#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখিকা:#আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ১৯
রাতে বসার ঘরে বড়রা সবাই মিহুর বিয়ে নিয়ে আলাপ-আলোচনায় বসেছে।মিহুর বিয়ের বেশিদিন বাকি নেই।বিয়েতে কাকে কাকে নেমন্তন্ন করা হবে,বাড়ি কিভাবে সাজানো হবে এসব কথা বলাবলি করছেন বড়রা।মিহু,ইফা,মিথিলা তিনজন খেয়েদেয়ে উঠে নিজেদের রুমে চলে গেছে।আকাশ ইয়াশ বড়দের সাথে বিয়ের বিষয়ে আলাপে থেকে গেছে।থেকে গেছে বললে ভুল হবে তাদের মিনহাজ হক রেখে দিয়েছেন।দুজনকে কাজ বুঝিয়ে দিবেন বলে।ইয়াশ একবার আকাশের দিকে তাকায়, আকাশও ঘাড় উঁচিয়ে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে ঠোট উল্টায়।দুজনে আবার মিনহাজ হকের কথায় মনোযোগ দেয়।
——
মিথিলা মনমরা হয়ে বিছানার উপর বসে ছিল।মিহু ওর পাশে বসে বলে,, “কিরে জামাই মরেছে নাকি?এভাবে বসে আছিস কেন?”
মিথিলা মিহুর দিকে তাকিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে।বুকে মাথা রেখে বলে,,”তুমি আমাদের ছেড়ে চলে যাবে আপু?”
“হ্যাঁ যাবো তুই খুশি হবি না?”
মিথিলা মিহুর মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,,”তুমি অনেক পঁচা আপু!”
“তারজন্যই চলে যাবো।”
মিথিলা এবার শক্ত করে বোনকে জড়িয়ে ধরে।আবদার করে বলে,, “তুমি বিয়ের পর প্রতিদিন এই বাড়িতে আসবে বলো।”
মিহু মিথিলার মাথার হাত রাখে।মুদৃ কন্ঠে বলে,
“বিয়ের পর প্রতিদিন কিভাবে আসবো বলতো?আমি আসতে চাইলেও ও বাড়ি থেকে কি আমাকে আসতে দিবে?”
মিথিলা চুপ থাকে।শক্ত করে বোনকে জড়িয়ে ধরে রাখে।কিছুক্ষণ যেতে মিহু মিথিলার মাথা উঠিয়ে বলে,,
“হয়েছে এখন আর ভালোবাসতে হবে না!এতদিন এই ভালোবাসা কোথায় ছিল?এখন চলে যাচ্ছি এখন ভালোবাসতে আসছে!”
“বিয়ে করোনা।এখন থেকে অনেক ভালোবাসবো তাহলে।”
“এখন শুনছিস একেবারে চলে যাবো তাই এখন ভালোবাসতে এসেছিস।যাহ সর!”
মিথিলা মুখ ঘুরিয়ে বলে,, “তুমি আমার ভালোবাসা বুঝলে না আপু।আসলে আমার ভালোবাসা কেউ বুঝেনা। ”
“হয়েছে আর মুখ ঘুরাতে হবে না। আমি জানি আমার বোন আমাকে অনেক ভালোবাসে।”
মিহু মিথিলাকে কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে।তখন ইফা রুমে প্রবেশ করে।রুমে ঢুকে মুখ বাকিয়ে বলে,,
“ঢং কম করো?এত ভালোবাসাবাসি কিল্লিগা করতাছো দুজন?”
মিহু ইফার দিকে তাকিয়ে বলে,, “আমি চলে গেলে তোর খারাপ লাগবো না ইফু?”
“তোমার কি মনে হয় তুমি চলে গেলে সবচেয়ে কষ্ট আমার হবে।এই শাকচুন্নির সাথে থাকা লাগবো আমার!”
কথাটা বলে ইফা হায় হুতাশ করতে লাগে।মিথিলা রেগে মিহুর দিকে তাকিয়ে বলে,,
“আপু ওই চুন্নিকে আমাকে শাঁকচুন্নি বলতে না করো নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু?”
“আচ্ছা থাম ইফা এদিকে আয়।”
ইফা মিহুর কাছে গিয়ে বসে।মিহু ওকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,, “দুজনকেই খুব মিস করবো।”
“আমরাও!”
