#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৩৯
১১৯.
পুতুল বিয়ের জন্য অস্বীকার করেছে।রাবেয়া ভিতরে ভিতরে কষ্ট পাচ্ছে।কিন্তু স্বামী ও ছেলেকে বুঝতে দিলো না।অর্পণ নিজের রুমে এসে বসে পড়ে।ছোট নোট বুকে কলম দিয়ে লিখতে থাকে।
তোমার কাছে যেটা নীল বিষ।আমার কাছে সেটা আমারই ভালোবাসা।আমি জেনেবুঝে সেই নীল বিষ নামক প্রেমের বিষকে প্রাণ করেছি।সে আমার আর আমার ভালোবাসাকে গ্রহণ করতে চাইছে না।কিন্তু আমি একবার নয়।তোমার কাছে বারবার ছুটে যাবো।প্রেমে তোও মরেছি।তবুও তোমাকে পাওয়ার আশায় ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখবো।তোমাকে আমার মায়া পড়তেই হবে।সেটা হয়তো আজ কিংবা কাল।
রেনু তুমি এসব কি বলছো?তোমার মাথা ঠিক আছে।পুতুলের জন্য তালুকদার বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসছে।আর আমি জেনে শুনে এত বড় দামড়া ছেলের সাথে বিয়ে দিব।ওই ছেলে ঠিক সময় বিয়ে করলে এতদিনে বাচ্চার বাপও হয়ে যেতো।পুতুলের সাথে কোনোভাবেই যায় না।ছেলের কীর্তিকলাপ যতটুকু গ্রামের মানুষের থেকে শুনেছি।সে যে ততোটাও ভালো নয়।আর সবকিছু জেনে বুঝে আমি ওদের কাছে মেয়ে দিব।কখনো না।ভাগ্নীটা আমার আর তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত এবং মাথাটা আমিই ঘামাবো।তারা আজ এসেছে আমার মেয়ে নিজে প্রত্যাখান করেছে।ফির যদি আসে তবে কিন্তু আমিও ছেড়ে কথা বলবো না।সাহস কত!এত বড়ো ছেলের জন্য আমার মেয়ে চায়।দুনিয়ায় এত মেয়ে থাকতে আমার মেয়েকে কেন চোখে পড়লো?
আচ্ছা আপনি একটুও শান্ত হন।এত অল্প কথায় রাগ কেন করছেন?তাছাড়া আমাদের পুতুল কিন্তু রাজি হয়নি।তাহলে এসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ আছে।পুতুল নিজের মতো সবকিছুই যদি গুছিয়ে উঠতে পারে।তাহলে আমাদের ওকে সার্পোট করা উচিত।ওরা কাজটাকে সম্মান দেওয়া উচিত।আর রইলো অর্পনের বয়সের কথা।হ্যা মানছি পুতুলের থেকে বয়সের গ্যাপটা একটুও বেশিই।কিন্তু আমি ওইদিন ওই ছেলেকে আমাদের মেয়ের জন্য যেভাবে কষ্ট পেতে দেখেছি।তাতে খারাপ কিছুই পায়নি।আর সবচেয়ে বড় কথা জম্ম,মৃত্যু,বিয়ে এসব ওপরওয়ালাই ঠিক করে রাখেন।সে ভালো জানেন কার সাথে কার জুড়ি লিখা হবে।আমি আসছি।রেনু নিজের কথাগুলো ব’লেই স্বামীর সামনে থেকে সরে পরে।স্বাধীন বউয়ের চলে যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে বিরবির করে কিছু ব’লে চুপ হয়ে যায়।
পুতুলের গায়ে কলেজের ড্রেস।তার ওপর এপ্রোন পড়া।আজ থেকেই তার এইচএসসি পরীক্ষা শুরু।পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যাস্ত সময় পার করছে।বোর্ড পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই দ্বিতীয় তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে পুতুল পড়াগুলো মনে মনে রিভিশন দিচ্ছে।ওপর দিকে অর্পণ এক পলকে পুতুলের দিকে তাকিয়ে রয়।ছোট করে নিশ্বাস ফেলে চোখে কালো সানগ্লাস পরে পাশের ছোট চায়ের দোকানের ছেলেটিকে ডাকতেই সে হাজির।
জি,ভাইয়া।
ওর দিকে খেয়াল রেখো।কোনো সমস্যা হলে আমাকে সাথে সাথে জানাবে।আমি আজই ঢাকায় ফিরছি।ওর পরীক্ষা শেষ যে দিন হবে।সেই দিনই আমি ফিরে আসব।তারপরই হবে অর্পণের প্রেমের গল্প কাহিনি।আসছি।
১২০.
