#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||বোনাস পর্ব-০২||
৭৩।
তাজওয়ার নিচে নেমেই মুনিয়া খালার মুখোমুখি হলো। মুনিয়া খালাকে দেখে সে ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“মিসেস লাবণি কোথায়?”
মুনিয়া খালা মাথা নিচু করে বললেন,
“বড় ম্যাডাম তার ঘরে।”
“আহির এই অবস্থা উনি করেছেন?”
মুনিয়া খালা চুপ করে রইলেন। তাজওয়ার গম্ভীরমুখে বলল,
“একটা ছুরি নিয়ে আসো।”
মুনিয়া খালা চোখ বড় বড় করে তাজওয়ারের দিকে তাকালো। চুনি পেছনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“ভাইজান, মাইরা টাইরা ফেলবেন না-কি!”
তাজওয়ার ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“আমি একটা কথা দ্বিতীয় বার বলা পছন্দ করি না।”
মুনিয়া খালা পা বাড়ানোর আগেই চুনি দ্রুত পদে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বলল,
“আমি যাইতাছি। আম্মার যাইতে যাইতে সকাল হইয়া যাইবো।”
চুনি একটা ধারালো ছুরি এনে তাজওয়ারের হাতে দিয়ে দ্রুত পিছিয়ে গেলো। তাজওয়ার এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে ছুরিটা দেখছে। চুনি ঢুক গিলে মায়ের হাত চেপে ধরে বলল,
“আম্মা, সচক্ষে খুনাখুনি দেইখলে কি পুলিশ আমাগোরে ধইরা নি যাইবো?”
মুনিয়া খালা মেয়ের হাত সরিয়ে দিয়ে বললেন,
“চুপ কর ফাজিল মাইয়া। ছুরি দিতে কইলো, আর তুই দিয়া দিলি?”
তাজওয়ার এবার মুনিয়া খালার দিকে তাকিয়ে বলল,
“একটা প্লেট নিয়ে আসো। আর প্লেট ভর্তি মরিচ আর লবণ নিয়ে আসবে।”
চুনি হেসে বলল,
“যাও আম্মা, আমরা হুদাই ভয় পাইতাছি। স্যার তো আপেল খাইবো, তাই ছুরি আনাইছে।”
মুনিয়া খালা ভ্রূ কুঁচকে বললেন,
“লবণ মরিচ দিয়া আপেল খাই তোরে কে কইছে? পেয়ারা, আমড়া, আমলকি এইসব খাই শুনছিলাম।”
“টেবিলে তো আপেল ছাড়া কিছুই নাই। ওও, হয়তো স্যারের পকেটে আছে। গ্যারেজে দাঁড়াইয়া থাকে পোলাডার পকেটেও ফল থাকে। চুরি কইরা নিয়া আসে। আমারেও দেয়।”
“এহন কি এইসব কইবার সময়? যা ছোড মারে ডাইকা আন। আমি মরিচ নিয়ে আইতাছি।”
মুনিয়া খালা এক প্লেট মরিচ আর লবণ নিয়ে এসে তাজওয়ারের দিকে এগিয়ে দিলো। তাজওয়ার টেবিলে ছুরি আর প্লেটটি রেখে বলল,
“মিসেস লাবণিকে নিচে ডেকে আনো।”
মুনিয়া খালা মাথা নেড়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠার আগেই মিসেস লাবণি নিচে নেমে এলেন। তাজওয়ারকে দেখে তিনি ভ্রূ কুঁচকে বললেন,
“তাজওয়ার, তুমি হঠাৎ এখানে?”
তাজওয়ার চেয়ার টেনে পায়ের উপর পা তুলে বসে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল,
“আপনাকে উপহার দিতে এসেছি।”
মিসেস লাবণি মৃদু হেসে বললেন,
“আমাকে উপহার! কীসের!”
