অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ #লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) #পর্ব_৩২( সমাপ্তির দ্বিতীয়াংশ

0
204

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_৩২( সমাপ্তির দ্বিতীয়াংশ)

তাবাসসুম পাগল পাগল হয়ে গেল। পায়চারী করে একের পর এক রুম চেক করছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিগণকে পেলো না। মনে হচ্ছে পুরো বাসা খালি। হিয়া দেয়ান বুঝতে পেরেছে ফাহিম পরিবারের সবাই তাদের ধোঁকা দিয়েছে। তিনি মেয়ের দিকে ক্ষোভ-মিশ্রিত দৃষ্টিতে চেয়ে বলেন,

“আমার মনে হচ্ছে তারা আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রিসোর্টে চলে গেছে। এখনি আমাদের বের হওয়া উচিৎ চল।”

দাঁতে দাঁত চেপে তৎক্ষণাৎ মা-কে নিয়ে বাসার থেকে বেরিয়ে যায় তাবাসসুম। তাদের কান্ড আড়াল থেকে নিশ্চুপে পরখ করছিল রাফি। মা-বেটিকে যেতে দেখে নিজের মালিককে রিমাইন্ডার দিয়ে দেয়। এক ভ্যানের মধ্যে পুরো পরিবার বসে আছে। রিসোর্টের প্রায় কাছেই চলে এসেছে তারা। পরিকল্পনা করে সবাই রিসোর্টের জন্য বেরিয়েছে। রাফির রিমাইন্ডার পেয়ে বাঁকা হাসল আফরাজ। নাজীবা জানালার বাহিরে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না এতো বড় রিসোর্টে তারা থাকবে। বীচ-সাইড রিসোর্ট। নিজের কেবিনের জানালা থেকে ভ্যান গাড়ি ঢুকতে দেখে নাদিম উত্তেজিত হলো। তার বোন-কে কত বছর পর বুকে নিতে পারবে। সেই আশায় তার বুক ধড়ফড় করছে। নাদিমের এরূপ দশা দেখে তার পিএ কাজল ভ্রু কুঁচকাল। মুখ বাঁকিয়ে বিরবিরিয়ে বলে,’লুচ্চু ছেলে খালি মেয়েদের দিকে তাকাবে। আমার মত সুন্দরী-রে কি তোর চোখে পড়ে না? নাকি আমার মুখে কালি মাখা আছে। ধুর তোর চোখেই ছানা পড়ছে। হা’রা’মজা’দা বস একখানা।’
নাদিম ফিসফিস শুনে বিরক্ত চোখে একপলক কাজলের দিকে তাকিয়ে বলে,’দেখো তোমার ফিসফাস করতে মন চাইলে এ কেবিন থেকে বের হও। শুধু শুধু আমার মাথার পোকা কে রাগিও না। নাহলে পরের বার তোমার ঠোঁটের উপর অত্যাচার চালাবো। আগেরবার প্রথম ছিল বলে চোখের উপর ঠোঁট বসিয়ে ছিলাম।’