সময়টা মে এর শেষের দিক।পুতুলের পরীক্ষা আজ শেষ হয়েছে।আজ প্যাক্টিক্যাল মৌখিক পরীক্ষা এবং লিখিত খাতা জমা দিয়ে বাড়ির পথে ফিরে যাচ্ছে।ছয় সিটওয়ালা টমটমে বসেই চারদিকে সবুজের সমারোহ দেখতে দেখতে দূর থেকে বহুদূর গন্তব্যটি ছুটে চলছে।পিছনে বড় বড় গাছগুলো সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে।পুতুলের সাথে আজ স্বাধীন রয়েছে।
স্বাধীন ভাবছে পুতুলকে মেডিকেল ভর্তি করাবে।কিন্তু অনেক টাকার ব্যাপার স্যাপার রয়েছে।এতদিন সব খরচই ভালোই সামলে নিয়েছে।কিন্তু এবার হয়তো আর বেশি টাকা যাবে।টাকা লাগলে লাগুক।মেয়ের স্বপ্ন নষ্ট হতে দিবেন না।প্রয়োজন পড়লে নিজের চাষের শেষ জমিটুকু বিক্রি করে দিবেন।ওটাই ছিলো বাপ,দাদার আমলের তেরো শতাংশ জমি।এক শতাংশ করে হলেও কমছে কম আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করা যাবে।স্বাধীন যখন চিন্তায় ব্যাস্ত তখনই টমটমটিকে অপর পাশ থেকে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দিতেই টমটমে থাকা যাত্রীরা হুড়মুড়িয়ে একজন আরেকজনের ওপর পড়ে গেলো।কেউ আবার হাত,পায়ে ব্যাথা পেলো।পুতুলের হাঁটু ছিলে সাদা সালোয়ার ওপর দিয়ে রক্ত ভেসে ওঠে।আবার স্বাধীন কপালে আঘাত পায়।কিন্তু মেয়ের হাতটা এক হাত দিয়ে শক্ত করে ধরেছে।আর ছাড়ার নাম নেই।হঠাৎ আগ্রমনে পুতুল চমকে উঠে।মামার দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায়।মামার কপালের তরল জাতীয় জিনিসটা হাতে তুলে নিতেই ভেসে ওঠে র*ক্ত।পুতুল জানালা দিয়ে বাহিরে মাথাটা বের করে কিছু বুঝতে গেলেই কেউ তাকেই দ্বিতীয় বার আঘাত মাথায় করতে হকিস্টিক উঠায়।পুতুল মাথায় টান দেওয়ার আগেই সে হকিস্টিকের লোকটির হাতে কেউ গুলিয়ে চালিয়ে দেয়।যাত্রীরা যার যার জান বাঁচাতে চলতি টমটম থেকে লাফিয়ে পড়ে।একেকজন পালিয়ে যায়।কিন্তু পুতুল আর তার মামা বের হওয়ার আগেই টমটম ছোট খালের মধ্যে পড়ে যায়।পুতুল বাম হাত দিয়ে মামার হাত ঘামছে ধরে।পুতুল আগেও সুস্থ হলেও স্বাধীনের শরীরের মারের দাগগুলো এখনো শুকায়নি।তার ওষুধ এখনো চলছে।সেই পুরনো ব্যাথার মধ্যে কপালে দ্বিতীয় আঘাত লাগাটা ভালো লক্ষ্মণ নয়।এইদিকে পুরো রাস্তা ব্লক হয়ে গেছে বাসে আগুন, রাস্তা মধ্যে যাকে সামনেই পাচ্ছে তাকেই দুবৃত্তরা আঘাত করছে।পুতুল কি করবে বুঝতে পারছে না?হাত পা,কাপছে।এদিকে স্বাধীনের রক্ত বন্ধ হওয়ার নামই নেই।পুতুল মামার রক্ত বন্ধ করতে নিজের সাদা হিজাবের এক অংশ খুলে মামার মাথাটা চেপেই ধরে আছে। নিজের চারদিকে এত উচস্বরগোল্লে পুতুলের জানটা বের হয়ে যাচ্ছে।পুতুল চোখ বন্ধ করে আল্লাহ নাম নিয়ে দোয়া পড়তে থাকে।
আর ইউ ওকে।
