নীলফড়িং #ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি #পর্ব ৯

0
221

#নীলফড়িং
#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#পর্ব ৯
.
.
আমি স্যারের সাথে আর কোনো কথা না বলে রুমের ভেতর চলে এলাম সুটকেস খুলে ভালো করে সব খুঁজতে শুরু করলাম, অনেক খোঁজ করার পড়ে স্যারের গিফট-টা খুঁজে পেলাম। তারাহুরো করে গিফট-টা খুললাম। গিফট খোলার সাথে সাথে তার মাঝ থেকে বেরিয়ে এলো, একটা খুব সুন্দর হাত ঘড়ি যার মধ্যের ঘুরন্ত কাঁটাই ছিল #নীলফড়িং। সাথে একটা চিরকুট তার মধ্যে লেখা ছিল “ভালোবাসার #নীলফড়িং”।

আমার ঠোঁটের কোণে নিজের অজান্তেই হাঁসি চলে এলো। আমি ভাবতেই পারিনি এত বড় প্রমাণ আমার কাছেই রয়েছে অথচ আমি প্রমাণ খুঁজে ফিরছি। আমি ছুটে বারান্দায় গেলাম বাট স্যার সেখানে ছিলনা আমি আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না, তাই বক্স চিরকুট ঘড়ি সব তেমন ভাবেই হাতে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম। স্যারদের দরজার কলিং বেল বার বার টিপে যাচ্ছি, দাঁড়িয়ে থাকার ধৈর্যই জেনো হচ্ছিল না। দরজা খুলতেই দেখলাম স্যারের ছোট ভাই দাঁড়িয়ে আছে।

……আরে ভাবী তুমি?

……স্যার কোথায়?

……ভাই? ভাই তো একটু বেরিয়েছে।

……কোথায় গেছে?

…… ভাই তো হসপিটালে গেছে, জরুরি ফোন এসেছিল তাই।

……ওহ আচ্ছা।

আমি মুড অফ করে চলে এলাম। আমাদের বাসার ড্রইং রুমে এসে সোপায় মুখ ভাড় করে বসে রইলাম।

সকাল ১০টার দিয়ে একটা ফোন আসলো, ইসলামীয়া হসপিটাল থেকে, আমাকে ডাকা হয়েছে সেখানে। তাই মা কে জানিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। প্ল্যানেট পার্কের সোজা সুজি যেতেই দেখলাম পার্কের সামনে স্যারের গাড়ী থামানো ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম স্যার ও দাঁড়িয়ে আছে সামনে রাইয়ান দাঁড়িয়ে আছে, খুব রাগী চেহারা নিয়ে স্যার কে কিছু বলে যাচ্ছে আমি রিকশা থামিয়ে এক পাশে, ভাড়া মিটিয়ে এগিয়ে গেলাম। দুজনের কেউই আমাকে খেয়াল করল না। আমি কাছে যেতেই শুনতে পেলাম।

…….দেখেন স্যার আমি পুস্পিতা কে অনেক ভালোবাসি, তাই আপনি আমাদের মাঝ থেকে সরে যান না হয় ভালো হবে না বলছি।

……তাই কী করবে তুমি?

…….তা পড়ে বুঝে যাবেন।

…….ওহ হুমকি দিচ্ছ আমাকে?

……হ্যা তাই ভেবে নিন।

……আচ্ছা একটা কথা বলো তো? তুমি আমাদের মাঝে আসছ নাকি আমি তোমাদের মাঝে আসছি?

……আপনি আমাদের মাঝে আসছেন।

……তাই? তুমি কত বছর ধরে পুস্পিতার পেছন ঘুরছ?

…….যেদিন পুস্পিতা আমার সাথে বাহিরে গিয়েছিল দুজন একই প্লেনে পাশাপাশি ছিটে বসে ছিলাম। সেই থেকেই আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি।

……তাই তবে তুমি পুস্পিতার শুভাকাঙ্ক্ষী হলে কীভাবে?

……হ্যা আমিই পুস্পিতার শুভাকাঙ্ক্ষী।

……হাহাহাহা (জোরে হেসে) হাসালে পুস্পিতা ও তার শুভাকাঙ্ক্ষী, কম হলেও সাড়ে তিন বছর ধরে একে অপরের সাথে কথা বলছে, আর তুমি মাত্র ২ বছর ধরে পুস্পিতার পেছন ঘুরছ? জাস্ট অসাধারণ কথা, আর পুস্পিতা কেও বলি বিশ্বাস করার জন্য এমন একটা মানুষ পেয়েছিল ও?

