#সুখ_পাখি
#Ayrah_Rahman
#part:-25
নাহ.. তরু আর ভাবতে পারছে না….
চোখ বন্ধ করলে আজও সেই লোমহর্ষক মুহুর্তটা চোখের সামনে ভেসে উঠে,,,
সেদিন যখন সেই লোকগুলো তরুকে দেখে ফেলেছিলো,,
লোকগুলো এগুচ্ছে আর তরু পিছুচ্ছে..কোন উপায়অন্তর না দেখে তরু সোজা জঙ্গলের দিকেই ছোটা শুরু করে,,
জঙ্গল টা ততটা বড় না,,এই দিকটাই তরু বন্ধুদের সাথে অনেক এসেছে,,
তবে দৌড়ের প্রকুপে…
কোথায় যাচ্ছে তার জানা নাই,,শুধু বুঝতে পারছে তাকে ছোটতে হবে,,তাকে বাঁচতে হবে,,আর না হলে ওরা মেরে ফেলবে,,
ছোট বেলা থেকে ই আরু থেকে তরু বেশ চঞ্চল ছিলো,,কিন্তু কালের পরিবর্তনে বিপরীত টাই ঘটে গেলো,,আরু হয়ে গেলো চঞ্চল আর তরু নিরব..
ছোট থেকেই যেহেতু তরু ছিলো চঞ্চল তাই শহরের কোন অলিগলি তার অজানা ছিলো না,,সেই হিসেবে জঙ্গল টাও তার অজানা নয়,, তরু দৌড়াতে দৌড়াতে জঙ্গল পেরিয়ে দিয়ে রাস্তায় উঠে এলো,,আকাশ টাও ততক্ষনে অন্ধকারে ঢাকা পরে গেছে,,তরু আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সামনে একটা চা স্টল ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না,,তরু পিচ ঢালা রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে দেখলো পায়ে জুতাটা নেই,,কখন যে পা থেকে খুলে গেছে বুঝতে পারেনি,,পা টাও কেমন চিনচিন ব্যথা করছে হয়তো কোথাও কেটে গেছে বা ছিলে গেছে,,
তরু খুরাতে খুরাতে চা স্টলে এসে বেঞ্চিতে বসলো,,
— কি গো মা অহন তো মেলা রাইত,,কইত্তে আইলা,,আর পায়ে কিতা হয়ছে?
দোকানদার চাচার কথা শুনে তরু মুখ তুলে তার দিকে তাকালো আর মুখে মিথ্যা হাসি রেখে বলে উঠলো..
— আরে আর বইলেন না চাচা,,প্রাইভেট থেকে আসার পথে কয়েকটা কুত্তা দৌড়ানি দিসিলো,,দৌড়াতে গিয়ে পড়ে জুতাটা ছিড়ে গেছে,,, আর পায়ে ব্যথা পাইছি,,
তরু বুঝতে পারলো না লোকটা তার কথা কতটুকু ই বা বিশ্বাস করছে,,
— তই মা কিছু খাইবা?
–না চাচা কিছু খামু না.. এখান থেকে কি রিক্সা পাওয়া যাবে না?
— হহ মা,,একটু সামনে আগাইলেই রিক্সা পাইবা,,
— আচ্ছা চাচা আজ আসি,,আরেকদিন আসমুনে,,
বলেই তরু হাটা শুরু করলো,,
— মা খারাও,, আমি আইতাসি,,
চাচার ডাকে তরু পিছনে তাকিয়ে দেখে চাচা দৌড়ে আসছে…
— চাচা আপনার আসা লাগবে না আমিই যাইতে পারমু।
— তুমি তো আমার মাইয়ার মতো,,মা জানো তোমার মতো আমার ও একটা মাইয়া আছিলো,,পেরাই ৩-৪ মাস আগে মাইয়া ডা স্কুলের লাইগা বাইর হয়ছিলো আর আহে নাই,,কত খুজা খুজজি পাই নাই গো মা পাই নাই,, বলেই চাচা নিরবে তার চোখ মুছলেন,,
তরু খেয়াল করলো তার চোখের কোনেও বিন্দু বিন্দু পানির অস্তিত্ব
–পুলিশে খবর দেন নাই চাচা?
