নিশীভাতি #১১তম_পর্ব

0
815

#নিশীভাতি
#১১তম_পর্ব

“আপনি ঠিক আছেন তো?”

ওপাশ থেকে সাড়া না পেয়ে চিন্তা বাড়লো। একটু কাছে গেলো রাশাদ। চাঁদরটা একটু সরালো। সাথে সাথে নড়লো পুরুষালি ঠোঁটজোড়া। অস্পষ্ট স্বরে আওড়ালো,
“ইলহা?”

বিস্ময় এসে ধরা দিল স্বচ্ছ চোখজোড়ায়। খোলা জানালা দিয়ে আগত সমীরের সাঁই সাঁই শব্দদল কানে আলোড়ণ সৃষ্টি করলো। মেয়েটির কম্পন বাঁড়লো। সরু, ছোট শরীরটা শীত থেকে রক্ষা পেয়ে চাঁদর আঁকড়ে আছে। সংকোচ ছেড়ে কপালে রুক্ষ্ম হাতটা রাখলো রাশাদ। শরীরের উত্তাপ ছড়িয়ে গেলো শীতল হাতে। জ্বরে পুঁড়ছে মেয়েটির দেহ। পাতলা শুষ্ক ঠোঁট ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে। রাশাদ কিছুটা চিন্তায় পড়লো। মেয়েটি মুখখানা ফ্যাকাশে লাগছে। রাশাদ মৃদু স্বরে ডাকলো,
“ইলহা? শুনতে পাচ্ছেন?”

দু তিনবার ডাকার পর ইলহা জ্বরের ঘোরে তাকালো রাশাদের দিকে। মেয়েটির চুল খোলা, অবিন্যস্ত। বারবার লেপ্টে যাচ্ছে ছোট্ট মুখে। জ্বরের ঘোরেই আওড়ালো,
“পানি খাবো”

খুব আস্তে বললেও শুনতে কষ্ট হলো না রাশাদের। রাশাদ দ্রুত হাতে নিজের কাপড়ের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করলো। মুখের কাছে ঠেকালো তা। ইলহা একটু খেলো, বাকিটা চুয়ে পড়লো ঠোঁট থেকে। রাশাদ ভীষণ বিকাপে পড়লো। পরনারীকে এভাবে স্পর্শ করা তার ভালো লাগছে না। কিন্তু মেয়েটিকে অদেখা করার সাহস ও করতে পারছে না চিত্ত। এক অদৃশ্য টান অনুভূত হচ্ছে এই অন্য ট্রেনের যাত্রীর প্রতি। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো সে। পকেটের রুমাল দিয়ে মুখখানা মুছিয়ে দিলো। চুলগুলো গুজে দিলো কানের পেছনে। চাঁদরটি আবার মাথায় টেনে দিলো। ইলহা আবার ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু ঝামেলা হলো জ্বর, তন্দ্রাগ্রস্থ ইলহার মাথা হেলে পড়লো রাশাদের কাঁধে। তাকে সরাতে গেলে সে আরোও প্রগাঢ় ভাবে তাকে জড়িয়ে ধরলো, শক্ত করে খামচে ধরলো তার শার্ট। এমন অসতর্কতা কি ভালো? এখানে রাশাদের বদলে অন্য কেউ ও তো হতে পারতো? খারাপ, লম্পট ছেলে হলে কি এতো নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতো মেয়েটি। রাশাদ শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো মেয়েটি ক্লান্ত, মলিন মুখের দিকে। রাস্তার সোডিয়ামের আলো একটু বাদে বাদে ক্ষণিকের জন্য আলোকিত করছে অন্ধকারচ্ছন্ন বাসের সিট। এই ক্ষণিক আলোতে ছোট মুখটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো রাশাদ। মেয়েটির সাথে এভাবে দেখা হবে কল্পনাও করে নি। সাথে সাথেই কর্ণকুহরে আন্দোলিত হলো “নাতীসাহেব” ডাকটি। কোমল হলো দৃষ্টি। বুক থেকে চাওয়া সত্ত্বেও সরিয়ে দিলো না ইলহাকে। হরেক প্রশ্ন মনে জাগলো। এই রাতে এই বাসে, এমন অবস্থায় কেনো মেয়েটি? কিন্তু জ্বরের তাপ তার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছুয়ে যাচ্ছে। তাই প্রশ্নগুলো তুলে রাখলো মেয়েটির স্বাভাবিক হওয়া অবধি। পিচের মসৃণ রাস্তায় চলছে বাস। উদ্দেশ্য উপজেলা অবধি। ক্লান্ত রাশাদ ও। কখন যে চোখ লেগে এলো টের পেলো না। পৃথক ট্রেনের যাত্রীদের ক্রসিং বাদেই দেখা হলো, এই নির্জণ, কোলাহনহীন, নিগূঢ় রাতে_______

