শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(দুই) #Mst.Shah Mira Rahman

0
629

#শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(দুই)
#Mst.Shah Mira Rahman
.
“ভাই,তুমি কি এখনো তাকে ভুলতে পারোনি?”
হঠাৎ আসা প্রশ্নে ভেতরে ভেতরে খানিকটা চমকালো সুলেমান। বুকের বাঁ পাশের চিন চিন ব্যাথাটা টা হু হু করে বেড়ে গেল। চোখের সামনে কিছু মূহূর্তের জন্য ভেসে উঠল এক নিষ্ঠুর পাষাণ রমণীর প্রতিচ্ছবি।জ্বলে উঠলো হৃদপিণ্ড নামক যন্ত্রটা।তবে এসবের কিছুই বুঝতে দিল না সালমান কে।
সকালের সেই ঘটনার পর কিছুক্ষণ আগেই সালমান এসেছিল সুলেমানের কাছে। সুলেমান তখন টেবিলের ওপর রাখা ফাইলপত্র ঘাটছিল। সালমান এসেই ধপ করে সুলেমানের বেডের ওপর শুয়ে পড়ল। সুলেমান দেখল কিছু বলল না।
“ভাই!”
“হুম।”
“সরি।”
সুলেমান হাসল।কিছু বলল না।
“ভাই,আজ আমি তোমার সাথে ঘুমাবো।”
সুলেমান তাকালো তার দিকে। সালমান তার দিকেই তাকিয়ে আছে। কিছু না বলে সুলেমান হাতের ফাইল গুলো গুছিয়ে বেডের দিকে এগিয়ে এলো।সালমান চটজলদি ভালো ভাবে শুয়ে সুলেমান কে শোয়ার জন্য জায়গা করে দিল। সুলেমান সোজা হয়ে শুতেই সালমান একপাশ কাত হয়ে তাকালো তার দিকে।
“কিছু বলবি?”
সালমান সময় নষ্ট করল না। মনের ভেতর রাখা প্রশ্নটা ছুড়ে দিল সুলেমানের দিকে।হুট করে এমন প্রশ্নে সুলেমান অপ্রস্তুত হয়ে পরলেও পরক্ষণে নিজেকে সামলে কাত হয়ে সালমানের দিকে তাকালো।রয়ে সয়ে বলল,
“কার কথা বলছিস?”
এ যেন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা। সালমান হাসল।
“আমায় কি বাচ্চা ভেবেছ তুমি?”
একটু থেমে আবার বলল,
“তিন বছর কম সময় নয় ভাই।যে তোমাকে ছাড়া ভালো আছে তোমারও তাকে ছাড়া ভালো থাকার অধিকার আছে। তোমার উচিত মুভ অন করা। হায়াত ভালো মেয়ে।তোমাকে মনে প্রাণে চায়।তাকে নিয়ে তুমি ভাবতে পরো।”
সুলেমান ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছেড়ে আবার সোজা হয়ে শুয়ে এক হাত মাথায় ও অন্য হাত পেটের উপর রেখে চোখ বন্ধ করে ধীমি গলায় বলল,
“ঘুমা এখন।রাত অনেক হয়েছে।”
সালমান তাড়াতাড়ি এগিয়ে এলো ভাইয়ের দিকে।এক হাত ও এক পা শরীরের উপর তুলে জড়িয়ে ধরল সুলেমান কে।
“আমি চাই তুমি ভালো থাকো।সুখে থাকো।”
সালমান ভাইকে জড়িয়ে ধরে ওভাবেই ঘুমিয়ে গেল।তবে ঘুম নামলো না সুলেমানের চোখে।এক পাষাণ নারী তার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।সাথে উপহার হিসেবে দিয়ে গেছে এক অসহনীয় ভোঁতা যন্ত্রণা।
___
ভোরের স্নিগ্ধ আলো সবে ফুটতে শুরু করেছে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মির্জা বাড়ির সামনের বাগানটা যেন জেগে উঠেছে।সুলেমান সেই কখন থেকেই বাগানের গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছে। নিজের ঘরের বারান্দা থেকে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে হায়াত।সাদা টি শার্ট আর কালো ট্রাউজার পরিহিত সুলেমানের শুধু পিঠ ই দেখা যাচ্ছে। তারপরও মোহাচ্ছন্নের মতো তার দিকে তাকিয়ে আছে হায়াত।এটা তার নিত্যদিনের অভ্যাস। প্রতিদিন সকাল ও বিকাল সুলেমান নিজ হাতে ওই ফুল গাছ গুলোতে পানি দেয়। খুব পছন্দের বাগান তার।চোখ চিকচিক করে উঠল হায়াতের।নজর সরিয়ে নিল সুলেমানের দিক থেকে।যেই মানুষটা তার নয় তাকে দেখে মায়া বাড়ানোর কোনো মানে হয়না।এতে শুধু যন্ত্রণা বাড়ে।অনুভূতি গুলো তিক্ত হয়।যার জন্য এতো মায়া এতো অনুভূতি সে কি বোঝে তাকে?দাম দেয় তার অনুভূতির।হেরে গেছে হায়াত।সেই কবেই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে নিয়তির খেলায়।বারান্দা থেকে সরে এলো সে।তাকে নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে।মরীচিকার পেছনে আর ছুটবে না সে।
গাছে পানি দেওয়া শেষ করে সুলেমান এগিয়ে গেল সামনেই বসার জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারের দিকে। চেয়ারের উপর রাখা তার জগিং স্যুট টা নিয়ে গায়ে গলাতেই পেছন থেকে সকাল হাত বাড়িয়ে দিল তার দিকে।
“উইল ইউ বি মাই জগিং পার্টনার?”
