#দৃষ্টির_আলাপন
#পর্বঃ২৫
#আদওয়া_ইবশার
নিকশ কালো অন্ধকারের বলয় কেটে প্রকৃতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে মিঠা রোদ্দুর। শীতের প্রকট আজ ক্ষীণ। সকাল হতেই হইচই শুরু হয়ে গেছে শিকদার বাড়িতে। বহুদিন পর মৃতপ্রায় বাড়িটা যেন আজ প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আনন্দধারা উপচে পরছে চারিপাশে। দিন শেষে রাত পাড় হলেই বাড়ির ছোট মেয়ের বিয়ে। মায়ের জাদুর পরশে ছন্নছাড়া রক্তিম আজ নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। আদরের ছোট বোনের বিয়ের দায়িত্ব মহানন্দে তুলে নিয়েছে নিজ কাধে। মেহমান থেকে শুরু করে বাড়ির প্রতিটা মানুষের নাস্তা করা শেষ। বাকী শুধু রক্তিম আর দৃষ্টি। ঘুম থেকে ওঠার পর এখন পযর্ন্ত দৃষ্টি তার পাষাণ পুরুষের দেখা পায়নি। মহারাজ আজ মনে হচ্ছে একদিনেই নিজের দায়িত্ব সব পালন করে ফেলবে। ঘরে যে তার নতুন বউ একা সেদিকে একটুও খেয়াল নেই। তার খেয়াল ছিলই বা কবে? সেই তো প্রথম দিন থেকেই পাষান্ডটা দৃষ্টির প্রতি উদাসীন। তবুও দৃষ্টির অবচেতন লোভী মন ভেবেছিল গত রাতের ঘটনার পর রক্তিম বুঝি মা-বাবা, বোনদের পাশাপাশি বউকেও আপন করে নিবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। দৃষ্টিকে আরও একবার হতাশার সাগরে ডুবিয়ে রক্তিম দেদারসে নিজের বোনের বিয়ের কাজকর্মে মশগুল। এদিকে বাড়ি ভর্তি মেহমানদের সামনে দৃষ্টি যেন এক ঘরে তোলা নতুন শো-পিস। যার বিয়ে তার দিকে নজর না দিয়ে মানুষজন সকলেই তাকে নিয়ে পরেছে। বউ কালো না সুন্দর, খাটো না লম্বা, চুল কেমন, হাত-পায়ের নখ কেমন এসব নিয়ে বিস্তর গবেষণা শুরু করে দিয়েছে। কেউ কেউ নতুন বউয়ের রূপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আবার কেউ কেউ রক্তিমের প্রথম স্ত্রী জেরিনের সাথে তুলনা করে দৃষ্টিকে নাকাল বানাতে উদগ্রীব। অনেকেই আবার যা ঘটেছিল তার সাথে আরও রংচং মাখিয়ে অতি উৎসাহের সাথে বউকে জানাচ্ছে তার স্বামী প্রথম স্ত্রীকে কতটা ভালোবাসতো। জেরিন নামক মেয়েটার প্রেমে কতটা পাগল ছিল রক্তিম। দৃষ্টির অবুঝ মনটাকে জেরিন সম্পর্কিত এক একটা কথা যে কতটা ক্ষতবীক্ষত করছে তা যদি কেউ দেখত তবে হয়তো ঐসব পুরোনো কাসুন্দি ঘাটার সাহস করতনা। সে মুখে যতই বলোক রক্তিমের অতীত নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই তার। দিন শেষে আজ সেই অতীতের গল্প শুনে তবুও ভালোবাসার কাঙ্গাল হৃদয়টাতে অসহনীয় ব্যথার সৃষ্টি হচ্ছে। না পারছে নিজের স্বামী কেন্দ্রিক ঐসব রসালো প্রেমগাথা অতীত কথন সহ্য করতে। আর না পারছে কারো মুখের উপর কিছু বলতে।
দৃষ্টিকে এই অসহনীয় পীড়া থেকে রক্ষা করতেই বোধহয় একসময় রেহানা বেগম উপস্থিত হয়। কারো দিকে না তাকিয়ে দৃষ্টির বাহু আকড়ে ধরে বসা থেকে উঠিয়ে তাড়া দিয়ে বলে,
“গল্প করার সময় অনেক পাবে। সকাল পেরিয়ে দুপুর হচ্ছে। এখনো না খেয়ে আছো। নিচে চলো। রক্তিম এসেছে, তার সাথে নাস্তাটা করে নাও।”
শাশুড়ির আগমনে দৃষ্টি যেন হাপ ছেড়ে বাঁচে। দ্রুত পা চালিয়ে শাশুড়ির পিছন পিছন বেরিয়ে যায়। ডাইনিং টেবিলে একমনে নিচে তাকিয়ে রক্তিম খেতে ব্যস্ত। তার ঠিক পাশের চেয়ারটাতেই দৃষ্টিকে বসিয়ে দেয় রেহানা বেগম। একটা প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলে,
“একদম লজ্জা করবেনা। পেট ভরে খেয়ে ওঠবে। সাথে আমার ছেলের যা লাগে তাও এগিয়ে দিবে। কে কি বলল না বলল এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আমার ছেলেকে নিয়ে আর নিজেকে নিয়ে ভাবো শুধু। মনে করো তোমরা দুজন ছাড়া তোমার আশেপাশের সব অদৃশ্য। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনের কাজই হলো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তিলকে তাল বানিয়ে এটা সেটা বলে সংসারে আগুন লাগানো। ওদের কথায় কান দিবেনা একদম।”
মায়ের কথায় খাওয়া থামিয়ে চিন্তিত মুখে মাথা তুলে তাকায় রক্তিম। ভরাট কন্ঠে জানতে চায়,
“কি হয়েছে মা?”
