নীলফড়িং #ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি #পর্ব ৩

0
250

#নীলফড়িং
#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#পর্ব ৩
.
.
সকাল সকাল তারাহুরো করে হসপিটাল থেকে বেড় হচ্ছিলাম। হঠাৎ কারো সাথে সজোরে একটা থাক্কা খেলাম হাতের জিনিস গুলো সব মাটিতে পড়ে গেলো। নিজেকে সামলে তাকিয়ে দেখলাম, একটা ইয়াং বয়সী ছেলে।

……সরি মিস, আমি আসলে খেয়াল করিনি।

এই বলে ছেলেটা তারাহুরো করে আমার পড়ে যাওয়া জিনিস গুলো তুলে আমার হাতে দিয়ে হসপিটালের ভেতর ছুটে চলে গেলো। ছেলেটাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো কারণে চিন্তিত হয়ে আছে। হসপিটাল, হতেই পারে কোনো সমস্যা। আমি আবার এগোতে লাগলাম। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই একটা বাচ্চা এসে হাত ধরে নিলো। আমি তাকে দেখে তার সামনে বসে পড়ে,

……জ্বি কিছু বলবে?

……হ আমি না কাইল থেক্কা কিছু খাই নাই।

…….ক্ষুধা পেয়েছে।

…….হুম।

……তোমার মা কোথায়?

……(আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল) উই যে মায়।

বাচ্চাটাকে দেখে খুব মায়া লাগল। এত ছোট বাচ্চা এভাবে বললে খারাপ না লেগে কী পারে? হয়ত বেশি হলে ৬ কী ৭ বছর হবে। চারিদিকে তাকিয়ে আমার চোখ পড়ল হসপিটালের পাশের রেস্টুরেন্টের দিকে, আমি বাচ্চাটাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

……কী খাবে?

…….(ভেবে নিয়ে) ভাত।

আমি ওয়েটার-কে বলে খাবার প্যাক করে নিয়ে, বাচ্চাটাকে নিয়ে এগিয়ে এসে ওর মায়ের হাতে খাবার গুলো দিয়ে, একটা রিকশা ডেকে উঠতে যাবো ঠিক সেই সময় কেউ পেছন থেকে বলে উঠল।

…….পুস্পিতা।

……আমি তাকিয়ে দেখলাম রাবীত ছিল।

……প্লিজ পুস্পিতা আমাকে নিজের হয়ে কিছু তো বলতে দাও। এভাবে সব না জেনে আমাকে শাস্তি দিও না। প্লিজ।

……দ্যাখেন আমার কিছু শোনার ইচ্ছে নেই, আপনার যা কিছু বলার থাকতে পারে। বাট আমার শোনার মতো কিছুই নেই। আমার দেরি হচ্ছে এসব কথা শোনার সময় আমার নেই।

এই বলে আমি রিকশায় উঠে বসে পড়লাম।

……পুস্পিতা প্লিজ আমার কথা শোনো। শুধু একটা চান্স দাও আমাকে, আমার কথা গুলো বলার জন্য।

অটোরিকশা যেহেতু, চালিয়ে সেখান থেকে চলে আসতে সময় লাগল না। আমি আর পেছন ফিরে তাকালাম না।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে, সবার সাথে ব্রেকফাস্ট করে নিজের রুমে গিয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। সারারাত যেহেতু একটুও ঘুম হলো না তাই খুব ক্লান্ত লাগছে।

……পুস্পিতা, পুস্পিতা, ওঠ।

…….মা আর একটু ঘুমাতে দাও এত জলদি কেনো ডাকছ?

……এত জলদি কোথায়, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দ্যাখ, ১:০০ বেজে গেলো।

আমি মায়ের কথায় ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখলাম হ্যা সত্যি বলছেন আমার মা জননী।

……..হুম উঠে গেছি। যাও আসছি।

আমি বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে খাবার টেবিলে বসে পড়লাম। মা খাবার সব গুছিয়ে নিজেও বসে পড়ল। দুজনে খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম।

ড্রইং রুমে গিয়ে ছোপার উপর পা উঠিয়ে বসে পড়লাম। মা সব গুছিয়ে এসে আমার পাশে বসে পড়ে বলে উঠলেন।

……তোর জন্য একটা সমন্ধ এসেছে। ছেলে খুব ভালো, দেখতেও অনেক সুন্দর।

……মা এসব কথা রাখো। আমি এখন কোনো ভাবেই বিয়ে করব না।

……তবে কী বুড়ী হয়ে বিয়ে করবি?