“আপনি ভালো করেই জানেন, আপনি আমাকে কি দিয়েছেন। একটা উপহার তো আপনার পাওনা থাকেই।”
মিসেস লাবণি হেসে বললেন,
“বেশ তো! কি সেই উপহার? আমিও তো আগ্রহী আমার হবু জামাইয়ের উপহার গ্রহণ করতে।”
তাজওয়ার হাসলো। কপালে হাত ঘষতে ঘষতে বলল,
“হাত এগিয়ে দিলেই তো পাবেন।”
মিসেস লাবণি দুষ্টু হাসি হেসে বললেন,
“শাশুড়ির সাথে এমন দুষ্টুমি মানায় না।”
“ইয়াং শাশুড়ির সাথে সবকিছুই মানায়। আফটার অল, শাশুড়ি মা তো আমার বয়সী।”
মিসেস লাবণি হাত এগিয়ে দিলেন। তাজওয়ার চোখের পলকেই টেবিল থেকে ছুরিটা নিয়ে লাবণির হাতের তালুতে চালিয়ে দিলো। মুনিয়া খালা তা দেখে ভয়ে পিছিয়ে গেলেন। লাবণি চিৎকার করে উঠলো। লাবণির চিৎকার শুনে আহি আর চুনি অবাক দৃষ্টিতে একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলো। এদিকে লাবণি হাত চেপে ধরে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই তাজওয়ার তার হাত ধরে রক্তমাখা স্থানটি লবণ-মরিচ মিশ্রিত প্লেটের উপর এনে রাখলো। লাবণি তাজওয়ারকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু তাজওয়ার আরো শক্ত করে তাকে চেপে ধরে বলল,
“আহিকে আঘাত করার অধিকার কারো নেই। যে আহিকে আঘাত করবে, আমি তার অস্তিত্ব মিটিয়ে দেবো। আহিকে ভালোবাসার অধিকার আমার, আঘাত করার অধিকারও আমার।”
আহি নিচে নেমে লাবণির এই অবস্থা দেখে তাজওয়ারের দিকে দৌঁড়ে এগিয়ে এলো। আর চেঁচিয়ে বলল,
“পাগল তুমি!”
তাজওয়ার ভাবলেশহীন সুরে বলল,
“তোমাকে দেওয়া আঘাতের চেয়ে বেশি আঘাত দিয়েছি আমি। আগামী এক সপ্তাহ বাম হাতেই সব কাজ সারতে হবে।”
আহি চুনির দিকে তাকালো। চুনি মুখ চেপে হাসছে। আহি নিজের হাসি আটকে তাজওয়ারের দিকে তাকিয়ে মলিন মুখে বলল,
“তুমি কেন আমার জন্য উনাকে আঘাত করছো? আমার জন্য কারো কিছু করতে হবে না। আমার ভাগ্যে এসবই আছে।”
লাবণি চেঁচিয়ে বলল, “অভিনয় বন্ধ করো, আহি।”
তাজওয়ার ভয়ংকর দৃষ্টিতে লাবণির দিকে তাকাতেই লাবণি চুপ হয়ে গেলো। তাজওয়ার আহির হাত ধরে বলল,
“আমি তোমাকে এক্ষুণি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। চলো আমার সাথে।”
আহি ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“না, তাজওয়ার। আমার ভালো লাগছে না। তুমি ডাক্তার বাসায় নিয়ে আসো। আমার বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে না।”
এদিকে লাবণি হাত পরিস্কার করে মুনিয়া খালাকে বললেন হাতে ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার জন্য। মুনিয়া খালা শশব্যস্ত হয়ে হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। লাবণি এবার কাতর মুখে তাজওয়ারের সামনে এসে দাঁড়ালেন। তাজওয়ার কিছু বলার আগেই তিনি বললেন,
“আহি কি তোমাকে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে কিছু বলেছে? দেখো, আমি কিন্তু ওর হাতে ব্যথা দেই নি। ও নিজেই এমন করেছে।”
আহি অবাক দৃষ্টিতে লাবণির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার কাছে প্রমাণ নেই। আর প্রমাণ নেই তাই সবাই আমার সাথে যা ইচ্ছে ব্যবহার করছে।”
আহি এবার তাজওয়ারের হাতে সেই ছুরিটা দিয়ে কান্না ভেজা কন্ঠে বলল,
“প্লিজ কিল মি, আমি এসব আর নিতে পারছি না।”
আহি মাথায় হাত চেপে ধরে বলল,
“শরীরটা অবশ হয়ে আসছে আমার।”
তাজওয়ার আহিকে জড়িয়ে ধরলো। আহি চোখ-মুখ কুঁচকে মনে মনে বলল,
“এই বেটা জড়িয়ে ধরার কোনো সুযোগই হাতছাড়া করবে না!”
