নীলফড়িং #ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি #পর্ব ২০ .

0
142

#নীলফড়িং
#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#পর্ব ২০
.
.
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে চলে গেল পুস্পিতা, তার শাশুড়ী মা তাকে দেখে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করল।

……এত জলদি উঠলে কেনো? আর একটু ঘুমাতে। দুই দিন একটু রেস্ট নিয়ে নাও মা, এতদিন তো আর তেমন রেস্ট নেওয়ার সময় পাওনি।

……জ্বি আম্মু তা ঠিক আছে, তবে এটা কাজের ক্ষেত্রে, বাসার ক্ষেত্রে নয়। কারণ এতদিন আপনি একাই তো সব করেছেন। আমি বরং করিনি। তাই আজ থেকে আমি কাজ করব আপনি এই দুদিন রেস্ট নিবেন।

…….আরে না না এটা হবে না।

…..এটাই হবে আম্মু।

এই বলে শাশুড়ী কে রান্নাঘর থেকে বের করে দিয়ে পুস্পিতা শিরিনের সঙ্গে মিলে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে নিলো। এরপর শিরিন কে সব ডাইনিং টেবিলে গুছিয়ে রাখতে বলে সে ফাইয়াজ কে ডাকতে চলে গেল। যেহেতু আজ শুক্রবার, তাই ফাইয়াজ ও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। তাই পুস্পিতা গিয়ে ফাইয়াজের কানের কাছে চুড়ি নাড়া শুরু করল। যার শব্দে ফাইয়াজ খুব বিরক্ত হচ্ছে।

……কী করছ? ঘুমাতে দাও।

……মোটেই না, ব্রেকফাস্ট ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে এই মিস্টার ডক্টর ওঠেন বলছি না হয় পানি ঢেলে দেবো।

……আচ্ছা ঠিক আছে।

এই বলে পুস্পিতা কে টান দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো এরপর তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।

……এই এই কেউ এসে যাবে, দরজা ভেজানো আছে।

……আসুক যার ইচ্ছে। তুমি চুপ করে আমাকে ঘুমাতে দাও।

……উঠুন না। এই মিস্টার ডক্টর ওঠেন।

ফাইয়াজ নিজের হাতের আঙুল দিয়ে পুস্পিতার ঠোঁট চেপে ধরতে চাইলো বাট পুস্পিতা একটা কামড় বসিয়ে দিলো তার আঙুলে। যার জন্য আহ বলে চিৎকার করে একেবারে উঠে বসে পড়ল।

……এই মেয়ে কামড় কেনো মারলে?

……তো কী করব? সবাই এতক্ষণে ব্রেকফাস্ট করতে হয়ত চলে আসছে, বাট আমরা দু’জন নিরালায় শুয়ে আছি। দরজাও খোলা আছে কেউ চলে আসলে?

…….দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি মজা। আমাকে কামড় দেওয়া বুঝাচ্ছি।

এই শুনে পুস্পিতা উঠে যেতে নিলো বাট ফাইয়াজ তাকে ধরে বিছানায় ফেলে দিলো। ফাইয়াজ পুস্পিতা কে শক্ত করে বিছানার সাথে আঁটকে ধরল।

……এই প্লিজ প্লিজ বলছি ছেড়ে দিন আর হবে না।

……এখন আর ছাড়া ছাড়ি নেই ম্যাডাম, আগেই বারণ করেছিলাম। শুনো নাই কেনো তখন।

……প্লিজ প্লিজ কেউ এসে যাবে।

……একদম চুপ করে থাকো।

এই বলে ফাইয়াজ পুস্পিতার দিকে এগিয়ে যেতে নিলো। অনেকটা কাছে চলে যেতেই কেউ এসে রুমে প্রবেশ করল।

…….স্যরি স্যরি।

পুস্পিতা ঠেলা দিয়ে ফাইয়াজ কে সরিয়ে দিয়ে নিজের শাড়ি ঠিক করতে করতে উঠে বসে পড়ল, দরজায় তাকিয়ে দেখল নিশা দাঁড়িয়ে আছে চোখের সামনে এক হাত দিয়ে। ফাইয়াজ উঠে বসে লজ্জা পেয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল। আর পুস্পিতা নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বিছানা গোছাতে গোছাতে বলে উঠল।

……হ্যা নিশা কিছু বলবে?