******

কুয়াশার তীব্র সাদা চাঁদর ঘেরা ভোরে চলছে বাস। হিমশীতল সমীর ছুয়ে যাচ্ছে ইলহার মুখ। ঠান্ডা লাগছে, তবে শরীর ঘামছেও। চিপচিপে এক অনুভূতি। মাথা ব্যাথা করছে ভীষণভাবে। খুব আস্তে কষ্ঠে শুষ্টে চোখ মেললো সে। চোখ মেলতেই প্রথমে যা নজরে পড়লো তা হলো একটি পুরুষের কলাপাতা রঙ্গের চেক শার্ট। ঝিমুনি দিয়ে উঠলো মস্তিষ্ক। নিজের অবস্থান বুঝতে সময় লাগলো কিছু সময়। ধাতস্থ হতেই ছিটকে সরে পড়লো। সাথে সাথেই লক্ষ্য করলো ঘুমন্ত রাশাদের মুখ। ইলহা বুক থেকে সরে যেতেই রাশাদের ঘুমে ব্যঘাত ঘটলো। ছোট ছোট করে চোখ মেলতেই দৃষ্টির সামনে ভেসে উঠলো ইলহার ত্রস্ত মুখখানা। ভয়ে শিটিয়ে আছে সে এক কোনায়। রাশাদ কপালের সামনের চুলগুলো ডান হাতে পেছনে ঠেললো, গভীর, গাঢ় স্বরে বললো,
“এখন কেমন লাগছে শরীর? জ্বর জ্বর লাগছে কি?”

ইলহার মাঝে ভীষণ লজ্জা দলা পাকালো। কন্ঠ পিপাসায় কাঠ হয়ে আছে। কথা বের হলো না খুব একটা। শুধু খুব আস্তে বললো,
“না”

রাশাদ আর অপেক্ষা করলো না উত্তরের। বাহিরের দিকে চাইলো। উপজেলার খুব কাছে বাস। নিজের ব্যাগটা ঘাড়ে নিলো। হাতপা টানা দিলো। মাজা ধরে এসেছে। ভীষণভাবে ঝিন ঝিন করছে হাত। কন্ডাকটরকে হাক দিলো। ব্যাটা তখন ঘুমে বিভোর। রাশাদ তার কাছে গিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো,
“এ মামা, নামবো। উঠেন উঠেন”

পরমুহূর্তে ইলহার মুখের দিকে চেয়ে স্বাভাবিক স্বরে বলল,
“কোথায় যাবেন আপনি?”

ইলহার ছোট মুখখানায় মেদুর নামলো। দিশাহীন চাইলো, যেনো গন্তব্য জানা নেই তার। তাকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাশাদ আবার শুধালো,
“বাস কিন্তু এখানে শেষ নামবে। আপনি কোথায় যাবেন?”

আলতো করে খুললো পাতলা অধর। খুব আস্তে বললো,
“জানি না”

********

বাসস্ট্যান্ড থেকে দুই মাইল দূরে টিনে ঘেরা ছোট্ট দোকান। দোকানী বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। খরিদদারের অভাব নেই। ব্যস্ত জনসমগ্রের ভিড়ে একদম শেষ টেবিলে মুখোমুখি বসে আছে রাশাদ এবং ইলহা। ইলহা গোগ্রাসে খাচ্ছে নাস্তা। রাশাদ নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে তার কলুষতাহীন মায়িক মুখে। মেয়েটি এমনভাবে খাচ্ছে যেন কতদিন খায় নি। পরপর তিনটে পরোটা শেষ করে অসহায় চোখে তাকালো রাশাদের দিকে সে। রাশাদ নিঃশব্দে হাসলো, ছোট্ট ছেলেটাকে ডেকে বললো,
“আরেকটা পরোটা দিয়ে যেও”

ইলহা লজ্জিত স্বরে বললো,
“আসলে ক্ষুদা লেগেছে খুব”
“বুঝলাম”

খুব স্বাভাবিক স্বরে উত্তর দিলো রাশাদ। গরম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে খুব শান্ত স্বরে বললো,
“কি ভাবলেন?”
“কি বিষয়ে?”

