#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২৭|
শার্লিন_হাসান
পরেরদিন প্রায় বারোটার দিকে শুভ্র রেডি হয়ে বসে আছে। কুমিল্লায় যাবে তার কাজ আছে। আজকে কলেজ যায়নি সে! তখন সেরিন ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে। হাতে তার ভেজা তোয়ালে। শুভ্রকে এমন সেজে বসে থাকতে দেখে সেরিন জিজ্ঞেস করে,
“কোথায় যাবেন?”
“কুমিল্লায়।”
“এতো সেজেগুজে যাওয়ার কী আছে?”
“তোহ যাবো না? তুমি কী বলো আমি পাগলের মতো যাবো?”
“আপনার বড় কিডনিটা কই জানি?”
হাতের তোয়ালটা সোফার উপর রেখে খাটে বসে থাকা শুভ্রর কাছে যায় সেরিন। আশেপাশে হাতড়ে কিছুই ফেলো না সে। শুভ্র তাকিয়ে আছে তার দিকে। তখন সেরিন হাত নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আপনার আইফোনটা দিন তো?”
শুভ্র পকেট থেকে ফোন বের করে সেরিনের হাতে দেয়। সেরিন কী করলো কে জানে! পাঁচ মিনিটের মাথায় ফোনটা আবার ফেরত দেয় শুভ্রকে। শুভ্র হোয়াইট এবং ব্লাক কালারে নিজেকে সাজিয়েছে। সেরিন তার শার্টের কলারে হাত ভোলায়, মুখ এদিকে-ওদিক করে দেখে। শুভ্র বিরক্তি নিয়ে সেরিনের হাত সরিয়ে দেয়।
“তোমার হাত থেকে ময়লা আমার সাদা শার্টে লেগে যাবে।”
“আমি মাত্র শাওয়ার নিয়ে এসেছি ময়লা আসবে কোথা থেকে?”
“তাহলে এমন হাতাহাতি করছো কেন?”
“শার্ট চেন্জ করুন।”
“জানি আমায় বেশী সুন্দর লাগছে তাই হিংসে হচ্ছে তোমার। অন্য মেয়েরা না তাকিয়ে থাকে। আমি জানি তো তুমি একটা হিংসুটে মেয়ে।”
সেরিন কাবাড থেকে একটা শার্ট বের করে শুভ্রর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“হোয়াইট আর ব্লাক শার্ট পড়ে বাইরে বের হওয়া নিষেধ।”
“তুমি যে নিজের পিক ফেসবুকে আপ দাও। তখন তো কত ছেলেরা তোমায় দেখে আমি কিছু বলি?”
“আপনাকে আমি বারণ করেছি নাকী কিছু বলতে?”
কথাটা বলে সেরিন শুভ্রর ফেসে দৃষ্টি পাত করে। সেরিনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুভ্র বলে,
“যেভাবে তাকাচ্ছো নজর তো তুমি লাগিয়ে দিবে। মানুষ আর কী তাকাবে। আমি জানি আমি সুন্দর এভাবে তাকিয়ে আর বুঝাতে হবেনা।”
“আরে আপনার ঠোঁট গুলো সুন্দর লাগছে। চুমু খাওয়াই যায়!”