মিহু হেসে দুজনের কপালে চুমু খায়।মিথিলা ইফাও হেসে মিহুকে জড়িয়ে ধরে দুপাশ থেকে।
————————————————
“চুপচাপ কেনো বলোতো?”
সামনে বসা ব্যাক্তিটির কথায় ইয়াশ তার দিকে নজর দেয়। সামনে বসা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে বলে,, “কি করবো তাহলে?খুশি হওয়ার মতো কিছু হয়েছে?”
“কেন ভালোবাসি বলোনি?”
“সুযোগ দিলে তো?এই মেয়েকে কিছু বলার আগে আমাকে কথা শুনিয়ে চলে গেল?ওকে নাকি আমি সন্দেহ করছি?সেদিন রাগের মাথায় কি বলেছিলাম সেটা ধরে বসে আছে?”
সামনে বসা ব্যক্তিটি এবার হেসে দেয়।ইয়াশ সে হাসি দেখে ভ্রু কুচকায়। ও হাসির কি বললো।
“অভিমান করেছে বুঝলে?তাই এমন করছে।আর তোমার না জেনে ওইগুলো বলা ঠিক হয়নি।ভাগ্যিস আমি সেদিন তোমাদের দেখেছিলাম।নাহলে এতদিন দুজন দুদিকে থাকতে?”
“তো রাগবো না?আমাকে রেখে অন্যকাউকে প্রিয় বলবে অন্যজনের সাথে এত মিশবে আমি রাগবো না?”
“কবে থেকে ভালোবাসো ওকে?”
ইয়াশ প্রশ্নটা শুনে চুপ থাকল কিছুক্ষণ। বেশ কিছুক্ষণ অতিক্রম হতে বলল,,
“জানিনা কবে থেকে ভালোবাসি?শুধু জানি ভালোবেসে ফেলেছি ওকে আমি।এতদিন ও আমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে জ্বালাতন করত প্রচুর বিরক্ত হতাম।আর আজকে সেই আমি ওর পিছনে ঘুরছি।ও আমাকে ইগনোর করছে?”
“এতদিন তোমার সময় ছিল এখন ওর সময় এসেছে।ঘুরতে থাকো দেখো মেয়ে কবে আবার তোমাকে ভালোবাসি বলে।”
কথাটি বলে সামনের ব্যক্তিটি কিছুক্ষণ চুপ থাকে।ইয়াশকে জিজ্ঞেস করে,, “আচ্ছা আমি তোমাকে কি বলে ডাকবো?”
“এখনো কোনো কিছু হয়নি!”
“হতে কতক্ষণ!”
“হাহ আগে তোমার টা ঠিক করো মামা!তোমারটা কি পটেছে?”
“আমারটা বাদ দেও।জীবনে প্রেম হবে না আমার?যে রনচন্ডী রুপ তার!”
ইয়াশ এবার হেসে দেয়।ইয়াশের হাসি দেখে সামনে বসা ব্যক্তিটি মুখ বাকিয়ে বলে,, “হেসো না তো!”
“আচ্ছা আমি সুযোগ করে দিয়েছি।এখন পটাতে না পারলে আমি কিছু করতে পারবো না।”
সামনের ব্যক্তিটি বাকা হেসে বলে,, “পটতে তো তাকে হবেই!ছোটবেলা থেকে যাকে চেয়ে আসছি তাকে তো অন্যকারো হতে দেওয়া যাবে না।”
———————————————
ইফা আজকে মিহুর রুম রেখে মিথিলার রুমে শুতে এসেছে।এটা দেখে মিথিলা কিছুক্ষণ পাথরের মতো বসে থেকে ইফার দিকে চেয়ে ছিলো।মানে আজকে সকাল থেকে আজব আজব জিনিস ঘটছে।প্রথমে ইয়াশ এখন ইফা।মিথিলাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইফা ওর সামনে গিয়ে তুড়ি বাজায়।মিথিলা কয়েকবার চোখের পলক ফেলে আবার ইফাকে দেখতে থাকে।
“এভাবে কি দেখছো?”
“আচ্ছা একটা কথা বলতো?”
“কি?”
“আজকে সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠছে?নাকি উঠেই নাই?”
“রাখো তো তোমার সূর্যের কথা আগে আমাকে শুতে দাও!ঠান্ডা অনেক।”
“সত্যি তুই আমার সাথে আমার রুমে শুতে এসেছিস?”
ইফা এবার বিরক্ত হয়ে বলে,, “না তোমার সেবা করতে এসেছি?একটা দিন শুতে এসেছি তাই এমন করছো!”