কথাগুলো বলে বাঁকা হাসল। বসের কথায় কাজল জমে যায়। আমতা আমতা করে রুমের থেকে বেরিয়ে গেলো। নাদিম তার লজ্জাবতীর লাজ দেখে তৃপ্তি পেলো। এইতো এক রমণী যাকে ছাড়া তার জীবনে আর কেউ ছিল না। সেদিন পথের ফকির হয়ে ঘুরার বদলে এই রমণীর একজোড়া হাতের মুঠোয় নিজের হাত রাখতেই পুরোটা জীবন তার সঙ্গে পারাপার হওয়া। কখনো ভাবেওনি নাদিম তার মনের জগতে এই রমণী এতটা জায়গা করে নেবে। তাইত প্রতিমুহূর্তে এই রমণীকে তার চাই,চাই মানে চাইই। নাদিম দরজার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে পুনরায় বাহিরের দিকে তাকায়। ঐ যে তার বোন,কত বড় হয়ে গেলো মেয়েটা। সে তো নিজ হাতে পুতুল এনে দিতো। এখনো মনে হয় ভাইকে দেখলেই এসে বায়না ধরবে ভাইয়া আজকে কিন্তু তুমি চকলেট আনোনি। আমি খুব লাগ করছি। ছোট বোনটার তোতলা কথা শুনে সে কতই না হেসে বায়নাগুলো পূর্ণ করতো। ছোটবেলার কথা মনে পড়ায় তার চোখের কোণে কবে পানি জমালো টেরও পেলো না। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)চোখ মুছে পরণে কোট জড়িয়ে নেয়। নিজস্ব সত্তাকে স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টা মাত্র। তখন ফোনে কল আসার শব্দে নিজেকে ধাতস্থ করে ফোনটি রিসিভ করে। অপরপাশ থেকে ‘শা’লা’ কথাটি শুনে মৃদু হাসল।
‘শা’লা’ আমার বউয়ের দিকে কু’নজর দেওয়া বন্ধ কর। নাহলে তোর একদিন কি আমার একদিন।’
‘জনাব আপনি হয়ত ভুলে যাচ্ছেন। যাহাকে আপনি বউ বলিয়াছেন তাহা আমার রক্তের বোন লাগিয়াছে। আমি বলিলেই আমার বোন আমার কাছে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠিবে। তাই সাবধানে কথা বলিবেন।’
‘তুই তো শা’লা সুবিধার না। আমার বউকে ভাগিয়ে নিজের কাছে রাখার প্ল্যান করছিস। তোর পরিচয় গোপন রাখব। বলতাম না আমার কোনো শা’লা টা’লা আছে। তুই তোর বউয়ের আঁচলের নিচে গিয়ে মর। আমার বউয়ের আঁচল ধরে আমি ঘাপ্টে মে’রে বসে থাকব। দেখি কোন বাপের সাহস কত বড়? আমার বউকে ভাগানোর হুহ্।’
‘চুপ ব্যাডা নিচে থাক আমি আসতেছি।’

