহি । ”
” ও যদি এই লাইনে ডিউটি করে তাহলে আমি বসকে বলে অন্য লাইনে চলে যাবো । ”
” ধুর পাগল নাকি তুই ? বেচারা এত কষ্ট করে তোর জন্য আসবে আর তুই এড়িয়ে চলবি ? ”
” সবাই যখন জানাজানি হবে তখন লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবো না । ”
” তুই তো সব ছেলেদের সাথে প্রেম করবি না , মাত্র একজনকেই ভালবাসবি । সবাই তোদের ভালবাসা দেখে অবাক হবে আর আমাদের ফ্লোর হবে প্রেমের রাজ্য ৷ ”
” চুপ কর তো মরিয়ম , যাহহ নিজের চেয়ারে গিয়ে বস সময় প্রায় শেষ হয়ে গেছে । ”
” এত লজ্জা পাবার কি হইছে ? যাচ্ছি বাবা । ”
★★
এগারো মাস পরে আজকে সজীব পুকুরে নেমে গোসল করলো , অনেকদির পরে সত্যি সত্যি অনেক বেশি ভালো লাগে তার । পুকুরে নেমে গোসল করার আনন্দের মাঝে নিজের পিছনের কিছু কষ্ট আপাতত ভুলে গেছে সে । মানুষের জীবনে সবসময় দুঃখকে আগলে রাখা ঠিক না , মাঝে মাঝে দুঃখের সুইচ বন্ধ করে দিয়ে শুধু সুখকে অনুভব করা উচিত । দুপুরের খাবার খেয়ে সজীব বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে গেল আর সেই ঘুম থেকে উঠেছে মাগরিবের আজানের পরে ।
ঘুম থেকে উঠে দেখে মাহি নুডলস রান্না করে রেখেছে তাই হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নুডলস খেতে লাগলো । সজীব এর বাবা দোকানে গেছে সেই বিকেলে তবে সজীব এখন যেতে চাইছে কিন্তু তার মা নিষেধ করেছে । কারণ বাজারে গেলে অনেকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে আর সেই সকল প্রশ্ন শুনে সজীব এর মন খারাপ হতে পারে । তাই সজীব রুম থেকে বেরিয়ে মোবাইল নিয়ে বাড়ির সামনে মাটির কাঁচা রাস্তায় চলে গেল । হাঁটতে হাঁটতে মোবাইল বের করে দেখে বৃষ্টি তিনবার কল দিয়েছিল । আরেকটু সামনে গিয়ে সবুজ ঘাসের উপর বসে সে বৃষ্টির নাম্বারে কল দিল ।
” বৃষ্টি রিসিভ করে বললো , অফিস থেকে বেরিয়ে তোমাকে কল দিলাম কিন্তু রিসিভ করনি । ”
” ঘুমিয়ে ছিলাম , আর মোবাইল সাইলেন্ট করা ছিল তাই বুঝতে পারিনি । ”
” সেদিন বলেছিলে আর কখনো সাইলেন্ট করবে না মনে আছে তোমার ? ”
” হুম । ”
” তাহলে ? ”
” আর ভুল হবে না । ”
” আমি ভেবেছিলাম অফিস থেকে বেরিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে বলতে বাসায় আসবো কিন্তু আমি তোমাকে পেলাম না তাই প্রচুর রাগ করেছি । এখন কি করবে তুমি ? ”
” রাগ ভাঙ্গিয়ে দেবো । ”
” কিভাবে ? ”
” আমি এখন খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে সবুজ ঘাসের উপর বসে আছি । আকাশে একটা অর্ধ চন্দ্র উঠেছে তার চারিদিকে ছড়িয়ে অসংখ্য তাঁরা আর মাঝে মাঝে খন্ড মেঘের ভেলা । ”
” তো কি মনে হয় ? ”
” কল্পনার ই আকাশ ছুয়ে এঁকেছি কত রঙিন স্বপ্নের ভুবন , লালন করেছি হৃদয়ের গভীরে জোছনার আলোর মত । নদীর তীরে নীলাক্ত আকাশ ছুয়ে স্বপ্ন গুলো মেলে দিবে ডানা মেলে ।
ক্লান্ত এই আমি যদি
ঘুমিয়ে পড়ি সেদিন ,
তুমি কি রাগ করবে তখন
অজস্র সীমাহীন ?
