_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি । #_পর্ব = ১৯

0
260

#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ১৯

অফিস থেকে বেরিয়ে রিক্সা নিয়ে রুপসা ঘাটে গিয়ে ইজিবাইকে উঠলো সজীব । নিজের কথা মনে করে বারবার হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে । তার সাথে প্রকৃতি কত অদ্ভুত খেলা খেলছে সে সেটাই বুঝতে পারছে না । আস্তে আস্তে তার জীবনের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে অনেক কিছু কিন্তু সজীব চাইলেই সেই জাল থেকে মুক্তি হতে পরছে না ।

ইজিবাইক রয়েলের মোড় থেকে বামে ময়লাপোতা মোড়ের দিকে চললো , কিন্তু সজীব ভেবেছিল মনে হয় ডাকবাংলা ফেরিঘাট হয়ে যাবে । কিন্তু তা না করে ইজিবাইক ময়লাপোতা মোড় পেহরিয়ে সোজা শিবা বাড়ি থেকে বের হলো । তারপর খুলনা শহরের সবচেয়ে ভি আই পি আবাসিক হোটেল ” হোটেল সিটি ইন ” এর সামনে দিয়ে আরেকটু এগিয়ে খুলনা শহরের এক সময়ের বড় কুখ্যাত অপরাধী এরশাদ শিকদার এর বাড়ি “সর্ণকমল” হয়ে সোনাডাঙা বাস স্টেশন গেল ।

ইজিবাইক থেকে নেমেই মিতুর কাছে কল দিল , সে সাথে সাথে রিসিভ করে বললো , ” আপনি কি এসেছেন ?

” সজীব বললো , হ্যাঁ কিন্তু তুমি কোথায় ? ”

” আমি স্টেশন এর মধ্যে । কিন্তু আপনাকে কিভাবে পাবো ? ”

” তুমি এক কাজ করো , কাউকে জিজ্ঞেস করো যে সোনাডাঙা থানা টা কোই ? তারপর থানার পাশে দেখো ” মান্নান টাওয়ার ” নামের একটা বিল্ডিং আছে সেখানে আসো ।

” আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসতেছি । ”

কপাল খারাপ ছিল তাই মিতু সজীব এর বলে দেয়া “মান্নান টাওয়ার” এর পাশে আসতে পারে নাই । তাই সজীব বললো , ” তুমি যে স্থানে আছো সেই স্থানের নাম বলো আমি তোমার কাছে আসতেছি । ”

” মিতু বললো , এমন করে অপমান করবেন না আমি চট্টগ্রামের মত বড় শহরে আড়াই বছর কাটিয়ে দিছি হারিয়ে যাওয়া এত সোজা না । আপনি সেখানে দাঁড়ান আমি ঠিকই আসতেছি আপনার কাছে । ”

আরো মিনিট দশেক পরে মিতু সজীব এর সামনে এসে দাঁড়িয়ে ভুবনভুলানো একটা হাসি দিয়ে বললো, ” বলেছিলাম না আমি হারাবো না ? ”

” সজীব মুখ বিকৃত করে দিয়ে বললো , হেহে দেখছি তো যেখানে পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসা হবে যায় আর সেইখানে ২০ মিনিট লেগে গেছে । ”

” রাস্তাঘাট সব একই রকম তো আমি কি করবো ? ”

” চট্টগ্রামে চাকমা দেখেছ ? ”

” হ্যাঁ অনেক , আমরা যে বিল্ডিংয়ে থাকি তার মধ্যে কয়েকটা চাকমা আছে । আর আমাদের অফিসের মধ্যে তো অসংখ্য অসংখ্য আছে । ”

” সবসময় এত বেশি কথা বলো কেন ? জিজ্ঞেস করেছি চাকমা দেখেছ কিনা ? আর তুমি তাদের সকল বৃত্তান্ত আরম্ভ করে দিলা ? ”

” আচ্ছা ঠিক আছে দেখছি এবার বলেন !”

