নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_৩৭

0
408

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_৩৭

মিনহাজ নিভু নিভু চোখে তাকালো নাহিদ চৌধুরীর দিকে।
নাহিদ চৌধুরী নিজের ছেলেকে দেখে আঁতকে উঠলেন। এ কেমন বিধ্বস্ত অবস্থা হয়েছে উনার ছেলের! এর আগে তো কখনো মিনহাজকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখেন নি উনি। তবে আজ কি এমন হলো যার জন্য উনার ছেলের এই অবস্থা?

নাহিদ চৌধুরী বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন মিনহাজের অবস্থা দেখে। কোন কারনে মিনহাজের এই হাল তা জানতে উদগ্রীব হয়ে প্রশ্ন করলেন,”মিনহাজ! বাবা কি হয়েছে তোর? তোকে এরকম দেখাচ্ছে কেন?”

“অনুশোচনা, ভীষণ অনুশোচনা হচ্ছে বাবা। আমি আর পারছি না নিজেকে সামলাতে। পারছি না সবার সামনে হাসিখুশি থাকার নাটক করতে।” মাতাল স্বরে প্রতিত্তোরে বললো মিনহাজ।

“কিসের অনুশোচনা তোর?”

“ও তুমি বুঝবে না। তাই তোমাকে বলে কোনো লাভ নেই।” বলে অ্যালকোহলের বোতলে মুখ লাগিয়ে মদ্যপান করতে লাগলো মিনহাজ।

“আমি তোর বাবা হই। আমি বুঝবো না তো কে বুঝবে? তুই বল আমাকে। আমি ঠিক বুঝবো তোর কথা।”

নাহিদ চৌধুরীর এ কথা শুনে মদ্যপান করা থামিয়ে দেয় মিনহাজ। নাহিদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে বলে উঠে,”আরুর সাথে নাটক করতে গিয়ে আমি সত্যিই ওর প্রেমে পড়েছিলাম বাবা। ওর মায়ায় আটকে গিয়েছিলাম। ওর যেই চোখে এক সময় আমার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা দেখেছি ঠিক সেই চোখে সেদিন আমি নিজের জন্য আকাশসম ঘৃণা দেখেছি। ওর চোখের চাহনি দেখেই আমার ভেতরটা শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। এতো কিছুর পরে আমার আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না বাবা। আরশাদ রায়হানের মতো আমাকেও মেরে ফেলো প্লিজ। এ জীবন নরক সমতুল্য হয়ে উঠেছে। আমি আর পারছি না এই অনুশোচনা বয়ে বেড়াতে।”

মিনহাজের প্রতিত্তোরে কিছু বলার জন্য নাহিদ চৌধুরী কোনো শব্দ খুজে পেলেন না। উনার শব্দভান্ডারের সব শব্দ যেনো এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে মিনহাজের মুখ থেকে এ কথাগুলো শুনে।

নাহিদ চৌধুরীকে চুপ থাকতে দেখে মিনহাজ আবার বলে উঠলো,”জানো বাবা, তোমার কৃতকর্মের ফল আমাদের দুই ভাইকে পেতে হচ্ছে। আরুকে আমি একা নই, আমার ভাই সমুদ্রও ভালোবাসে। অনেক ভালোবাসে। অথচ দেখো, দুই ভাইয়ের মধ্যে কেউই আরুকে নিজের করে পেলাম না।”
কথাটি বলে পাগলের মতো হাসতে থাকে মিনহাজ।

“মিনহাজ!”

