#নীলফড়িং
#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#পর্ব ৭
.
.
সকাল টাইম বসে বসে মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। হঠাৎ কেউ দরজায় নক করে উঠল। আমি গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম, সেই লোকটা, যার বেবি হয়েছে।
……জ্বি?
……আপু আপনি কী একটু আমাদের ক্যাবিনে আসবেন?
……কেনো সব ঠিক আছে তো?
……জ্বি আপু, আসলে আমার স্ত্রী আপনাকে একটু ডেকে ছিল।
……কিন্তু এখন আমি?
……পুস্পিতা কে রে?
……এক মিনিট। (পেছনে ঘুরে) মা আমার এক পেশেন্ট।
……তুই কাল এসে আজই পেশেন্ট কোথায় পেলি?
……মা ওই কাল রাতে (সব খুলে বলে)
……তবে গিয়ে দ্যাখ হয়ত কোনো সমস্যা হতে পারে।
……তুমি একা থাকতে পারবে?
…….হ্যা পারব যা তুই।
…….ওকে তুমি সাবধানে থাকবে কিন্তু, বিছানা থেকে এক পা কোথাও যাবে না।
……ঠিক আছে এখন যা তুই।
মাকে ফোন এগিয়ে দিয়ে, তার কাছে প্রয়োজনীয় সব কিছু রেখে আমি দরজা ভেজিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেলাম লোকটার সাথে। লোকটা আমাকে রুমের ভেতর যেতে বলে সে দাঁড়িয়ে রইল। আমি রুমের ভেতর যেতেই দেখলাম বাচ্চা নিয়ে বাচ্চার মা শুয়ে আছে, পাশে দুজন মহিলা বসে আছে।
…….কী হলো বেবি এবং বেবির মা কী ঠিক আছে?
…….জ্বি আপু আলহামদুলিল্লাহ, কাল রাতে আপনি না থাকলে কী যে হতো বুঝতেই পারছি না।
…….ইন’শা’আল্লাহ কিছুই হতো না। কারণ এই হসপিটালে আরও ডক্টর ছিল আমি বাদেও।
……তারপরও তাদের ডাকতাম তারা আসতো তারপর তো? আর আপনি যেভাবে আমাকে সাহস দিয়েছিলেন তার জন্যই হয়ত আমি অনেকটা সাহস পেয়ে ছিলাম। আর আমার বাচ্চাকে বাঁচানোর জন্যও অনেক করেছেন আমি দেখেছি সব।
আমি হাঁসলাম ওনার কথা শুনে।
……আপু আপনার জন্য এটা। (একটা খাম)
……কী এটা?
……আপনি নিন নিজে দেখে নিবেন।
আমি মেয়েটার হাত থেকে খামটা নিয়ে খুলে দেখলাম, তাতে অনেক গুলো ৫০০ টাকার নোট ছিল। কম হলেও ১০/১৫ হাজার টাকা তো হবেই। আমি মুচকি হেঁসে, খামে টাকা গুলো রেখে বাচ্চার হাতে খামটা রেখে দিলাম।
…….আপু কী করছেন?
…….আপনি আমাকে দিয়েছেন, আমি নিয়েছি, এখন এই টাকা দিয়ে আমি যা করি এটা দেখা আপনার বিষয় নয়।
……কিন্তু আপু আপনি তো অনেক কষ্ট করেছেন, যার জন্য এটা কিছুই নয়।
…….আমি কী, না বলেছি যে নেবো না। আমি তো নিয়েছি, এখন আমি যা করি এটা কিন্তু একান্তই আমার বিষয়। এটা ওর নামে জমা রেখে দিবেন, ওর যখন প্রয়োজন হবে তখন ওকে দিয়ে বলবেন ওর এক আন্টি ওকে দিয়েছে।
……আপু আপনি অনেক ভালো। আজকাল আপনার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না।
…….তবে এখন আশি?
…….ঠিক আছে আপু। তবে আপু আপনার নামটা যদি বলতেন? বা আপনাকে এর পড়ে আমরা কীভাবে খুঁজে পাবো?
……আমি? আচ্ছা কাগজ কলম হবে?