” বলবনা , এবার বলো বরিশাল থেকে একদিনের মধ্যে খুলনা শহরে কেন ? ”

” এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলবো ? দুপুর থেকে কিছু খাইনি আমি । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে চলো একটা হোটেলে গিয়ে বসে বসে কথা বলি । ”

” চলুন । ”

হোটেলে বসে সজীব নাস্তার অর্ডার দিতে চেয়েছে কিন্তু মিতু বললো সে ভাত খাবে । তাই তার জন্য ভাতের অর্ডার দিল আর সজীব সামান্য নাস্তা নিল কিন্তু খাবার চেয়ে মিতুর খুলনা আসার কারণটা জানা খুব জরুরি ।

” সজীব বললো , এবার আস্তে আস্তে বলো তুমি হুট করে খুলনা শহরে কেন ? ”

” মিতু বলতে শুরু করলো , সেদিন আপনাকে বাসে তুলে দিয়ে আমি বাড়িতে গিয়ে মায়ের সাথে গল্প করছিলাম । মা আপনার অনেক প্রশংসা করছিল যে আপনি নাকি অনেক সুন্দর দেখতে ব্যবহার অনেক ভালো আরো অনেক কিছু । কথা বলতে বলতে আমি একপর্যায়ে আপনার আমার সত্যিকারের সম্পর্ক আর কিভাবে পরিচয় সেটা বলে দিলাম । পরক্ষণেই পরিস্থিতি সম্পুর্ণ আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল মনে হয় যেন আষাঢ় মাসের আকাশে হঠাৎ করে কালো মেঘ জমেছে একটু পরে সাইক্লোন আরম্ভ হবে । ”

” সজীব বললো , হুম তারপর কি হইছে ? ”

” মুখের ভাত শেষ করতে দেন তারপর বলি এতটা ধৈর্য হারা কেন ? ”

” আচ্ছা ঠিক আছে বলো । ”

” ঘটনা একটুর মধ্যে বাবার কানে পৌঁছে গেল , আর আমি তো অবাক । এরপরই শুরু হলো আমার প্রতি সকলের আদর্শ বাণী কিন্তু সবগুলো গালাগালির ভাষায় । ”

” আমি সেজন্য সেদিন তোমাকে বলেছিলাম । ”

” আমি ছোটবেলা থেকে কারো গালাগাল সহ্য করতে পারি না তাই একটুতেই মন খারাপ হয়ে যায় । আর রাগে কষ্টে সবকিছু ভুলে গিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হই । ”

” গার্মেন্টসে তো মনে হয় অনেক গালাগালি করে ? ”

” ভালো করে কাজ করলে কেউ কাউকে শুধু শুধু গালাগালি করে না । ”

” হুম বুঝতে পারছি তারপর বলো । ”

” গতকাল রাত থেকে সবার কথা শুনতে শুনতে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি । রাতে ঘুমাতে পারিনি সকাল বেলা করে ঘুম থেকে উঠে নিজের রুমে ছিলাম কিন্তু রাগ কমেনি । বাড়িতে গিয়ে সব টাকা বাবার কাছে দিয়ে দিছি শুধু আমার মোবাইলের ব্যাকপার্ট এর পিছনে ৫০০ টাকার একটা নোট রাখা ছিল । সকাল থেকে কারো সাথে কথা বলিনি , আপনাকে কল দিয়ে আমি বাড়ি থেকে বের হবার সুযোগ খুঁজেছি । দুপুর বেলা খাবার খেয়ে সবাই একটু বিশ্রাম করে আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ঘোরাঘুরি করেছিলাম । যখন দেখলাম একটা ফাঁকা ইজিবাইক এসেছে তখন তাকে দাঁড় করিয়ে বাড়ির ভিতর গিয়ে আমি আমার ব্যবহৃত কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে পিছনের দরজা খুলে বেরিয়ে পরলাম । নাযিরপুর থেকে পিরোজপুর গিয়ে খুলনার বাসে উঠেছি আপনার কাছে আসার জন্য । ”

