হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২৬| শার্লিন_হাসান

0
564

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২৬|
শার্লিন_হাসান

“তো তোমার কী মনে হয় গতকাল রাতে আমি তোমার সাথে বাসর করতাম?”

সেরিনের কথায় পোড়ন কেটে বলে শুভ্র। সেরিন চুপসে গিয়ে দৃষ্টি নত করে নেয়। শুভ্র কফিতে চুমুক দেয়। সেরিন খাটের উপর গিয়ে বসে। তখন শুভ্র বলে,
“ব্রেকফাস্ট করার সময় হয়ে আসছে। আবার তো তোমার তৈরী হতে লেট হবে।”

“হোক সময়। ভাল্লাগেনা আমার ঘুম আসছে।”

“তাহলে ঘুমাও। আমি জাগিয়ে দেবো।”

সেরিন আর কথা বাড়ায়না। চুপচাপ শুয়ে পড়ে। শুভ্র কফিটা শেষ করে ল্যাপটপ নিয়ে বসে।

বাকীরা অনেকটা লেট করে ঘুম থেকে উঠে। ব্রেকফাস্ট করার সময় হতে শুভ্র সেরিনকে ডেকে তুলে। তারা দু’জন এক সাথে নিচে যায়। সেরিন তার শাশুড়ীদের সাথেই বসেছে। সামনের সারিতে শুভ্র,আর্থ,আয়মান চৌধুরী তারা বসেছে। আর্থ শুভ্রকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,
“কেমন কাটলো ফুলসজ্জা? ”

“ভীষণ বাজে।”

“থাক সামনে আরেকবার আছে। তখন সুন্দর কাটলেই হবে।”

“ছোট ছোটর মতো থাকতে পারিস না? বড় ভাই,ভাবীর পার্সোনাল ম্যটারে ঢুকছিস কেন?”

“কিসের ছোট? কে ছোটরে ভাই? আমি হাইটে তোমার থেকে কোন অংশে কম না। বয়সটা তো ম্যটার করে না।”

তাঁদের নাস্তা খাওয়া হতে সেরিন আদ্রিতা আর অধরার সাথে গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আগামী কালকে পাটওয়ারী বাড়ীর সদস্যরা আসবে। শুভ্র ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে চলে যায় কলেজের উদ্দেশ্য। আজকে একটু লেট হয়ে গেছে তার। আদ্রিতার সাথে যত কথা আছে আজকের মতো শেষ করে সেরিন। অনেকটা সমশ তাঁদের সাথে কাটিয়ে শুভ্রর রুমে আসে সেরিন। রুমটা গুছিয়ে নিয়ে শুভ্রকে কল লাগায়। বেশ কয়েকবার রিং হতে শুভ্র কল তোলে। তখন সেরিন বলে,
“আচ্ছা চিঠিগুলো কোন ড্রয়ারে?”

“তিন নাম্বার ড্রয়ারে। চাবি ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে।”

“আচ্ছা।”

“শোনো? ”

“বলুন?”

“তুমি আজকে চিঠি পাঠিয়েছো?”

“মাথা খারাপ আপনার? আমি চিঠি পাঠাবো কেন? আর কখনই বা পাঠাবো? আপনি তো সাথেই ছিলেন।”

“তাহলে কে পাঠালো?”

“জানি না।”

সেরিন মুখের উপর কল কেটে দেয়। সে ড্রয়ার থেকে চিঠি বের করে তাতে হাত ভোলায়। তবে কয়েকটা চিঠি অচেনা লাগলো। যেগুলো সে দেয়নি তবে তার হ্যান্ড রাইটিং এর মতোই। সেরিন চিঠিগুলো সাইড করে রাখে। শুভ্র আসলেই জিজ্ঞেস করবে।

********

শুভ্রর বিয়ের খবর কোন ভাবে তার স্টুডেন্টদের কেউ জেনে যায়। তবে তার বউ কে সেটা কেউ জানে না। জানে শুধু বিয়ে করেছে। বিশেষ করে কলেজের স্টুডেন্টরা জানে। সেকন্ড ইয়ার টু ফাস্ট ইয়ার। অনেকের দিল ভে’ঙে গেছে। তারউপর শুনেছে রিলেশনের বিয়ে। সত্য মিথ্যে সেসব জানার প্রয়োজন নেই হুজুগে বাঙালি বলে কথা।

শুভ্র কলেজ ছুটি হতে বেশী লেট করেনি। সোজা বাড়ীতে চলে আসে। আর্থ,আয়মান চৌধুরী বাজারে গেছে। আগামী কালকের অনুষ্ঠানের বাজার। শুভ্র শাওয়ার নিয়ে লান্স করতে চলে যায়। বাকীরা করে নিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। শুভ্র রুমে আসতে দেখে সেরিন কলে কারোর সাথে কথা বলছে। সেসবে আর পাত্তা দেয়নি শুভ্র। সেরিন কল কেটে শুভ্রর সামনে দু’টো চিঠি রাখে। শুভ্র ব্রু কুঁচকে শুধায়,
“এগুলোতে কী হয়েছে?”

