#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ২৭
বৃষ্টির সামনে মামুন দাঁড়িয়ে আছে , মামুন এমনিতে অনেক সাহসী মানুষ কিন্তু সে বরাবরই বৃষ্টির সামনে আসলে চুপসে যায় । বারবার প্রাকটিস করা সব রোমান্টিক গল্প গুলো এলোমেলো বাক্যে পরিনত হয়ে যায় । শুধু বারবার বৃষ্টির চোখের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নিচে নামিয়ে ফেলে । এমন কাচুমাচু ভাব করে মনে হয় যেন সে মহা একটা অন্যায় করে ফেলেছে আর বৃষ্টি হচ্ছে বিচারক । অন্য সকল মেয়ের সাথে কথা বলতে গেলে মামুনের অনেক সাহস দেখা যায় । একবার তার বন্ধু জামাল নেভি কলেজের একটা মেয়েকে পছন্দ করে । সেই মেয়ের কাছে প্রেম করিয়ে দেবার সকল দায়িত্ব মামুন নিজেই পালন করছে । কিন্তু নিজের বেলা এতটা কেন অসহায় সেটা বোঝা যাচ্ছে না ।
” বৃষ্টি বললো , গতকাল রাতে আমি ভালো ঘুমাতে পারিনি তাই চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । আপনি যদি কিছু না বলেন তাহলে আমি বাসায় গিয়ে একটু আজকে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করবো । ”
” মামুন নিচের দিকে তাকিয়ে বললো , আরেকটু সময় থাকো আমার খুব ভালো লাগছে । তোমার সাথে কথা বলে আমি ডে কতটা তৃপ্তি পেয়েছি সেটা তুমি তো জানোনা বৃষ্টি । ”
” আপনি তো কিছু বলছেন না তাই শুধু শুধু দাঁড়িয়ে রেখে কি লাভ বলেন ? যদি কিছু বলতে চান তাহলে আমি অপেক্ষা করবো আপনি সময় নিয়ে বলুন । ”
” গলির ভিতর এত মানুষের আনাগোনা ভালো লাগে না আমার কাছে । আচ্ছা চলনা আমার সাথে তুমি আমি একসাথে সী বিচ থেকে বেরিয়ে আসি । তখন সেই সুন্দর পরিবেশে তোমার সাথে অনেক কিছু বলার আছে । ”
” হাহাহা , মামুন ভাই সেখানে তো শুনেছি আরো বেশি মানুষ থাকে তাহলে সেখানে গিয়ে সত্যি সত্যি বলতে পারবেন তো ? ”
” পারবো । ”
” দরকার নেই মামুন ভাই , আসলে বাইরে ঘুরতে যাওয়া আমার একদম ভালো লাগে না । আমি তাই কখনো কোথাও ঘুরতে যাই না যদি যেতাম তাহলে আপত্তি থাকতো না । ”
” আচ্ছা আগামীকালের পরের দিন ‘শব-ই বরাত’ সেদিন কি চাইবে তুমি ? ”
” বৃষ্টি হঠাৎ চমকে উঠে কারণ সে জানতো না যে শব-ই বরাত দুদিন পর । সে মনে মনে বললো , আমি সারাজীবনের জন্য সজীব এর বুকে মাথা রেখে হাত দিয়ে বুকের পশম ধরতে চাই । কিন্তু মামুনের কাছে বললো , আমি যেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারি আর আমার পরিবার যেন সবসময় ভালো থাকে । ”
” নিজের ভবিষ্যতের জন্য কিছু চাইবে না ? ”
” দেখি কি করা যায় , আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখন তাহলে বাসায় গেলাম ? ”
” ঠিক আছে আল্লাহ হাফেজ । ”
★★