” পিরোজপুর থেকে চট্টগ্রামের টিকিট কেটে চট্টগ্রাম চলে যেতে পারতে । ”

” টিকিটের টাকা নেই তো ! আর তাছাড়া সেখানে বাসের মধ্যে বসে থাকবো তখন যদি বাড়ির মানুষ পিরোজপুর গিয়ে ধরে নিয়ে যেত ? ”

” হাহাহা হাহাহা তখন কি করতো ? মারতো ? ”

” যদি মারে ? ”

” খুব মজা হতো । ”

” এখন বলেন আপনার কাজের কি খবর ? চট্টগ্রাম কবে যাচ্ছেন ? ”

” মোটামুটি ভালো তবে আমার আর খুলনা শহরে না থাকলেও সমস্যা নেই । ”

” তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ , চলুন দুজনে মিলে একসাথে চট্টগ্রাম চলে যাই । ”

” মাফ করবেন প্লিজ , আমি এ জীবনে আর কখনো কোন মেয়ের সাথে বাসে ভ্রমণ করবো না । যদি পাশের সিটে কোন মেয়ে পরে তাহলে সিট পরিবর্তন করে ফেলবো । ”

” খুব খুশি হলাম জাঁহাপনা । ”

” কেন ? ”

” কারণ তাহলে আপনার জীবনে আর আমার মতো মিতু মায়ায় জড়িয়ে যাবে না । আপনার সাথে এমন সময় পরিচয় হলো যখন আপনার সমস্ত শিরায় শিরায় রয়েছে বৃষ্টি আপু । ”

” হুম ধন্যবাদ বুঝতে পারার জন্য । ”

” আমি এখন কি করবো ? ”

” টিকেট কেটে চট্টগ্রামের বাসে তুলে দেবো সোজা চট্টগ্রাম চলে যাবে ৷ তবে ব্যাক্তিগত ভাবে আমার পরামর্শ হচ্ছে বাড়িতে গিয়ে তাদের পছন্দ মত বিয়ে করে সংসার করো । ”

” বাড়িতে ফেরত যাবার জন্য আমি বাড়ি ছেড়ে চলে আসিনি , আর একবার যেই মেয়ে চাকরি করে নিজে চলতে পারে তাকে বকাবকি করে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না । আপনি চলুন না আমার সাথে ? আপনার যদি কাজ না থাকে তাহলে চলুন আবার একসাথে চলে যাই কথা দিচ্ছি আসার সময় যেভাবে যন্ত্রণা দিয়েছি সেরকম কিছু করবো না । ”

” আমি বড় ভাইর বাসায় আছি আর সেখান থেকে দু একদিন পরে যাবো । ”

” ঠিক আছে জোর করবো না । ”

” চলো তাহলে টিকিট সংগ্রহ করি । ”

সজীব আর মিতু দাঁড়িয়ে আছে ” ঈগল পরিবহন ” এর কাউন্টার অফিসে । একটা টিকিট কেটে তারা আপাতত বসে আছে কারণ গাড়ি ছাড়বে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আর এখন বাজে কেবল মাত্র পৌনে ছয়টা । সজীব ভাবলো মিতুকে গাড়িতে তুলে দিয়ে তারপর বাসায় চলে যাবে । মোবাইল বের করে বৃষ্টির নাম্বারে কল দিল কিন্তু বৃষ্টি রিসিভ করে বললো , সাতটা বাজে তার ছুটি হবে । তাই সজীব যেন সাতটা পাঁচ মিনিটে কল করে । বাড়িতে কল দিয়ে মায়ের কাছে সবকিছু বললো সজীব , তার মা বললো তাহলে থেকে কি লাভ ? আর শত্রুর মধ্যে কেউ যদি কিছু করে ? তাই বাড়িতে ফিরে গেলেই ভালো । তবে চট্টগ্রামে চলে গেলে আরো ভালো হবে কারণ বাড়িতে অনেকে অনেক ধরনের কথা বলতে পারে ।