……স্যার আমি পুস্পিতা কে ভালোবাসি।

ঠাশ করে একটা থাপ্পড় পড়ল রাইয়ানের গালে তাকিয়ে দেখল পুস্পিতা দাঁড়িয়ে আছে।

……পুস্প তুমি?

ঠাশ করে আর একটা থাপ্পড় পড়তেই। পুস্পিতা বলে উঠল।

……আমি সেদিনও বলেছিলাম তোমাকে, আমাকে এই নামে ডাকবে না, একটা থাপ্পড় এই জন্য। আর একটা যেদিন তুমি আমাকে প্রপোজ করেছিলে সেদিনই আমি তোমাকে বলে দিয়ে ছিলাম আমি শুভাকাঙ্ক্ষী কে অনেক ভালোবাসি। বাট তোমার এই মিথ্যে অভিনয়ের জন্য আমি কতটা কষ্ট করেছি তা তুমি ভবতেও পারবে না। সেই কষ্টর কাছে একটা থাপ্পড় কিছুই না। তোমাকে যদি মারতে মারতে রাস্তার বালুর সাথে মিশিয়েও ফেলি তাও সে কষ্ট আমার দূর হবে না। ছিঃ এটা কে তুমি ভালোবাসা বলছ? এটাকে ভালোবাসা নয় স্বার্থপরতা বলে। যা শুধু নিজের জন্য করা হয়, অন্যের কষ্ট অন্যের দুঃখ এগুলো তোমার মতো স্বার্থপর মানুষ কখনো বুঝবে না।

……তুমি আমাকে ভুল ভাবছ?

……তোমার মতো মানুষ কে ভুলই ভেবে যায় আমাদের মতো মেয়েরা, যদি আজকের এই সঠিক ভাবনাটা আগেই ভাবতে পারতাম তবে হয়ত এতটা কষ্ট পেতাম না। আজকের পড়ে আমি আর তোমার চেহারা পর্যন্ত দেখতে চাইনা। যাও এখান থেকে।

……পুস্পিতা আজ তুমি আমাকে দূর দূর করে তারিয়ে দিয়ে যে ভুল করছ, একদিন এই ভুল শুধরে তুমি নিজেই আবার আমাকে ডেকে নিবে।

…….ঠিক আছে আজ চলে যাও সেদিন না হয় আবার এসো এখন যাও এখান থেকে।

প্রচুর রাগ দেখিয়ে চলে গেল রাইয়ান। স্যার গাড়ীতে উঠে বসে পড়ল। আজ আর আমাকে বসতে বলল না। খা’টাশ একটা, আমি গিয়ে অপর পাশ থেকে গাড়ীতে উঠে বসে পড়লাম। সে গাড়ী চালাতে শুরু করে দিল।

…….আমি ইসলালীয়া হসপিটালে যাবো।

সে আমার সাথে কোনো কথা না বলে গাড়ী ঘুরিয়ে নিলো, ইসলামীয়া হসপিটালে আমাকে নামিয়ে দিয়ে সে গাড়ী নিয়ে চলে গেল। আমি বুঝতে পারছি সে প্রচুর রেগে আছে হয়ত আমার সাথে। থাক রেগে তাতে আমার কী? আমি আস্তে আস্তে হসপিটালের ভেতর এগিয়ে গেলাম।

পরদিন মা ডেকে বলে উঠল।

…….পুস্পিতা শপিং করতে যেতে চাইছিলাম। তোর সময় হবে কখন?

……মা আমি তো পারব না শুক্রবার ছাড়া, আর সেদিন সব কিছু বন্ধ, তাই বরং তোমরাই যাও।

…….সকালে চল তবে?

…….তাও পারব না, আজ থেকে সকাল টাইম ইসলামীয়া হসপিটালে বসতে হবে।

……এর জন্য বলে ছিলাম বিয়েটা জলদি করতে, এখন ভাবছি বিয়ের দিনও কিনা বলিস মা আমি সময় পাবো না বিয়েটা তোমরা সবাই মিলে পরিয়ে নাও।

…….( পেছন থেকে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে) মা বিয়েতে কনের প্রয়োজন পড়ে না, বর থাকলেই হয়। কনে তো পড়ে কাজি অফিসে গিয়েও সিগনেচার দিয়ে আসলেই হয়ে যায়। তাই আমার চিন্তা না করে তুমি যে বর খুঁজেছ তোমার মেয়ের জন্য তার চিন্তা করো। সে সময় পাবে তো?

