#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২৮|
শার্লিন_হাসান
“তো হবে না? আর্শিয়াদের বাড়ী গিয়েছিলেন কেনো? আর্শিয়া সুন্দরী তো সেই সুন্দরীকেই নিজের বউ করতেন। কে বলেছে সেরিনকে বিয়ে করতে? আসলে আপনি আর্শিয়াকেই ডিজার্ভ করেন আর আমি আপনার থেকেও বেটার কাউকে।”
“তোমায় এসব কে বললো?”
“যে বলেছে,বলেছে।”
“না বললে কী আর করার।”
“আপনি এমন ত্যাড়া কেনো? একনাম্বারের তেঁতো লোক! আচ্ছা শুনুন আজকে শাশুড়ী আম্মা আমায় ছোট করে কথা বলেছে। আমায় নাকী আপনার সামনে মানায় না! আর্শিয়া হলে ঠিক হতো।”
“আরে ওনার কথায় কান দিও না তো। উনি এমনই!”
কথাটা বলে শুভ্র সেরিনকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলো। সেরিন শুভ্রর দিকে তাকিয়ে হেঁসে দেয়। সেরিনকে হাসতে দেখে শুভ্র তার কপালে অধর ছোঁয়ায়।
“যাও ড্রেসিং টেবিলের উপর কিছু ফুল রাখা আছে। দেখো তোমার পছন্দ হয় কীনা!”
সেরিন শপিং ব্যাগ আনে। তাতে বেলিফুল,গোলাপ ফুলের মালা আবার ফুলের হাতের চুড়ি, ফুলের ক্রাউন আছে। সেরিন শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আজকে তো শাড়ী পড়িনি।”
“এখন পড়বা?”
“শিওর?”
“যাও আমি ওয়েট করছি।”
সেরিন কাবাড থেকে একটা শাড়ী বের করে মেরুন কালারে। পাশের চেন্জিং রুমে গিয়ে চেন্জ করে আসে। সাজগোছ নিয়ে সে পাক্কা। বিশমিনিটের মধ্যে শাড়ী পড়ে আসে সেরিন। কোমড় অব্দি সরু চুলগুলো এলোমেলো। সেরিন আসতে শুভ্র তাকে হাতের চুড়ি আর মাথার ক্রাউন পড়িয়ে দেয়। মুচকি হেঁসে বলে,
‘এতোগুলা ফুল তাঁদের সৌন্দর্যে তোমায় মুড়িয়ে নিয়ে তোমার সৌন্দর্যকে শোভা দিচ্ছে। কিন্তু তুমি কী জানো? সবগুলো ফুলের মধ্যে এই ‘মেয়েফুলটি’ আমার ভীষণ পছন্দের।’
“আপনি জানেন? আমায় নিয়ে এতো সুন্দর কমপ্লিমেন্ট দেওয়া মানুষটা আমার ভীষণ প্রিয়!”
শাড়ী পড়ার উসিলায় সেরিন আজকের মতো পড়ার হাত থেকে বেঁচে যায়। রাতে সবার সাথে ডিনার করে রুমে আসে। তার ব্যক্তিগত পুরুষের বুকে নিজেকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয়। এই জায়গাটা সেরিনের সবচেয়ে শান্তির।
********
অনেকদিন পর শুভ্রদের কলেজে পা রাখে সেরিন। নিশাতের সাথে তার অনেকদিন পরেই দেখা হয়। দুই বান্ধবীর সে কী আনন্দ! অনেকে সেরিনকে প্রশ্ন করছে ঢাকা থেকে চলে আসলো কেন। সেরিনের একটাই উত্তর, ‘পরিবার ছাড়া থাকতে ভালো লাগে না। আর পড়াশোনার প্রেশার বেশী মিউজিক একাডেমিতে যাওয়ার সময় নেই।’
আর কেউই কিছু বলেনা। সেরিন পড়াশোনা নিয়ে আজকাল একটু বেশী সিরিয়াস। নাহলে তার যেই বর!গলার উপর মাথা তার একটাই আছে। তবক মাঝেমধ্যে শুনতে পায় শুভ্রর বিয়ে নিয়ে গসিপ হচ্ছে। সেরিন সেসব শুনে আর হাসে।
