#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখিকা:#আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ২৩
“দেখ তোরা দুজন একসাথে আসবি না!আমার বিয়ের আগেরদিন মরার শখ নাই?”
মিহুর কথাটা চিল্লিয়ে বলতে সবাই ওর দিকে তাকায়।মিথিলা ইয়াশ একবার মিহুর দিকে তাকিয়ে নিজেদের দিকে চোখ ঘুরায়।ইয়াশ মিথিলার দিকে মিথিলা ইয়াশের দিকে তাকাতে মিহু পুনরায় বলে ওঠল।
“দেখ আমি তোদের দুজনের বোন।পর কেও না,প্লিজ আমাকে এভাবে মারিস না!পরে দেখা যাবে টিভির হেড লাইনে লেখা উঠবে ❝বড় বোনের গায়ে হলুদের দিন ছোট দুই ভাই-বোন মিলে বড় বোনকে এমনভাবে হলুদ লাগালো যে বড় বোন হলুদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ইন্তেকাল করিলো❞ দেখ তোরা কি চাস এসব লেখা টিভির হেডলাইনে উঠুক?”
মিহুর কথা শুনে মিথিলা আর ইয়াশ দুজনে উজবুক হয়ে মিহুর দিকে তাকিয়ে আছে।মানে শেষে কিনা মিহু ওদের ওর খুনি বানিয়ে দিলো।মিথিলা কথাটা মানতে না পেরে বলল,
“ভাইয়া তুমি যাও এই মেয়েকে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে আসো।আমি একে চিনিনা?কে এ?আমার বোন আমাকে নিয়ে তো এসব ধারণা করতো না?”
ইয়াশও সমানতালে বললো,, “আমিও একে চিনিনা,মানে আমাদের মিহু তো এমন ছিলো না।অন্তত্য আমার ব্যাপারে এসব ভাবতো না।আমিও একে হলুদ লাগাবো না!”
মিহু দুজনের কথা শুনে মুখ ভোতা করে বলে,, “আরে আমি বলছি তোদের দুজনকে একসাথে না আসতে একজন একজন করে এসে লাগিয়ে দিয়ে যা।”
“না আমি যখন বলেছি দিব না মানে দিব না?”
“আর মিথিলার সাথে আমিও দিব না!”
“আরে দুজন কি শুরু করলা বলতো?মিহু আপু ভয় পেয়ে গেছিল।আর ভয় পাবেনা কেন বলো?তোমাদের মতো দুটো ডেঞ্জারাস মানুষ আপুকে হলুদ লাগাতে যাচ্ছে তাও একসাথে ভয় পাবেনা আপু?”
মাঝখানে আকাশের কথা শুনে দুজন আকাশের দিকে তাকায়।কপাল কুচকে তাকায় ওর দিকে।দুজনের এভাবে তাকাতে দেখে আকাশ ভড়কে যায়।ও আর কিছু বলেনা।এখন ইয়াশের বিরুদ্ধে কিছু বললে ওরই বিপদ!
“উফফ এই যাও তো দুজন একটু একটু করে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে আসো।এমন ঢং করোনা!”
ইফার কথা শুনে মিহু বলে,, “হ্যাঁ আয় দুজন একটু একটু করে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে যা।”
মিথিলা ইয়াশ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মিহুর দিকে এগোয়।দুজন গিয়ে দুপাশে বসে।দুজন হাতে হালকা হলুদ ভরিয়ে মিহুর গালে লাগিয়ে দেয়।তারপর দুজন উঠে যেতে নিলে মিহু দুপাশে দুজনের হাত ধরে বলে, “আমার টাকা?”
“তোমার টাকা?দাড়াও দিচ্ছি!হাত ছাড়ো আগে?”
“আমার হাতও ছাড় নাহলে টাকা বের করবো কিভাবে?”
মিহু দুজনের হাত ছেড়ে দেয়।মিথিলা ইয়াশ দুজন দুটো দেশ টাকার নোট বের করে মিহুর হাতে ধরিয়ে দেয়।মিহু নোট দুটোর দিকে ভোতা মুখে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে মিথিলা ইয়াশ দুজন দুদিক থেকে হাতভর্তি হলুদ লাগিয়ে দেয় মিহুর গালে।মিহু হলুদের জন্য দেখতে না পেয়ে চিল্লানি দেয়,,
“মিথুর বাচচচচচচচচ্চা!ইয়াশশশশশশ!”