পরোটার শেষ অংশটুকু মুখে পুরতে পুরতে প্রশ্ন করলো ইলহা। রাশাদ সরু দৃষ্টিতে চাইলো। চায়ে দ্বিতীয়বার চুমুক দিয়ে বললো,
“কোথায় যাবেন কিছু ভাবলেন?”

ইলহা থেমে গেলো। মাথা নামিয়ে নিলো। মুখখানা মলিন হয়ে গেলো। দৃষ্টি টেবিলে আবদ্ধ। ভাবনায় ঢুবলো মেয়েটি। ততসময়ে পরোটা চলে এলো। রাশাদ প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,
“আমার মতে আপনার বাসায় চলে যাওয়া উচিত, সেটাই ভালো হবে”
“না”

আতংকিত, কুন্ঠিত কণ্ঠে উত্তর দিলো ইলহা। মুহূর্তে ভীষণ ভয়, ত্রাস হামলে পড়লো ছোট্ট মুখখানায়। রাশাদ অবাক স্বরে বললো,
“কিন্তু কেনো? আর বাসায় না গেলে যাবেন ই বা কোথায়? একা একজন মেয়ে, নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করবেন না?”
“আপনি আমার অবস্থা বুঝতে পারছেন না। আমার পরিবারের লোকদের আপনি চিনেন না। আমি গেলেই আমার বিয়ে দিয়ে দিবেন। আমি বিয়ে করতে চাই না বলেই পালিয়েছি”
“হ্যা, আমি চিনি না। কিন্তু হলফ করে বলতে পারি তারা আপনার জন্য চিন্তা করছে”
“কেউ চিন্তা করছে না। তারা শুধু নিজের মানসম্মানের ই চিন্তা করছে। আমার বাবার কাছে আমার চেয়ে তার মানসম্মান বেশি প্রিয়। আর আমার মা, সে তো একটা কাঠের পুতুল। আমি বাড়ি ফিরবো না। আমি হারিয়ে যেতে চাই, এমন ভাবে বিলীন হয়ে যেতে চাই যেনো কেউ আমাকে খুঁজে না পায়.”

কথাটা বলতে বলতেই গলা ধরে এলো ইলহার। গতবার যখন দেখা হয়েছিলো তখন যে প্রাণোচ্ছ্বল মেয়েটিকে আবিষ্কার করেছিলো রাশাদ, আজ তার কিছুই নেই। বরং মলিন, বিষন্ন একখানা মুখকে দেখছে সে, যার হৃদয় জমে রয়েছে সীমাহীন বিষাদ, আক্ষেপ, ঝাঁঝালো কষ্ট। রাশাদের ইচ্ছে হলো মেয়েটির অব্যক্ত কথাগুলো শুনতে। কিন্তু নিজ দায়রা অতিক্রম করলো না। ইলহা জন্য কেনা ঔষধ এগিয়ে দিয়ে বললো,
“এখানে নাপা আছে, নাস্তা শেষে খেয়ে নিন। আর আমি আধা ঘন্টা এখানে থাকবো, তার মধ্যেই ঠিক করবেন কোথায় যাবেন?”
“আমাকে আপনার বাড়ি আশ্রয় দিবেন?”

ইলহা বিনাদ্বিধায় বলা কথায় চমকে উঠলো রাশাদ। হতবাক স্বরে বলল,
“আমাকে এতটা বিশ্বাস করাটা কি সমীচীন?”
“জানি না, তবে কেনো যেন মন বলছে আপনি আমার ক্ষতি করবেন না। চিন্তা করবেন না, আমি আপনাকে খুব বিরক্ত করবো না। বেশি দিন ও থাকবো না। আমার বান্ধবী রংপুর গেছে। ও চলে আসলে আমি ওর কাছে চলে যাবো”

মলিন স্বরে কথাটা বললো ইলহা। রাশাদ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো। কিছু একটা ভাবলো। এরপর বললো,
“নসিবনে চড়ার অভ্যাস আছে?”