…….মা সব কিছুর আগে আমি নিজের একটা সুন্দর কেরিয়ার গড়তে চাই। তারপর এসব নিয়ে ভাবব।

…….তোর ভাবতে ভাবতে সময় চলে যাবে। এরপর হারিকেন নিয়ে ছেলে খুঁজতে বেড় হতে হবে।

……মা ছেলে তোমার খুঁজতে হবে না। যদি আমি নিজের কেরিয়ার গড়তে পারি। তবে দেখবে তোমার হারিকেন নিয়ে খুঁজতে বেড় হতে হবে না, তোমাকে খুঁজতে আসবে সবাই হারিকেন হাতে নিয়ে ইন’শা’আল্লাহ।

…….আর যদি না আসে?

…….তবে সমস্যা নেই, তোমার মেয়ে নিজের খেয়াল ইন’শা’আল্লাহ রাখতে পারবে। আর তোমরা তো আছো আমার পাশে নাকি?

…….আমরা আর কয়দিন? বয়স হয়েছে, আজকাল মানুষ হঠাৎ করে যেভাবে মরে যাচ্ছে, তাতে কোনো বিশ্বাস নেই কে কবে শেষ বিদায় নেই।

…….মা ভালো ভালো ভাবো, দেখবে সব ভালো হবে। আর তুমি যেমন-টা বলছ, তাতে তো আমিও মরে যেতে পারি? তবে কারও জীবন কেনো আমার এই অল্প সময়ের সাথে জড়াব?

…….হুম তোর সাথে কথা বলে লাব নেই। তুই সব সময় এসব কথা বলেই আমাকে চুপ করিয়ে দিস। তাই আমি আর কিছু বলব না, তোর যা ইচ্ছে তাই কর গিয়ে।

এই বলে মা রেগে চলে গেলেন। আমি রিমোট হাতে চ্যানেল চেঞ্জ করতে লাগলাম।

রাত প্রায় ৩টা, একটু ঘুমের মতো পড়ে ছিলাম। এমন সময় হসপিটালে একটা বাচ্চা মেয়ে এসে হঠাৎ বলে উঠল,

…..আফু আফু।

……হ্যা বলো?

……আমার সাথে এক্ষনি আইবেন আমার মা কানতে আছে।

…….কেনো কী হয়েছে তোমার মায়ের?

……জানি না মায় কয় তার মাথায় ব্যথা করতেছে।

……আচ্ছা চলো।

আমি মেয়েটার সাথে যেতে নিলাম। মেয়েটা আমার ওয়ার্ড থেকে বেড় হতে নিলো।

……এদিকে কোথায় যাচ্ছ?

……আফু আমার মায়ের কাছে যাই।

……কিন্তু ওই পাশে তো অন্য ডাক্তার আছে। তুমি তাদের না ডেকে আমাকে কেনো ডাকলে?

……হেরা তো সবাই ঘুমাইছে, এখন হেগো ডাকলে হেরা ঝামটা দিবে, হেইতে আপনারে ডাকছি।

……ওকে।

মেয়েটার সাথে কিছুদূর এগিয়ে যেতেই জনশূন্য স্থানে চলে এলাম। যেখানে পেশেন্ট বা অন্য কেউ নেই। এবার আমার একটু ভয় ভয় লাগছে আমি এখানে এসে কোনো ভুল করে ফেললাম না তো? একটু এদিক সেদিক তাকাতেই হঠাৎ দেখলাম মেয়েটা গায়েব হয়ে গেলো। এবার আমার সন্দেহ সত্যি মনে হচ্ছে। আমি পেছনে ঘুরে চলে আসতে যাবো ঠিক তখনই কেউ পেছন থেকে আমার মুখ চেপে ধরল, আমাকে জোর করে টেনে নিয়ে এলো একটা রুমের ভেতর। আমাকে রুমের ভেতর ধাক্কা মেরে সে দরজা বন্ধ করে দিল। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে ঠিক করে দাঁড়িয়ে গেলাম। সামনে তাকিয়ে দেখলাম রাবীত দাঁড়িয়ে আছে।

…….আপনি?