” সাতটা পাঁচ মিনিটে সজীব বৃষ্টির কাছে কল দিল কিন্তু প্রথমবারে রিসিভ হলো না তবে দ্বিতীয় বারে সাথে সাথে রিসিভ করে বললো , হ্যাঁ বলো । ”

” সজীব বললো , অফিস থেকে বের হইছো ? ”

” হ্যাঁ সিড়ি দিয়ে নামছি , কি করো ? ”

” বসে আছি । ”

” খুলনার কাজ শেষ হইছে তোমার ? ”

” হ্যাঁ ”

” বাড়িতে কবে যাবে ? ”

” মা বললো বাড়িতে যাবার চেয়ে চট্টগ্রাম চলে গেলে ভালো হবে কারণ বাড়িতে অনেকে অনেক ধরনের কথা বলবে । আর চট্টগ্রামে ছোট খালা আছে রকি আছে তাই সমস্যা হবে না । ”

” আর আমি ? ”

” তুমি তো সবকিছু , কিন্তু তোমার বাসায় তো আর থাকতে পারবো না তাই না ? ”

” তাহলে দেরি করছো কেন ? রওনা দেও , আর এখন কার বাসায় আছো ? ”

” গ্রামের এক বড় ভাই আছে তার বাসায় । ”

” তুমি রাতের টিকিট সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে আসো । ”

” আজকেই ? ”

” হ্যাঁ আজকেই ! ”

” আগামীকাল রওনা দেই ? ”

” কেন কেউ আছে নাকি ? ”

” আরে ধুর না তা হবে কেন ? ”

” তাহলে ফোন রেখে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়ে বাস স্টেশন গিয়ে টিকিট কেটে চলে আসো । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে তোমাকে জানাবো । ”

” জানাবো মানে কি ? যদি টিকিট কেটে রওনা দিতে পারো তাহলে কল দিও নাহলে ফোন করার দরকার নেই । ”

” এত চাপে রাখো কেন ? একটু মিষ্টি করে কথা বলা যায় না ? ”

” বাজার থেকে করলা কিনে এনে তুমি মিষ্টি খুঁজলে হবে ? মিষ্টি কিনে তারপর মিষ্টির আশা করবে । পছন্দ করছো আমার মতো রসকষহীন কাঠখোট্টা একটা মেয়েকে , আর এখন যদি তার কাছে মিষ্টির রসের আশা করো তাহলে সেটা তোমার বোকামি । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে রাখলাম তাহলে । ”

” হুম ঠিক আছে । ”

|
|

সজীব দেখলো গাড়ি ছাড়তে আর মাত্র পনের মিনিট বাকি আছে , কাউন্টারে গিয়ে মিতুর পাশের সিটটা ফাঁকা আছে কিনা জিজ্ঞেস করলাে , ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল তাই সিটটা এখনো ফাঁকা আছে । সজীব সিট বুকিং করে বললো ,

“আমি এখন রুপসা গিয়ে ব্যাগ নিয়ে বের হবো ততক্ষণে তো গাড়ি ছেড়ে দেবে । কিন্তু কি করা যায় বলেন তো ? ”

” কাউন্টার থেকে বললো , আমাদের গাড়ি নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যাবে । ”

” সজীব বললো , ঠিক আছে তাহলে আমি রুপসা থেকে খেয়া পার হয়ে ওপারে খুদির গাছতলা দাঁড়িয়ে থাকবো । আপনি সুপারভাইজারকে বলবেন যেন আমাকে সেখান থেকে তুলে নেয় । যদি একটু অপেক্ষা করতে হয় সেটা যেন করে , আশা করি তারা খুলনা শহর ঘুরে ব্রিজ পার হয়ে যেতে যেতে আমি সেখানে পৌঁছে যাবো । ”