–দিসি রে মা,,কিন্তু কোন কামে লাগে নাই,,এই গরীবের লাইগা পুলিশ নাইরে মা,,টেহা থাকলেই পুলিশ কাম করব,,টেহা নাই তো পুলিশ ও নাই,,,
চাচার কথার পৃষ্ঠে বলার মতো কোন কথা তরু খুঁজে পলো না,,অগত্যা তাকে চুপ থাকতে হলো…
কিছু দুর যাবার পর তরু দেখলো একটা রিক্সা এদিকে ই আসছে,,
— এই রিক্সা যাবা
–কোনে জাইবেন আফা?
— প্রফেসর সুশান্ত সেনের বাড়ির পাশে যেই গলি টা আছে ওই গলির ৩ নাম্বার বাড়িতে… ( প্রফেসর সুশান্ত সেনের এই এলাকাই বেশ নাম ডাক আছে এক নামে সবাই চেনে)
তরু রিক্সায় উঠে চাচার দিকে তাকিয়ে বলে..
— আজ আসি চাচা, আরেকদিন আসবো নে..আর চিন্তা করবেন না আপনার মেয়েকে ঠিক বের করা যাবে..
— জানিনা গো মা আমার মাইডা আইবো কি না তই তুমি কইলাম এই বুড়া চাচা রে দেইখা যাইও,,
— আচ্ছা চাচা…
রিক্সা ছেড়ে দিলো,,কিছুদুর যাবার পর তরু পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো চাচা এখনো ওই ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে,, একজন সদ্য মেয়ে হারা পিতার আকুল চাহনি,, তরুর চোখ বন্ধ করে রাখে,,
— কয়টা বাজে মামা?
— অহন তো রাইত ৭ টা বাজে,,
— কতক্ষণ লাগবে বাসায় যেতে?
— আফা জোড়ছে ছাড়লে ১০ মিনিটে হয়য়া যাইবো,,
— আচ্ছা তাড়াতাড়ি করেন
এতক্ষণে তরু তার বাসার কথা মনে পড়লো,,বাসার সবাই মনে হয় টেনশনে আছে…
এখন তরু তার বাসার সামনে দাড়িয়ে যত রকমের দোয়া দুরুদ পড়ছে,,কাঁপা কাঁপা হাতে তরু ক্রলিং বেল চাপ দিলো,,
সাথে সাথে ই ঝড়ের বেগে কেউ দরজা খুলে দিলো,, তরু তাকিয়ে দেখে তার মা দাঁড়িয়ে,,,
— ভেতরে এসো…
মায়ের গম্ভীর কন্ঠ শুনে তরুর অন্তরাত্মা কেপে উঠে,,
সে ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করে,,
আরু আর তার বাবা সোফায় বসে ছিলো,,
— পায়ে কি হয়েছে,, জুতা কোথায়?
মায়ের গম্ভীর প্রশ্নে তরু ভয়ে কুকরে যায়,,
— ককুকুরে দৌড়ানি দিসিলো..পরে হোটচ খেয়ে পড়ে পায়ে ব্যথা পাইছি আর জুতাও ছিড়ে গেছে,,,
— সত্যি তো? এত দেরি হলে কেন?