…….হ্যা আমি।

……আপনি আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন?

……ছোট একটা কারণে Sweet heart.

…….কী কারণে?

……বলছি বেবি।

সে আমার দিকে এগোতে এগোতে নিজের গায়ের থেকে শার্ট-এর বুতাম খুলতে লাগল। আমি হয়ত বুঝতে পারছি এই লোকটা কী করতে চাইছে আমার সাথে, আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করবো? হঠাৎ মনে হলো, চিৎকার তো দিতেই পারি।

………Help প্লিজ কে আছেন প্লিজ বাঁচান আমাকে……..।

এইটুকু বলতেই সে ছুটে এসে আমার মুখ চেপে ধরল,

……একটু সাউন্ডও করবে না। আর সমস্যা নেই এই রুমের আসেপাশেও এখন কেউ নেই চারিদিকে সবাই ঘুমিয়ে আছে। তোমাকে সাহায্য করার মতো কেউ নেই প্রিয়তমা।

এই বলে আমার মুখের সামনে থেকে তার হাত সরিয়ে নিলো। আমি তাকে ধাক্কা মেরে সরে আসতে নিলাম। বাট সে আমার হাত ধরে টান দিয়ে একটা বেডের উপর ফেলে দিল। আমি বেড থেকে উঠতে যাবো সে আমার উপর লাফিয়ে পড়ল। একটা হিংস্র পশুর মতো। আমি তাকে আবার ধাক্কা মেরে কোনো রকম সরিয়ে দিয়ে বেড থেকে উঠে ছুটে আসতে নিলাম, সে আমার ওড়না ধরে টান দিল। আমি কোনো রকম ওড়না ছেড়ে দিয়ে, আমার ওড়নাটা তার হাতেই রয়ে গেলো , আমি এগিয়ে গেলাম দরজার কাছে দরজার খিল তুলে দরজা খুলতেই সে আবার আমার হাত ধরে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরল আমাকে। সে আমার খুব কাছে আসার চেষ্টা করছিল, বাট আমি হাত দিয়ে তাকে আঁটকে রাখার চেষ্টা করছিলাম। বাট বেশিক্ষণ তাকে আঁটকে রাখতে পারলাম না, সে আমার খুব কাছে চলে এলো। আমি তার সাথে শক্তিতে পারছিলাম না তাই এবার খুব জোরেই চিৎকার দিলাম নিজের মাঝে যতটা শক্তি ছিল, সব দিয়ে।

…….help help plz.

সে আমার কাছে আসার আপ্যায়ন চেষ্টা করে যাচ্ছে। হঠাৎ মনে হলো সে আমার থেকে একটু একটু করে সরে যাচ্ছে। সে আমার কাছ থেকে সরে যেতেই আমি সামনে তাকালাম তাকিয়ে দেখলাম, ফাইয়াজ স্যার ছিল। স্যারকে দেখে আমি অনেকটা শক্তি কুড়িয়ে নিলাম। ভেবে ছিলাম আজ হয়ত আমি আর বাঁচতে পারবো না, কিন্তু কথায় আছে না রাখে আল্লাহ মারে কে? সেটাই আজ আবার প্রমাণ হয়ে গেলো। আমি নিজের চোখ মুছে দাঁড়িয়ে রইলাম, স্যার রাবীতকে মারতে শুরু করলো। মারতে মারতে এক পর্যায় পুলিশ-কে ফোন দিয়ে বলল।

…….হ্যালো আমি কী থানায় ফোন করেছি?