——————————————————
বাড়িটা রঙে রঙে সাজানো।কেউ আসবে তার ভালোবাসা তার কাছে সারাজীবনের জন্য নিয়ে যেতে।আবার কেউ কেউ তাদের ভালোবাসাকে বুকে পাথর চাপা রেখে বিদায় দিবে।মিহুকে সাজিয়ে ঘরের এককোণে বসিয়ে রাখা হয়েছে।সে ঘরের একটি কোণে ঘাপটি মেরে বসে আছে।রাতের সেই ঘটনার পর মিথিলা তোর সামনে আসেনি।ইয়াশকে দেখেছ তবে তার ব্যস্ততার শেষ নেই।আচ্ছা আজকে যে সে চলে যাবে সেদিকে কারো খেয়াল নেই?সবাই এতো কাজ নিয়ে ব্যস্ত কেন?সবাই একটু ওর কাছে এসে বসতে পারতেছে না?মিহুর অজান্তেই ওর চোখের কোণে অশ্রুকণা জমাট বাধে।কিছুক্ষণ যেতে তা গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে।মিহু হাতের আঙুল দিয়ে অযন্তে তা মুছে ফেলে।
———
মিথিলাও সেই সকাল থেকে নিজের রুমের এক কোণে ঘাপটি মেরে বসে আছে।সে সকালে সেই যে একবার নিজের রুম থেকে বাইরে বেরিয়েছিল আর বের হয়নি।নিজের রুম বন্ধ করে চুপচাপ বসে আছে।মিথিলা হাঁটুতে মাথা দিয়ে বসে ছিল,মাথা তুলে সামনে তাকাতে চোখ থেকে অশ্রুকণাগুলো
টুপটুপ করে নিচে পড়ে যায়।চোখের সামনে মিহুর সাথে কাটানো সুন্দর মূহুর্ত গুলো ভেসে ওঠে।দুজনের মারামারি ঝগড়াঝাটি কত খুনসুটি দুবোনের।আজকের পর চাইলেও তার বোনের রুমে গিয়ে বোনকে দেখতে পারবে না?চাইলেও যখন-তখন ঝগড়া মারামারি করতে পারবে না?চাইলেও আর বোনকে চোখের সামনে দেখতে পাবে না?
মিথিলা না চাইতেও অশ্রুকথা গুলো বেহায়ার মতো গড়িয়ে পড়ছে তার চোখ বেয়ে।তখন ঘরের দরজায় কেউ নক করে।দুবার নক করতে মিথিলা চোখের পানি মুছে দীর্ঘ পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।সামনে তিতলি হককে দেখে কিয়ৎক্ষণ নিরব থাকে মিথিলা।
তিতলি হককে ভিতরে আসতে না বলে মিথিলা তিতি হককে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।অস্পষ্ট স্বরে বিলাপ করে,,
“মা তোমরা আপুকে এখনি কেন তাড়িয়ে দিচ্ছো?দেখোনা আমার এতো কষ্ট হচ্ছে,আপু তো মরেই যাবে?তোমরা আপুকে এখানেই রেখে দাও মা!”
তিতলি হক নিজেও চোখের অশ্রু ফেলছেন।সহসা মিথিলার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“মেয়েদের জীবন তো এটাই মা।না চাইলেও তাকে একদিন পরের ঘরে যেতেই হবে।আচ্ছা বল কেউ কি চায়,তাদের আপনজন তার বাবা,মা ছেড়ে অচেনা একটা বাড়িতে, পরিবারে গিয়ে থাকতে?চায়না!তবুও তাদের আপনজন, বাবা,মা পরিবার সব ছেড়ে ছুড়ে অন্যের ঘর করতে যেতে হয় অচেনা বাড়িতে!আবার একটা সময় দেখবি ওই অচেনা বাড়িটা, অচেনা বাড়ির লোকজন মেয়েদের সবচেয়ে আপন হয়ে যায়।”
মিথিলা কথাটা শুনে গুঙিয়ে বলরো,, “মা আমি যাবো না তোমাদের ছেড়ে কোথাও?আমি এখানেই থাকবো!”
তিতলি হক মিথিলাকে সোজা করে নিজের চোখের পানি মুছে মেয়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে মৃদু হেসে বলে,,
“বললাম না মেয়েদের জীবন ওটাই।তোকেও একদিন আমাদের ছেড়ে পরের ঘরে যেতে হবে।দেখনা আমি তোর ছোটমা মেজোমা সবার ক্ষেত্রেই তো এক।এভাবে কাঁদতে হয়না পাগলি মেয়ে!”
মিথিলা মায়ের কাঁধে মাথা রেখে বলে,, “যতই বলো আমিতো যাবোনা।কখনো না!”
তিতলি হক মেয়ের পাগলের মতো কথা শুনে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে মৃদু হাসেন।ওকে দাড় করিয়ে বলে,,
“সকাল থেকে তো কিচ্ছুটি মুখে তুলোসনি? আমি খাবার নিয়ে আসছি চুপচাপ খেয়ে নিবি?”
“মা আমি এখন কিছু খাবনা?গলা দিয়ে নামবে না!”
“সাবিনা মানে,দেখ তোর বাবাও সকাল থেকে কিছু কানি উনিও কেমন হয়ে গেছে।সকাল থেকে এতকরে বললাম কিছু খেয়ে নিতে কিছু মুখে তুললো না!এখন তুই যদি এমন করিস তাহলে আমি কোনদিকে যাবো বলতো?”