……..সে ঠিকই পাবে, পাবি না তুই।

……..মা আমার থেকেও সে কিন্তু বেশি ব্যস্ত মানুষ। আচ্ছা মা আমি এখন রেডি হতে গেলাম।

…….এই শোন বলছি পুস্পিতা?

কে শোনে কার কথা আমি তো রেডি হতে চলে এলাম। আজ একটা সাদা গোল জামার সাথে কালো চুরিদার কালো ওড়না পড়ে রেডি হয়ে নিলাম। খুবই হালকা সাজে।

মা কে বলে বের হয়ে পড়লাম। রিকশা নিয়ে চলে এলাম ইসলামীয়া হসপিটালে। নিচ তালায় সোজা এগিয়ে গেলাম নিজের নামের নেইম প্লেট দেখে সেই রুমের সামনে এগিয়ে গেলাম, রুমে প্রবেশ করে চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লাম।

দুপুর বেলা হসপিটাল থেকে বের হয়ে বাসায় চলে এলাম। বাসায় ঢুকতেই দেখলাম মা জননী রাগী মুডে বসে আছেন।

…….কী শপিং করা শেষ?

…….যা একটু জলদি জলদি রেডি হয়ে আয় গিয়ে।

…….কেনো মা?

…….শপিংয়ে যাবো তাই।

…….মা খুব টায়ার্ড ফিল করছি, তোমরা যাও না প্লিজ।

…….যা বলছি করতে কর গিয়ে।

উফ ভালো লাগছে না, স্যার থাকলে একটা কথা ছিল, সে তো আমার সামনেই পড়ে না, আজ তো কোনো ভাবেই সে শপিংয়ে যাবে না। একা একা বোর ফিল করব। ধ্যাৎ এটা বুঝতে পারলে আরও দেরি করে আসতাম।

আমি ফ্রেশ হয়ে ড্রেস আর পাল্টালাম না, নিচে চলে এলাম। মা খাবার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে ছিলেন, আমাকে দেখে খাবার খেতে শুরু করে দিলেন, তাই আমিও গিয়ে খাবার শেষ করলাম। এরপর দু’জনে বেরিয়ে পড়লাম। গেইটের বাহিরে আসতেই দেখলাম স্যারের গাড়ী, মা গিয়ে আন্টির সাথে কথা বলতে শুরু করে দিল। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম এর মধ্যে দেখলাম স্যার বের হয়ে এলো। ইশ কী মুড ভাব নিয়ে এসেছে, আমারও মুড ভাব আছে তাই আমিও নিচের দিকে তাকিয়ে ফোন দেখছিলাম। মায়ের ধাক্কা খেয়ে তাকালাম।

……কী রে এখন কী তোকে গাড়ীতে উঠতেও দাওয়াত দিতে হবে?

…….মা এই কথাটা ভালো ভাবেও তো বলা যেত।

……তোর সাথে ভালো ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছি, যা ওঠ।

আমি গাড়ীর পেছনের ছিটে বসতে যাবো দেখলাম আন্টি আর মা উঠে বসে পড়ল।

……আরে আমি কোথায় বসব?

…….তুই সামনে গিয়ে বস।

…….উফ মা।

আমিও সামনে গিয়ে বসে পড়লাম। গাড়ী চলতে শুরু করল। আমি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছিলাম। যাক তাও আছে তো খা’টাশ-টা সাথে, একটু হলেও বোরিং ফিল কম হবে।

গাড়ী এসে থামল, চকের ভেতর পালকী শপে, আমরা নেমে এগিয়ে গেলাম। তিন তালায় উঠে গেলাম সোজা। তারা শাড়ি লেহেঙ্গা সবই দেখাচ্ছে, বাট আমি চুপ করে বসে ছিলাম। যা দেখে মা বলে উঠল।

…….কী রে তোদের দুজনকে এখানে কেনো নিয়ে আসছি? শুধু বসে থাকার জন্য?