“আমি এখন বাইরে বের হবো।”
“চুমু খেলে প্রেগন্যান্ট হবেন না যে বাইরে বের হলে মুখ দেখাতে পারবেন না।”
“তোমার মুখে কিছু আটকায় না।”
সেরিন শুভ্রকে আর কিছুই বলার সুযোগ দেয়নি। শুভ্রর পাশে বসে নিজের অধর জোড়া শুভ্রর অধরে ছুঁয়ে দেয়। শুভ্র সেরিনকে কিছুটা ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। শুভ্রর হাব-ভাব সেরিনের পছন্দ হলো না। হাতের কাছে থাকা শার্টটা শুভ্রকে দিয়ে বলে,
“চেন্জ করে আসুন তো।”
“আরে আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।”
“আজকে রুমে জায়গা হবে না।”
“সমস্যা নেই। আমাদের বাড়ীতে কী জেনো একটা আছে। রুমে,রুমে ঘুরে বেড়ায়। অবশ্য বেশী মানুষ থাকলে দেখা যায়না সেটাকে। একা থাকলে আসে আর চোখের সামনে ঘুরঘুর করে সাদা শাড়ী পড়ে। তুমি দেখবা বাট একটা শব্দ মুখ দিয়ে বের করলে তোমার গলা চেপে ধরবে।”
“তাড়াতাড়ি চলে আসবেন প্লিজ। আমি ছোট কাকীমার কাছে গেলাম। আপনি আসলে তারপর রুমে আসবো।”
“ঠিক আছে। আমি গেলাম।”
শুভ্র কয়েক কদম ফেলতে সেরিন তাকে থামিয়ে দেয়। শুভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে কপালে আঙুল রেখে বলে,
“বাইরে যাওয়ার সময় কপালে চুমু দিয়ে যেতে হয়।”
শুভ্র চুপচাপ সেরিনের কপালে চুমু দিয়ে বেড়িয়ে যায়। শুভ্র যেতে সেরিন কোনরকম তৈরী হয়ে ওরনাটা নিয়ে সুলতানা খানমের রুমের দিকে ছুটে। তখন সুলতানা খানম সোফায় ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত। এই পরিবারে সবারই ব্যস্ততার শেষ নেই।চ তার শাশুড়ী,ছোট শাশুড়ী তারা বেশীরভাগই ল্যাপটপের সাননে বসে থাকে। আর্থ তার বড় বাবার রাজনীতি নিয়ে সময় কাটায়। আয়মান চৌধুরী আর্থকে হেল্প করে আবার তিনি ঢাকা চলে যান। আর্থর বাবা মা,বোন তারা সব ঢাকায়। আদ্রিতাও ঢাকায়। নিজেদের স্টাডি,ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত। বাকীরা অফিস, বিজন্যাস আর রাজনীতি নিয়ে।
সুলতানা খানমের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের রুমের দিকে যায় সেরিন। তিনি কলে কারোর সাথে কথা বলছেন। সেরিনকে দেখে কল কেটে দেয়। অনুমতি পেতে সেরিন ভেতরে প্রবেশ করে। জান্নাতুল ফেরদৌস সেরিনকে এটা,ওটা জিজ্ঞেস করে। এক পর্যায়ে তিনি মালিথা পরিবারের কথা তোলেন। সেই সাথে আর্শিয়া এবং আর্শিয়ার আম্মুর কথা। সে কী প্রশংসা করলেন আর্শিয়ার। সেরিনের পছন্দ হয়নি বিষয়টা। তবে কিছু বলছেও না। তখন জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন,
“চেয়েছিলাম আর্শিয়াকে শুভ্রর সাথে বিয়েটা দিয়ে আমাদের সম্পর্কটা আরো মজবুত করবো। কী জানি শুভ্রর কী হলো। সেখানে তো সব ঠিকই হয়েছিলো। তোমার তো বয়স অল্প! সেই সাথে শুভ্রর সাথেও তেমন যায় না।”
“আসলে ঠিক বলেছেন শুভ্রর সাথে আমার যায় না কারণ আমি শুভ্রর থেকেও বেটার কাউকে ডিজার্ভ করি।”
সেরিনের কথায় রাগ হয় জান্নাতুল ফেরদৌসের। কিন্তু তিনি প্রকাশ করেননা। হাসি মুখে বলেন,
“যাই হোক! ছেলে দু’টো একই পরিবারে গেলো। তাঁদের লাইফ তাদের চয়েজ।”
“ঠিক বলেছেন। যার, যার জীবন তার, তার পছন্দ। এসব নিয়ে বেশী খোঁচাখুঁচি ও ভালো না। এমনিতে আমি মেয়েটা খুব ভালো তবে কেউ অপমান করলে আপস করি না। দুই লাইন শোনালে চার লাইন শুনিয়ে দিতে পারি।”
জান্নাতুল ফেরদৌস আর কিছু বলেননা। সেরিন তার রুম থেকে প্রস্থান করে। আজকে শুভ্র আসুক শুধু। এই আর্শিয়ার জন্য তাকে ছোট করলো। কে বলেছে আর্শিয়াকে দেখতে যেতে?