” কাউন্টার থেকে বললো , ঠিক আছে ভাইজান তাহলে আপনিও সুপারভাইজারের নাম্বার টা নিয়ে যান । ”

সজীব মিতুকে বললো , ” গাড়ি ছেড়ে দিলে তুমি চলে যেও আমার একটা জরুরি কাজ আছে তাই এখনই যেতে হবে । ”

” মিতু বললো , আর তো মাত্র ১০/১২ মিনিট বাকি আছে তাহলে এতটুকু অপেক্ষা করুন । ”

” নাহহ সমস্যা আছে যেতেই হবে , তোমার সাথে ফোনে কথা হবে আল্লাহ হাফেজ মিতু । ”

সজীব তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে একটা ইজিবাইকে করে রুপসা রওনা দিল । আর মিতু মন খারাপ করে বসে রইলো কারণ এসব কিছুই সে চেনে না তাই একটু ভয় ভয় লাগে । তবে তার সাথে আরো কিছু যাত্রী বসে আছে এবং তাদের মধ্যে একটা মেয়ের সাথে তার খুব কথা হচ্ছে । মেয়েটার সাথে স্বামী আছে নাহলে মিতু আর সে একসাথে যেতে পারতো এমন কথা বলে মিতু আফসোস করে ।

সোনাডাঙা বাস স্টেশন থেকে গাড়ি বের হলো সাতটা চল্লিশ মিনিটে । তারপর সেখান থেকে গেল শিব বাড়ি মোড় , সেখান থেকে রয়েলের মোড়ে গিয়ে কাউন্টার থেকে যাত্রী নিয়ে আবারও সোনাডাঙার দিকে আসলো । জিরো পয়েন্ট , হাসি বুনিয়া , হয়ে বাস রুপসা ব্রিজে যখন গেল তখন বাজে ৯ঃ৩৫ মিনিট । সুপারভাইজার সজীবকে কল দিল ।

এদিকে সজীব বাসায় এসে তড়িঘড়ি করে ফরিদ ভাই আর ভাবিকে বলে বাসা থেকে বেরিয়ে পরলে । ভাই ভাবি দুজনেই এখন যাবার জন্য নিষেধ করেছে কিন্তু সজীব তাদের সামান্য মিথ্যা কথা বলে বেরিয়ে পরলাে । রুপসা খেয়া ঘাটে আগে ফেরিতে পারাপার হতো কিন্তু ব্রিজ হবার পরে ফেরি বাতিল । তবে ব্রিজ এখন থেকে অনেক দুরে গিয়ে করা হয়েছে বলে এই ঘাটে ট্রলার দিয়ে মানুষ পার হয় । সজীব ট্রলার পার হয়ে ওপারে গিয়ে একটা বাইক ভাড়া করে খুদির গাছতলা চলে গেল । বাইক থেকে নেমে ভাড়া দিতে যাবে ঠিক সেই সময় সুপারভাইজার কল দিয়ে সজীব কে লোকেশন জিজ্ঞেস করেছে সজীব বললো যে সে যায়গা মতো আছে ।

গাড়ি আসার পরে সজীব যখন ব্যাগ নিয়ে গাড়ির মধ্যে গেল তখন মিতু সজীব কে দেখে অবাক । সে আনন্দে চিকচিক করে একটা ভুবনভুলানো হাসি দিয়ে বললো , ” এমনটা কল্পনাও করতে পারি নাই , আরো একটা চমৎকার রাত্রে পাশাপাশি বসে ভ্রমণের আনন্দ উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ । ”

