হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২৯| #শার্লিন_হাসান

0
520

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|২৯|
#শার্লিন_হাসান

এরই মাঝে কেটে যায় একমাস। সেরিনের এক্সাম শেষ! কয়েকদিন পর সে ঢাকায় ব্যাক করবে। শশীর বোর্ড এক্সাম শুরু হওয়ার ও বেশীদিন বাকী নেই। অক্ষরের বিয়েটা আর্শিয়ার সাথেই হয়েছে। তেমন একটা অনুষ্ঠান করে না হলেও ঘরোয়া ভাবেই হয়েছে। অক্ষর ও বেশীদিন বিডিতে নেই। সময়টা বিকেল। সেরিন রেডি হচ্ছে শুভ্রর সাথে ঘুরতে বের হবে। যেহেতু তাঁদের দেখা হতে অনেক লেট আছে।
সেরিন ব্লাক কালার শাড়ী শুভ্র ব্লাক পান্জাবি। শশী,আর্থ ও যাবে তাঁদের সাথে। দুই কাপল একসাথে। সেরিন লেট লতিফা যেটা শুভ্রর অপছন্দের তালিকায় একনাম্বার। বউ বলে কিছু বলেনা। অন্য কেউ হলে ধমকিয়ে ওইভাবে আধসাজেই নিয়ে যেতো। শুভ্র বসে,বসে ওয়েট করছে সেরিনের জন্য। আর্থ অলরেডি শশীকে নিয়ে গাড়ীতে বসে আছে। শুভ্র,সেরিন আসলেই তারা বের হবে।

প্রায় আধঘন্টার মতো শুভ্র ওয়েট করে বসে ছিলো। তার ধৈর্য আর কুলোচ্ছে না। রুমে গিয়ে দেখে সেরিনের মেকআপ কমপ্লিট হয়েছে। তাও হালকা মেকআপ এটাতে তার এতো সময় গেছে এখনো চুলে হাত ও দেয়নি। শুভ্র কিছুটা তাড়া দেখিয়ে বলে,
“আর পাঁচ মিনিট! এরপর লেট হলে আর কখনো তোমায় নিয়ে বাইরে বের হবো না।”

“আমার চুল কীভাবে বাঁধবো? ”

“আমি কী করে বলবো?”

“ধুর!”

সেরিন সামনে একটা সিঁতি করে চুলগুলো ছেড়ে দেয়। তড়িঘড়ি নিজের ফোনটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। শুভ্র রেগে গেলে আবার সমস্যা। যেই এক বদলোক কপালে জুটেছে। সেরিনের সম্পূর্ণ বিপরীত! পান থেকে চুন খসলে রাগ করে বসে থাকে। কিছু বলা ও যায়না তাতেও রাগ করে। মাঝেমধ্যে সেরিনের নিজেকে ম্যাচিউর লাগে আর শুভ্রকে ইমম্যাচিউর মনে হয়। নাহলে একটা মানুষ এতো তেজ আর রাগ দেখাতে পারে?

সেরিন গোমড়া মুখ করে শুভ্রর পেছন,পেছন যায়। চুপচাপ পেছনে শুভ্রর সাথে বসে পড়ে। সামনে আর্থ,শশী। শুভ্রকে এতো লেটে আসতে দেখে আর্থ বলে,
“দিনদিন মেয়েদের মতো হয়ে যাচ্ছে। ওরা নাহয় মেকআপ করে তুমি ও কী মেকআপ করো? এতো লেট কেন?”

“আমার যে প্রতি’বন্ধী বউ আছে ভুলে গেছিস? এটা কী রে ভাই? সবকিছুতে লেট! আর তাড়াহুড়ো করলে তাড়াহুড়ো।”
তখন সেরিন শুধায়,
“আমি প্রতি’বন্ধী? ”

“দেখতে ভালো মেয়েদের মতো হলেও আচার আচরণ কিছুটা ওইরকম।”

“আসলে আগে আমি ভালোই ছিলাম। এক অটিস্টিকের সাথে বিয়ে হলো তার স্বভাব পুরোটা এখন আমার মাঝে। এটার নতুন নাম প্রতি’বন্ধী।”

“আমি অটিস্টিক?”

