স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি #পর্ব_৩০ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
356

#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_৩০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

৪ বছর পর….

চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার কক্ষে এলোমেলো হয়ে বসে আছে আগন্তুকের বোন। চেহারার মলিনতা এসে ধরা দিয়েছে। চোখের নিয়ে কালো দাগ পড়ে গিয়েছে। কেশগুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সামনেই আরাভের ছবি দেওয়ালে টাঙানো। মেয়েটি ছবিটির দিকে অগ্রসর হল। নিষ্পলক ভাবে আরাভের ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষটার জন্য ভিষণ মায়া তার। এতটা মায়া কাজ করে কেনো? সে কিছুতেই মানুষটার মায়া থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। তার শূন্যতা ভেতরটা ছারখার করে দিচ্ছে, মানুষ টা তাকে এভাবে এলোমেলো না করে দিলে-ও পারতো। পরক্ষনেই আনমনে শব্দ করে হেসে উঠলো। হাসোজ্জল মুখশ্রী করে আরাভের ছবির দিকে তাকিয়ে বলল,

–নিজের প্রেয়সীর ভালোর জন্য প্রেয়সীকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে না। আজ সে নেশায় জর্জরিত। নেশা ছাড়া একটা দিন বেঁচে থাকা তার কাছে মৃত্যু সমান। যার ভালো চেয়ে দূরে সরেছিলে, ফিরে এসে যদি দেখো সে ধংস হয়ে গিয়েছে। তখন তুমি কি করবে আরাভ মুনতাসীর? তুমি যেভাবে আমাকে ধংস করেছো। আমিও তোমার প্রেয়সীর ধংসের খবর তুমি পর্যন্ত পৌঁছাতে দেইনি। যে স্মৃতির বিপথের যাবার খবর তোমার কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছে। আমি তাকেই খু’ন করেছি। আমিও দেখতে চাই তুমি কিভাবে সুখের রাজ্যের রাজা হও। কথা গুলো বলেই আবার হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে কান্না করে ফেলল। এভাবে রোজ আরাভের ছবির সামনে কথা বলে আগন্তুকের বোন। আরাভের জন্য ভিষণ পাগলামি করে। আগন্তুক এটাই বুঝতে পারে না। আরাভের সাথে তার বোনের পরিচয়টা হয়েছিল কবে?

দীর্ঘ চার বছর পরে আবার সেই চেনা শহরে প্রবেশ করল আরাভ। গাড়ি থেকে নেমে স্মৃতিদের বাসার দিকে যাচ্ছিল। তখনই অভ্রের কণ্ঠে বলা কথা শুনে থেমে যায় দু’টি চরন। বিস্ময় নয়নে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে আরাভ। আরাভকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভ্র বলল,

–ঐ দিকে কোথায় যাচ্ছিস? ওটা আমাদের বাসা না। ওটা স্মৃতিদের বাসা। আমরা আর স্মৃতিদের বাসায় থাকি না। আমাদের নিজের বাসা সেই কবে তৈরি হয়ে গিয়েছে। স্মৃতিদের বাসার বিপরীত পাশে আমাদের বাসা। এই বাড়িটা তৈরি করার কতটা স্বপ্ন ছিল আব্বুর। অবশেষে আব্বুর স্বপ্নের বাসাটা তৈরি হয়েছে। তুই চলে যাবার পরে আব্বু আম্মু মানসিক ভাবে অনেক ভেঙে পড়েছিল। এবার আর আমাদের ছেড়ে চলে যাস না। মানুষ মাত্রই ভুল করে, আমরাও জীবনে অনেক ভুল করেছি। দু’দিনের জীবনে এত অশান্তি করে কি লাভ? আমরা সবাই বাঁচব আর কয়দিন। যেই কয়টা দিন পৃথিবীতে আছি। প্রতিটি মুহুর্ত আনন্দে বাঁচতে চাই। অভ্রের কথায় আরাভ বুক ভারি করা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। কোনো কথা না বলে বিপরীতে পাশে হাঁটা শুরু করল। অভ্র আরাভের সাথে সাথে হাঁটছে। আরাভকে চুপ থাকতে দেখে অভ্র আবার বলে উঠলো,