সজীব বৃষ্টির কাছ থেকে কল কেটে দিয়ে কিছুক্ষণ মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলো । সন্ধ্যার পরে তার কাছে যতটা ভালো লেগেছিল এখন ঠিক তার চেয়ে বেশি খারাপ লাগে ৷ একবার মনে হলো কল দিয়ে খুব অন্যায় হয়ে গেছে মনে হয় কারণ যেই মানুষ সজীব এর জন্য অপেক্ষা করে না তার জন্য সজীব বারবার কেন অপেক্ষা করবে ? সজীব এর মনের মধ্যে থেকে উত্তর এলো , ‘ কারণ তুমি তাকে অনেক ভাণবাসো তাই তার শত অবহেলা সহ্য করতে হবে । ‘
” হঠাৎ করে মোবাইলে বৃষ্টির কল এলো , সজীব কল কেটে দিয়ে কলব্যাক করলো । বৃষ্টি কল রিসিভ করে বললো , কেমন আছো ? ”
” সজীব বললো , এই তো চলছে আগের মতো তুমি কেমন আছো ? ”
” আমিও আমার মতো আছি । ”
” কথার সুর পরিবর্তন কেন ? নাকি সবসময় এমন করেই চলবে ? ”
” জানি না , গতকাল অফিসের ওই ঘটনার পরে তুমি হঠাৎ করে এমন ভাবে উধাও হয়ে গেলে মনে হয় যেন অন্য কেউ টেনশনে মরে গেলেও তোমার কিছু যায় আসে না । রাতের ঘুম হারাম করে দিয়ে কেমন শান্তি অনুভব করলে তুমি ? আচ্ছা গতকাল অফিসে ঘটনার জন্য সম্পুর্ণ কি আমার দোষ ? ”
” নাহহ বৃষ্টি , তোমার কোন দোষ নেই । দোষ আমার আর আমার নির্বোধ ভালবাসার তাই আমিই আস্তে করে পরিবর্তন হয়ে যাবো । ”
” ভুলে যাবে ? ”
” জানিনা প্রকৃতি কি চায় ! ”
” থাকতে পারবে তো আমাকে ছেড়ে ? ”
” চেষ্টা করবো তবে নিশ্চিত না বৃষ্টি , আমার বিশ্বাস চেষ্টা করলে সবকিছু সম্ভব । শুধু সময় আর ধৈর্যের বাঁধ শক্ত করতে হবে তাহলেই চলবে । ”
” এমন করে বলছো কেন ? ”
” আসলে বৃষ্টি , কাওকে ভালোবেসে সব কিছু উজার করে দেয়া ঠিক আছে কিন্তু অবহেলা পেতে পেতে তাকে চিনে ফেলার পর নিজে শুধরে যাবার অপেক্ষা করা উচিত না । কারণ পৃথিবীতে সত্যি সত্যি কিছু মানুষ কখনোই শুধরায় না তারা শুধু পরিস্থিতি সামাল দেয় । তাদের কাছে অন্য কোন মানুষের মন প্রান , আবেগ অনুভূতির দাম নেই । ”
” তুমি কি করতে চাও সজীব ? ”
” আমি কি করবো সেটা এখনো ভাবিনি তবে যখন একটা ছেলে একটা মেয়েকে ভালবেসে নিজের কাছে হেরে যায় তখন কি করতে হবে সেটা বুঝতে পারছি । ”
” কি করতে হবে ? ”
” তুমি জানো আমি তোমার উপর দূর্বল , তাই তুমি ইচ্ছা করেই আমাকে অবহেলা করছো । আমি কিন্তু কিছুই বলতে পারবো না তোমাকে কারণ দূর্বলতা টা আমার প্রচুর বেশি । তাই মুখ ফুটে সবসময় মনের মধ্যে জমানো অভিমান প্রকাশ করতে পারি না৷
আমার ফোন রিসিভড না করে বা কথা বলে প্রচুর আনন্দ পাও তুমি । আমাকে বারবার ভালবাসো না এমন কথা বলতে তোমার মুখে একটুও আটকায় না ! তুমি ভাবো সজীব তো তার প্রতিবাদ করে না । কিন্তু তুমি কখনো ভাবোনা তোমার কথায় তার কষ্ট লাগে কিনা ? প্রতিদিন অসংখ্য অজুহাত দিয়ে তুমি আমার নিষ্পাপ ভালবাসা থেকে দূরে থাকো । তুমি আমাকে চলে যেতেও বাধ্য করো না আবার তোমার কাছে থেকে যাওয়ার জন্য ও জোর