“তা নয়ত কী রে ভাই? আমি তো আগেই জানতাম আপনার মাথায় সমস্যা। ওই যে রুলস দিতেন। সেটা ফ্যাক্ট না! আপনি স্বীকার করে নিন এটাই আসল কথা।”

“তেমায় নিয়ে আর কখনো যদি ঘুরতে বের হয়েছি তো আনার নামটাই পাল্টে দিও।”

“আর আমি সেরিন যদি আপনার সাথে কোথাও গিয়েছি তো আনার নামটাও আপনি পাল্টে দিয়েন।”

তাঁদের দুজনের ঝগড়া আর্থ,শশী বসে,বসে দেখছে। আর্থ ঝগড়া লাগিয়ে দিয়ে চুপচাপ গাড়ী চালাচ্ছে। ওইদিকে শুভ্র, সেরিন ঝগড়া করেই যাচ্ছে। তারা দাউদকান্দি তিতাস থানার দিকে যাবে কাশবাগানে। যদিও তিতাস এখন উপজেলা করা হয়েছে।

বেশীক্ষণ সময় লাগেনি তাঁদের। তিতাস কাশবাগানে এসে পিকচার,ভিডিও করে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করলো তাারা। শরতের বিকেল, সুন্দর আকাশ,মৃদু বাতাস বেশ উপভোগ করার মতো। অনেক্ক্ষণ সময় কাটিয়ে তারা সন্ধ্যার দিকে রওনা হয় একটা রেস্তেরার দিকে। দাউদকান্দির ‘নিরিবিলি রেস্তোরাঁয়’ যায় তারা। সেখান থেকে হালকা খাওয়া-দাওয়া করে বেড়িয়ে পড়ে। বাড়ী ফিরতে,ফিরতে প্রায় নয়টার উপরে বেজে যায়। আর্থ সেরিন,শুভ্রকে গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে শশীকে পাটওয়ারী বাড়ীতে দিয়ে আসে। শুভ্র সামনে,সেরিন কিছুটা পেছনে বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করবে। তখন সেরিনের চোখ যায় কব’রস্থান আর বাড়ীর পেছনের দিকে। সে তো ভুলেই গিয়েছিলো সেদিনের কথা। শুভ্রর প্যারায় আর মনে থাকে নাকী এতো কথা। কয়েকদিন পর তো ঢাকায় চলেই যাবে আর কবে দেখবে বাড়ীর পেছনের রহস্য?

আনমনা হয়ে ভেতরে যায় সেরিন। বাকীরা লিভিং রুমে কেউ আসছে তো কেউ বসে আছে। আরফিন চৌধুরী বিডির বাইরে আছেন। আয়মান চৌধুরী এবং সুলতানা খানম ঢাকা থেকে বাড়ী এসেছেন কয়েকদিন হলো। শুভ্র তাঁদের সাথে বসে কথা বলছে। সেরিন নিঃশব্দে উপরে যায়। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। আজকাল এতো প্রেশার ভালো লাগছে না তার। পড়াশোনা আবার মিউজিক একাডেমি তারউপর রেজাল্ট খারাপ হলে শুভ্র তার খবর করে দিবে। পড়াশোনা যেই কঠিন সেরিনের ফিউচার বাদ দিয়ে কান্না করতে মন চাচ্ছে। শুভ্রকে বলতে মন চাচ্ছে পড়াশোনা করবো না আমি। এসব ভালো লাগে না। তারউপর ইন্টারের পড়া যেই কঠিন। প্রাইভেট আর ল্যাব ক্লাসে দৌড়াতে,দৌড়াতে জীবন অর্ধেক তেজপাতা। শুভ্র তার জামাই ভালো হলেও টিচার হিসাবে আজো ব’জ্জাত রয়ে গেলো। একটা রুলস ও চেঞ্জ করেনি। অবশ্য এখনো শুভ্রর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে ভুলে না সেরিন।

শুভ্র রুমে এসে দেখে সেরিন চিৎ হয়ে পড়ে আছে। ঘড়ির কাটা সাড়ে নয়টা। আজকে পড়াশোনা হয়নি সেরিনের, সেটা শুভ্রর মনে আছে ভালো করেই। ফ্রেশ হয়ে সেরিনকে ডেকে তুলে শুভ্র। ভীষণ টায়ার্ড সেরিন তাও উঠে বসে। কখন আবার এই লোকের টেম্পারেচার গরম হয়ে যায়।

“কফি আনবো নাকী এখন?”