–আমাদের ওপরে এখনো রেগে আছিস? অভ্রের কথায় আরাভ তাচ্ছিল্য করে বলল,

–আমার আবার রাগ আছে ভাইয়া। নাকি আমার রাগের মূল্য কারো কাছে আছে। আমাকে শুধু ঘৃণা করা যায়। ভালোবাসা যায় না। প্রয়োজনে আমার কাছে আসা যায়। প্রয়োজন মিটে গেলে ছুড়ে ফেলে দেওয়া যায়। আগলে রাখা যায় না। এসব কথা বলে মন মানসিকতা খারাপ করে দিতে চাই না। বহু দূর থেকে এসেছি। আমার শরীর টা ভালো লাগছে না। আমি বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নিতে চাই। আমাকে তাড়াতাড়ি বাসার মধ্যে নিয়ে চলো। অভ্র আর বারতি কথা বলল না। ভাইয়ের হাত ধরে বাসার মধ্যে নিয়ে চলে গেল। বহুদিন পরে আরাভকে কাছে পেয়ে রোকেয়া বেগম কান্নাই করে দিল। রহমান শেখ মন দুর্বল করা কথা বলতে লাগলো। তবুও যেন আরাভের মন গলল না। একটা সময় এই মানুষ গুলোই তাকে ভুল বুঝে বাসা থেকে চলে যেতে বলেছিল। বেহায়া মন বুঝে না বাবা-মাকে একটা নজর দেখতে চায়। তাদের আদর ভালোবাসা গ্রহণ করতে চায়। তাই তো নির্লজ্জের মতো আবার ফিরে আসলো। পৃথিবীতে প্রতিটি সন্তানই বোধহয় বাবা-মায়ের কাছে নির্লজ্জ হয়। আরাভ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–তোমাদের কান্না কাটি শেষ হয়ে গেলে বলো। অনেক দূর থেকে এসেছি। শরীর টা বড্ড ক্লান্ত লাগছে। আম্মু তাড়াতাড়ি খাবার তৈরি করো। আমার প্রচন্ড ক্ষুদা লেগেছে। ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসবো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমাবো। কথা গুলো বলেই অভ্রকে বলল নিজের কক্ষ দেখিয়ে দিতে, অভ্র আরাভকে তার রুমে নিয়ে চলে গেল।

দীর্ঘদিন পরে ছেলের মুখে আম্মু ডাক শুনে রোকেয়া বেগমের বুকটা প্রশান্তিতে ভয়ে গেল। ছেলের মুখে মা ডাক শোনার জন্য বুকটা খাঁ খাঁ করছিল। এতদিনের জলন্ত বুকটা মুহুর্তের মধ্যে শীতল হয়ে গেল। তিনি বিলম্ব না করে রান্না ঘরের দিকে ছুটলেন। বাসায় আসার দশ মিনিট আগে আরাভ অভ্রকে ফোন করে জানিয়েছে সে বাসায় আসছে। তাই আরাভের পছন্দ মতো রান্না করতে পারেননি রোকেয়া বেগম। দুপুর শাক আর মাছ ভাত রান্না করেছিল। সেগুলোই ছেলের জন্য নিয়ে আসলেন।

নিজের কক্ষে প্রবেশ করে কিছুটা অবাক হয়ে গেল আরাভ। তার কক্ষটা একদম তার মনের মতো করে সাজানো। এটা তার মায়ের কাজ ছাড়া কারো হতে পারে না। বাবা-মা যতই খারাপ হোক না কেন আপন বলতে তাড়া ছাড়া দুনিয়ায় কেউ হতেই পারে না। আরাভ আনমনে অভ্রকে প্রশ্ন করেই উঠলো,

–আকাশী কোথায়?