“এগুলো কে দিয়েছে আপনায়?”

“তুমি!কেনো?”

“আমি দেইনি। আমি যখন ঢাকায় ছিলাম তখন কোন চিঠি দেইনি। আর পরে যখন দিলাম ধরাই তো খেয়ে গেলাম।”

“তোহ এতোগুলা চিঠি কে দিলো?”

“বাকীগুলো কই?”

” ভালো লাগেনি। টান আসেনি তাই পুড়িয়ে ফেলেছি।”

“গুড। এবার একে খুঁজে বের করুন যে বা হাত ঢুকাতে চেয়েছে।”

“আচ্ছা করবো একটু সময় দাও।”

সেরিন চিঠিগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। সোফায় বসতে,বসতে বলে,
“আচ্ছা বলুন তো সেদিন আমায় চ’ড় মারতে গিয়েছিলেন কেন?”

“কবে?”

“ওই যে সেন্সলেস হয়ে গেলাম।”

“যেই মেয়ে আমার ধমকে সেন্স লেস হয়ে যায় সেই মেয়ে এখন আমায় ধমকায়।”

“আরে বলুন তো?”

“তুমি তো ঢাকায় চলে যাইবা। তাই একটু কিছু লিখে দিয়েছিলাম। কী লিখেছি আপাতত মনে নেই। সেদিন কোন কারণে রাগ উঠেছিলো তোমার ফুফির উপর। আর আমি তোমার রুমের লেখাগুলো দেখেই বুঝে নিয়েছি তুমি চিঠি দেও আমাকে।”

সেরিন হা হয়ে যায়। মুখ বাকিয়ে বলে,
“ওই উল্টাপাল্টা ঘুরানো লেখা আপনি এক দেখায় বুঝে নিয়েছেন?”

“তোহ কেমন লাগে? নিজেকে এতো চালাক ভাবো তুমি?”

“না।”

“কী জেনো লেখা ছিলো?”

“Nizar Roshat rbuab Apaap”

“প্রথমটা আরজিন এর উল্টাপাল্টা দ্বিতীয়টা শুভ্রর লাস্ট দুটো অক্ষর আর মিশাত নামের লাস্ট চারটা অক্ষর। বাকীটা হলো বাবুর পাপা।”

“যাই হোক আপনার মতো চালাক ব্যক্তিকে যতটুকু বেকা বানিয়েছি আমার মতো মেয়ে সেটাই কম কী?”

“আসলেই! যাই হোক তুমি পাশ করেছো জিতেছো।”

“আসতাগফিরুল্লাহ আমি টিচার বিয়ে করেছি। ছিঃ! আপনার লজ্জা করলো না আমার বাড়ী বিয়ের প্রপোজাল পাঠাতে।”

“এই তুমি খোটা দিচ্ছো?”

“না।”

**********

পরের দিন সকালে চৌধুরী বাড়ীতে কাজের ব্যস্ততা পড়ে যায়। পাটওয়ারী বাড়ীর মেহমান আসবে। তবে শুভ্র বা সেরিন এখন যাবে না। তারা কয়েকদিন পর যাবে। সেরিনকে অফ হোয়াইট কালারের গাউন পড়ানো হয়। খুবই সিম্পলের মধ্যে একটা গাউন। নেই তেমন কোন সাজ। তবে তার চুলগুলো ফুল দিয়ে মোড়ানো হয়েছে। সবাই মিলে সুন্দর একটা দুপুর কাটালো। প্রায় সন্ধ্যার দিকে বিদায় নিয়ে সবাই চলে যায়। সেরিন শুভ্রর দিনগুলো সুন্দরই কাটছে। তবে সেরিনকে পুনরায় টিসি নিয়ে শুভ্রর কলেজে চলে আসবে। মিউজিক একাডেমি তে এখন আর যাওয়া হবে না। কী জানি! আবার কবে এডমিশন নেয়।

এরই মাঝে কেটে যায় বেশ কয়েকদিন। সেরিন এখনো কলেজে নিয়মিত হয়নি। হবে আস্তেধীরে তবে বাড়ীতে শুভ্র তাকে ভালোই গাইডলাইন দেয়। সময়টা সন্ধ্যা বেলা। নাস্তা করে শুভ্র ল্যপটপ নিয়ে বসেছে। সেরিন ফোন নিয়ে ব্যস্ত। আজকাল ফোনে একটু বেশী সময় দিচ্ছে সেরিন। যেটা শুভ্রর পছন্দ না। ক্যারিয়ার গড়ীর বয়সে কিসের আবার ফোন? শুভ্র প্রথমে কিছু বলেনি। সেরিনের কথা ছিলো সন্ধ্যায় বই নিয়ে বসবে। কিন্তু সেসবে তার হেলদোল নেই দেখে শুভ্র প্রথমে বলে,
“সেরিন ফোন রাখো।”

“শশীর সাথে কথা বলছি।”

“আমি এক কথা দুইবার বলতে পছন্দ করি না।”

“তাতে আমি কী করবো শুনি? আমার কাজ দেখেই তো…..