করোনা ! বেঁধে রেখে শুধু অসহ্য যন্ত্রণা দিয়ে পুষে রাখো , আচ্ছা আমাদের সবসময় কি একই ভাবে চলবে ? মোটেই না ! তোমার পিছে পড়া থাকা এই সজীব একটা সময় বদলে যাবে । তোমাকে কল দিবে না আর তোমার কাছে গিয়ে বারবার অপমানের পরেও মিষ্টি হেসে ভালবাসি বলবে না । আমার মোবাইলে তোমার নাম্বার টাও খুঁজে পাওয়া যাবে না হয়তো । বারবার তুমি আমাকে অসংখ্যা অজুহাত দিয়ে দূরে রাখতে , মুখে যা আসতো তা বলে দিতে । কিন্তু হঠাৎ করে আমাকে একটা বার ‘হ্যালো’ বলার মতো সুযোগটাও পাবে না তুমি । তোমার তখন মনে হবে পৃথিবীতে কিন্তু সবারই একটা সুযোগ আসে আর তোমারও কিন্তু সুযোগ ছিলো আমাকে কে ভালোবেসে বেঁধে রাখার । আর আমার কাজ হচ্ছে তোমার দেয়া প্রচন্ড কষ্ট থেকে বের হয়ে আসার । সুযোগটা আমি কাজে লাগিয়ে আলাদা হয়ে যাবো কিন্তু তুমি দেখবে তুমি পারোনি । দিনশেষে জিত কিন্তু আমারই , আর তুমি ? তখন তুমি হয়ে যাবে পৃথিবীতে জীবন নামক ফাঁকা মাঠে পড়ে থাকা এক হেরে যাওয়া প্লেয়ার । একটা কথা চিরন্তন সত্য আর তা হচ্ছে জীবনের এই রঙ্গ খেলায় কাউকে হারিয়ে নিজে জিতা যায় না । নিজে হেরে গিয়ে তারপর হারের মাঝে জেতার আনন্দ খুঁজে বের করতে হয় । ”
” বৃষ্টি বললো , ঠিক আছে আমি যেহেতু সকল অন্যায় করেছি তাই আমার অন্যায় নিয়ে আমি তবে আলাদা থাকি ৷ তোমার সাথে থেকে একটা পরাজিত প্লেয়ার হয়ে বোঝা ভারী করতে চাই না । মানুষ্য প্রজাতির উদ্ভব এই বাঁচা মরার লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পরে হাহুতাশ করে নাহয় পার করে দেবো । তুমি খুব ভালো করে জানো আমার রাগ আর জেদটা একটু বেশি । তুমি তোমার জীবন নিয়ে চলে যাও সমস্যা নেই , আমি নাহয় নিজের ভুলের জন্য আফসোস করে সন্ধ্যা যাপন করে পার করবো । ”
” রাগ করলা ? ”
” প্রশ্নই আসে না । ”
” আমি কথাটা কতটা কষ্টে তোমার কাছে প্রকাশ করেছি সেটা বোঝার চেষ্টা করো । ”
” তার আর দরকার নেই সজীব , কথা দিচ্ছি আর কখনো বিরক্ত করবো না । এমনিতেই আমার জন্য তোমার অনেক কিছু হারিয়ে গেছে তাই আর কথা না বাড়িয়ে ভালো থেকো সবসময় । ”
” চেষ্টা করবো তবে নিশ্চিত না । ”
” চেষ্টা করাটাই অনেক কিছু , বাকি আল্লাহ ভরসা ।”
” হুম । ”
” বায় আল্লাহ হাফেজ । ”
★★
★★
রকির বাসায় গতরাতে না যাবার কারণ হচ্ছে বৃষ্টির কাছ থেকে লুকিয়ে থাকা কিন্তু বৃষ্টির সাথে যেহেতু কথা বলা হয়েছে তাই রকির বাসায় যাওয়া যায় । সজীব ছাদ থেকে নেমে রুমের মধ্যে এসে দেখে তার খালা রান্না করছে । সজীব রুমের মধ্যে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো , ” আমি চলে যাচ্ছি খালাম্মা । ”
” খালা বললো , কোই যাবি ? ”
” রকির বাসায় যাবো আপাতত , তারপর দেখি কি করা যায় । চাকরি একটা নিতে হবে সেটা বুঝতে পারছি কিন্তু দেখি কি হয় ! ”