তাজওয়ার ব্যস্ত কন্ঠে বললো, “আ’র ইউ ওকে?”
লাবণি বললেন,
“আহি ঠিকই আছে। এসব ওর নাটক। বিশ্বাস করো না ওকে। ও নিজেই নিজের হাত কেটেছে।”
তাজওয়ার রাগী স্বরে বলল,
“কেন কাটবে নিজের হাত? নিশ্চয় আপনিই ওকে বাধ্য করেছেন!”
“বাধ্য করি নি৷ শুধু বলেছি রাদের সাথে সেহেরি পর্যন্ত ঘুরাঘুরি না করতে।”
আহি চেঁচিয়ে বলল,
“রাদ এসবের মধ্যে কেন আসছে? রাদের সাথে আমি ঘুরাঘুরি করি আপনাকে কে বলেছে? যদি এই মুহূর্তে আপনি প্রমাণ করতে পারেন, আমি এতোদিন রাদের সাথে ঘুরেছি, তাহলে আমি এক্ষুণি নিজের প্রাণ নিয়ে নেবো।”
“আচ্ছা, তাহলে তোমার নতুন কোনো প্রেমিক নিশ্চয়?”
তাজওয়ার রাগী স্বরে বলল,
“আহি ওর ফ্রেন্ড লিনাশার সাথে ছিল।”
মিসেস লাবণি তাজওয়ারের কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন। পরক্ষণেই তিনি বললেন,
“তোমাকে কে বলেছে?”
“আহি বলেছে।”
তাজওয়ারের কথায় লাবণি এবার বিস্তর হাসলেন। এরপর হাসি আটকে বললেন,
“আর তুমি বিশ্বাসও করলে?”
“মানে!”
“আরেহ, লিনাশা আমার বোন। তুমি কি লিনাশার ব্যাপারে কিছু জানো না? লিনাশা আর আহির দেখা হওয়া অসম্ভব। ওদের তো কোনো যোগাযোগও নেই। লিনাশা তো আহিকে সহ্যই করতে পারে না।”
আহি মনে মনে হাসলো। তাজওয়ার আহির দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকালো। আহি এবার চুনিকে বলল,
“চাঁদনি, আমার ফোনটা নিয়ে আসো।”
লাবণি বললেন, “ফোন দিয়ে কি করবে?”
“আমাকে তো লিনাশা সহ্যই করতে পারে না। আমিও সবাইকে জানাতে চাই, লিনাশা আমাকে কি পরিমাণ ঘৃণা করে।”
চুনি ফোন নিয়ে আসতেই আহি ফোনের লগ তাজওয়ারকে দেখিয়ে বলল,
“এটাই ফাইনাল, আজকের পর থেকে কেউ যদি আমার প্রাইভেসি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে, না আমি এই বাসায় থাকবো, না আমি তোমাকে বিয়ে করবো। অসহ্য লাগছে এসব! আমি মানুষ, কোনো যন্ত্র নই।”
আহি এবার লিনাশার নম্বরে ডায়াল করলো। এরপর কলটা লাউড স্পিকারে রাখলো৷ লিনাশা হ্যালো বলতেই লাবণি চমকে উঠলো। লিনাশা বলল,
“আহি, আমি একটু পর তোকেই ফোন করতাম। চল আজ রাতে জুয়েলারি শপে যাই। বিয়ের পর পরার জন্য কিছু চুড়ি কিনবো ভাবছি।”
আহি লাবণির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আজ বাদ দে। আমার হাত কেটে গেছে।”
লিনাশা ব্যস্ত কন্ঠে বলল, “কীভাবে কাটলো?”