……জ্বি আপু।
একজন এসে কাগজ কলম দিল। আমি আমার ফোন নাম্বার নাম লিখে দিলাম। যেহেতু এখন অব্দি কিছু ঠিক হয়নি আমি কোন কোন হসপিটালে থাকব, তাই শুধু নাম নাম্বার দিলাম। এরপর রুম থেকে বের হয়ে মায়ের কাছে চলে এলাম।
বিকেল দিকে মায়ের নাম কাটিয়ে বাসায় চলে এলাম, ওনাদের সাথেও একটু দেখা করে এলাম৷
দু-দিন চলে গেল মায়ের সেবাযত্ন করতে করতেই। মামা-মামী নানা বাড়ি গেছেন আজ সকালে। রাতে আমি বসে বসে আব্বুর আর মায়ের সাথে কথা বলছিলাম। এমন সময় মা বলে উঠলেন।
…….তোর ইচ্ছে তো তুই পূরণ করেই ফেলেছিস। এখন আমাদেরও একটা ইচ্ছা পূরণ করে ফেল।
…….কী ইচ্ছে মা?
…….আগে বল, আমার এই ইচ্ছেটা তুই পূরণ করবি?
……মা আমি তোমাদের জন্য তো নিজের জীবন ও দিয়ে দিতে পারি, আর তোমাদের ইচ্ছে পূরণ করব না এটা কীভাবে ভাবলে? বলো কী ইচ্ছে তোমাদের?
……এবার বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যা মা। আমি মা’রা যাওয়ার আগে তোকে সংসার করতে দেখে যেতে চাই। না হয় তোর চিন্তায় আমি মা’রা গিয়েও শান্তি পাবো না।
…..মা এত তারাহুরো কীসের?
…….তুই কী বুঝবি যেদিন মা হবি সেদিন বুঝবি।
……মা এতদিন যখন অপেক্ষা করেছ, আর একটু অপেক্ষা করা যায় না? এই তো আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে চলেছি, এখনও পূরণ হয়নি। একটু আমাকে প্রতিষ্ঠিত হতে দাও।
…….বিয়ের পড়েও তো প্রতিষ্ঠিত হতে পারবি?
…….মা সেই ছেলে যদি আমার স্বপ্ন পূরণের পথে আমাকে বাধা দেয়?
…….আমি এমন ছেলের হাতে তোকে দেবই না ইন’শা’আল্লাহ, যে আমার মেয়ের স্বপ্ন পূরণে বাধা দেবে।
…….আর এমন ছেলে তুমি কোথায় পাবে?
…….আছে আমাদের কাছে তুই শুধু একবার হ্যা বল।
……কে সে?
……আগে তুই হ্যা বল।
……মা আমাকে একটু সময় দাও প্লিজ।
…….না একটু সময়ও না। আমি আজকাল যেমন অসুস্থ থাকি এতে আমি আর এক মূহুর্ত দেরি করতে চাইছি না। তাই তুই রাজি থাকিস বা না থাকিস বিয়ে তো তোর এই ছেলের সাথেই হবে আর এটাই ফাইনাল। এই তুমি কালকেই ওই ছেলের বাবার সাথে কথা বলবে। আমার মেয়ে এখন ডক্টর কে বারণ করবে এমন মেয়েকে বাড়ির বউ বানাতে?
…….আব্বু মাকে বোঝাও প্লিজ আমি এখনি বিয়ে করতে পারব না। আমার একটু সময় প্রয়োজন প্লিজ আব্বু।
এই বলে আমি রুমে চলে এলাম। আমি এখনই মাকে বলতাম শুভাকাঙ্ক্ষীর কথা, বাট কী বলব তাদের? আমি তো তার নামটাও জানি না। আর এখন তো তার সাথে কথাও হয় না। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে এই কথা গুলোই ভাবছিলাম। তখন ফোনে আবার ম্যাসেজ এলো, তাকিয়ে দেখলাম শুভাকাঙ্ক্ষী।
……দেশে ফিরে এলে আমাকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করলে না?