” রান্না হোক খাওয়া দাওয়া করে তারপর যা । ”
” নাহহ এখন ক্ষুধা নেই কারণ সন্ধ্যা বেলা দুপুরের খাবার খাইছি । আরেকদিন আবার এসে খাবো কারণ এটা তো আমার নিজেরই বাসা । ”
” তবুও আরেকটু সময় থাক , তুই কাছে থাকলে ভালো লাগে আমার । আমার ছেলেটা মারা যাবার পর তোরা দুই ভাই-বোনই তো আমার একমাত্র ভরসা । ”
‘ সজীব বললো , সেটা তো জানি আমি তবুও এখন একটু বেরোতে হবে আমাকে দরকার পরে আমি কাল আবার আসবো । ”
সজীব দরজা খুলে বেরিয়ে গেল , সজীব এর খালা পিছনে পিছনে এসে সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে সজীব এর চটচট শব্দ করে নিচে নেমে যাবার দিকে তাকিয়ে রইলো । সজীব সবসময় তার মা আর এই খালাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে । তাদের কোন কথা কখন অমান্য করে না বরং মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই করে ফেলে । আর আজ সেই সজীব কেমন পাকা কথা বলে নেমে গেল । আশ্চর্য এই সেই সজীব ।
|
|
বাসায় গিয়ে রকির সাথে দেখা হলো , রকি দরজা বন্ধ করে ছাঁদে যাচ্ছিল সজীবকে দেখে খুশী হয়েছে কিনা বোঝা যায় না । দুজনেই একসাথে ছাঁদে গিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইলো ।
” রকি বললো , কাল রাতে বাসায় আসলি না কেন ?
” সজীব বললো , আমার বিশ্বাস ছিল যে বৃষ্টি তোর সাথে বাসায় আসতে পারে । তাই ইচ্ছে করে আসিনি এছাড়া আর কোন কারণ নেই । ”
” বারবার বৃষ্টি বৃষ্টি করবি না আমার সামনে । ”
” তোর আবার কি হইছে ? ”
” আজকে অফিসে গিয়ে তার সাথে ভালো মনে করে বললাম যে তুই সামনে এরে দুজনের বিয়ে করা উচিত হবে । তাহলে আর দিন দিন অভিমান করে দুজনকে কষ্ট পেতে হবে না । কিন্তু সে কিনা আমাকে বলে যে আমি আর তুই নাকি ষড়যন্ত্র করে বৃষ্টির সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করতে চাই ৷ কি আজব ধরনের মনমানসিকতা একবার চিন্তা করে দেখ সজীব । ”
” আমার সাথে কথা হইছে সন্ধ্যার পরে , ঝগড়া হইছে খানিকটা সময় ধরে । তাই আমিও আপাতত আর যোগাযোগ করতে চাই না , কি লাভ বারবার একটা মানুষের মনের বিরুদ্ধে বিরক্ত করে ? ”
” সেটাই ভালো হবে , তুই একটু নিজেকে শক্ত করে রাখ তাহলে বৃষ্টি বুঝতে পারবে তোর ভালবাসা এর আগে মনে হয় বুঝতে পারবে না । ”
” তাই করবো ভাবছি , আর মিতুর সাথে কথা বলা হয়ে গেছে ওর অফিসে চাকরি নেবো । ”
” এক হিসেবে বৃষ্টির চেয়ে মিতুই তোর জন্য একদম পারফেক্ট আছে কারণ তুই ঠিক যেভাবে বৃষ্টির জন্য পাগল , মিতু ঠিক তেমন করে তোর জন্য পাগল । আর কথায় আছে না ? তুমি তাকেই ভালবাসো যে তোমায় ভালবাসে । তুই চাইলেই এখন মিতুর ডাকে সাড়া দিয়ে তাকে বিয়ে করে ভালবাসার সংসার আরম্ভ করতে পারো ৷ দুজনেই চাকরি করে মাস শেষে ২২-২৫ হাজার টাকা বেতন পাবি ৷ দশ হাজার টাকা সংসারের খরচ করবি বাকি ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ভবিষ্যতের সঞ্চয় করবি । ”