নাদিম ফোন রেখে আবেগী মনকে নিয়ন্ত্রণ করে নিলো। কেবিনের দরজা পেরিয়ে নিচের ফ্লোরে এগিয়ে গেলো। সানন্দের সহিতে ফাহিম পরিবারের সদস্যদের আপ্যয়ন করা হচ্ছে। কাজল একের পর এক ফুল বিতরণ করছে। নাজীবা-র বিষয়টা বেশ আনন্দের লাগল। ফুলটা শুঁকে আফরাজ এর গালে কামড়ে দেয়। যা দেখে আফরাজ চোখ সরু করে তাকালো। নাজীবা পোচ দেওয়ার মত মুখ করে তার ফোনের ক্যামেরায় ক্যাপচার করে নিলো। আকবর তো তার বউকে নকশার কারুকাজ করা স্থানে দাঁড় করিয়ে একেক এঙ্গেলে ছবি তুলছে। জনাব ইসমাইল আর মিসেস ফেরদৌসী পরিবেশটা উপভোগ করছেন। রিসোর্ট এর ঠিক বিপরীতে রয়েছে নেভাল বীচ। আজ রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় নেভাল বীচের দিকে যাবে না বলে ভেবে রাখলো। হঠাৎ কারো আগমনে তাদের সকলের দৃষ্টি সেই মানুষটির দিকে পড়ে। কাজল বসকে দেখেই সকলের দৃষ্টিকার্ষণে ডেকে উঠে। আফরাজ আর আকবর ব্যতীত সকলের চোখে মানুষটি নতুন। তার চেয়ে বড় কথা পরিচয় হলো এই রিসোর্টটি তার। ‘টুরিস্ট অফ নেভাল’ রিসোর্টটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি চোখ ধাঁধানো পরিবেশের মুগ্ধতা বিরাজ করে।
কাজল পরিচয় করিয়ে দেয়। এতেও নাজীবার ভ্রুক্ষেপ নেই। তার চোখের দৃষ্টি স্থির। শরীরটা ঝংকার দিয়ে উঠেছে বোধহয়। ঢোক গিলে আফরাজ এর হাতের উপর থেকে হাত সরিয়ে নাকিব মুনসিফ নামক লোকটির নিকট এগিয়ে গেলো। নাকিব মুনসিফ নামটা অন্যরকম হলেও নাদিম তো তার আসল নাম। নাদিম এর ইচ্ছে করছে তার বোনটাকে ঝাপ্টে ধরতে‌। কিন্তু ফাজিলের হাড্ডি ফাজিল আফরাজ তার ব্যাপারে কোনো কথাও তুলছে না। রা’গ পেলেও আফরাজ এর লুকানো শ’য়’তানি হাসি দেখে মনেমন কয়েকটা গা’লি ছুঁড়ে মা’রল। মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে রাখা তার পক্ষে কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে পড়ছে। নাজীবা অচেনা মানুষটির মুখোমুখি হলো। তার মুখের আদলে সে কিছু একটা খোঁজে চলেছে। এমন আচরণ তো সে একজনের সাথেই করতো। কাঁপা হাতে চোখ বুজে তার হাতের স্পর্শ নাকিব নামক লোকটির গালে ছুঁয়ে দেয়‌। জনাব ইসমাইল, মিসেস ফেরদৌসী আর কুসুমা অবাক চোখে চেয়ে আছে। তাদের কাছে দৃষ্টিকটু মনে হলেও আফরাজ আর আকবর ভাবলেশহীন। দু’জনের মতিগতি দেখে তারাও প্রশ্ন করার সাহস পাচ্ছে না। নাজীবা-র গলা পাকিয়ে কান্না আসছে। চোখ বুজে থাকা অবস্থায় চোখের কোণা দিয়ে পানি পড়ছে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে নাদিম চট করে নাজীবাকে বুকে আগলে নেয়। কাজলের দৃষ্টিদ্বয় শীতল হয়ে গেলো। তার বুকের মধ্যে অজানা হারানোর বেদনা গ্রাস করছে। নাকিব কেনো এই মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো? সে তো অন্যের স্ত্রী। তবে কি তার প্রাক্তন প্রেমিকা? কথাটা মাথায় আসতেই তার শরীর-মন ক্রোধে কেঁপে উঠে। বাক্যহীন তৎক্ষণাৎ নাদিম এর শরীর থেকে হিচড়ে টান দিয়ে দূরে ধাক্কা দেয় নাজীবা-কে। ভাগ্য ভালো বিধেয় আফরাজ কিছুটা আঁচ করতে পেরে তৎক্ষণাৎ তার বিবিজান কে আগলে নেয়। নাদিম এর মেজাজ তুঙ্গে উঠলো। মেয়েটা বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। নাজীবা-র স্থানে অন্য নারী হলে এ কাজ করলে সে মেনে নিতো‌। কিন্তু তার বোন-কে এভাবে আলাদা করা। মানতে পারল না মোটেও। দাঁত চেপে কাজলের বাহু চেপে নিজের দিকে ফিরিয়ে জোরেসরে চ’ড় বসালো। চ’ড়ের প্রতিঘাতে কাজল ব্যালেন্স হারিয়ে ফ্লোরের উপর পড়ে যায়। নাদিম চিৎকার করে বলে উঠে।

“তোর সাহস কেমনে হলো আমার বোন-কে আমার বুকের ভেতর থেকে দূরে সরানোর? খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলছিস না। শোন কালকে থেকে যেনো তোকে অফিসের ধারেকাছেও না দেখি। লো ক্লাস গার্ল লো ক্লাস পজিশনেই থাকবি।”

নিজের মেয়ের উপর ঘাত হওয়া দেখে জনাব কাশেম এর চোখে পানি চলে এলো। তিনি তৎক্ষণাৎ তার মালিকের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইলো। কাশেম মিয়াকে দেখে নিজের রা’গ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করল নাদিম। কপালে হাত রেখে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে বলে,’আপনি আপনার মেয়ে কে আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যান। তাকে আমি এমুহুর্তে আর চোখের সামনে দেখতে চাইছি না।’
কাজলের গাল ব্যথায় কাতরাচ্ছে। তবুও টু শব্দ অব্দি করল না। একটু নাহয় বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। তার মানে এই নয় সকলের চোখের সামনে তাকে অপদস্থ করবে। তার আত্মসম্মান বলতে কিছু তো আছে। চোখ মুছে বাবার হাত ধরে বলে,’থ্যাংকিউ স্যার আমার রাস্তা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যে।’
বাবাকে নিয়ে আর অপেক্ষা করল না। রাতের আঁধারে বেরিয়ে যায়। রাত হলেও রিসোর্টের আশপাশ জুড়ে হৈচৈ লাইটিং করা। তাই তারা নিশ্চিন্তে বাড়ি চলে যেতে পারবে। এতটুকু ধারণা করে তপ্ত-শ্বাস ফেলল নাদিম। তার রা’গ নিয়ন্ত্রণ থাকত কিন্তু কাজল অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করায় সে হাত উঠিয়ে ফেলেছে। নাজীবা বোবার মত চেয়ে রইল। আফরাজ আমতা আমতা করে নাদিম এর পিঠে চা’প’ড় মে’রে বলে,