“বলেছিলাম না! তুমি বুঝবে না। ভালোবাসার অর্থ তুমি কখনোই বুঝো নি। যদি বুঝতে তাহলে আজ আমার মা আমার সাথে থাকতেন। আমাকে এভাবে একাতিত্বকে সঙ্গী করে বেড়ে উঠতে হতো না। বাদ দাও সেসব, তুমি এখন এখান থেকে চলে যাও প্লিজ। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।” বলে আবারও মদ্যপান করতে থাকে মিনহাজ।

——

সমুদ্র বাড়িতে প্রবেশ করতেই নোমান আহমেদ ও ইয়াসমিন সমুদ্রের পথ আটকে দাঁড়ান। নোমান আহমেদ ক্ষিপ্ত স্বরে জিজ্ঞেস করেন,”কি সমস্যা তোমার? তুমি নাকি নিলুকে বলেছো পাত্রপক্ষের সামনে না যেতে? তারজন্য বিকেল থেকে মেয়েটা ঘরের দোর এটে বসে আছে। কি ভেবেছেন উনারা ভাবতে পারছো তুমি? আমার সম্মানের কোনো দাম নেই তোমাদের কাছে?”

“যাকে বিয়ে করবে না তার সামনে অযথা সং সেজে বসে থাকার কোনো মানে হয় না বাবা।” নিচের দিকে তাকিয়ে সমুদ্র শান্ত স্বরে জবাব দেয়।

“নিলু কাকে বিয়ে করবে আর কাকে করবে না তা কি তোমাকে বলেছে ও? তুমি নিজে বিয়ে করবে না দেখে কি ওকেও বিয়ে করতে দিবে না?”

“আমি কখন বললাম নিলুকে বিয়ে করতে দিবো না। ও চাইলে এখনি ওর বিয়ে হবে। কিন্তু ও যাকে পছন্দ করে তার সাথে হবে।”

“তাহলে পাত্রপক্ষের সামনে আসতে সমস্যা কোথায়? এমনও তো হতে পারতো ও আমার বন্ধুর ছেলেকে পছন্দ করেছে?”

“আরে ও আমার বন্ধু তন্ময়কে পছন্দ করে। আর তাই তন্ময়ের সাথেই আমি ওর বিয়ে দিবো। তোমার বন্ধুর ছেলেকে বাসায় আনার আগে একবার ওকে জিজ্ঞেস করেছো ও কি চায়? ওর কোনো পছন্দ আছে নাকি? আমাদের কি মন নেই? অনুভূতি নেই? আমরা কি কাউকে ভালোবাসতে পারি না?” কথাগুলো নোমান আহমেদের চোখের দিকে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত স্বরে বলেছে সমুদ্র। কথাগুলো বলতে গিয়ে সমুদ্রের চোখে পানি চলে এসেছে।
সমুদ্রের চোখে পানি দেখে নোমান আহমেদ ও ইয়াসমিন হতভম্ব হয়ে গেলেন। কেননা সমুদ্রের বুঝ হওয়ার পর থেকে কখনো সমুদ্রকে কাঁদতে দেখেন নি উনারা। সবসময় হাসিখুশিতে মেতে থাকতো ছেলেটা। আর আজ সেই ছেলের চোখেই পানি! সমুদ্রের চোখের পানি যে নোমান আহমেদ ও ইয়াসমিনের ভেতরটায় ঝড় তুলে দিয়েছে। তা কি জানে সমুদ্র?

ইয়াসমিন দ্রুত বেগে সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরলেন। পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে চিন্তিত স্বরে শুধালেন,”বাবু, কি হয়েছে তোর? তুই কাঁদছিস কেন?”

মায়ের আদর পেয়ে সমুদ্র আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না। ইয়াসমিনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,”আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মা। আমি আর এ পরাজয় মেনে নিতে পারছি না। প্লিজ আমার ললনাকে আমার কাছে এনে দাও মা। আমি আর কখনো তোমাদের কাছে কিচ্ছু চাইবো না। প্লিজ মা, আমাকে আমার সর্বনাশিনীকে এনে দাও।”

নোমান আহমেদ সমুদ্রের চোখে পানি দেখে নরম হয়ে এলেন। সমুদ্রের মাথায় হাত রেখে বললেন,”শান্ত হো, এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। আমরা কথা বলবো আরভীর পরিবারের সাথে। তুই চিন্তা করিস না। আমরা কাল সকালেই যাবো আরভীদের বাড়িতে।”