…….আন্টি আমি এসব বিষয়ে কিছুই বুঝি না তাই আপনারা চয়েজ করেন। (ফাইয়াজ)

……আরে বুঝিনা বললেই হবে? আজ আমরা এসেছি দু-দিন পর থেকে তো তোদের একাই আসতে হবে, আজ আমরা দেখব তোরা যেটা নিচ্ছিস সেটা ভালো না খারাপ, কাল কে দেখবে? তাই চুপ করে চয়েজ কর। না হয় তোরা থাক আমরা যাচ্ছি। ভাবী চলেন।

……এই আম্মু কী করছ এটা একটা দোকান, আর তোমরাও না? এই যে ভাইয়া ওই যে খয়েরি রঙের লেহেঙ্গা-টা দেখান তো।

লোকটা লেহেঙ্গা-টা খুলে দেখাল, বাহ বেশ ভালোই তো আমার শুভাকাঙ্ক্ষীর পছন্দ। আমিও বসে বসে দেখতে রইলাম। হঠাৎ মা মাথার উপর একটা থাপ্পড় মেরে বলে উঠল।

……তোকে কী এখানে সো পিস বানিয়ে রাখতে এনেছি, বসে না থেকে চয়েজ কর।

…….মা একজন চয়েজ করছে তো?

……..করছে তাই বলে তুই চয়েজ করবি না তা কীভাবে হয়? তুই ওর জন্য চয়েজ করবি। আর ও তোর জন্য।

আমি মুখ ভাড় করে দেখতে রইলাম, ওই লেহেঙ্গা, শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে শেরওয়ানি, পাঞ্জাবি, ছুট চয়েজ করতে লাগলাম।

সেকেন্ড ফ্লোরে গিয়ে কয়েকটা থ্রি-পিস নিলো। এরপর কহিনুর শপে গিয়ে জুতা কেনা হলো ম্যাচিং করে, জুয়েলারি সব কিছু কিনে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় ৫টা বেজে গেছে আর একটু রেস্ট নিতে পারলাম না। স্যার মা কে আর আন্টিকে নামিয়ে দিয়ে হসপিটালে রহণা দিল।

এভাবেই দিন গুলো যেতে লাগল। দু-তিন দিন পড়ে, আজ ছাদে গিয়ে দেখলাম স্যার এক্স্যাসাইজ করছেন। ইশ রে আজ এখানে কীভাবে মিস্টার ডক্টর? আমি গাছে পানি দিতে আসছি তাই ওদিকে আর না তাকিয়ে গাছে পানি দিতে নিলাম। আচ্ছা রাগ সে কেন করবে? রাগ করার মতো আমি কী এমন করেছি? হু যাক গিয়ে যা ইচ্ছে করুক তাতে আমার কী? আমিও রাগ করতে পারি, এমনিতেও স্যারের সাথে কথা বলতে এখন কেমন কেমন লাগছে তার উপর তার ঢং দেখলে কথা বলার বাকি ইচ্ছেটাও চলে যায়। যা ব্যাটা আজ কথা না বলিস না বল, আগামীতে তো বলতেই হবে।

আমি গাছে পানি দিয়ে ফুল গুলো হালকা স্পর্শ করে ছাদ থেকে চলে এলাম।

আমি রুমে এসে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম দেখলাম সে গাড়ী নিয়ে তাদের গেইট থেকে বের হচ্ছে। আমি যাবো না আজ তার মতো খা’টাশের সঙ্গে হু। আমি তারাহুরো করে একটু এগিয়ে রিকশা ডেকে উঠে গেলাম, দেখলাম সে তাকিয়ে আছে, থাক তাকিয়ে তাতে আমার কী? কিছুটা মুড ভাব আমিও দেখাতে পারি বুঝে নে ব্যাটা রাম ছাগল।

এভাবেই দিন গুলো হাসি আনন্দে পার হতে লাগল। জীবন-টা অনেক সুন্দর যদি ঠিক করে উপভোগ করতে পারো।
তার জন্য কী খারাপ হতে হবে? না।
তার জন্য কী স্মার্ট হতে হবে? না।
তার জন্য কী কাউকে কষ্ট দিতে হবে? না।
তার জন্য কী নোংরা চিন্তা ভাবনা থাকতে হবে? না।
তার জন্য কী আমাকে প্রচুর সৌন্দর্যের অধিকারী হতে হবে? না।
তার জন্য কী প্রচুর টাকা পয়শা থাকতে হবে? মোটেই না।
তার জন্য শুধু সুন্দর একটা মন থাকতে হবে।
তার জন্য একটা মনের মতো মানুষ থাকতে হবে।
তবে অল্পতেই মানুষ প্রচুর সুখী হতে পারবে, নিজের জীবন কে অনেক সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে পারবে।



চলবে………..।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here