মিথিলা ওর পাশের যায়গা খালি করে দিয়ে বলে,, “আচ্ছা এখানে শুয়ে পড়।আমি আবার কাউকে মুখের উপর না করতে পারিনা!”
“আচ্ছা না করতে হবে না চলে যাচ্ছি।একটা দিন এসেছিলাম তাই এমন করলা।”
ইফা যেতে নিলে মিথিলা ওকে থামতে বলে।
“আরে দাড়া শুয়ে পড়।আমি দরজা লাগিয়ে দিচ্ছি।”
ইফা গিয়ে শুয়ে পড়ে।মিথিলা রুমের দরজা আটকিয়ে, লাইট নিভিয়ে এসে ইফার পাশ শুয়ে পড়ে।বেশ কিছুক্ষণ যেতে দুজন একসাথে দুজনের দিকে ঘুরে বলে ওঠে,,
“শোনো!”
ইফা ভ্রু কুঁচকে তাকায় মিথিলার দিকে,মিথিলাও ভ্রু কুঁচকে তাকায়।ইফা বলে ওঠে,, “আচ্ছা তুমি আগে বলো!”
মিথিলাও বলে,, “না তুই আগে বল!”
“তুমিই বলো!”
“আচ্ছা দুজন একসাথে বলি!আমি এক দুই তিন বলতেই বলবি ঠিকাছে?”
“আচ্ছা!”
মিথিলা গুনতে শুরু করে,, “এক,দুই,তিন,,,!
“তোর ভাইকে আমার পিছু ছেড়ে দিতে বলবি?”
“তোমার ভাইকে আমার পিছু ছেড়ে দিতে বলবা?”
দুজন একসাথে একি কথা বলে অবাক হয়ে তাকায়।মিথিলা শোয়া থেকে উঠে বলে,, “আমার ভাই?”
ইফাও একইভাবে বলে,, “আমার ভাই?”
“হ্যাঁ তোর ভাই?তোর ভাইকে বলবি আমার পিছু ছেড়ে দিতে। তোর ভাইকে আমি আগে ভালোবাসতাম এখন বাসিনা!”
“আর তোমার ওই আকাশ ভাইকেও বলে দিবে,আমাকে যেন বিরক্ত না করে।আমার পিছুপিছু যেন না ঘুরে।”
“আকাশ ভাইয়া তোর পিছনে কেন ঘুরবে?”
“আমার ভাই তোর পিছনে কেন ঘুরবে?ঘুরলে তুই ঘুরবি!”
“তাহলে আকাশ ভাইয়াও তের পিছে ঘুরে না তুই আকাশ ভাইয়ের পিছে ঘুরিস মনে হয়।”
ইফা রেগে বলে,, “মিথুর বাচ্চা শাঁকচুন্নি না জেনে কথা বলবি না!”
মিথিলা রেগে বলে,, “তুই চুন্নি তুইও না জেনে কথা বলবি না!”
“দেখ শাকচুন্নি!”
“তুই কি দেখাবি চুন্নি?”
“দাড়া!”
বলে ইফা মিথিলার চুল টেনে ধরে।মিথিলা ব্যথা পেয়ে বলে,, “ওই চুন্নি,শয়তান তুই আমার চুল ধরেছিস কেন ছাড়?”
“তুই আমার কথা বিশ্বাস করোস না কেন?তোর এমনি হওয়া উচিত!”
মিথিলা এবার ইফার দিকে তেড়ে যায়।ও ইফার পিঠে কয়েকটা কিল দিয়ে বলে,, “ছাড়তে বলছি কিন্তু?”
ইফা ক্ষেপে গিয়ে বলে,,”তুই আমাকে মারলি কেন?”
“তুই আমাকে মারবি আর আমি চুপ থাকবো ভেবেছিস?”
মিথিলা কথাটা বলে ইফার চুল টেনে ধরে।কিছুক্ষণ মারামারি করে হাঁপিয়ে যেতে দুজন থেমে যায়।কিছুক্ষণ চুপ থেকে দুজন দুজনের দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকায়।যেনো সুযোগ পেলে এখনি একে অন্যকে খাতাম করে দিত।মিথিলা কিছুক্ষণ ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে থেকে শুয়ে পড়ে।ইফাও ভেংচি কেটে মিথিলার উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে পড়ে।
চলবে,, ইন শা আল্লাহ🍁