নাকি আলতো করে ছুয়ে দেবে
মোর চিবুকের পাশ ?
মুগ্ধ হয়ে বাড়বে আমার
ভালবাসার প্রয়াস ?
” বৃষ্টি বললো , জোৎস্না দেখতে এক সময় আমারও খুব ভালো লাগতো কিন্তু এখন ব্যাস্ততার মাঝে আর গভীর রাতের জোৎস্না কে সঙ্গ দিতে পারি না । তবে হুট করে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি । ভালো লাগে অসম্ভব ভালো লাগে কিন্তু মন খারাপ করে রুমে চলে আসি । মনের মধ্যে থেকে ভেসে আসে , ইসস যদি সে পাশে থাকতো ?”
” সজীব বললো , এক অদ্ভূত শীতলতায় তুমি শান্ত হয়ে যাবে পৃথিবীর এক প্রান্তে হয়তো তুমি কাউকে পাওয়ার তীব্র বাসনা নিয়ে জ্বলে যাচ্ছো নিরন্তর ।
অন্য প্রান্তে হয়তো কোন একটা মানুষ তোমার আশায় একরাশ শীতলতা নিয়ে চুপ করে বসে আছে অভিমানে চুপটি করে । ”
” সুযোগ পেলেই নিজের অনুভূতি বলা লাগে তাই না সাহেব ? ”
” জ্বি মেডাম । ”
” কেন ? ”
” বড্ড ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি । ”
” আগামীকাল সকালে খুলনা যাবে ? ”
” হ্যাঁ দোয়া করো । ”
” ঠিক আছে করবো , সন্ধ্যা থেকে গ্যাস নেই তাই রান্না করতে পারি নাই । এখন একটু এসেছে তাই রান্না করতে যাবো , পরে কথা হবে । ”
” ঠিক আছে , আল্লাহ হাফেজ । ”
|
|
রাতে খাবার খেয়ে সজীব তার বাবার সাথে মামলার বিষয় নিয়ে কথা বলতে লাগলো । কিন্তু সজীব এর বাবা একটু ভীতু মানুষ তাই বারবার তার গলা কেঁপে ওঠে । তার মতো একটা মানুষ বাজারের দোকান দিয়ে কিভাবে ব্যাবসা করে সজীব মাঝে মাঝে সেটা চিন্তা করে । তবে অতি ভালো মানুষ গুলোর জন্য আল্লাহ সবসময় সাহায্য করে থাকে তাই আজও তিনি সফল ভাবে আছেন মনে হয় । কারণ সজীব এর চোখে তার বাবা একজন অতি ভালো মানুষ ।
” অনেক কথাবার্তার শেষে সজীব বললো , বাবা তুমি শুধু আমার জন্য কিছু টাকা যোগাড় করে রেখ বাকি সবকিছু আমি ব্যবস্থা করবো । তোমাকে যারা ভয় দেখাচ্ছে তাদের মাধ্যমেই আশা করি মূল আসামি ধরা সম্ভব হবে । আর আমি সেখানে বেশি দিন থাকবো না , নাম্বারটা উকিলের কাছে দিয়ে কিছু কথা বলে চলে আসবো । যদি পারি তাহলে খালিশপুরের গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নেবো । ”
সজীব উক্ত বাক্যের উপর তার বাবা আর কোন কথা বললেন না । কারণ নিজের সন্তান মিথ্যা দোষের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরুক সেটা তিনিও চাননা । কিন্তু পরিস্থিতি আজ তাদের ছোট্ট সংসারে বিশাল মেঘ এনে দিয়েছে । তাই তিনিও চান তার ছেলে মুক্তি পেয়ে সকল মানুষের ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিক ।
পরদিন সকালে সজীবের মা গরম ভাত রান্না করে রেখেছেন সজীব সেই ভাত খেয়ে বাসা থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল । উকিল সাহেব সজীবকে তার বাসাতেই দেখা করতে বলেছে কারণ আজকে নাকি তিনি কোর্টে যাবেন না । সোনাডাঙা বাস স্টেশন নেমে সজীব ইজিবাইক করে শিব বাড়ি মোড় চলে গেল । তারপর সেখান থেকে রিক্সা নিয়ে নিরালা আবাসিক এলাকায় গেল কারণ উকিল সাহেবের বাসা সেখানে ।