*******

মধ্যাহ্নের প্রথম ভাগ। কড়া সূর্যের তেজীকিরণে ঝলসে যাচ্ছে উঠান। বাড়ির পেছনের পুকুর থেকে মাত্র গোসল সেরে এসেছে হুমায়রা। ভেজা চুলের পানিতে ভিজে গিয়েছে পিঠ। মাত্র গোসল করেও এক নিমিষেই রৌদ্রতাপে ঘেমে গেলো শরীর। ধোঁয়া কাপড়গুলো নেড়ে দিতে দিতেই কপালে ঘাম জমলো। গায়ের ওড়নাটা তখন বেখেয়ালে একপাশে গায়ে ফেলে রেখেছে সে। অসচেতন, বেপরোয়া কিশোরী যখন নিজের কাজে ব্যাস্ত তখন ই আগমণ ঘটলো ফাইজানের। অসংযত, নিয়ন্ত্রিত চোখজোড়া অসতর্ক কিশোরীকে দেখতে লাগলো নিশ্চুপভাবে। হুমায়রা তখন কাপড় মেলতে ব্যস্ত। টের ও পায় নি কেউ তাকে গভীর নয়নে দেখছে। কাজ শেষ করে পেছনে ফিরতেই আতকে উঠলো সে। হাত থেকে বালতিটা পড়ে বেশ শব্দ করলো। কিন্তু ফাইজান তখন নির্বিকার। ঘাবড়ানো স্বরে সে বলে উঠলো,
“আপনি? এখানে?”

ভেতর ঘর থেকে শরীফার অট্টহাসির শব্দ ভেসে আসছে। অর্থাৎ সে একা আসে নি। বরং আসতেও চায় নি, কিন্তু মায়ের জেদের পরাস্থ হয়ে তাকে আসতে হয়েছে। কোন মেলার লোভ দেখিয়েছে হুমায়রা তাকে। সেই লোভে মহিলা সবাইকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। অবশেষে না পেরে আসতেই হলো ফাইজানকে। শরীফা সরাসরি ঘরে লাগোয়া বারান্দা দিয়ে আতিয়া খাতুনের ঘরে গেলেন। তাকে দেখেই আতিয়া খাতুন আহ্লাদে আটখানা। আর ফাইজান দাঁড়িয়েছিলো উঠানের এক কোনে। তখন ই নজর গেলো দুই ঘরের মাঝের ফাঁকা জাগয়ায়। সোনা রোদের ঝলকানিতে সদ্য স্নান করা নারীর অবয়ব কৌতুহল জাগিয়েছিলো ফাইজানের চিত্তে। তাই তো বিনা শব্দে ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালো সে। নিষ্পলক চেয়ে রইলো কিশোরীর দিকে। ভেজা চুল, ঘর্মাক্ত মুখ, রোদে লালচে হওয়া কোমল গাল। কিন্তু সৌন্দর্যে কার্পন্য নেই। মা সত্যি বলেছে, মেয়েটি সুন্দরী। ফাইজানের অনিয়ন্ত্রিত প্রগাঢ় নয়নে অপ্রস্তুত হলো হুমায়রা। সতর্কতার সাথে চটজলদি নিজেকে গুছিয়ে নিলো, কড়া স্বরে বলল,
“আপনি এখানে কি করছেন? এটা ভেতর ঘরের অংশ। এখানে আপনার আসা বারণ”
“নিজের হবু স্ত্রীর ঘরে আসা বারণ?”

“হবু স্ত্রী” কথাটা শুনতেই থমকে গেলো হুমায়রা। হতবাক চাইলো। ফাইজান বাঁকা হাসলো। সেই হাসিতে তাচ্ছিল্যের অস্তিত্ব খুঁজে পেলো হুমায়রা। হাসি অক্ষত রেখে বলল,
“আপনার তো কথাজ্ঞান নেই দেখছি”
“মানে?”
“আজ মাকে কি কথা দিয়েছিলেন মনে নেই?”

হুমায়রার তখন মনে পড়লো আজ তো শরীফাকে নিয়ে যাবার কথা মেলায়। ফাইজান ব্যস্ত স্বরে বলল,
“তৈরি হয়ে নিন”
“আপনিও যাবেন নাকি?”
“আমার মাকে অন্য কারোর উপর ছেড়ে দেবার মত আক্কেলহীন আমি নই”

বলেই সেখান থেকে প্রস্থান করলো ফাইজান। হতভম্ব চেয়ে রইলো হুমায়রা। এই মানুষের সমস্যাটি কি। এমন কেন একটি মানুষকে হতে হবে।

তৈরি হয়ে ঘরে যেতেই দেখলো দাদা দাদী আপ্যায়নে ব্যস্ত। হুমায়রাকে দেখেই আতিয়া এসে বললেন,
“বুবু, তারা তো খাইতে চাইতাছে না। কুটুম মানুষ না খাওয়াইয়ে পাঠাই কি কইর‍্যা?”
“হয়তো খেয়ে এসেছেন”
“কি কস? এডি কইলে কি হইবে নি। এক কাম কর, তুই ঝটপট কিছু বানায়ে দে”