মৃদু হেসে পিছু ফিরল সুলেমান।মুখের হাসি চওড়া করে সকালের হাতে হাত রেখে বলল,
“ইয়েস আই উইল।”
সকাল খিলখিল করে হেসে উঠলো।তবে সেই হাসি বেশিক্ষণ টিকল না। হঠাৎ করেই ঝুটি বাঁধা চুলগুলোয় টান পরতেই আর্তনাদ করে উঠলো সে। বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে পেছনে তাকাতে দেখল সালমান তার দিকে তাকিয়েই দাঁত কেলিয়ে হাসছে।রাগ তরতর করে বাড়ল। এগিয়ে এসে কিছু বলবে তার আগেই সালমান বলে উঠলো,
“পার্টনারের যখন এতই শখ তো বিয়ে করে নিলেই তো পারিস। সকাল সকাল আমাদের জ্বালাতে আসিস কেন?”
নাকের পাটা ফুলে উঠল সকালের। সালমান কে ব্যঙ্গ করে বলল,
“আমার কথা বাদ দে।আগে নিজের টা ভাব।মাথার অর্ধেক চুল তো মেয়েদের পেছনে ঘুরেই পাকালি।আর বেশি দেরী করলে পরে হারিকেন দিয়ে খুঁজেও তোর জন্য বউ পাওয়া যাবে না।শেষে বসে বসে আঙুল চুষা লাগবে তোর দেখে নিস।”
সকালের কথা শেষ হতেই জগিং স্যুট পরিহিত শাহিন মির্জা বেরিয়ে এলেন বাড়ি থেকে।হাতের ইশারায় তিন ভাই বোন কে ডাকলেন।
“কাম,মাই চাইল্ডস।”
সালমানের আর প্রতিউত্তর করা হলো না। সকালের দিকে তাকিয়ে চোখ পাকালো যার অর্থ তোকে আমি পরে দেখে নেব। সকাল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে মুখে ভেঙচি কেটে এগিয়ে গেল বাবার দিকে।চার বাবা ছেলে মেয়ে মিলে বেরিয়ে পরলো সকালের শরীরি ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে।
___
আজ বেশ অনেকদিন পর বাড়ি থেকে বেরিয়েছে সকাল।কিছু কেনা কাটা করার জন্য।বেশ কিছু জলরং ও কিনতে হবে তাকে। বাড়ির গাড়ি নেয়নি।সামনের বাজারেই যাবে আর আসবে।গায়ের ওড়নাটা আরো ভালো ভাবে জড়িয়ে সামনে এগিয়ে গেল সে।তবে বেশিদূর এগোতে পারলো।হুট করেই কোথা থেকে একটা গাড়ি এসে তার সামনে দাঁড়ালো। সকাল চমকালো। বুকের ওপর হাত রেখে নিজেকে স্থির করতেই গাড়ির ভেতর থেকে কেউ দরজা খুলে তার হাত টেনে ধরল।কিছু বুঝে ওঠার আগেই সকাল গাড়ির ভেতর গিয়ে পরল।গাড়ি সাথে সাথে আবার চলতে শুরু করল। কিছু মুহূর্তের ব্যবধানে কি থেকে কি ঘটে গেল কিছুই বুঝল না সকাল। নিজেকে ধাতস্থ করে নিজের অবস্থান বুঝল আগে।কেউ তাকে এক হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।সকাল মুখ তুললো।চোখের সামনে ভেসে উঠলো অতি পরিচিত এক মুখায়ব। সকাল যেন শান্তি পেল।হুট করেই একঝাঁক সুখ জড়িয়ে ধরল তাকে।এই যে শক্ত চোয়াল নিয়ে বসে থাকা অতীব সুদর্শন পুরুষটি তার একমাত্র সুখের কারণ। নিজেকে তার বাহুডোরে আবদ্ধ দেখে চোখ চিকচিক করে উঠল।এভাবেই কেন সবসময় ধরে রাখে না লোকটা তাকে?কেন বন্দি করে না নিজের মাঝে?কেন বারবার তাকে ছেড়ে দেয় নিজের মতো করে?মুহূর্তেই অভিমানেরা ঘিরে ধরলো তাকে। হাত পা নাড়াতে লাগলো।ছাড়া পাওয়ার বৃথা চেষ্টা চালালো।
“সমস্যা কি?এভাবে মোচড়াচ্ছো কেন?