……নাহ আসলে ল্যাপটপ-টা দিতে এসেছিলাম।

……ওহ আচ্ছা রেখে যাও তবে।

নিশা টেবিলের উপর ল্যাপটপ রেখে চুপচাপ বের হয়ে গেল রুম থেকে, সে যাওয়ার সাথে সাথেই পুস্পিতা দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় বসে পড়ল৷ ইশ খুব খারাপ হলো।

…..আর এই লোকটা কে কতবার করে বললাম দরজা খোলা আছে, কে শোনে কার কথা? এবার বোঝো ঠেলা। নিজের ছোট বোনের সামনে এমন লজ্জা পেলে যা হয় আর কী?

ফাইয়াজ ওয়াশ রুম থেকে বের হওয়ার আগে ভালো করে উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখল, না পুস্পিতা একাই রুমে আছে। তাই সে বের হয়ে এলো।

……কী ম্যাডাম দরজা লক করেছ তো?

পুস্পিতা চোখ দুটো ছোট ছোট করে মাজায় হাত রেখে বলে উঠল।

……যখন আমি কিছু বলি তখন গায়ে লাগাবেন না। যখন সমস্যা হয়ে যাবে তখন বলবেন সাবধানে আছি তো?

……হ্যা হ্যা এখন তুমিও বলো।

……আপনি যা করছেন সেখানে আমি কিছু এখনো বলিনি। আর বলব ও না। দেখছি আপনি এখন বাহিরে কীভাবে যান নিজের ছোট বোনের সামনে?

……ইশ সত্যি এখন কী করব?

……আমি কী জানি। (কাপড় গুছিয়ে রাখতে রাখতে।)

……তুমি বরং আমার ব্রেকফাস্ট রুমেই নিয়ে আসো।

……ইশ নিজে যেতে পারবে না আমাকে যেতে বলছে। নিজে গিয়ে বরং আমারটা ও নিয়ে আসেন।

…..এটা কেমন কথা?

……তবে লজ্জা বুঝি একা আপনারই আছে আমার নেই? আমি এখন বাহিরে যেতে পারব না। কাজ আছে আমার রুমে।

……প্লিজ প্লিজ জান একটু দয়া করো তোমার এই হাসবেন্ড কে।

……আচ্ছা আজকাল দেখছি ভালোই কথা বলছেন। আগে তো একটা জিজ্ঞেস করলে আরেকটা উত্তর বলে দিতেন। এখন দেখছি অনেকটা চেঞ্জ।

……আরও কত কী দেখবে, সব তো তোমার প্রেমেই হয়েছি। অন্য কারো সাথে দেখেছ এতটা ফ্রি আমাকে?

……নাহ তাই তো বলছি। আচ্ছা দেখছি কী করা যায়।

এই বলে পুস্পিতা রুম থেকে বের হয়ে আগে চারিপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো না নিশা কোথাও নেই, তাই সে ডাইনিং রুমে গিয়ে ফাইয়াজের জন্য খাবার তুলে নিলো একটা প্লেটে খাবার গুছিয়ে নিয়ে এগোতে নিলো এর মধ্যে তার শাশুড়ী এসে সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে উঠল।

…..আরে পুস্পিতা এগুলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?

……আম্মু আসলে আপনার ছেলে একটু জরুরি কাজ করছে তাই বলছে এখন কিছু খাবে না, তাই আমি ভাবলাম তার খাবারটা তার রুমেই দিয়ে দেই।

…..এই ছেলেটা কাজ ছাড়া কিছুই বোঝে না। আচ্ছা ঠিক আছে দিয়ে আসো তুমি।

পুস্পিতা তারাতাড়ি করে হেঁটে এগিয়ে গেল তার রুমের ভেতর। রুমে গিয়ে ফাইয়াজের সামনে খাবার রেখে বলে উঠল।

……আপনার জন্য আজ আম্মুর সাথে মিথ্যা কথা বলতে হলো। আপনাকে যে কী করা উচিৎ বলে বুঝাতে পারব না।

……যাক বুঝাতে হবে না। সত্যি প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে, তুমি খেলে বসে পড়ো না খেলে দাঁড়িয়ে থাকো আমি খাই দেখো।

……আমার খাওয়াও লাগবে না, দেখাও লাগবে না, আপনি খেয়ে নিন। (যেতে নিয়ে আবার ঘুরে গিয়ে) আর শুনুন দরজাটা লাগিয়ে নিন।

এই বলে পুস্পিতা রুম থেকে বের হয়ে গেল।

বিকেল দিকে পুস্পিতা আর ফাইয়াজ ঘুরতে বের হতে নিলো। নিশা এসে ওদের বের হতে দেখে বলে উঠল।

……ভাই তোমরা কোথাও যাচ্ছ?