” হাহাহা হাহাহা তা হয়না রে রকি । ”
” কেন ? ”
” যেই ভালবাসা খুব সহজেই পাওয়া যায় সেইটার প্রতি তেমন কোন আকাঙ্খা থাকে না ৷ খুব কষ্টের মাধ্যমে যে ভালবাসা জয় করা যায় সেই ভালবাসা হচ্ছে তৃপ্তির ঢেঁকুর । ”
” কষ্ট করতে করতে একদিন হঠাৎ করে দেখবি বৃষ্টি অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে । সেদিন দেখবি মিতুও তোর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে বিয়ে করে ফেলেছে । সেদিন বুঝতে পারবি , মানুষ হচ্ছে একটা জটিল ভ্রমের জাল , কারণ সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে আমাদের কখনো মনে আসে না । কিন্তু পরে বেঠিক সময়ে বেঠিক ইচ্ছে নিয়ে আফসোস করে মরে । ”
” আচ্ছা বাদ দে এসব কথা , আমি আগে চাকরি নেবো তারপর দেখি কি করা যায় । ”
” তোর যা ইচ্ছে করতে পারো আমার কোন সমস্যা নেই সজীব । রুমে চল খুব ঘুম পাচ্ছে ডিনার করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরতে হবে । ”
” সজীব বললো , আমার তো আর সকালে অফিসে যেতে হবে না তাই আমি আরেকটু সময় থাকি । তুই বরং নিচে গিয়ে দরজা চেপে দিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পর আমি পরে আসবো । ”
” আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু একা একা থাকলে বেশি মন খারাপ হবে তাই ওসব চিন্তা আপাতত বাদ দিয়ে দে বন্ধু । ”
” চেষ্টা করছি । ”
” আর অফিসের ওই সুপারভাইজার এর চাকরি খাবার দায়িত্ব আমার । ও তো জানেনা কোন টিমের সাথে খেলতে লেগেছে , এমন চাল চালবো একদম গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে । ”
” কি দরকার এসবের ? ”
” তুই চুপ থাক সজীব । ”
” আচ্ছা ঠিক আছে । ”
★★★
পরদিন সকালে সজীব এর ঘুম ভাঙ্গলো দশটার একটু আগে । গোসল করে ফ্রেশ হয়ে হঠাৎ করে মনে হলো স্যারের সাথে ১০/১২ দিন যাবত যাওয়া হয়নি । তাই আজকে যেহেতু হাতে সময় আছে তাই একবার ঘুরে আসা যাক তাহলে । ভাবনা অনুযায়ী বাসা থেকে বেরিয়ে গেল , হাঁটতে হাঁটতে বন্দরটিলা গিয়ে ফুটপাতের ফলের দোকান থেকে দুই কেজি আপেল এক কেজি কমলা আর আধা কেজি মালটা ফল কিনলো । তারপর একটা রিক্সা নিয়ে নিউমুরিং বোবা কলোনির পানির টাংকি গলিতে চলে গেল ।
” সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে বৃষ্টিদের রুমের দরজার সামনে গিয়ে দেখে দরজা খোলা আছে । স্যার জেগে ছিল , সজীবকে দেখতে পেয়ে বললো , আরে সজীব এসো এসো ”
” সজীব ভিতরে গিয়ে ফলের ব্যাগটা খাটের পাশে রেখে বললো , কেমন আছেন স্যার ?”