“এসব বাদ দে। ওমন কিছু হয় নি। আমি এখ রাখছি। পরে কথা হবে।”
আহি কল কেটে দিয়ে লাবণিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“বন্ধুত্বে মান অভিমান থাকে, কিন্তু ঘৃণা করা, অসহ্য লাগা এই শব্দগুলো বন্ধুত্বে মানায় না।”
লাবণি কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাজওয়ার বলল,
“আহির সাথে ফার্দার এমন বিহেইভ করলে, আমি এবার হাতে ছুরি চালিয়েছি মাত্র। পরের বার হাতটাই কেটে দেবো। আহির যা ইচ্ছে করবে, আপনার অনুমতির প্রয়োজন নেই। রানী কারো অনুমতি নেয় না। একমাত্র রাজার আদেশ ছাড়া সে কারো আদেশে চলতে বাধ্য নয়। আর আহি তাজওয়ার খানের রানী।”
তাজওয়ার কথাটি বলে আহির কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে পড়লো। আর যাওয়ার আগে বলল, সে ডাক্তার পাঠিয়ে দেবে।
এদিকে তাজওয়ার চলে যেতেই আহি লাবণির সামনে এসে দাঁড়ালো। লাবণি ভ্রূ কুঁচকে আহির দিকে তাকিয়ে আছে। আহি লাবণির হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“রাজা যেই হোক, রানীর ক্ষমতার কাছে তার সবটাই শূন্য। দাবার ঘরে যেমন রানীর আধিপত্য বেশি, এবার আপনার চক্রে আমার আধিপত্য বেশি। এবার দেখা যাক, মিসেস লাবণি মেহেরার আধিপত্য কতোদূর?”
লাবণি রাগী দৃষ্টিতে আহির দিকে তাকিয়ে রইলো। আর মনে মনে বলল,
“তোমার এমন পরিণতি করবো, তুমি আর নিজের চেহারাও আয়নায় দেখতে চায়বে না।”
৭৪।
আহি মলিন মুখে রেস্টুরেন্টে বসে আছে। তাজওয়ার তার সামনে বসা। দু’জনই আজ একসাথে ইফতার করেছে। আহি তাজওয়ারের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি গতকাল মিসেস লাবণির সাথে যা করেছো ঠিক করো নি। এটা অন্যায়। কিন্তু আমার খারাপ লাগছে না। উনি আমার উপর এতো অত্যাচার করেছে, সেই তুলনায় তার হাতে দেওয়া ক্ষতটা একদম নগন্য।”
আহি তাজওয়ারের হাত ধরে কান্না ভেজা কন্ঠে বলল,
“আমি মাকে হারিয়েছি একমাত্র উনার জন্য। শুধু মাকে নয়, লিনাশার সাথেও অনেক বছর আমার যোগাযোগ ছিল না। তোমাকে আমি বিয়ে করতে কেন ভয় পাচ্ছি, জানো? কারণ আমি জানি তুমি সব মেয়েদের সাথেই মেলামেশা করো। বাবাও তেমন ছিল। আর এরপর বাসায় এসে আমার মাকে কষ্ট দিতো। আমি এসব দেখে বড় হয়েছি। আমার মন ভেঙে গেছে, তাজওয়ার। আমি সহ্য করতে পারি না এসব।”
তাজওয়ার আহির হাত ধরে বলল,
“আমি তোমার সাথে এমন করবো না, আহি। তোমার জায়গাটা আমি কাউকে দেবো না।”
আহি মলিন মুখে বলল,
“বিশ্বাস তো হচ্ছে না। তবুও এই মুহূর্তে তোমাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে। কেন করছে, জানি না।”
তাজওয়ার মুচকি হাসলো। আহির হাতে তার ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,
“তুমি হয়তো আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো, আর এটা তুমি বুঝতেই পারছো না।”
আহি মনে মনে বলল, “বয়েই গেছে আমার!”
এবার তাজওয়ার বলল,
“কাল আমার বন্ধু একটা পার্টি এরেঞ্জ করেছে। তুমি সন্ধ্যার পর তৈরী থেকো।”
“রমযান মাসে কীসের পার্টি!”