— আরে হয়েছে তো,, দেখছো মেয়েটা ভয় পেয়ে আছে আবার তুমি এমন করছো,,যা তো মা ঘরে যা আমি তোর জন্য সরবত পাঠাচ্ছি,,
বাবার অভয় বানি শুনে তরু দৌড়ে ঘরে চলে যায়,,
দরজা লাগিয়ে দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে হাঁপাতে থাকে,,
— জোড় বাচান বাচছি,,আরেকটু হলে মা ধরেই ফেলত যে আমি মিথ্যা কথা বলছি,,,
বলেই তরু ওয়াসরুমে চলে যায়,,,
সেই ঘটনার প্রায় মাস খানেক পরের কথা,,
তখনও তরু আর অভ্রের রিলেশনশিপ ভালোই চলছিল,,
একদিন কথায় কথায় তরু অভ্রকে তার ফেমেলি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে,,
অভ্র বলে তার পরিবারে সে তার বাবা,,আর ছোট ভাই,মা থাকে,,
এরপরে তরু আর কিছু জিজ্ঞেস ও করে নি অভ্র কিছু বলে ও নি,,
এর মধ্যে তরু অনেক খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলো,, লোকটার নাম অনিল হায়দার তবে মজার ব্যপার হলো লোকটার নাম দুইটা,, একটা প্রফেশনাল আরেকটা পারিবারিক,, পরিবারের সবাই তাকে মিনহাজ নামে চেনে আর প্রফেশনাল জগতে সবাই অনিল নামে,,তরু বুঝতে পারলো না যে লোকটা দুই নাম দিয়ে করে কি?
তরু আর অভ্র পার্কে বসে ছিলো,,,
হাতে বাদাম,,অভ্র বাদামের খোসা ছাড়িয়ে তরু কেও দিচ্ছে নিজেও খাচ্ছে,, এমন সময় তরু হঠাৎ করে বলে উঠলো,,
— আচ্ছা মিস্টার অভদ্র আপনি দেখতে কার মতো হয়েছেন?
— কেন বলত?
— না এমনি বলেন না,,কার মতো হয়েছেন?
— সবাই বলে আমি নাকি আমার মায়ের মতো হয়েছি।
দাড়াও তোমাকে আমি ছবি দেখাচ্ছি,, তুমিই বলো আমি কার মতো হয়েছি,,
বলেই অভ্র তার মোবাইল থেকে সবার একটা গ্রুপ ফটো বের করলো…
— এই যে দেখো,,উনি আমার মা,,ও আমার ছোট ভাই আর উনি আমার বাবা,,,
তরু সবগুলো ছবি দেখছিল হঠাৎ তার একটা ছবিতে চোখ আটকে গেলো,,
তরু আবার জিজ্ঞেস করলো,,,
–উনি তোমার কি হন অভ্র?
— উনি আমার বাবা,
তরুর কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না,,তাই সে সিউর হবার জন্য উনার নাম জিজ্ঞেস করলে অভ্র বলে..
— আমার বাবার নাম মিনহাজ হায়দার,,, আমার বাবা আমাকে ভীষণ ভালোবাসে,,বলেই অভ্র হালকা হাসে,,
তরু বুঝতে পারে অভ্র তার বাবাকে ভীষণ ভালোবাসে,, এই মুহূর্তে অভ্রকে কিছু বললে অভ্র কখনোই বিশ্বাস করবে না,,তার বাবা এমন কোন কাজের সাথে সংযুক্ত…
আর কিছুক্ষন কথা বলে তরু অভ্রকে বিদায় দিয়ে চলে আসলো,
তরু ভাবতে পারে না সে কি করবে…
হঠাৎ তার মাথায় আসে শুভ্রের কথা,,অভ্র নাই বা বিশ্বাস করলো কিন্তু শুভ্র তো ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষ,, সে নিশ্চয় বুঝবে..
তরুর শুভ্রের সাথে ভালোই সম্পর্ক,,অনেকটা ফ্রেন্ডলি,,
তরু শুভ্রকে ফোন করে একটা কফি সপে আসতে ডেকে পাঠায়,,
পরেরদিন কফি সপে…..
চলবে…
[ আজ পর্বটা কেমন জানি এলোমেলো হয়ে গেছে বুঝতে পারছি না,,প্লিজ কেমন হয়েছে জানাবেন আর ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন.. হ্যাপি রিডিং ]