সমুদ্রের কন্ঠস্বর পেয়ে নিলু দরজার কাছে দাঁড়িয়ে শোনার চেষ্টা করছিলো বাহিরে কি কথা হচ্ছে। কিন্তু যখন সমুদ্রের কান্নার শব্দ পেলো তখন তড়িৎ গতিতে দরজা খুলে দিয়ে সমুদ্রের দিকে অবাক চোখে তাকায়।
নিজের ভাইকে এভাবে কাঁদতে দেখে নিলুর চোখেও পানি চলে আসে। দৌড়ে সমুদ্রের কাছে এসে সমুদ্রের কাধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,”ভাইয়া কি হয়েছে তোমার? এভাবে কাঁদছো কেন?”

সমুদ্র জবাবে কিছু বললো না। তবে মিনিট তিনেক সময় নিয়ে নিজেকে কিছুটা সামলে নেয়। ইয়াসমিনকে ছেড়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে,”কাউকে যেতে হবে না ও বাড়িতে।”

তারপর দ্রুত পায়ে হেঁটে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আঁটকে দেয়।

সবাই নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সমুদ্রের ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে। ইয়াসমিনের চোখ জোড়াও ছলছল করছে। নিজের ছেলেকে কঁদতে দেখে কোনো মা কি পারে নিজেকে শান্ত রাখতে?

“তোমরা কাঁদলে সমুদ্র আরো ভেঙে পড়বে। যাও সবাই, যে যার ঘরে যাও। কাল সকালে একবার ও বাড়িতে গিয়ে দেখি।” নোমান আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন।

“মেয়েটা অনেক ভাগ্যবতী। কিন্তু আফসোস আমার ছেলের ভালোবাসার কদর করতে পারলো না।”

রাত তিনটে বেজে বারো মিনিট। আরভী গভীর ঘুমে মগ্ন। কিন্তু হঠাৎ দরজার খটখট শব্দে আরভীর ঘুম হালকা হয়ে আসে। আরভী চোখ মেলে মোবাইলে সময় দেখে নেয়। এতো রাতে দরজায় কে নক করবে? আফিফা আফরোজ নন তো আবার? কোনো সমস্যা হয়েছে কি? এসব ভেবে চিন্তিত হয়ে দ্রুত বেগে উঠে দরজা খুলে আরভী। কিন্তু দরজার সামনে কেউই দাঁড়িয়ে নেই। তাহলে দরজায় নক করলো কে? জানার জন্য আরভী নিজ ঘর থেকে বের হয়। কিন্তু বের হওয়ার সাথেই কেউ একজন আরভীর মুখ চেপে ধরে পেছন থেকে। আরভী চেষ্টা করে লোকটির থেকে নিজেকে ছাড়াবার। কিন্তু পুরুষ শক্তির সাথে কিছুতেই পেরে উঠতে পারছে না।
লোকটি আরভীকে জোর পূর্বক ছাদের দিকে নিয়ে যায়। আরভী বুঝতে পারলো না কে এই লোক, বাড়িতে প্রবেশ করলো কিভাবে আর আরভীকেই বা কেন এভাবে ছাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

মাথা গরম করলে চলবে না। ঠান্ডা মাথায় সব কিছু সামাল দিতে হবে। আর তা ভেবেই আরভী কিছুটা শান্ত হয়।
লোকটি ছাদে গিয়ে আরভীকে ছেড়ে দেয়। আরভীর উল্টো ঘুরে লোকটির সম্মুখে দাঁড়ায়।

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে আরভী বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুচকে ফেলে। মুখে বিরক্তিকর “চ” শব্দ উচ্চারণ করে শুধায়,”আপনি? বাড়িতে ঢুকলেন কিভাবে?”

“সদর দরজা দিয়ে ললনা।”

“গার্ডরা আপনাকে ঢুকতে দিয়েছে?”