শরীফার কানে যেতেই সে বলল,
“চাচী কিছু খাবো না, খেয়ে এসেছি”
“এইডা কইলে হয়। যা বুবু, শরবত অন্তত দে”
“হ্যা, এটা খাওয়াই যায়”

শরীফা কিছু বলার আগেই ফাইজান কথাটা বলল। তার সম্মতি পেয়ে হুমায়রাকে জোরপূর্বক রান্না ঘরে পাঠালেন আতিয়া খাতুন। ফাইজানের দিকে চোখ মুখ খিঁচে তাকালো হুমায়রা। লোকটি নির্লজ্জের মত হাসছে। একটি মানুষ এতো অভিনয় কি করে পারে। বাধ্য হয়েই শরবত বানিয়ে আনলো হুমায়রা। ফাইজান শরবতের গ্লাসটা হাতে নিলো। এক চুমুক দিয়েই গ্লাস রেখে দিলো। শরীফা শুধাতেই বলল,
“একটু বেশি ই মিষ্টি, এতো মিষ্টি আমি খাই না”

হুমায়রা কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে। কিন্তু এখনো নির্বিকার ফাইজান। একদম নিপুনভাবে অদেখা করলো সে। শামসু মিঞা তখন কথায় কথায় বলে উঠলেন,
“বিয়ার দিনক্ষনটা পাকাপাকি করে নিলি হয় না”
“পাকাপাকি করার পূর্বে সবার সম্মতিটা প্রয়োজন। আমি যতটুকু জানি রাশাদ সাহেবের এই বিয়েতে মত নেই”

ফাইজানের কথায় লজ্জিত হলেন শামসু মিঞা। আমতা আমতা করলেন তিনি।
“ওয় তো আর অভিভাবক না, আমি। আমি যা কমু তাই হইবো”
“সেটা বললে কি করে হয়। যতই হোক তিনি হুমায়রার বড় ভাই। সমস্যা নেই, আমি নিজ থেকেই উনার সাথে কথা বলে নিব। উনাকে রাজী করানোর দায়িত্ব আমার”

কথাটা শুনতেই চমকালো হুমায়রা। হতবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল ফাইজানের দিকে। ফাইজান উঠে দাঁড়ালো। শরীফাকে বললো,
“আমি বাহিরে আছি, আসো”

বের হবার পুর্বে হুমায়রার উদ্দেশ্যে ধীর গলায় বললো,
“অনেক ভেবে দেখলাম, আপনি ঠিক বলেছেন। মাকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। তাই বিয়েতে আর অমত করবো না আমি”……………………

চলবে

[মুসলিম পাড়ার দুটি বাড়ি, নাম শান্তিকানন এবং সুখনীড়। কিন্তু সেখানে অশান্তির বাস আর সুখের ছিটেফুটেও নেই। আছে শুধু ঝগড়া কলহ, বিদ্বেষ। বড়রা তো বড়রা, ছোটরাও এই কোন্দলে ঝাঝড়া। সকালবেলায় বল এসে ভেঙ্গে ফেললো আয়াতের শখের চুড়ি। ক্রোধ বর্ষণ হলো এই পাশ থেকে। কিন্তু ওপাশের সৌম্য পুরুষ, সাফওয়ান কেবল ই হাসলো। ফলে আরেকদফা ঝগড়া লাগলোই। আর দর্শক হলো মুসলিম পাড়া। এই বিদ্বেষ, কলহের বাতাসে প্রেমপুষ্প ফোটাবার দুঃসাহস পোষন করেছে এক জোড়া কপোত-কপোতী, প্রভা-ইশতিয়াক। আঠারো বছর ধরে সঞ্চিত প্রণয় পরিণয়ে পৌছাবে তো? নাকি তার পূর্বেই দু-বাড়ির কোন্দল পিষিয়ে দিবে প্রেম? সাফওয়ান-আয়াতের ঝগড়া কি কখনো শেষ হবে? নাকি চাঁদ কখনো বলবে হাতটি ধরতে?

ই-বই : চাঁদ বলে হাতটি ধরো (অংশ বিশেষ)

পুরো গল্পটা পাবেন শুধুমাত্র বইটই এপে। দাম মাত্র ৬০ টাকা!বইটি পড়তে হলে অবশ্যই গুগল প্লে স্টোর থেকে বইটই এপ ডাউনলোড করে নিজের একাউন্ট রেজিস্টার করতে হবে]

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here