” হঠাৎ করে মিতুর নাম্বার থেকে কল এলো , সজীব রিসিভ করে বললো , কেমন আছো তুমি ? ”
” মিতু বললো , মোটামুটি ভালো আপনি কেমন আছেন ? ”
” আলহামদুলিল্লাহ । ”
” কি করেন ? কোথায় আছেন ? ”
” আমি খুলনা এসেছি কিছুক্ষণ আগে এখন উকিল সাহেবের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছি কারণ তিনি উপর থেকে আমাকে নিতে আসতেছেন । ”
” কাজ শেষ করে আজকে কখন ফ্রী হবেন ? ”
” মনে হয় সন্ধ্যা হয়ে যাবে , কেন কিছু বলবে ? ”
” আমি সন্ধ্যা বেলা কল দেবো আপনাকে তখন একটু দয়া করে রিসিভ করবেন প্লিজ । ”
” তোমার কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন ? কি হইছে ? ”
” সন্ধ্যা বেলা সবকিছু বলবো দোয়া করবেন ততক্ষণ যেন বেঁচে থাকি । ”
” একটু পরিষ্কার করে বলবে ? ”
” হুম সন্ধ্যা বেলা । আল্লাহ হাফেজ । ”
|
|
উকিল সাহেব নিচে নেমে এসে সজীব নিয়ে গেল উপরে তার বাসায় । কাজের মেয়েটা চা নাস্তা দিয়ে গেল সেগুলো খেতে খেতে তারা কথা শুরু করলো ।
” তোমার বাবার কাছে যে নাম্বার দিয়ে কল করে ভয় দেখানো হয়েছে সেই নাম্বার যদি খুনির হয়ে থাকে তাহলে খুনিকে ধরা সহজ হবে । কারণ বাংলাদেশ সরকার গতবছর ১৬ সালের মাঝামাঝি যখন সকল সিম বায়োমেট্রিক রেজিষ্ট্রেশন চালু করেছেন তখন বের কারা খুব সহজ । তবে তারা যদি কোন গরীব মানুষের মোবাইল সিম চুরি করে সেগুলো ব্যবহার করে তাহলে একটু কষ্ট হবে ৷ তুমি চিন্তা করো না সজীব , আমি একজন সি আই ডির সাথে কথা বলে রেখেছি । যেহেতু কেসটা একটু জটিল তাই তার সহায়তা নিতে হয়েছে আশা করি সত্যটা সবার সামনে প্রকাশ হবে । ”
” আমি সেটাই চাই স্যার , জীবন থেকে অনেককিছু হারিয়ে গেছে শুধু একটা মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে । এখন যেভাবেই হোক মুক্তি লাভ করে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই । ”
” চিন্তা করতে হবে না আমি তো আছি আর খোকন সবসময় তোমার কথা বলে । ”
” আমি কি তার সাথে দেখা করতে পারবো ? ”
” খোকন এখন কোলকাতয় আছে ফিরতে দেরি হবে তাই এবারও হয়তো দেখা হবে না । আমি কিন্তু মামলার বাদি খুন হওয়া মেয়েগুলোর একজনের বাবা আরেকজনের মামা যিনি তার সাথে দেখা করেছিলাম । ”
” মানে আমাদের মেসে রান্না করা খালার ভাই ? ”
” হ্যাঁ হ্যাঁ , তার সাথে দেখা করে অনেক কিছু জেনে নিলাম কারণ তার সাথে কে কে মামলার বিষয় সাহস দিচ্ছে সেটা জানা দরকার । ”
” কেন স্যার ? ”
” তাতে করে বোঝা যায় যে যদি কোন অপরিচিত ব্যাক্তি তাকে টাকা কিংবা অন্য ভাবে সাহায্য করে তাহলে বুঝতে হবে যে সেই লোকের স্বার্থ আছে । ”
” ঠিক বলেছেন স্যার । ”
” তুমি এখন থাকো দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে তারপর যাবে । ”
” না স্যার আমি এখন যাই , খালিশপুরে গিয়ে কিছু কাজ আছে । ”