“ওদের চোখ ফাকি দিয়ে এসেছি। আমি আগেও বলেছি আপনি যাদের কাজে রেখেছেন তারা সবাই অকর্মক। আমাকে বিয়ে করে নিন। সব ক’টাকে কিভাবে কর্মঠ বানাতে হয় তা দেখিয়ে দিবো। এছাড়া আমাকে বিয়ে করলে আপনার আরো অনেক লাভ আছে। ফ্রিতে একটা বডিগার্ড পেয়ে যাবেন। যে সব সময় আপনাকে ভালোবেসে আগলে রাখবে।”

“আর সুযোগ বুঝে পীঠে ছুড়ি বসাবে। কি তাই তো?”

“এই জন্যই লোকে বলে মেয়েরা বুঝে কম চিল্লায় বেশি। আরে আপনাকে মারতে চাইলে এখনি মারতে পারি। কিন্তু আমি তা করবো না। কারন সমুদ্র গুড বয় এন্ড হি লাভস ইউ।”

“সেদিন আপনাকে আমি যে কথাটি বলেছি তা কিন্তু মিথ্যে নয় সমুদ্র। আমি এখন অন্যের আমানত। আশা করছি অন্যের আমানতে আপনি নজর দিবেন না।”

“আর যদি আমার আমানত অন্য কেউ চুরি করে নেয়? সেক্ষেত্রে আমার কি করা উচিত? তাকে মেরবো কি?”

“আমি কোনো কালেই আপনার আমানত ছিলাম না। আর তাকে মারলেই কি আমাকে পেয়ে যাবেন? এতো সহজ?”

“তাহলে আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না তাই তো?”

“একদম তাই। এখন ভালোয় ভালোয় এখান থেকে কেটে পড়ুন। অন্যথায় আগের বারের মতো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করতে আমি দু’বার ভাববো না।”

“হয় ভালোবাসুন নাহয় মৃত্যুকে বরন করে নিন।” কথাটি বলে সমুদ্র আরভীর কপালে বন্দুক ঠেকায়। আর তা দেখে আরভীর চোখ-মুখ কঠিন হয়ে আসে। নিজের জেদে অটুট থেকে বলে,”চালান গুলি। প্রস্তুত আমি তবুও আপনাকে ভালোবাসবো না।”

“একটু ভালোবাসলে কি হয় ললনা? আমি যে আপনার ভালোবাসার অভাবে পুষ্টিহীনতায় ভুগছি। আমাকে দেখে কি আপনি তা বুঝতে পারছেন না?”

“মিনহাজকে নাহিদ চৌধুরীর ভাগ্নে ভেবে তার রক্তে নিজের হাত রঞ্জিত করতে চেয়েছিলাম অথচ আপনি তা হতে দেন নি। যান আপনাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি, ধরে নিয়ে আসুন আপনার মামা ও ভাগ্নেকে। পুলিশের হাতে তুলে দিন তাদের। আমি তাদের ধ্বংস দেখতে চাই। আমার এই চোখ দুটো দিয়ে তাদের মৃত্যু যন্ত্রণা দেখতে চাই। পারবেন এরকম করতে? যদি পারেন তাহলে বলুন, যেদিন যেই মূহুর্তে এমনটা করবেন ঠিক সেদিন সেই মূহুর্তে আমি আপনাকে বিয়ে করবো।”

“হৃদয়পুরের সো কলড আদর্শবান মেয়র আরভী রায়হান ডটার অব আরশাদ রায়হান নিজের মনের মাঝে এরকম এক ভয়ংকর ইচ্ছে পোষণ করে চলেছে তা কি জানে সাধারণ জনগন?”

“নাহিদ চৌধুরী যে ভালোমানুষির আড়ালে এতো কিছু করছে তা কি জানতো?”

সমুদ্র বন্দুকটি আরভীর মাথা থেকে সরিয়ে এক পাশে ছুড়ে ফেলে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দেওয়ালে একের পর এক ঘুষি দিতে থাকে। এই নিস্তব্ধ রাতে সমুদ্রের প্রতিটি ঘুষির শব্দ স্পষ্ট ভাবেই আরভীর কানে ভেসে আসছে। এভাবে দেওয়ালে ঘুষি দেওয়ার ফলে সমুদ্রের হাত থেকে রক্ত ঝরে তা গিয়ে দেওয়ালে লেগেছে। যা দেখে আরভী বলে উঠে,”শুধু শুধু আমার বাড়ির দেওয়াল নষ্ট করছেন কেন?”