” আছি আলহামদুলিল্লাহ , তুমি কেমন আছো ? ”
” জ্বি আলহামদুলিল্লাহ । ”
” আজকে অফিসে যাওনি ? বৃষ্টি তো অফিসে গেছে তাহলে তুমি এখানে ? ”
” আমার চাকরিটা চলে গেছে স্যার , সামান্য একটা সমস্যার জন্য বের করে দিয়েছে । আপনি বিষয়টা নিয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস করিয়েন না স্যার । ”
” আচ্ছা ঠিক আছে , কিন্তু বৃষ্টিতো তেমন কিছু বলে নাই আমাকে । ”
” আমি নিষেধ করেছিলাম ওকে । ”
” ওহহ আচ্ছা তাহলে এখন কি করবে ? ”
” আরেকটা অফিসে চাকরি নেবো তারপর দেখি কি করা যায় ? ”
” মামলার বিষয় কিছু হলো ? ”
” একজন ধরা পরার পরে আর তেমন কিছু নতুন বলার মতো নেই স্যার তবে আশা করি আপনাদের দোয়ায় নির্দোষ প্রমানিত হবো । কিন্তু আমার একটাই
আফসোস রয়ে গেল , সাত মাস শুধু শুধু হাজতে যেতে হলো । বিনা অপরাধে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে আমাকে , গ্রামের বাড়িতে সবাই আমাকে খুনি হিসেবে জানে । ”
” মন খারাপ করো না সজীব , পৃথিবীতে চলার পথে কত রকমের বিপদ আসবে । তোমাকে আমাকে সবসময় সেই বিপদের সম্মুখীন হতে হবে এবং মাথা ঠান্ডা রেখে সমাধান করতে হবে । ”
” জ্বি স্যার , আচ্ছা স্যার একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ? ”
” হ্যাঁ করো । ”
” গলির ভিতর ওই মামুন নামের ছেলেটার সাথে কি বৃষ্টির বিয়ে দিবেন ? ”
” হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন ? ”
” জানতে ইচ্ছে করছে স্যার ! ”
” আমি তেমন কিছু জানিনা , তবে বৃষ্টির মায়ের সঙ্গে কথা বলে বারবার । ”
” ওহহ আচ্ছা । ”
রুমের মধ্যে আরো কিছুক্ষণ নীরব থেকে সজীব বসা থেকে দাঁড়িয়ে বললো ” আজ তাহলে উঠি স্যার ? ”
” এখনই যাবে ? আচ্ছা ঠিক আছে আবার এসো । ”
রাস্তায় বেরিয়ে সজীব হাঁটতে হাঁটতে উকিল সাহেব এর নাম্বারে কল দিল । মোবাইলের সিম ফরোয়ার্ড করা তাই কারো কল আসে না ।
” উকিল সাহেব রিসিভ করে বললো , তোমার নাম্বারে সকাল থেকে কল দিচ্ছি কিন্তু কল যাচ্ছে না তাই তোমার ভাই ফরিদকে কল দিছিলাম । ”
” কেন স্যার ? কোন জরুরি কিছু ? ”
” হ্যা অবশ্যই জরুরি , আমি অবশ্য অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না । তাই তোমাকে আবার কষ্ট করে একটু থানায় যেতে হবে । তুমি চিন্তা করিও না কারণ আমি তো আছি তাই তোমার কোন ভয় নেই , তুমি খুলনা আসো তাড়াতাড়ি । ”
” উকিল সাহেব এর কথা শুনে সজীব এর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল ৷ কিছু একটা মুখ ফুটে বলতে গিয়েও উচ্চারণ করতে পারলো না ।”
চলবে….
[ আমার ছোট বোন নাজনীন সুলতানা মাহি খুব অসুস্থ , তাই আপনারা সবাই আমার বোনের জন্য দোয়া করবেন আমার বোন যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে । ]
বিঃদ্রঃ– গল্প টা কেমন হয়েছে ? সবাই গঠনমূলক কমেন্ট করে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন । আপনাদের একটা অনুপ্রেরণার মন্তব্য এগিয়ে নেবে আমার লেখনী শক্তি ।
ভালবাসা অবিরাম অন্তহীন ।
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)