” সেখানে গিয়ে সাবধানে থেকো নাহলে খুনি পক্ষের কেউ তোমার ক্ষতি করতে পারে । যেহেতু আমরা এখন কিন্তু খুনিকে চিনি না তবে খুনি কিন্তু আমাদের ঠিকই চেনে । ”
” ঠিক আছে স্যার তাই হবে । ”
” আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থেকো সবসময় । ”
” আপনিও ভালো থাকবেন স্যার । ”
★★
বাসা থেকে বেরিয়ে সজীব হাঁটতে হাঁটতে শিব বাড়ি মোড় গিয়ে খালিশপুরের দিকে গেল না । বরং উল্টো পথে কাস্টম ঘাটের দিকে রুপসা চলে গেল কারণ সেখানে গ্রামের এক পরিচিত ভাই আছে তার নাম ফরিদ । স্ত্রী ও ৪ বছরের মেয়ে নিয়ে তিনি সেখানে বসবাস করেন তবে সজীব কে খুব ভালো জানে । ফরিদ এখানকার একটা ইটের ভাটার ম্যানেজার ।
সেখানে গিয়ে সজীব তাদের বাসায় গেল , ভাবি সবসময় সজীবকে উপদেশ দিতেন । সজীব এর মামলার বিষয় তারা শুনেছেন মাত্র মাস খানিক আগে । ফরিদ ভাই বাসায় নেই তবুও সজীব তাদের বাসায় গিয়ে ব্যাগ রেখে ফরিদ এর অফিসে চলে গেল । ফরিদের সাথে আগে দু তিনবার এসেছিল তাই চিনতে অসুবিধা হয়নি । ফরিদ সজীব কে দেখে খুশি হলেন তারপর তার মামলার বিষয় নিয়ে খুব দুঃখ প্রকাশ করলেন । বাসায় ফোন করে ভালো কিছু রান্না করতে বললেন কিন্তু বাসা থেকে জানানো হলো যে , তিনি বলার আগেই তার স্ত্রী মুরগির মাংস ফ্রিজ থেকে বের করে ভিজিয়ে রেখেছে ।
বৃষ্টির লান্স টাইমে সজীব এর সাথে কথা হলো , তারপর ফরিদ এর সাথে তার বাসায় গিয়ে গোসল করে দুপুরের খাবার শেষ করলো । ফরিদ ভাই সজীব কে বললো , ” খুলনা শহরে আপাতত যে কয়দিন আছো তুই আমার বাসায় থাকবি । অন্য কারো বাসায় যাওয়ার দরকার নেই আর উকিল সাহেবের নাম্বারটা আমাকে দিয়ে যাবি । আমি মাঝে মাঝে তার সাথে দেখা করে বিস্তারিত জানতে পারবো ।
আসরের খানিক পরে সজীব ফরিদ এর অফিসে বসে ছিল , ইচ্ছে ছিল একটু পরে নদীর তীরে হাঁটতে যাবে । কিন্তু ঠিক তখনই মিতুর কল এলো তাই রিসিভ করে বললো ,
” হ্যাঁ মিতু বলো , কি করো ? ”
” দাঁড়িয়ে আছি আপনি কি করেন ? ফ্রী আছেন ? ”
” হ্যাঁ ফ্রী , আর একটা বড় ভাইয়ের অফিসে বসে আছি তেমন কিছু করি না । ”
” খুলনা শহরের বাস স্টেশনের নাম সোনাডাঙা বাস স্টেশন তাই না ? ”
” হ্যাঁ , কিন্তু কেন ? ”
” আমি এখন সেখানে দাঁড়িয়ে আছি । ”
” মানে কি ? কার সাথে ? ”
” আমি একা , আপনার কি একটু আমার সাথে দেখা করার সময় হবে ? ”
” কিন্তু তুমি এ সময় খুলনা শহরে কেন ? আর কখন এসেছো তুমি ? ”
” আমার বাড়িতে অনেক ঝামেলা হইছে , তাই বাধ্য হয়ে আমি এসেছি । তবে আপনি যদি খুলনা শহরে না থাকতেন তাহলে তো আমি আসতাম না । দুপুরে আপনার সাথে কথা বলে আমি তিনটার দিকে রওনা দিয়েছি । ”
” কিন্তু কেন ? ”
” আপনি প্লিজ আগে আসুন তারপর সবকিছু বলবো আপনাকে , আমার জন্য আরেকটা বার একটু ঝামেলা সহ্য করুন প্লিজ প্লিজ প্লিজ ।
চলবে….
বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন প্লিজ ।
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)