তিতলি হকের চিন্তিতস্বরের কথাটা শুনতে মিথিলা নুইয়ে যায়।
“তুমি খাবার নিয়ে এসো আমি খেয়ে নিবো।”
“লক্ষীটি আমার!”
তিতলি হক মিথিলার কপালে চুমু দিয়ে খাবার আনতে যায়।মিথিলা সেদিক পানে তাকিয়ে থাকে।
“আচ্ছা ওর যদি ইয়াশের সাথে বিয়ে না হয়ে অন্যকারো সাথে বিয়ে হয়।না না কিসব ভাবছে?আর মা তো জানে ও ইয়াশকে ভালোবাসে তাহলে অন্যবাড়িতে বিয়ে হওয়ার কথা বললো কেন?তবে কি তারা এ সম্পর্কটা মানবে না?”
মিথিলা এসব ভেবে নিজের মাথা চেপে ধরে বিছানায় বসে পড়ে।সে ইয়াশকে না পেলে হয়ত মরেই যাবে।
——————————————————–
বরযাত্রী চলে এসেছে অনেক্ক্ষণ হয়ে গেছে।সবাই বরযাত্রীদের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত।মিথিলা, ইফা, নীলা, রায়না রয়েছে রাফসানের কাছে।নীলা,ইফা,রায়না রাফ সানের সাথে বকবক করে যাচ্ছে মিথিলাকে চুপ থাকতে দেখে রাফসান বলে,,
“আজকে আমার শালিকা এত চুপচাপ কেন?”
রাফসানের কথা শুনে মিথিলা রাফসানের দিকে তাকায়।ঠোটে হাসি ফুটিয়ে বলে,, “না ভাইয়া এমনি?আপনি ওদের সাথে কথা বলুন।”
“আচ্ছা কে জেনো বলেছিল বিয়ের দিন আমাকে ফকির বানাবে।তাকে তো দেখতে পাচ্ছি না?কোথায় সে?”
রাফসান যে মিথিলাকে কথাটা বলেছে মিথিলা বুঝতে পেরে রাফসানের দিকে ঘুরে বসে,ভ্রু উঁচিয়ে বলে,,
“দুলাভাইয়ের আমার ফকির হওয়ার খুব শখ দেখছি?”
“শালিকা আমার এভাবে মন খারাপ করে বসে আছে?শালিকার জন্য নাহয় একদিন ফকির হলাম!কি বলো সবাই?”
“আচ্ছা তাহলে এবার টাকা বের করুন?”
“এভাবে কেউ টাকা দেয় নাকি?বিয়ের সব রিচুযাল পালন করে টাকা নেও?”
“ওকে ফাইন!এই তোরা গেট ধরছিলি কত টাকা দিছে?”
ইফা মিথিলার কথায় মুখ গোমড়া করে বলে,, “মাত্র পাচ হাজার!”
মিথিলা চোখ ইয়া বড় বড় করে বলে,, “মাত্র পাচ হাজার।তোরা ঢুকতে দিয়েছিস কোন আক্কেলে?আমাকে ডাকতে পারলি না?”
“তুমি তো সন্ন্যাসী সেজে বসে ছিলে?”
মিথিলা থতমত খেয়ে বলে,, “আচ্ছা সমস্যা নেই টাকা ইনকাম এখন হবে।ফলো মি গাইস!”
মিথিলা ওখান থেকে উঠে যেতে সবাই ওর পিছন পিছন যাওয়া ধরে।চারজন একটা জায়গায় দাড়িয়ে গোল হয়ে প্লান করতে থাকে।নীলা কয়েকবার মিথিলার কথা শুনে নাকমুখ কুচকালেও রায়না ওকে চুপ করিয়ে রেখেছিল।মেয়ে সবাই প্লান করে ওখান থেকে সড়ে আসে।
——————————————————
তিন কবুল বলে মিহু খানিক্ষন আগে এ বাড়ি ছেড়ে গেল।সবাই তাকে বিদায় জানিয়ে বাড়িতে ঢুকছে।মিহুর তো কাঁদতে কাঁদতে নাজেহাল অবস্থা।মিহুর কান্না দেখে মিথিলা আর ইফাও কাঁদতে কাঁদতে হারিয়ে উঠেছে।মিনহাজ হক তো অসুস্থ হয়ে গেছে।তাকে বাড়িতে ডুকরিয়ে সোফায় বসিয়ে রাখা হয়েছে।মিথিলা একবার নিজের বাবার দিকে নজর দিয়ে সবার দিকে চোখ বুলায়।কিছু একটা মনে হতে,সে ছুটে যায় নিজের রুমের দিকে।পাশের রুমে উকি দিয়েও কাউকে দেখতে পায়না!এবার ছুট লাগায় ছাদের দিকে।ছাদের প্রতিটা সিড়ি বেয়ে উঠতে পা দুটো থমকে যায়।সামনে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।বোনকে বিদায় দেওয়ার পরেই এই দৃশ্যটা যেন তার সহ্য হলো না।হাটু মুড়ে বসে পড়ল সেখানে..!
চলবে,, ইন শা আল্লাহ🍁