পুতুল চোখের পানি নিয়ে আঁখি পল্লব মেলে সামনে তাকাতেই দেখলো অর্পণ তালুকদার তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।অথচ যে পুতুল,অর্পণ তালুকদারকে ঘৃণা করে।আজ তাকে দেখেই ভরসার সাহস টুকু ফিরে পায়।ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি দেখা যায়।কিন্তু অর্পণের সেসবের খেয়াল নেই।পুতুলকে ঠিকঠাক দেখেই স্বাধীনকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে।নিজের গাড়ির পিছনে সিটে মামাকে বসিয়ে দিলো।পুতুলকে পিছনে মামার সাথে বসিয়ে গাড়ি টান দিলো।
অর্পণ কেবিনের বাহিরে পায়চারি করছে।কানে তার ফোন গুছে।সাদা পাঞ্জাবিতে হালকা ছোপ,ছোপ রক্তের দাগ।
হ্যালো ভাই,আমরা যা সন্দেহ করছিলাম।এটা তারই কাজ।
অপর পাশ থেকে কথাটি কানে আসতেই অর্পণের চেহারায় রাগ স্পষ্ট ফুঠে ওঠে।রাগী স্বরেই বলল,
হারামির বাচ্চাদের মরার জন্য পাখনা গজায়ছে।আমি যদি এবার গ্রামে ফিরি না।তাহলে একটাকেও ছাড়বো না।সাত হাত মাটির নিজে গেড়ে ফেলব।ওই রমিজ মেম্বার কি ভেবেছে?একটা অসহায় পরিবারের ওপর জুলুম একের পর এক অন্যায় করে যাবে।আর তাকে এমনই ছেড়ে দেওয়া হবে।ওকে আর ওর চামচাদেরকে গর্ত থেকে টেনে বের করতে কিন্তু আমার এক মিনিট লাগবে না।ফোন রাখ।
অর্পণ প্রথম ফোনটা কে*টে দিয়ে।দ্বিতীয় ফোনটা কাউকে করে বসে।ওপাশ থেকে রিসিভ করে কানে নিয়ে কেউ হ্যালো বলতেই,
অর্পণ বাজ গলায় চিতকার করে বলল,
হোম মিনিস্টার।তোমার পাগলা কুত্তাগুলোকে সামলাও।যদি তুমি তোমার কুত্তাগুলোকে সামলাতে না পারো।তাহলে আমাকে বলো।ভাদ্র’র মাসের কুত্তাগুলোকে কি করে পানিতে নামাতে হয়?তা আমি অর্পণ তালুকদারের খুব ভালো করেই জানা আছে।আমি এর আগেরবার সর্তক করেছি।কিন্তু এরপর কিন্তু কোনো সর্তকবানী থাকবে না।পূর্বের ইতিহাস পূর্ণরাবৃত্তি করার চেষ্টা করোনা।তোমার ছোট ছেলের রহস্য আমি কিন্তু খুব ভালো করেই জানি।আর এবার পূর্বের ইতিহাস পূর্ণরাবৃত্তি হলে বেলণার মাটিতে যেটা হয়নি।এবার সেটা রোহিতপুরের মাটিতে হবে।র’ক্তের খেলা তোমরা শুরু করেছো।আর শেষ যদি আমাকে করতে র’ক্তের ময়দানে নামতে হয়।তাহলে তোমার বংশের শেষ বাতি জ্বালানোর কেউ থাকবে না।
অর্পণের ধমকিতেই হোম মিনিস্টারের কপালে ঘাম জমেছে।তার শ্বাসকষ্ট শুরু হতেই ইনহোনাল মেশিন দিয়ে শ্বাস নিলেন।পাশেই তার পি এ খলিল দাঁড়িয়ে আছে।পকেট থেকে রুমাল বের করে স্যারের দিকে ঘাম মুছতে বাড়িয়ে দিলে।সেটা হোম মিনিস্টার জামশেদ উল্লাহ খান নিয়ে নেন।
স্বাধীনের মাথায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।চোখ মেলে পুতুলকে সামনে বসে কাঁদতে দেখে উঠার চেষ্টা করেন।পুতুল হাত দিয়ে বুঝালো এখন উঠো না।শুয়ে থাকো।
আম্মা তুমি ঠিক আছো?পুতুল ইশারায় বলল।সে ঠিক আছে।এরমধ্যেই অর্পন ফোনে কথা বলতে বলতে নির্জন এক সাইডে চলে আসছে।তার কথা শেষ করে ফোন পকেটে ভরে কেবিনে পা রাখে।
মামা আপনি কেমন আছেন?