এভাবেই সেরিন শুভ্রর ব্যস্ত জীবন কাটছে। সেরিন তার গান, পড়াশোনা, শুভ্র এসব নিয়ে সুন্দর একটা সময় কাটাচ্ছে।
সেদিন রাতে ডিনার করে সেরিন কিচেনের দিকে যায়। ভেতরে জান্নাতুল ফেরদৌস আছেন। বাকীরা সবাই অনেক্ষণ আগেই উপরে চলে গেছে। মূলত শুভ্রর কফির জন্যই কিচেনে যায় সেরিন। পুরো লিভিং রুম ফাঁকা। জান্নাতুল ফেরদৌসকে দেখে কিছুটা সরে আসে সেরিন। সেদিকটায় আর যায় না।
খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে বেড়িয়ে আসে জান্নাত। এক হাতে তার টর্চ লাইট! সেরিন খেয়াল করে তিনি লিভিং রুম এবং বাইরের লাইট অফ করে দিয়ে মেইন ডোর খুলে বেড়িয়ে যান। সেরিন অন্ধকারে হাতড়ে লাইট অন করে। পাশে একটা টেবিল রাখা সেখান থেকে একটা ক্যান্ডেল নেয়। সেটা জ্বালিয়ে সেরিন ও বাইরে যায়। চারদিকে অন্ধকার তারউপর এই সাইডে কবরস্থান। হালকা মৃদু বাতাস বইছে। মোমবাতির আলো বাতাসে নিভু নিভু হয়ে জ্বলছে। সেরিনের গা কাটা দিয়ে উঠে। সে জানে না কোনদিকটায় যাবে। কবরস্থানের সোজা বাড়ীর পেছনের দিকে যায় সেরিন। কিছুই দেখতে পেলো না সে। শুধু সাদা দেওয়াল! সেরিন কখনো বাড়ীর পেছনে আসেনি। এই প্রথম তাও মধ্যরাতে। মোমবাতির আলোয় সাদা দেওয়ালে সেরিনের অবয়ব ভয়ংকর রকমের দেখা যাচ্ছে। সেরিন মনে,মনে দোয়া দুরুদ পড়ে বাড়ীর ভেতরে চলে যায়। শুভ্রর কফি বানবে কী মোমবাতি হাতে নিয়েই কোনরকম রুমে যায়। সে ভীষণ নার্ভাস। ভেতরে এসেই মোমবাতি হাত থেকে ফেলে দেয়। হাত-পা ভীষণ রকমের কাঁপছে তার। সেরিনের অবস্থা দেখে শুভ্র কিছুটা ঘাবড়ে যায়। তড়িঘড়ি সেরিনকে ধরে এনে বিছানায় বসায়।
“সেরিন তুমি ভয় পেয়েছো?”
“বাড়ীর পেছনে কিছু আছে।”
“তুমি কী দেখেছো?”
“কেউ আছে বাড়ীর পেছনে যার জন্য প্রতিদিন আম্মু খাবার নিয়ে যায়।”
কথাটা নার্ভাসের ঠেলায় আন্দাজি ঢিল মারে সেরিন। তবে সে শিওর না। শুভ্র ও কিছুটা চিন্তায় পড়ে যায়। সেও এই ব্যপারটা দেখতে গিয়েছিলো তখন মাথায় আঘাত পায়। সেরিনকে রেখে বেলকনিতে যায় শুভ্র। বাইরে অন্ধকার। তাঁদের বাড়ীর সামনে আর পশ্চিম সাইডে সিসি ক্যামেরা লাগানো তবে পূর্ব সাইডে লাগানো নেই। ওইদিকে কেউ যায় ও না। বিল্ডিংয়ের দেওয়ালে পাশেই তাদের বাড়ীর দেওয়াল তেমন জায়গাও নেই। শুভ্র আর কিছু বলেনা। সামনে সেরিনের ইয়ার ফাইনাল এক্সাম। তার কয়েকদিন পর ঢাকায় পাঠিয়ে দিবে শুভ্র। আর এক্সাম দিবে না একবারে উচ্চমাধ্যমিক এসে দিবে। আপাতত মিউজিক একাডেমিতে ক্লাস করবে।
শশীর ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বেশী দেরী নেই। সেজন্য আর্থর সাথে যোগাযোগ তেমন নেই। সে পড়াশোনা নিয়ে বিজি। এক্সামের পরপরই তাদের বিয়ে।