ভারী গলায় সিদ্ধান্তের কড়া ধমক শুনতেই দমে গেল সকাল। ধীর কণ্ঠে বলল,
“ছাড়ুন।”
“ছাড়বো না।”
বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠল সকালের।ইসস সত্যিই যদি এভাবেই ধরে রাখতো লোকটা।সে তো থেকে যেত।তবে ইচ্ছে থাকলেও সবকিছু এতো সহজ নয়।তাই এবার সে নিজের কণ্ঠ একটু কঠিন করল।
“বাড়ি যাবো আমি।”
“লোকমান,গাড়ি আমার বাড়ির দিকে নাও।”
আতকে উঠল সকাল।বড় বড় চোখে তাকালো সিদ্ধান্তের দিকে।
___
বুশরা বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই সিদ্ধান্ত সকালকে নিয়ে গাড়ি থেকে বেরোলো।তারপর এক হাতে সকালের ডান হাত শক্ত করে ধরে এগিয়ে গেল বাড়ির দিকে।
“চাচী তোমার বউমা এসেছে। রাতের খাবার টা এখানে খেয়েই যাবে।”
চেঁচিয়ে কথাটা বলেও থামলো না সিদ্ধান্ত। সকালের হাত ধরে টানতে টানতে দোতলায় উঠে নিজের রুমের দিকে গেল। সকাল অসস্থিতে হাঁসফাঁস করতে লাগলো। বাড়িতে কে আছে না আছে তাদের মধ্যে দিয়ে এভাবে তাকে রুমের ভেতর নিয়ে যাওয়াতে সকাল লজ্জায় পুরো হিম হয়ে গেল।
রান্নাঘরে রাতের রান্নার আয়োজন করছিলেন সুফিয়া বুশরা। সিদ্ধান্তের এমন চেঁচানো শুনে দৌড়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। সিদ্ধান্ত তখন সকালকে নিয়ে দোতলায়। সুফিয়া হেসে দিল।ভাগ্যিস তার স্বামী আনোয়ার বুশরা বাড়িতে নেই।নয়তো মেয়েটাকে বেশ লজ্জায় পরতে হতো।
নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দরজার সাথেই সকালের পিঠ ঠেকিয়ে দাড় করালো সিদ্ধান্ত।অতঃপর তার দুই পাশে দুই হাতের বেষ্টনীতে আটকে নিল।সকাল ঘাবড়ালো। ভয়াতুর চোখে তাকালো সিদ্ধান্তের দিকে। সিদ্ধান্ত সেই দৃষ্টি পাত্তা দিল না।দেখতে লাগলো সকালকে।একদৃষ্টে,পলকহীন। সকালের অসস্থি হচ্ছে।লোকটা কেমন খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে তাকে। এভাবে দেখার কি আছে?যেন আগে কখনো দেখেনি তাকে?ভ্রু কুঁচকে সিদ্ধান্তের দিকে তাকাতেই সিদ্ধান্ত একটা ভয়ানক কথা বলে ফেলল,
“একটা চুমু খাই?”
আতকে উঠলো সকাল।চোখ বড় বড় করে তাকালো সিদ্ধান্তর দিকে।তার উত্তরের অপেক্ষা করল না সিদ্ধান্ত।এক হাত সকালের মাথার পেছনে নিয়ে মুখ নিজের কাছে এগিয়ে এনে তার ঠোঁট বসালো সকালের গোলাপী নরম ঠোঁট জোড়ায়।কেঁপে উঠলো সকাল।দুই হাতে সিদ্ধান্তকে সরানোর চেষ্টা করতেই সিদ্ধান্ত তার শক্ত হাতে সকালের কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। মেরুদন্ড বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল সকালের। অজানা এক আবেশে জড়িয়ে গেল সিদ্ধান্তের শরীরে সাথে।তাকে আগলে নিল সিদ্ধান্ত।ঠোঁটের মৃদু মন্দ স্পর্শ‌ এবার বন্য হয়ে উঠলো।
চলবে❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here