“সরি রে দোস্ত আমার উচিৎ ছিল সবাইকে তোর সত্য পরিচয় জানানো। নাহলে আজ এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। তুইও কম কিসে মামা? হবু ভাবী গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে বসে আছিস। আগে বললে তোর ভাগেরটারেও জানিয়ে দিতাম। এই না বলার ভুলটা কিন্তু তোর মামা। এই দোষ মোটেও আমি আমার মাথায় নেবো না নেভার এভার।”

“ব’দমা’ই’শ ব্যাডা ফাঁদে ফেলে এখন শান্ত্বনা না দিয়ে উল্টো টিটকারী মারছিস। ভুলে যাস না বোনটা কিন্তু আমার।”

“তো তাতে কি নিয়ে যাহ। বোনের ভাই নিয়ে যেতেই পারিস। আমি কি তাতে মানা করবো নাকি?”

নাদিম চোখ রাঙালে আফরাজ হাত উঁচিয়ে বুঝছি বোঝায়। সকলের দিকে তাকিয়ে বিশেষত নাজীবা কে উদ্দেশ্য করে বলে,

“এই হলো নাদিম মুসাররাত মোবারক আলী আর মেহজাবিন সিরাত এর বড় পুত্র আর আমার বিবিজান এর পরম মিত্র ভাই। এক বোনের স্পর্শের মর্ম এক বোনই বুঝে কেননা ভাই তো তারই।”

কথাটা বলার পরপর নাজীবা পুনরায় নাদিম-কে জড়িয়ে ধরে নিশ্চুপ কান্না করতে লাগে। নাদিম ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বোনটা বড় হলে কি হবে এখনো ছোট রয়ে গেলো! বোনকে সোফায় বসিয়ে চোখজোড়া মুছে দিয়ে টিটকারী-র সুরে বলে,’দোস্ত বোন তো আমার বাচ্চা রয়ে গেলো। তুই ওর সাথে উল্টাপাল্টা কিছু ভুলেও করবি না। নাহলে আমি তোর এপারওপার করে দেবো।’

আফরাজ মুখ বাঁকিয়ে বলে,’এ্যাহ আসলো আমার কোথাকার কোন মেলায় হারিয়ে যাওয়া শা’লা। তোর বোন আমার বিবিজান। শুধু উল্টাপাল্টা করব না বরং তোর কোলে উল্টা নয়-দশটা বাচ্চা দিয়ে পূর্ণ করে দেবো দেখিস।’
খুব ভাব নিলো কথাটা বলে। নাজীবার তো কান্না বন্ধ হয়ে গেল কিন্তু আফরাজ এর কথায় বিড়ম্বনায় পড়ে গেল। নাদিম গলা ঝেড়ে অন্যদিক চোখের দৃষ্টি ফেলল। নাজীবা মুখ ফুলিয়ে চোখ রাঙায়। এতে বিন্দুমাত্র পাত্তা দিল না আফরাজ। নাদিম সেসবে খেয়াল না দিয়ে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“তোর কোনো কষ্ট হচ্ছে না তো আফরাজদের সাথে? আমার সাথে তোর খুব অভিমান তাই না? আমাকে মাফ করে দিস-রে বোন। তোর খারাপ সময়ে তোকে সামলানোর জন্য আমিও ততটা সবল ছিলাম না । তাইত আমাদের উপরে আল্লাহ মেহেরবান হয়েছিলেন। তোকে তোর নিজের আসল স্থানে পাঠিয়ে দিলেন। তোর কাছে অটুট বন্ধন রক্ষাকারী একজন এলো‌। আফরাজ তোকে খুশি সুখি রাখবে আমি জানি। রাগারাগী হবে স্বাভাবিক আর আমি জানি তুই মানিয়ে নিবি। এই ভাইটার কাছেও কয়েকদিন পারলে থেকে শ্বশুরবাড়ি যাইস। জানিস তোর জন্য আমি তোর পছন্দমত রুম সাজিয়েছি। আমার বড় বাংলো আছে।”