“পড়ালেখা নেই?”

“আমি বিয়ে করেছি কী পড়ালেখা করার জন্য নাকী? এই দেখুন আমি একটা মানুষ রোবট নই। এই বা’লের পড়াশোনা আমার জন্য না। প্লিজ আমায় মন দিয়ে সংসার করতে দিন। পড়াশোনা করতে চাইনা আমি।”

“কমপক্ষে উচ্চ-মাধ্যমিকটা তো দিতে হবে।”

“তাহলে ঢাকায় পাঠানোর দরকার নেই। এতো প্যারা আমি নিতে পারবো না।”

“একবছরের কোর্স করো না? তারপর নাহয় চলে এসো।”

“ভাল্লাগে না তো।”

“আচ্ছা চলো তোমায় গল্প শোনাই।”

শুভ্রর কথায় সেরিন মাথা নাড়ায়। শুভ্র হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়ে তার হাতের উপর সেরিনের মাথা। শুভ্র তখন বলে,
“জানো তো? আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার আম্মুর এতো আদরের ছিলাম। আমার আম্মু না তখনকার একজন অভিনেত্রী ছিলেন। আমার বাবা আর মায়ের বিয়েটা লাভ ম্যারেজ ছিলো। তাদের ও সুন্দর একটা গল্প ছিলো। তবে আমার আম্মু তার ক্যারুয়ার বিয়ের পর সব ছেড়ে দেন। নিজের সংসারে মনোযোগ দেন। কী জানি! এতে সুখে কার নজর লাগে। আমি যখন দেশের বাইরে চলে যাই তার দুইমাস না যেতেই আমার আম্মু নাকী রোড এক্সিডে’ন্টে মা-রা যায়। আদৌ এর সত্যতা আমার জানা নেই। তারপর শোনলাম বাবার জীবনে নতুন নারী আসলো। অবশ্য আমার দাদীনের জন্য যদিও সে আব্বুর নতুন বিয়ের ছয় মাসের মাথায় গত হোন। জানো তো আমি না ভীষণ হার্ট হয়েছি। আমার বাবা তো আমার মাকে ভালোবাসতো তাহলে কী করে এতো সহজে নতুন কারোর সাথে জীবন বেঁধে নিলো? আমি গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করে বিডি আসি। অবশ্য আমার দাদার ইচ্ছেতে টিচার পদটা বেছে নেই। আমাদের কলেজের অনেক বেশী নাম-ডাক আছে, ছিলো। মাঝখানে একটু সমস্যা হয় তেমন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এটার দায়িত্ব নেয়নি। র‍্যাগিং,রাজনীতি কিছুটা ঢুকে পড়ে। আমি যখন জয়েন করলাম তখন সবটাই চেঞ্জ করার চেষ্টা করি। আমার বাবা,আমার পরিবার রাজনীতির সাথে যুক্ত তবে আমি ছাত্রদের কোন দল বা লীগ করে দেইনা। ওদের ক্যারুয়ার গড়ার বয়স এখন! আমার বাবার পেছনে দৌড়ানোর দরকার নেই। তার জন্য যথেষ্ট মানুষ আছে। আসলে তোমরা বলো আমার মাথায় প্রব্লেম আমি উল্টাপাল্টা রুলস ক্রিয়েট করি। এটা আমি আমার স্টুডেন্টদের ভালো ভেবেই করি। তাঁদের একটা সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য করি। আমি আসলে এতোটা রুড ছিলাম না। তবে সব ঠিক ঠাক করার জন্য একটু তো রুড হতেই হয়। এতোসব কিছুর পরেও আমার সুন্দর একটা মন আছে যেই মনে বসত করে একটা মেয়েফুল। মেয়েফুলটা আমার ভীষণ প্রিয় অর্ধাঙ্গিনী।”

“সবই বুঝলাম। আসেন এবার আদর করি আপনায়।”

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং। হ্যাঁ কুমিল্লাবাসী গল্পটা কিন্তু কুমিল্লা নিয়েই লেখা। যদিও আমার কুমিল্লা ওতো পছন্দনা তবে অপছন্দ ও না। 😁)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here