–আকাশী ভার্সিটিতে গিয়েছে। আজকাল মেয়েটা ভিষণ অবাধ্য হয়ে গিয়েছে। রাত করে বাসায় ফিরে। একমাত্র তোকেই ভয় পেত। তুই নেই কাউকে ভয় পায় না। কিছু বললেই বাসা ছেড়ে চলে যাবার ভয় দেখায়। তোর চিন্তায় আব্বু আম্মু বিধস্ত থাকায় কিছু বলে না। একদিন রাত বারোটায় বাহিরে থেকে বাসায় আসছিল। ক’ষে দু’টো থা’প্প’ড় বসিয়ে দিয়ে ছিলাম। মুখে মুখে তর্ক করতো। কয়েকদিন ভয় পাচ্ছিল। কিছু দিন যাবার পরে আবার আগের মতো হয়ে যায়। তবে বেশি রাত করে বাড়ি ফিরে না। রাতে বাহিরে কি করে সেটাও বলে না। আব্বু রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিল। তারপরে থেকে সন্ধ্যার মধ্যে বাসায় আসে। আরাভ অভ্রের কথা কঠোর কণ্ঠে বলল,

–কথায় আছে না অতি বাড় বেড়ো না। বেশি বাড়লে ঝড়ে ভেঙে পড়তে হবে। ও কত উড়া শিখেছে। আমিও দেখতে চাই কতদিন উড়তে পারে। মানুষ দেখেছে কিন্তু মানুষের বিষ গ্রহণ করেনি। আরাভের কথা শেষ হবার সাথে স্রুতি দুই বছরের একটা ফুটফুটে মেয়ে বাচ্চাকে নিয়ে আরাভের কক্ষে প্রবেশ করল। কণ্ঠে মলিনতা রেখে বলল,

–কেমন আছো আরাভ? এই দেখো আমাদের মেয়ে হয়েছে। তুমি তো রাগ করে আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখোনি। অভ্রের সাথে দু’চারটা কথা বলতে, তোমার ছোট মা’কে কোলে নিবে না। অভ্রের মেয়েটা আরাভকে দেখে সে কি মনোমুগ্ধকর হাসি উপহার দিল। দুই হাত কেমন ছোটাছুটি করছে। স্রুতি শিখিয়ে দিচ্ছে চাচ্চু বলতে। আরাভকে দু’বার তোতলানো কণ্ঠে ডাকলো। অভ্রের মেয়ের কান্ড দেখে আরাভ হেসে দিল। অভ্র আর স্রুতিকে অপেক্ষা করতে বলে ফ্রেশ হতে চলে গেল। একটু পরে ফ্রেশ হয়ে এসে অভ্রের মেয়েকে কোলে নিল। অভ্রের মেয়েকে কোলে নিতেই আরাভের ভেতরে অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করতে শুরু করল। অভ্র প্রথম আরাভকে এতটা খুশি হতে দেখলো। আরাভ হাসিমাখা মুখশ্রী করে বলল,

–বাবুর নাম কি রেখেছেন ভাবি? আরাভকে কথা বলতে দেখে স্রুতি কিছুটা অবাক হয়ে গেল। সে বিলম্ব না করে দ্রুতি গতিতে বলল,

–অভ্রের নামের সাথে মিলিয়ে আয়েশা রেখেছি। আরাভ হেসে বলে,

–বাহ অনেক সুন্দর নাম হয়েছে। আমার প্রচন্ড ক্ষুদা লেগেছে। আমি খেতে যাই। স্রুতি আরাভের হাত থেকে আয়েশাকে নিতে চাইলে, আরাভ বলে উঠলো,

–নিতে হবে না ভাবি ও আমার কাছে থাক। আরাভের কথায় শ্রুতি কিছুটা ধীর কণ্ঠে বলল,

–তোমার খেতে সমস্যা হবে। তুমি বাবুকে কোলে নিয়ে খেতে পারবে না। স্রুতির কথার উত্তরে আরাভ বলল,

–সমস্যা নেই আমি খেতে পারবো। কথা গুলো বলেই আরাভ কক্ষের বাহিরে চলে গেল। আরাভ একহাতে খাচ্ছে আরেক হাতে আয়েশাকে কোলে নিয়ে আছে। আরাভের মা মাছের টাকা বেছে আরাভের প্লেটের কিনারে রাখছে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here