ভূতের ভয় ত্যাগ করে সেরিন রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। বেলকনিতে যায়! সেখানে একটা দোলনা জুলানো আছে। বেলকনির সামনে বাগান বিলাসের ফুল ফুটে আছে। গেটের দিকে নজর দেয় সেরিন। রোড দিয়ে কত গাড়ী আসা যাওয়া করছে।
শুভ্র বাড়ী ফিরতে,ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সেরিন মাগরিবের নামাজ পড়ে সবে বসেছে। তখন শুভ্র তার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। সেরিন জিজ্ঞেস করে,
“কী আছে এটায়?”
“তোমার জন্য চকলেট।”
“ওহ্!”
সেরিন প্যাকেটটা রেখে বসে পড়ে। শুভ্র ফ্রেশ হয়ে এসেও দেখে সেরিন আনমনা হয়ে বসে আছে। চকলেটে হাত দেয়নি।
“যাও আমার কফিটা নিয়ে আসো।”
সেরিন সোজা নিচে যায়। কিচেনে যেতে একজন বুয়া একটা ট্রেতে দুটো কফির মগ এগিয়ে দেয়। তখন আবার জান্নাতুল ফেরদৌস কিচেন আসেন। সেরিন তাকে দেখে বলে,
“আপনি কিচেনে?”
“না আসলে রান্না করবো।”
“কেনো? সারাদিন অফিসের কাজ করে রান্না করার মুড থাকে?”
“না আমার ভালো লাগে।”
“আমি আসছি আপনায় হেল্প করবো।”
“ঠিক আছে এসো।”
সেরিন ট্রে নিয়ে উপরে যায়। টেবিলের উপর ট্রে রেখে চলে আসে। সেরিনের এমন ইগমোর শুভ্র বুঝতে পারছে না। নিজের কফির মগ নিয়ে সোফায় বসে শুভ্র।
সেরিন জান্নাতুল ফেরদৌসকে রান্নায় হেল্প করে। শাশুড়ী বউমা মিলে রাতের ডিনার তৈরী করে। তখন জান্নাতুল ফেরদৌস আলাদা প্লেটে খাবার তুলে রাখেন। সেরিন কৌতুহল দমাতে না পেরে বলে,
“ওই পুরোনো প্লেটের খাবার কার জন্য?”
“এমনিতে! আমি সবসময় রাখি।”
“ওহ্!”
সেরিনের সন্দেহ হয়। তবে কিছু বলেনা। তখন আবার একজন সার্ভেন্ট এসে তাকে বলে, শুভ্র ডাকছে। সেরিন উপরে যায়। রুমে প্রবেশ করতে শুভ্র রাগী স্বরে বলে,
“পড়ালেখা নেই তোমার? নিচে এতো সময় কী?”
“রান্নায় হেল্প করছিলাম।”
“বাড়ীতে যথেষ্ট কাজের লোক আছে। তোমার এখন এসব করার সময় না।”
সেরিন কিছু বলেনা। বই নিয়ে বসে পড়ে। শুভ্রও আর কিছু বলেনি।
“আগামী কাল থেকে ক্লাসে রেগুলার হইবা। আর ঢাকায় ব্যাক করতে হবে না।”
সেরিন কিছু বলেনা। শুভ্র ধমকে বলে,
“কী বলেছি শুনেছো তো? তোমার তো আবার মনে থাকে না।”
“শুনেছি।”
“তো প্রতিবন্ধীর মতো চুপ করে বসে আছো কেন? কিছু তো বলবা।”
“বেশী কথা বললে আপনি বিরক্ত হবেন।”
“তোমার আজকে আবার কী হয়েছে? মুড এমন কেনো?”
“তো হবে না? আর্শিয়াদের বাড়ী গিয়েছিলেন কেনো? আর্শিয়া সুন্দরী তো সেই সুন্দরীকেই নিজের বউ করতেন। কে বলেছে সেরিনকে বিয়ে করতে? আসলে আপনি আর্শিয়াকেই ডিজার্ভ করেন আর আমি আপনার থেকেও বেটার কাউকে।”
“তোমায় এসব কে বললো?”
“যে বলেছে,বলেছে।”
“না বললে কী আর করার।”
#চলবে