“আরেহ ওরকম কিছু না৷ সবাই একসাথে ডিনার করবো।”
“ইফতারের আয়োজন করতে পারতো। আমার এসব বোরিং লাগে। আর তোমার ফ্রেন্ডদের আমি মোটেও বিশ্বাস করতে পারি না। বিয়ের পর অন্তত ওরা যাতে আমার সামনে না আসে।”
তাজওয়ার মুচকি হেসে বলল,
“তুমি যা বলবে, তাই হবে। কিন্তু পার্টিটা এটেন্ড করতেই হবে। প্লিজ আহি, না করো না। তোমাকে অনেকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো। আফটার অল, আমাদের এনগেজমেন্টের পর কোথাও ঘোরা হয় নি।”
তাজওয়ারের অনুরোধে পরদিন আহি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলো। কালো জামদানী শাড়ি পরে এসেছে আহি। গাড়ি থেকে নামতেই সে চমকে উঠলো। কারণ তাজওয়ার তাকে মিথ্যে বলেছিল। এটা কোনো সাধারণ অনুষ্ঠান না। আশেপাশে মৃদু আলো জ্বলছে। সুইমিংপুলের পাশে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছে। পাশে খোলামেলা পোশাক পরে অনেকগুলো মেয়ে দাঁড়িয়ে নেশাদ্রব্য গ্রহণ করছে। আহি তাজওয়ারের দিকে তেড়ে এসে বলল,
“এটা তোমার বন্ধুর ডিনার পার্টি!”
তাজওয়ার বলল, “রিল্যাক্স।”
তখনই পেছন থেকে আফিফের কন্ঠ ভেসে আসতেই আহি পেছন ফিরে তাকালো। দেখলো আফিফ সবাইকে ওয়াইন গ্লাস এগিয়ে দিচ্ছে। আহি তা দেখে তাজওয়ারের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি হচ্ছে এসব?”
তাজওয়ার বলল,
“আরেহ তুমি জানো না? আফিফ রাফাত এখন আমার পারসোনাল এসিস্ট্যান্ট!”
“পারসোনাল এসিস্ট্যান্ট কি ওয়েটারের কাজ করে?”
“তাজওয়ার খানের এসিস্ট্যান্টকে সব করতে হয়। তোমার কেন সমস্যা হচ্ছে, আহি?”
আহি ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“আফিফ আমার ফ্রেন্ডের হাসবেন্ড। জিনিসটা দেখতেই দৃষ্টিকটু লাগছে।”
“কাম অন সুইটহার্ট। এমন ফ্রেন্ড বানাও কেন, যাদের ক্লাসই তোমার সাথে ম্যাচ করে না!”
আহি বিরক্ত মুখে তাজওয়ারের দিকে তাকিয়ে রইলো। তাজওয়ার আফিফকে ডাকতেই আফিফ আর আহির চোখাচোখি হলো। আফিফ চোখ নামিয়ে ট্রে নিয়ে তাজওয়ারের সামনে এসে দাঁড়ালো। তাজওয়ার বাঁকা হেসে একটি মেয়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রূ নাচাতেই মেয়েটি এলোমেলো পা ফেলে আফিফের দিকে এগিয়ে এলো। আফিফের কাছাকাছি আসতেই মেয়েটি আফিফকে হালকা ধাক্কা দিলো, আর ওমনি আফিফের হাতে থাকা গ্লাসটি উলটে গেলো, আর গ্লাসে থাকা সব এলকোহল মেশানো পানীয় আহির শাড়িতে ছিঁটকে পড়লো। আহি কয়েক পা পিছিয়ে যেতেই আফিফ ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
“সরি, সরি।”
তাজওয়ার হুট করে সবার সামনে আফিফের গালে সশব্দে চড় বসিয়ে দিলো। আফিফ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আহি নিজেও অবাক। সে তাজওয়ারের হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
“পাগল হয়ে গেছো?”
“আমাকে পাগল বলছো তুমি? দেখলে না ও কি করলো?”
চলবে-
(প্রচুর ঘুম আসছে। তাই আর লিখতে পারলাম না।)