…….🤫

…….জ্বি আসলে আমি ডাক্তার আবরার ফাইয়াজ বলছি, একজন ইন্টার্নি ডাক্তার নেশা করা অবস্থায় হসপিটালে ডিউটি করছিল তাই আমি তাকে আপনাদের হাতে দিতে চাচ্ছি।

……🤫

…….জ্বি ওনার কাছে কিছু নেশা যুক্ত জিনিসও রয়েছে। ওকে।

এই বলে সে ফোনটা রেখে দিয়ে রাবীতের ঘাড় ধরে ফ্লোর থেকে ওর শার্ট তুলে নিয়ে, রুম থেকে বেড় হয়ে এগিয়ে গেলো বলতে বলতে।

…….পুস্পিতা তুমি এখনি তোমার ওয়ার্ডে যাও। আমি ওঁকে দেখে নিচ্ছি।

…….জ্বি স্যার।

…….চল তোকে আজ বোঝাচ্ছি, মেয়েদের দিকে খারাপ নজরে তাকানোর শাস্তি কী হয়।

আমি সেখান থেকে নিজের ওয়ার্ডে চলে এলাম, ওয়াশ রুমে গিয়ে চুল গুলো ঠিক করে নাকে মুখে পানির ছিটা দিয়ে, বেশ কিছুক্ষণ নিজেকে আয়নায় দেখলাম। খুব খারাপ লাগছে, একটা মানুষ আর কতটা নিচে নামতে পারে? আর কতটা খারাপ হতে পারে? বেশ কিছুক্ষণ পরে আমি ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম। বেড়িয়ে আসতেই দেখলাম আমার ফোন বাজছে, ফোন হাতে নিয়ে স্কিনে তাকিয়ে দেখলাম ফাইয়াজ স্যার ফোন দিয়েছে সাথে সাথে রিসিভ করলাম

……হ্যালো স্যার।

…….পুস্পিতা তোমার চিন্তার কিছু নেই, রাবীত কে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, যেই জন্য ধরে নিয়ে গেছে তাতে কম হলেও ৬ মাস জেল, তাই তুমি নিশ্চিন্তায় থাকতে পারো। আর শোনো এই বিষয় কারো সাথে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। এতে সমস্যা হবে তোমার।

…….অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার আপনাকে। আপনি তখন না আসলে, ভাবতেই পারছি না কী হতো?

…….ইটস ওকে পুস্পিতা, তুমি নিজেকে শান্ত করো, আর সাবধানে থেকো একটু কেমন?

…….জ্বি স্যার।

ফোন রেখে দিল স্যার। সত্যি আজ স্যার না আসলে কী যে হতো কে জানে?

সকাল তখন ৮:০০ আমি হসপিটাল থেকে বেড় হতেই দেখলাম স্যার গাড়ী নিয়ে হসপিটালের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে, গাড়ীর সাথে ঠেস দিয়ে। আমাকে দেখে সে মুচকি হেঁসে গাড়ীর দরজা খুলে দিল, আমি তার কাছে গিয়ে।

……..স্যার ধন্যবাদ বাট আমি চলে যাবো।

…….হুম নিশ্চয়ই বাট আজ যখন ডিউটি এক সাথে শেষ হয়েছে তবে কেননা এক সাথেই যাই, তোমার এই রিকশার ভাড়া জমিয়ে একদিন না হয় আমাকে এক কাপ কফিই খাইয়ে দিও।

স্যারের কথায় হেঁসে উঠলাম। স্যারও হাঁসল। আমি গাড়ীতে উঠে বসে পড়লাম স্যারও গিয়ে বসে পড়ল। দুজনেই চুপ কোনো কথা বলার মতো ভাষা নেই হয়ত দুজনার মাঝে।

গাড়ী এসে থেমে যেতেই আমি গাড়ী থেকে নামার আগ মূহুর্তে স্যারের উদ্দেশ্যে বললাম।

……স্যার বাড়ির ভেতরে চলেন।

…….আজ না অন্য একদিন। তোমার বলতে হবে না আমি নিজেই আসবো। বাট আজ প্রচুর টায়ার্ড ফিল করছি, তাই আজ নয়।

…….ওকে স্যার।

আমি গাড়ী থেকে নেমে বাড়ির গেট খুলে বাড়ির ভেতরে এগিয়ে গেলাম। দরজায় নক করতেই দরজা খুলে আব্বু বলে উঠল।

…….এসে গেছিস?

……জ্বি আব্বু।

……রিকশায় করে এসেছিস?