সমুদ্র থামে আরভীর কথায়। রক্তিম চোখে তাকায় আরভীর দিকে। আরভীর প্রতি রাগ কমার বদলে ক্ষণে ক্ষণে বেড়েই চলেছে। তারউপর আরভীর এ কথা যা সমুদ্রের ক্রোধানলকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সমুদ্র দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় আরভীর দিকে।
সমুদ্রকে নিজের দিকে আসতে দেখে আরভী পিছিয়ে যেতে থাকে। অনেকটা ছাদের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। কিন্তু আরেকটু পিছিয়ে যাওয়ার আগেই সমুদ্র নিজের গতি আরো বেড়িয়ে দিয়ে আরভীর দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে। ক্রোধান্বিত স্বরে বলে উঠে,”এতোটা অনুভূতি হীন একটা মানুষ কি করে হতে পারে? আমাকে দেখে কি সামান্য দয়ামায়া হয় না আপনার? একটা ছেলে বছরের পর বছর আপনার প্রেমের দহনে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে আর আপনি মজা নিচ্ছেন? আমাকে খেলনা মনে হয় আপনার?”

“মিথ্যে অপবাদ দিবেন না সমুদ্র। আমি আপনাকে নিয়ে খেললাম কখন?”

আরভীর এ কথায় সমুদ্র আরভীকে ছেড়ে দেয়। দু’হাতে দিয়ে খামচে ধরে নিজের চুল। আজ কেন যেনো আরভীর উপর প্রচন্ড পরিমানে রাগ হচ্ছে। আর তা ক্ষণে ক্ষণে তরতর করে বেড়েই চলেছে। থামার কোনো নামগন্ধ নেই। তারউপর আরভীর এসব কথা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করছে।

কোনো রকমে নিজেকে ধাতস্থ করে সমুদ্র আরভীর উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,”কি চান আপনি? আমি মরে গেলে আপনার শান্তি হবে? কেননা আমি বেঁচে থাকতে তো আর আপনাকে শান্তিতে থাকতে দিবো না। বাই হুক অর বাই ক্রুক, আপনাকে আমার করেই ছাড়বো।”

“আপনাকে ধরে রেখেছে কে? ইচ্ছে হলে মরে যান। কি ভেবেছেন? এসব কথা বলে আমাকে রাজি করিয়ে নিবেন? আরভী রায়হানকে এতোটাই কোমল মনে হয় আপনার?”

“আমি মরে গেলে আপনি খুশি হবেন?”

“হয়তো। কেননা আপনি নাহিদ চৌধুরীর প্রাণ। আপনি মরে গেলে নাহিদ চৌধুরী নিজের প্রাণ হারিয়ে ফেলবেন। আর তা দেখে আমি শান্তি পাবো। আবার এমনও হতে পারে আপনার কবরে মাটি দিতে নাহিদ চৌধুরী সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে এখানে ছুটে এলেন। আর এমনটা হলে তো আমার দ্বিগুন লাভ।”

“তবে তাই হোক, আমরা বরং মরেই যাই। একসাথে বাঁচতে না পারলেও একসাথে মরতে তো পারি?”

আরভী কিছু বুঝে উঠার আগেই কথাটি শেষ করে সমুদ্র আরভীকে নিয়ে ছাদ থেকে লাফ দেয়। এদিকে আরভী ভাবতেও পারে নি সমুদ্র এমন কিছু একটা করবে। আরভী তো ভেবেছিলো আরভীর এসব কথা শুনে সমুদ্র পিছিয়ে যাবে। আরভীর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করবে। কিন্তু সমুদ্র যে আরভীকে নিয়ে লাফ দিবে তা কে জানতো?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here