” সজীব সিটে বসে বাড়িতে বাবার কাছে কল দিয়ে বললো যে সে চট্টগ্রামে চলে যাচ্ছে । আর বৃষ্টির কাছে কল দিয়ে বললো যে সে গাড়ির ভিতর বসে আছে রাত পোহালেই চট্টগ্রাম থাকবে । ”

|
|

যদিও মিতু সজীব কে বলেছিল যে সে আজকে রাতে সজীবকে জ্বালতন করবে না । কিন্তু মিতু তার সেই কথা রাখতে পারে নাই কারণ সারারাত আবারও সেই আগের মতো করেছে । শেষ রাতের দিকে সজীব এর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছিল তখন সজীব একটু শান্তিতে ছিল । ঘন্টা খানিক পর পর সজীব বৃষ্টির কাছে কল দিয়ে কথা বলতো কারণ আগের মতো ভুল করা যাবে না ।

চট্টগ্রাম অলংকার মোড় যখন পৌঁছালো তখন ভোর সাড়ে ছয়টা বাজে । বৃষ্টিকে কল দিয়ে বললো যে সে অলংকার চলে এসেছে । বৃষ্টি বললো , ঠিক আছে সিএনজি নিয়ে চলে আসো আর আমি যেন তোমার সাথে দেখা করে অফিসে যেতে পারি ।

সিএনজি নিয়ে মিতুর সাথে ফ্রি পোর্টের দিকে চলে গেল সজীব , মিতুর বাসা ফ্রি পোর্ট মোড়ের একটু আগে ব্যারিস্টার কলেজ নামে একটা যায়গা আছে সেখানে । তাই সে ব্যারিস্টার কলেজ মোড় নেমে গেল আর হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে দিল । তার পুরোপুরি বিশ্বাস যে সজীব এর সাথে তার বারবার দেখা হবে কোন সন্দেহ নেই ।

সজীব যখন ফ্রি পোর্ট নামলো তখন সাড়ে সাতটার বেশি বেজে গেছে । বৃষ্টি আরো মিনিট পাঁচেক আগে এসে দাঁড়িয়ে আছে চৌধুরী মার্কেটের সামনে । সিএনজি থেকে নেমেই সজীব দৌড়ে চৌধুরী মার্কেট এর সামনে গেল বৃষ্টিকে খুঁজতে হয়নি তাই আর ফোন করেনি ।

” বৃষ্টি বললো , মাত্র চার দিনের মধ্যেই চেহারার এই অবস্থা হয়ে গেছে ? জেল থেকে বেরিয়ে যেদিন এসেছো তখনও তো এরচেয়ে ভালো দেখাচ্ছিল । ”

” জার্নি করলে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় ।

” আচ্ছা ঠিক আছে আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে । বৃষ্টি তার হাতের একটা টিফিন বক্স সজীব কি দিয়ে বললো , চারটা ডিম দিয়ে এক প্যাকেট নুডলস রান্না করে আসলাম । বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আগে খেয়ে তারপর গোসল করে ঘুমাবে আর লান্স টাইমে কল দিও আমার কাছে । ”

” ঠিক আছে , আর শোনো ! ”

” হুম বলো । ”

” এত সুন্দর করে সাজগোছ করে অফিসে যাবে না কখনো তাহলে মানুষের নজর লেগে যাবে । ”

” বৃষ্টি বললো , আমি কখনওই সাজগোছ করে অফিসে যাইনা আজকে তোমার সাথে দেখা হবে তাই বাসা থেকে কানের দুল , ঠোঁটে লিপস্টিক , আর কপালে টিপ দিয়ে বের হইছি । বুঝতে পারছেন সাহেব ? ”

” একদম পরিষ্কার , মন চাচ্ছে চারিদিকের অসংখ্য মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে এখন তোমাকে জড়িত ধরি তাহলেও তৃপ্তি মিটবে না । ”

” বৃষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো , পাগল একটা । ”

[ সজীব এর সাথে সবাই বৃষ্টির হাতের রান্না করা নুডলস খেয়ে আজকে একটু চিন্তা মুক্ত থাকুন । কারণ আগামী পর্ব গুলোতে হার্ট অ্যাটাক এর মত কিছু অপেক্ষা করে আছে । ]

চলবে….

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here