……যদি পারেন সামনে এসে কথা বলেন। না হয় এমন লুকিয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই।
সব হসপিটালের সাথে কথা হয়ে গেছে, কাগজপত্রও জমা দেওয়া হয়েছে, এখন শুধু তাদের ডাকার পালা। তাদের একটা ফোনের অপেক্ষায় বসে আছি। কখন আসবে ফোন।
দু-দিন পরে সকাল ১০ টার দিকে বসে ছিলাম। এমন সময় ফোন বেজে উঠল। ফোন রিসিভ করতেই তারা আমাকে ডাকল। তাই মাকে বলে আমি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
হসপিটালে এসে তাদের সাথে কথা বললাম। তারা আমার সাথে কথা বলে প্রচুর ইমপ্রেস হলো। তাই আগামী কাল থেকেই জয়েন্ট করতে বলল। আমি খুব এক্সাইটেড হয়ে মিষ্টি নিয়ে বাসায় গেলাম, মাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে সু-সংবাদ দিলাম। মা বলে উঠল
……আমি তো আগেই জানতাম আমার মেয়েকে কেউ রিজেক্ট করতেই পারবে না।
মা আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করল।
পরদিন বিকেলে রেডি হয়ে মায়ের থেকে আব্বুর থেকে দোয়া নিয়ে কাজের প্রথম দিন শুরু করতে যাচ্ছি। আব্বু বলেছেন আজ আমাকে এগিয়ে দিয়ে আসবে তাই সে তারাতাড়ি করে কাজ থেকে চলে এসেছেন। গেটের বাহিরে বের হতেই দেখলাম স্যার গাড়ী নিয়ে বের হচ্ছিল। তাই স্যার কে ডাক দিলাম। স্যার গাড়ী থামিয়ে গাড়ী থেকে নেমে এগিয়ে এলো, আব্বুকে সালাম দিল। আমিও স্যার কে সালাম জানিয়ে বলে উঠলাম
…….স্যার আজ আপনার দোয়া আমার জন্য খুব জরুরি, তাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার জীবনের বিশাল স্পেশাল একটা দিন আজ।
…….আমি সব সময় তোমার জন্য দোয়া করি যাতে তুমি তোমার লক্ষে পৌঁছাতে পারো। বাট আমার দোয়া স্পেশাল কেনো তোমার জন্য এটা বুঝলাম না?
…….কারণ আপনি আমার স্যার, আর সব সময় স্যারই থাকবেন, আপনি আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন, অনেক সাহায্য করেছেন, আজ এখানে পৌঁছানোর পেছনেও আপনার সাহায্য অপরিসীম।
…….তোমার চাওয়ার প্রয়োজন নেই, আমি সব সময় তোমাকে দোয়া করি, যাতে তোমার ইচ্ছে পূরণ হয়। আল্লাহ তায়া’লা জেনো তোমার স্বপ্ন পূরণ করেন। যাও “all the best”
……..Thank you sir.
……. welcome. আঙ্কেল চলেন তবে আমি এগিয়ে দেই।
…….না থাক বাবা আমরা বাইকে চলে যাবো।
……পুস্পিতা কোন হসপিটালে যাচ্ছ?
……স্যার রাহাত আনোয়ার হসপিটাল।
……আমিও তো সেখানেই যাচ্ছি।
……ওহ তাহলে পুস্পিতা, তুই বরং ফাইয়াজের সাথেই যা।
……আব্বু তুমি?
……আমি তবে থেকে যাই, তোর মা তো একা আছেন বাসায় যদি প্রয়োজন পড়ে কোনো।
……আব্বু আজ প্রথম দিন তুমি যাবে না? প্লিজ আব্বু স্যার না আসলেও তো তুমি যেতে।
…….আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।
আমি আর আব্বু বাইকেই রহনা দিলাম, স্যার গাড়ীতে কারণ আব্বু বাইক রেখে গেলে ফিরতে ঝামেলা হবে।
আমরা এসে হসপিটালের সামনে নেমে গেলাম। আব্বু আমার ক্যাবিন অব্দি আমাকে এগিয়ে দিলেন। আমরা রুমে ঢুকে সব ঘুরে ঘুরে দুজনে দেখলাম, আব্বু বলল।
……মা তুই চেহারে বস আমি তোর একটা ছবি তুলে নিয়ে যাই, তোর মা দেখবে।
……জ্বি আব্বু।
আমি চেহারে বসতেই আব্বু কিছু ছবি তুলে নিলো।
……আচ্ছা মা তুই থাক তবে আমি আসছি এখন।
……জ্বি আব্বু সাবধানে যেও।
……তুই ফিরবি কখন?