শুভ্র চোখ গরম করে বলে,
” আবার বলো কথাটা?”

“না থাক। আচ্ছা রেখে দিচ্ছি ফোন।”

সেরিন ফোন বিছানায়া রেখে বই একটা হাতে নিয়ে শুভ্রর সামনের সোফায় বসে। তখন শুভ্র ধমকে বলে,
“এর পর থেকে ত্যাড়ামী করলে বা ফোন নিয়ে বসে থাকলে একটা থা’প্পড় দেবো একবারে কালা হয়ে যাইবা।”

“আমি বিয়ে করেছি কেনো শুনি?”

“কেনো?”

“জামাইকে নিয়ে পিক তুলতে। জামাইয়ের সাথে রোমান্স করতে পড়ালেখা করার জন্য না।”

“তোমার বাপ শর্ত দিয়েছে তার মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। সো এখন এসব পিকচার, রোমান্স সাইডে রেখে পড়াশোনায় মনোযোগ দাও নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবো।”

“আরে বিয়ের পর কিসের আবার ক্যারিয়ার?”

“আসলে তুমি একটা বেয়াদ’ব। বিয়ের পর কিসের ক্যারিয়ার মানে? বিয়ে হয়েছে বলেই কী সব শেষ? তোমায় সংসার করতে হবে না। তুমি ক্যারিয়ারে ফোকাস করো। নিজের অবস্থান শক্ত করো।”

“আপনার মতো কয়জন এভাবে ভাবে বলুন তো? সবাই তো বলে বিয়ের পর মেয়েদের কিসের পড়ালেখা কিসের আবার ক্যারিয়ার। ঠিক আপনি যেভাবে আমার বাবাকে কথা দিয়েছেন এমন অনেকেই দেয়। কিন্তু দিনশেষে দেখা যায় এসবের দাম থাকে না। দুইদিন না যেতে বাচ্চা তখন বলে কিসের ক্যারিয়ার আর পড়াশোনা মনোযোগ দিয়ে সংসার করো আর বাচ্চা সামলাও।”

“এসব ভাবার জন্য সুন্দর একটা মন মানসীকতা লাগে।”

“ভালো। কিন্তু আপনি জানেন কী আমার পড়াশোনা করার ইচ্ছে আর নেই। পড়ালেখা যেই কঠিন।”

“তাহলে তোমায় বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দেবো। একবারে উচ্চ মাধ্যমিক হলে নিয়ে আসবো। এমনকি তুমি আমার উপর স্ত্রীর অধিকার খাটাতে পারবে না এই দেড়বছরে। কলেজে গেলে একবারে অচেনা। আগে তো বেশী প্যারা দেইনি এখন বেশী দেবো। বুঝবে শুভ্র কী জিনিস। আর
তুমি এসব ফাজলামো বাদ দিয়ে সিরিয়াস হও। নাহলে তোমায় সিরিয়াস বানাতে সময় লাগবে না আমার।”

“দুই লাইন কথার জন্য ছয় লাইন জ্ঞান। ভাই কী হিটলার কপালে জুটলো। ফাঁকিবাজি করা যাবে না। আলাহ আমার কী হবে? আমি শুধু মানুষকে দেখাই আমি পড়াশোনায় সিরিয়াস এবং পড়াশোনা পছন্দ করি। কিন্তু আমি তো জাস্ট শো অফ করি। পড়াশোনা আমি ভালো লাগে না। আবার ক্যারিয়ার!”

সেরিন চুপচাপ কথাগুলো ভাবে। এগুলো প্রকাশ করলে থাপ্পড় দিয়ে শুভ্র তাকে সোফা থেকে ফেলে দিবে। তবুও সাহস নিয়ে বলে,
“আসলে বলছিলাম….

” পড়া শেষে কথা।”

সেরিনের কান্না পাচ্ছে। শুভ্র তাকে দেড় বছরে পাগ’ল বানিয়ে দিবে। বিরক্তি নিয়ে পড়ায় মনযোগ দেয় সেরিন। শুভ্র ল্যাপটপে কাজ করছে। সেরিন ভুলভাল পড়ছে। তাও মেজাজ দেখিয়ে!

সেরিন শুভ্রর সাথে কথা বলেনা। তার জীবনের সুখ সব কেড়ে নিয়েছে তার জামাই আর পড়ালেখা। এই বাড়ীতে থাকলে পড়ালেখা ওই বাড়ীতে গেলে পড়ালেখা সাথে শুভ্রর ইগনোর সহ্য করতে হবে। ডিনার করে খাটের এক কোণে শুয়ে পড়ে সেরিন। একটা কথাও বলেনি সে শুভ্রর সাথে। কিন্তু তাতে শুভ্রর কিছুই যায় আসে না। সে জানে মন ভালো হলে সেরিন নিজেই তার কাছে আসবে। দুজন খাটের দুই মেরুতে অবস্থান করেছে। কেউই কারোর সাথে কথা বলছে না। সেরিন পড়ালেখার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে। একমাত্র পড়ালেখা। পড়ালেখার জন্য আজকে তার স্বামীর সাথে তার দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here