সাহিনূর পাটওয়ারী অক্ষরের জন্য মেয়ে দেখছেন। কোন ভাবে মালিথা পরিবারের একমাত্র মেয়ে আর্শিয়ার খোঁজ পান। তিনি এখন আর্শিয়াকে ছেলের বউ করার জন্য পড়েছেন। অক্ষর দেশে এসেছে অনেক দিন হলো। যাওয়ার সময় ও ঘনিয়ে এসেছে। এবার আর দেরী করবেন না তিনি। মালিথা পরিবারের একমাত্র মেয়েকে খান বাড়ীর পূত্র বঁধু করে নিয়ে আসবেন।
*******
কলেজে শুভ্র নিজের রুমে বসে আছে। ফাস্ট ইয়ারের পরীক্ষা চলছে তার কলেজে। তখন একটা মেয়ে আসে তার রুমে। মেয়েটাকে চিনতে ভুল হয়নি শুভ্রর। এটা আর কেউ না নিশাত। শুভ্রর থেকে অনুমতি ও নেয়নি নিশাত সোজা রুমে ঢুকে যায়। নিশাতের কাজে শুভ্র কিছুটা অবাক হয় তবে তেমন পাত্তা দেয়না। ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর বর।
“শুভ্র আজকাল চিঠি আসে না বুঝি?”
“ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট। এখন আমি তোমার বান্ধবীর জামাই নই টিচার। ওকে? আর শুভ্র বলার আগে সাথে স্যার বা চৌধুরী পদবিটা ইউস করো।”
“আমি আমার লিমিট একটুও ক্রস করিনি মিস্টার শুভ্র চৌধুরী ওরফে আমার সতীনের একমাত্র বর।”
“বাহ্! তা বলবো তোমার বান্ধবীকে তার কাছের বান্ধবী তারই বরের দিকে নজর দিয়েছে। চালাকী করতে চেয়েছো তুমি তাইনা? তোমার দেওয়া ভুলভাল চিঠি আমি পুড়িয়ে দিয়েছি।”
“চিঠি পুড়েছে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়নি। এক উপায় না থাকলে অন্য উপায় তো আছে। কী জেনো নাম? আচ্ছা আমার ভাইকে চেনেন?”
“এসব চিনে আমার কোন কাজ নেই।”
“গুড! যখন কাজে লাগবে চিনে নিবেন প্লিজ।”
নিশাত হেঁসে বেড়িয়ে আসে। শুভ্র চিন্তিত হয়ে বসে পড়ে। এই নিশাত মেয়েটার পরিচয় আসলে কী? আর সেরিনের সাথে সম্পর্ক কবে থেকে? মেয়েটা তো আস্ত কালসাপ। শুভ্র বুঝতে পারছে ঘরে বাইরে তার সবই শত্রু। অথচ কেউই বুঝতে পারছে না। কোন একটা স্ক্যান্ডাল রটে গেলে সমস্যা। চিন্তা জেনো পিছু ছাড়ছে না তার।
সেদিনের মতো কলেজের কাজ শেষ করে বাড়ীতে আসে শুভ্র। বাড়ীতে তেমন কেউই নেই। আয়মান চৌধুরী, সুলতানা খানম, আর্থ সবাই ঢাকা। তার বাবা আরফিন চৌধুরী বিডির বাইরে আছে ইউকে-তে। বাড়ীতে শুধু সেরিন, শুভ্র আর শুভ্রর মা। কাজের বুয়া তেমন কেউই নেই একজন আছে।
সেরিনের ভালো লাগছে না চৌধুরী বাড়ীতে। পাটওয়ারী বাড়ীতে যাওয়ার জন্য মনে উতলা হয়ে আছে। শুভ্রকে বলতেও পারছে না। কারণ তার এক্সাম চলে আর শুভ্র সেরিনকে একমুহূর্তের জন্যও দূরে রাখতে রাজী না।
#চলবে
(রাইটিং ব্লকে আছি। এছাড়া পারিপার্শ্বিক প্রব্লেমের কারণে লেখায় মনে বসে না। মুড সুয়িং 😞 খুব তাড়াতাড়ি এই গল্পটা শেষ করে একটু অবসরে যাবো।😑)