“ভাইয়া ব্যস করো। আমি থাকব তোমার এখানে। আমি রাগও আর রাখিনি মনে। কিন্তু একটা বিষয়ে খারাপ লাগছে। আমার কারণে তুমি মেয়েটার সাথে খুব খারাপ আচরণ করে ফেললে। এতটা রাগ হওয়া তোমার উচিৎ হয়নি। তুমি চাইলেই পারতে বুঝিয়ে বলতে। তা না করে হাত উঠিয়ে পুরুষত্বদেখালে? আমি এতে খুব খারাপ বোধ করছি। মেয়েটার চোখে তোমার প্রতি ভালোবাসা দেখেছি আমি।”

কথার পিঠে কি বলল নাজীবা বুঝতে পেরে থ বনে গেলো। চোখ পাকিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,’ওয়েট ভালোবাসা আচ্ছা তাহলে এই কাহিনী! বলো কাহিনী কি হুম?’
নাদিম মাথা চুলকে বলে,’অনেক বড় কাহিনী। তোর বাচ্চা হলে তখন মামা হিসেবে কাহিনীটা শোনাবো। আপাতত তোকে সারাংশটা জানিয়ে দেয়। তোদের ছেড়ে পথের মিসকিন হওয়ার পর ঐ মেয়েটাই ছিল আমার একমাত্র আশ্রয়। তার বাবা আমার এই রিসোর্টের দারোয়ান। আমি লুকিয়ে আমাদের বাবার কাছ থেকে পেয়ে ছিলাম ব্যবসার দলিলপত্র। তার তদারকি করতে নিজের নাম বদলে নাকিব মুনসিফ রেখে ব্যবসা চালু করি। তাইত দাহাব এহসান আমাকে ঘুণাক্ষরেও চিনতে পারেনি। বরং তার কাছে আমাকে সোনার হাঁস মনে হয়ে ছিল। আমিও তার মুখে টাকা ছুঁড়ে বাবার জমির টাকায় ব্যবসা চালাতে পেরেছিলাম। ঐ মেয়েটা আমার মনের ক্ষুধার্ত জীবনের একমাত্র চিহ্ন। আজকে একটু বাড়তি রা’গ দেখিয়েছি। বাট ডোন্ট ওয়ারি তোর ভাই প্রেমিক হিসেবে বেশ রোমান্টিক। দেখবি কালকেই তোর হবু ভাবীকে সামনে হাজির করে দেবো।’

দু’ভাইবোন আপনাআপনি হেসে ফেলল। আফরাজ দূরে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটি দেখে চোখ মুছল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তারও তো একটা বোন থাকার কথা ছিল। কিন্তু আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে ছেড়েই চলে গেল। ‘আফরিন’ নামটা মায়ের মুখে আর এলবাম-এ কয়েকবার ছবি দেখে ছিল। বোন নামক মানুষটির সাথে তারও খুব লাঘব থাকার কথা ছিল! হায় আফসোস! জীবনটা বড়ই অদ্ভুত।মিসেস ফেরদৌসী ছেলের মনোভাব বুঝতে পেরে ছেলের নিকট এগিয়ে যান। আফরাজ মা-কে দেখে বোনের ব্যাপার মাথা থেকে ঝেড়ে মা-কে জড়িয়ে ধরে। জনাব ইসমাইল খুশি হলেন অনাথ মেয়েটার বর্তমান পরিচয় বহনকারী একজন পেলো। তারা তো আছেই। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির চেয়ে বাপের বাড়ির মায়া মমতা এক মেয়ে কখনো ভুলতে পারেনা। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। স্ত্রী-সন্তানের দিকে চেয়ে তিনি মনেমন দোয়া পাঠ করলেন। যেনো কোনো কুনজর তাদের পরিবারের উপর না পড়ে।

চলবে…….
(শেষ করব বলেও হলো না। কিন্তু কালকে চেষ্টা করব ইন শা আল্লাহ। গতকাল কে পড়াশোনা আর অতিরিক্ত ক্লাস থাকার কারণে গল্প পোস্ট দিতে পারিনি। দুঃখিত তাই। আল্লাহ হাফেজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here