অপরিচিত ছেলের কথায় স্বাধীনের কপালটা কুঁচকে আসে।পরবর্তীতে এই ছেলে তাদের বাঁচিয়েছে।মনে পড়তেই বলল,ওহ।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।হঠাৎ বিপদে পড়ে কি করব যখন বুঝতে পারছিলাম না?তখন-ই আপনি এসে আমাদের বাঁচালেন।
আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবেন না।আমি আপনার বয়সের অনেক ছোট।আমি আপনাদেরই গায়ের ছেলে।আর রইল বাঁচানোর কথা।সেটা মাত্র উসিলা ছিল।আল্লাহ চেয়েছিলেন ব’লে আমি ওখানে উপস্থিত হতে পেরেছি।বিপদ কখন,কার ওপর আসবে সেটা আমরা পূর্বে কেউ জানি না।বিপদকে সামনে দেখে ভয় পেয়ে গুটিয়ে যাওয়া ভীতুদের কাজ।আমি জানি আপনি একজন সাহসী।মনের সাহসী বড় সাহস।আর ভয় পেলেই মনের বাঘ’ই তারে আগে খায়।আমি আসছি।ভালো থাকবেন।অর্পণ শেষের কথাগুলো পুতুলকে ইঙ্গিত করে আড়চোখে তাকিয়ে ব’লে চলে গেছে।এইদিকে পুতুল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।নার্স পুতুলের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,আপনি আসুন আমার সাথে।আপনার হাটুতে রক্ত জমাট বেঁধে আছে।স্বাধীনকে ইশারায় ব’লে যেতে।পাশের কেবিনে নিয়ে তার পা ডেস্টিন করে দিতে দিতে নার্স বলল,
আপনার হাঁটুতে রক্ত জমে আছে।আগে বলেননি কেন?এমপি সাহেব না ব’লে তোও জানতেই পারতাম না।নার্সের কথায় পুতুল অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।তারমানে সেই লোকটা তার খবরটা রেখেছে।
ডেসিন শেষ হতেই পুতুল বেড সিট থেকে নেমে যেতে নিলেই হাতে ছোট চিরকুট বাড়ি খায়।লাল কাগজের চিরকুট খুলতেই লেখাগুলো স্পষ্ট হয়।
প্রিয় আদূরণী ছোট্ট ছোট্ট খবর আমার নক দর্পণেই এখন থাকে।যাকে ভালোবাসি তার খবর টুকু রাখা আমার দায়িত্ব বলতে পারেন।তার ভালো থাকাতেই আমি ভালো আছি।আপনি আমার মন ভালো রাখার মিষ্টি মেডিসিন।
ইতি অর্পণ তালুকদার।
চলবে….
পুতুল আর অর্পণের বয়সের ব্যাবধান প্রায় ১০/১১ বছরের ছিল।যেখানে পুতুলের বয়স প্রথমেই দেখানো হয় ৬+ বয়স।এবং অর্পণের ১৫+ বয়স।কিন্তু পরবর্তী রাজনীতির প্লটের কথা মাথায় রেখে অর্পণের বয়সটা আরো বাড়ানো হয়েছিল।কিন্তু এখন এডিট করে কমানো হয়েছে।
আর গল্পটার পর্ব -৩৯+৪০ একসাথে লিখার পর অটোমেটিক ডিলিট হয়ে যায় শুক্রবার রাতে।মনটাই খারাপ হয়ে যায়।হাজার চেষ্টা করেও আগের দুই পর্বের মতো লিখতে পারিনি।তার ওপর রাইটিং ব্লকে পরে যা-তা অবস্থা।লিখার শব্দ হাতে উঠে না।এই কয়দিন লাগিয়ে একটা পর্ব কোনো রকম লিখলাম।কিন্তু আগেরটা মন মতো হয়নি।অনেক রোমান্টিক সিন ডিলিট হয়েছে।যা আর লিখাতে তুলতে পারিনি।আগেরটা মতো এটা লিখে তৃপ্তি লাগেনি।আমার তৃষ্ণা রয়ে গেলো।আর এত লেট করার জন্য সরি।