……না ফাইয়াজ স্যার এগিয়ে দিয়ে গেলো।

……ওহ আচ্ছা। তবে তাকে ভেতরে আসতে বলবি তো?

……বলেছিলাম বাট সে প্রচুর টায়ার্ড ফিল করছে তাই আসল না।

……ওহ আচ্ছা অনেক দিন হয়েছে দেখা হয়নি ফাইয়াজের সাথে। তাই বলছিলাম। আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে আয় গিয়ে।

……জ্বি আব্বু।

আমি ফ্রেশ হতে চলে এলাম। ফ্রেশ হতে গিয়ে চোখ যখন আয়নায় পড়ল, তখন দেখলাম ঘাড়ের কাছে লাল হয়ে আছে। মনে পড়ল সেই বিষাক্ত ঘটনা, হয়ত যখন ওড়না টান দিয়েছিল ঠিক তখনই লেগেছিল। আয়না থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে, ফ্রেশ হয়ে ওড়নাটা গলার সাথে লাগিয়ে নিয়ে রুম থেকে বেড় হয়ে এলাম। ব্রেকফাস্ট টেবিলে গিয়ে দেখলাম আব্বু মা বসে আছেন আমার অপেক্ষায়। আমি গিয়ে বসে পড়তেই মা খাবার সার্ফ করল। খাবার খেতে খেতে আব্বু বলে উঠল।

…….তোর পড়াশোনা কেমন চলছে?

…….জ্বি আব্বু আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

…….পড়াশোনা, ডিউটি পালন করতে গিয়ে নিজের খেয়াল রাখার কথা ভুলে যাস না।

আব্বুর কথা শুনে মৃদু হাঁসলাম।

খাওয়া শেষ করে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু আজ আর ঘুম চোখে আসছে না, আজ শুধু বারবার সেই বিষে ভরা বিষাক্ত মূহুর্তের কথাই মনে পড়ে যাচ্ছে। ওহ গড কী হতো যদি তখন আমার চিৎকার শুনে স্যার না আসতো? আমি ভুলতে চেয়েও যে ভুলে যেতে পারছি না।

বিকেল দিকে মা জোর করে শপিংয়ে নিয়ে এলো। মা কিছু নতুন ড্রেস কিনে দিল। মা আর আমি বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বাসায় চলে এলাম। বাসায় এসে শপিংয়ের জিনিস গুলো দেখছিলাম, এমন সময় মা বলে উঠলেন।

…….পুস্পিতা তোর ঘাড়ে অমন দাগ পড়েছে কীভাবে?

আমি নিজের হাত সেই দাগের কাছে দিয়ে, ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম, কারণ মা বা আব্বু যদি জানতে পারে এমন কিছু হয়েছে তবে আর আমাকে হসপিটালে যেতে দিবেন না। তাতে যা হয়ে যাক না কেনো। আমি আমতা আমতা করে বলে উঠলাম।

……মা ওই আসলে চেইনে টান পড়ে হয়েছে হয়ত।

……এমন ভাবে টান লাগল কীভাবে?

…….মা ওই আসলে চেঞ্জ করার সময় লেগেছে।

……ওহ আচ্ছা।

মা চা নিয়ে এলো আমার হাতে দিয়ে, নিজেও এক কাপ হাতে নিয়ে বসে পড়ল। ভাগ্যিস মা আর কিছু জিজ্ঞেস করেন নাই। তবে কী বলতাম জানা নেই আমার।

আমি খুব ক্লান্ত, শারিরিক ভাবে নয় মানষিক ভাবে, ভেঙে যাচ্ছি আস্তে আস্তে। সব কিছু ভুলতে চেয়েও না পারি আজ ভুলিতে। চেয়েছিলাম একটা মানুষ, পেয়ে গেলাম একটা অমানুষ।
সন্ধ্যায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে এই কথা গুলোই ভাবছিলাম আর চোখের পানি ফেল ছিলাম। হটাৎ মা ডেকে উঠলেন, তাই চোখ মুছে রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম।

রান্নাঘরে এসে দেখলাম মা একা একা রাতের খাবার তৈরি করছিল, তাই মায়ের সাথে হাতে হাতে কাজ করে দিতে লাগলাম।



চলবে…………..।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here