……তা তো জানি না তবে আমি তোমাকে ফোন দেবো বেশি রাত হয়ে গেলে।
……হ্যা তাই করিস।
আব্বু চলে গেলেন। আজ প্রথম দিন তাই বেশি রুগী হলো না। অল্প ছিল তাই রুগী দেখা শেষ করে, আমি রুম থেকে বের হলাম, চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার রুম থেকে ৪/৫ টা রুম পড়েই স্যারের রুম। স্যারের নামের নেইম প্লেট লাগানো ছিল সেখানে। স্যারের রুমের সামনে বেশ ভীড় জ্বমে আছে রুগীর। খুব ভালো। স্যার অবসর সময়ে ওই হসপিটালে থাকেন। তবে বেশির ভাগ সময় স্যার ওই হসপিটালেই থাকেন। এছাড়া স্যার অনেক হসপিটালেই যায় যে যখন যেই হসপিটালে ফোন দিয়ে ডাকে সেখানেই স্যার যায়। বরিশাল খুব ছোট একটি শহর, কিন্তু হসপিটালের কোনো কমতি নেই।
…….ম্যাডাম আপনি কী এখন চলে যাবেন?
কারো কথা শুনে ঘুরে তাকালাম। দেখলাম একজন মধ্য বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে আছেন।
……আসলে রুগী তো দেখা শেষ, কিন্তু কী করব বুঝতে পারছি না। চলে যাবো নাকি থাকব?
……জ্বি আপনি দাঁড়ান আমি দেখছি।
লোকটা চলে গেলেন, আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আবার চারিদিক দেখতে রইলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পরে লোকটা এসে বলে উঠলেন।
…….ম্যাডাম আজ ডক্টর তানিয়া আফরোজ আসেনি, তাই আপনাকে তার মুমূর্ষু রুগী গুলো হ্যান্ডেল করতে হবে।
…….ওকে।
আমি আবার রুমে গিয়ে বসে পড়লাম। এক এক করে সেই সব রুগী আসতে শুরু করে দিল।
রাত তখন প্রায় ৮: ১৫ রুম থেকে বের হয়ে লিফটে উঠলাম। নিচে এসে একটা রিকশা নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
রাত তখন ১১ টা চোখে ঘুম ছিলনা তাই বারান্দায় এসে উঁকি দিলাম। চাঁদটা ছিল ওই দূর আকাশে মনে হচ্ছে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। হয়ত এটাই বুঝাতে চাইছে যে সেও আমার মতই একা ওই বিশাল আকাশের মাঝে। যেমন এই বিশাল পৃথিবীর মাঝে আমি একা।
দু-দিন পরে শুক্রবার ছিল, আমি বিকেল দিকে রুমে বসে ছিলাম। এমন সময় মা এসে বলে উঠল।
……একটু রেডি হয়ে নে তো।
……কেনো মা, কোথায় যাচ্ছি আমরা?
……হ্যা তাই ভেবে নে।
মায়ের কথায় আমি রেডি হয়ে নিলাম। একটু পড়ে মা এসে, আমাকে তার সাথে নিয়ে গেল। আমি ব্যাগ নিতে চাইছিলাম। মা বলল লাগবে না এতটুকুতেই হবে।
মায়ের সাথে ড্রইং রুমে গেলাম দেখলাম ড্রইং রুমে ফাইয়াজ স্যারের বাবা, মা, দাদী, ছোট ভাই বসে আছেন, আমাকে দেখে হাসি মুখ করে তাকিয়ে রইলেন। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলাম।
…….আসসালামু আলাইকুম।
……ওয়ালাইকুম আসসালাম।
…….অনেক দিন পড়ে তোমাকে দেখলাম। ভালো আছ পুস্পিতা?
…….জ্বি আন্টি, আপনারা সবাই কেমন আছেন?
……হ্যা আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো আছি। এসো বসো।
আমি গিয়ে মায়ের পাশে বসলাম।
……ভাবী মেয়ে তো আমাদের মা’শা’আল্লাহ।
ওনাদের কথায় মা হাঁসল। আমি আমার জেনো কেমন একটা লাগছে, এনারা কীভাবে জেন চাইছে আমার দিকে। স্যারের দাদী উঠে এসে আমার পাশে বসল।
…….কী গো আমাদের বাড়িতে যাইবা নি বু?
আমি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মা হাসছিল। উনি আবার বলে উঠলেন।
…….কী গো কথা কও না কেন? আমাগো বুঝি ভালা লাগে নাই?
……না না দাদী তেমন কিছু না।
এর মধ্যে হটাৎ কলিং বেল বেজে উঠল। আমি উঠে যেতে নিলাম আব্বু বসতে বলে সে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল।
…….আরে ফাইয়াজ আসো আসো।
আমি তাকিয়ে দেখলাম স্যার কে।
……আঙ্কেল আমাদের বাসা থেকে কী কেউ এসেছে এখানে?