……হ্যা একটু বাহিরে যাচ্ছি।

……আমিও আশি তোমাদের সাথে?

……তুই কোথায় যাবি?

……আরে তোমরা যেখানে যাবে আমিও সেখানেই যাবো।

……আমাদের তো একটু কাজ ছিলো। তুই এক কাজ কর ফারিজের সাথে চলে যা। ও তোকে ঘুরিয়ে আনবে।

…….থাক লাগবে না আমার কোথাও যাওয়া।

……নিশা যাও তুমি রেডি হয়ে আসো।

……কিন্তু পুস্পিতা?

…….থাকনা যেতে চাইছে যখন।

…….তোমার ইচ্ছে।

নিশা খুশি হয়ে চলে গেল রেডি হতে। এদিকে ফাইয়াজ রাগ করে বলে উঠল।

…….কতদিন পড়ে তুমি এলে চাইছিলাম দুজনে এক সাথে একটু সময় কাটাব। কিন্তু তুমি, যাক তোমার যা ইচ্ছে তাই করো।

এই বলে ফাইয়াজ রুম থেকে বের হয়ে গেল। পুস্পিতা হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে রুম থেকে বের হয়ে এলো।

পুস্পিতা গাড়ীর সামনের দরজায় হাত দিতে যাবে ঠিক তখনই নিশা অন্য পাশ থেকে এসে দরজা খুলে ঢুকতে নিলো। যা দেখে পুস্পিতা সাথে সাথে দরজা ধরে বলে উঠল।

…….নিশা এটা তোমার জায়গা নয় এটা আমার জায়গা, তাই তুমি গিয়ে পেছনে বসো।

…….ভাবী আমার গাড়ীর পেছনে বসার অভ্যাস নেই। আপনি একটু ম্যানেজ করে নিন না।

……স্যারি ননদিনি আমি আমার নিজের বলতে কোনো কিছুর সাথে ম্যানেজ করতে শিখিনি। তাই তোমাকেই এডজাস্ট করে নিতে হবে। যাও পেছনে গিয়ে বসে পড়ো।

নিশা প্রচুর রেগে গিয়ে পেছনে বসে পড়ল। আর পুস্পিতা সামনে ফাইয়াজের পাশেই বসে পড়ল। ফাইয়াজ মুচকি হেঁসে গাড়ী ড্রাইভ করতে শুরু করে দিলো।

……কোন দিকে যাবেন ম্যাডাম?

……বগুড়া রোড বাসের কঞ্চির ওখানে যাই।

……জ্বি অবশ্যই।

বাসের কঞ্চির সামনে গিয়ে গাড়ী থামিয়ে দুজনে নেমে দাঁড়াল।

……নিশা আসো।

……নাহ ভাবী আমি এসব জায়গায় কিছু খেতে পারি না।

……ওহ আচ্ছা, ঠিক আছে খেতে হবে না তুমি বসো আমরা আসছি।

এই বলে ফাইয়াজের হাত ধরে পুস্পিতা ভেতরে চলে গেল। দুজনে খুব মজা করে দই ফুচকা আরও কয়েক পদ খেয়ে প্রায় ৩০ মিনিট পড়ে বের হয়ে দেখল নিশা গাড়ীর সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা দু’জন গাড়ীতে উঠে বসে পড়ল, যা দেখে নিশাও বসল। ওরা আরও অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করে বাসায় চলে এলো।

বাসায় আসতেই নিশা তার রুমে চলে গেল। তাই ফাইয়াজ পুস্পিতা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল।

…….পুস্পিতা।

……হ্যা।

……আসলে একটা কথা বলতে ভুলেই গিয়েছি।

……জ্বি বলেন?

……আজ একটা জন্মদিনের পার্টির দাওয়াত ছিলো। না গেলেই নয়। ডক্টর জাফর এর মেয়ের বার্থডে তাই কষ্ট করে একটু রেডি হয়ে নাও।

…….জ্বি নিশ্চয়ই।

পুস্পিতা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ৭টা ১০মিনিট, তাই পুস্পিতা গিয়ে রেডি হয়ে নিলো। ফাইয়াজ ও ম্যাচিং করে পড়ে নিলো পুস্পিতার সাথে এরপর দু’জনে বেরিয়ে পড়ল ওদের আম্মুকে জানিয়ে।



চলবে………..।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here