…….হ্যা সবাই আছে এখানেই। আসো তুমিও।
স্যার ভেতরে এসে একবার আমার দিকে তাকিয়ে দেখে তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল।
…….আজ হঠাৎ তোমরা সবাই এখানে? আর দারোয়ান আঙ্কেল বলল আমাকেও নাকি এখানে ডেকেছ কিন্তু কেনো কোনো কারণ আছে কী?
…….আরে দাদুভাই কারণ ছাড়া কী আর আহন যাইব না?
…….না তা নয় কিন্তু হঠাৎ করে এলে এজন্য?
…….ভাবলাম পুস্পিতা আসছে এতদিন পরে, তার মাঝে ভাবী ও অসুস্থ তাই এক সাথে এসে সবাইকে দেখে যাই। কিন্তু তোর আসতে এত দেরি হলো কেনো?
…….ওই একটু কাজ ছিল।
…….ওহ আচ্ছা।
…….আচ্ছা পুস্পিতা যা মা তোরা দুজন ছাদ থেকে ঘুরে আয় গিয়ে।
……কিন্তু মা।
…….আরে যাও গো বুইন কথা কও গিয়া একটু দুইজনে।
…….দাদী আমি এখানে ঠিক আছি।
……বুঝবার পারছি, কিন্তু কইছি যহন তয় যাইয়া একটু ঘুইরা আহো দেহি।
সবার জোরাজুরিতে ছাদে গেলাম স্যার আর আমি, আমার একটু কেমন জানি লাগছে আমার আজ প্রথম স্যারের সাথে কথা বলতে লজ্জা লাগছিল। স্যারও এক পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অন্য দিকে তাকিয়ে। কিছুক্ষণ পরে স্যার বলে উঠলেন।
…….বুঝতে পারছি না এরা কী করতে চাইছে। আমি নিচে যাচ্ছি।
এই বলে স্যার পা বাড়িয়ে নিচে যেতে শুরু করলেন। আমিও তার পিছু পিছু নিচে গেলাম। দুজনেই ড্রইং রুমে গিয়ে দাঁড়াতেই শুনলাম।
…….ভাবী পুস্পিতাকে তো ছোট থেকেই দেখছি, আমার সব সময়ই ওকে খুব ভালো লাগে, তাই আমিও আর দেরি করতে চাইছি না। আমি এ মাসেই পুস্পিতা কে আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই। এখন আপনারা কী বলেন?
……জ্বি আমাদেরও কোনো সমস্যা নেই।
……. তবে বিয়ের সময় ক্ষণ ফিক্সড করে নেই, কী বলেন?
…….হ্যা কেনো নয়।
সবার কথা শুনে আমার আর বুঝতে বাকি নেই, কী চাচ্ছেন এরা। আমি এক পা এক পা করে আমার রুমে ছুটে চলে এলাম।
রাতে বসে ছিলাম ফোন হাতে নিয়ে, হটাৎ ফোনে একটা ম্যাসেজ এলো তাকিয়ে দেখলাম শুভাকাঙ্ক্ষী।
…….কী এখনো কথা বলবে না? মনে হচ্ছে ডক্টর হয়ে তোমার অহংকার বেরে গিয়েছে, এখন আর আমাকে ভালো লাগে না তাই-না?
…….যদি আপনি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকেন তবে কাল বিকেল ৩:৩০ মিনিটে বেলের্স পার্কে বঙ্গবন্ধুর ব্রিজের উপর আমি অপেক্ষায় থাকব আপনার আশা করছি চলে আসবেন।
২টি আইডিতেই সেন্ড করে দিলাম এই ম্যাসেজ। এরপর ফোন রেখে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। প্রচুর অশান্তি লাগছে, কী করব ভেবে পাচ্ছি না। তাই এই সিদ্ধান্ত নিলাম। আশা করছি যেকোনো একটা রেজাল্ট আসবে। ।
।
।
।
চলবে……….।
(আসলে ডক্তার সম্পর্কে তেমন আইডিয়া নেই আমার, আর অন্য শহর সম্পর্কেও তেমন ধারণা নেই, তাই নিজের শহর নিয়েই লিখতে শুরু করলাম। যদি ভুল হয় বা ভুল কিছু লিখে থাকি, যারা জানেন তারা ডিটেইলসে জানাবেন। আশা করছি। আর গিফট কালকের পর্বে দেখানোর চেষ্টা করব। ইন’শা’আল্লাহ)