“কি আর হবে? বিয়ে করে বউ ঘরে তোলে দায়িত্বজ্ঞান হীনের পরিচয় দিচ্ছিস যে, তাই পাড়া-প্রতিবেশী চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।”
কথা কাটিয়ে রেহানা বেগম তাড়াহুড়ো করে এটুকু বলেই প্রস্থান করে সেখান থেকে। নিজ থেকে এসে রক্তিমের কাধে বসা দৃষ্টি নামক আস্ত এক মাথা ব্যথা কেন্দ্রিক কথায় বিরক্ত হয় রক্তিম। তবে প্রকাশ করেনা তা। মায়ের স্বাভাবিক আচরণে বিরক্তি ভাবটাও খুব দ্রুতই কেটে যায়। আবারও পুরো মনযোগ দেয় খাবারে। দৃষ্টি সেদিকে তাকিয়ে থাকে অপলক। শাশুড়ির বোঝপূর্ণ কথায় মনটা যতটা হালকা হয়েছিল তার থেকেও দ্বিগুণ বিষাদ হানা দেয় রক্তিমের নির্লিপ্ততায়। চোখ দুটো সিক্ত হয় অশ্রুজলে। কথা বলতে গিয়ে টের পায় কাঁপন ধরেছে কন্ঠনালীতে। ঠোঁট কামড়ে ঢোক গিলে গলার কাছে দলা পাকিয়ে থাকা কান্নাটাকে গিলে নেয় দৃষ্টি। কন্ঠে অসহায়ত্ব নিয়ে জানতে চায়,
“আমার কি আপনার স্ত্রী হবার একটুও যোগ্যতা নেই? আপনার প্রথম স্ত্রী জেরিন, সে কি আমার থেকেও অত্যধিক সুন্দরী ছিল? রূপে, গুণে সব দিক থেকেই কি আমি তার থেকে পিছিয়ে?”
রুটি ছিঁড়তে গিয়ে তৎক্ষণাৎ রক্তিমের হাত দুটো থেমে যায়। মুখে থাকা অবশিষ্ট খাবারটুকুও আর গলা দিয়ে নামেনা। শান্ত চোখে তাকায় দৃষ্টির দিকে। স্বভাবজাত গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“আজ প্রথমবার শুনেছি তাই কিছু বললাম না। দ্বিতীয়বার যদি আমার অতীত নিয়ে কোনো প্রশ্ন করার সাহস করেছিস তোর জ্বিভ টেনে ছিঁড়ে কুকুরের খোরাক বানাবো।”
অত্যধিক শীতল কন্ঠের এমন ঠান্ডা হুমকিতে কিছুটা কেঁপে ওঠে দৃষ্টি। রক্তিমের থেকে নজর সরিয়ে অন্যদিকে তাকায়। নিজেকে সামলাতে গিয়েও হিমশিম খায় রক্তিম। দৃষ্টির মুখে হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে পায়ের রক্ত যেন মাথায় ওঠে যায়। রাগে কিড়মিড়িয়ে শতর্ক দৃষ্টিতে আশেপাশে তাকিয়ে ডাইনিং একদম ফাঁকা বুঝতে পেরে খাঁমচে ধরে দৃষ্টির বাহু। তড়িৎ ভয়ে চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে নেয় দৃষ্টি। ক্রোধান্বিত হয়ে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে রক্তিম,
“কেন এসেছিস আমার জীবনে? যেটুকু সুখে আছি সেটাও কেড়ে নিতে? আমি তো এমনিতেই মৃতপ্রায়। আর কি মারবি আমাকে? কি সুখ কেড়ে নিঃস্ব করবি আমাকে? বিশ্বাস কর, আমি এমনিতেই নিঃস্ব। তোকে দেওয়ার মতো কিছুই অবশিষ্ট নেই আমার। টাকা-পয়সা, অর্থ-সম্পদ কিছুই নেই। যে ভালোবাসার দোহাই দিয়ে জুড়েছিস আমার জীবনে। সেই ভালোবাসা বোঝার জন্য যে একটা মন লাগে সেই মনটাও নেই। তবে কেন শুধু শুধু আমার জীবনে এসেছিস? সব জেনে বুঝে এসেছিস যখন, তো কেন আজ ঐসব অতীত নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিস? এখনো সময় আছে, চলে যা আমার জীবন থেকে। বিশ্বাস কর বেঁচে যাবি। আমার থেকেও হাজার গুণ ভালো ছেলে পাবি। যে তোকে ভালোবাসা দিতে পারবে, বিলাসীতা দিতে পারবে সর্বোপুরি সুখে রাখতে পারবে। আমার জীবনে থাকলে দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবিনা। আমার মাথা একদম ঠিক নেই। আমি পাগল। বদ্ধ উন্মাদ আমি। মাথা বিগড়ে গেলে তোকে মেরেও ফেলতে পারি। জীবনের মায়া থাকলে চলে যা। বেঁচে যাবি। সুখেও থাকবি।”
বেপরোয়া ভঙ্গিতে কথা গুলো বলে ঝড়ের গতিতে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায় রক্তিম। দুঃখের সাগরে ডুবিয়ে রেখে যায় দৃষ্টিকে। ভালোবাসায় টইটুম্বর এক অষ্টাদশীর হৃদয়ে সৃষ্টি করে যায় কাল বৈশাখী ঝড়। যে ঝড়ে নড়বড়ে হয় দৃষ্টির বুকে জমে থাকা স্বপ্ন। রক্তিম নামক এক পাষাণ পুরুষের সাথে সুখের সংসার গড়ার স্বপ্ন।
****
রক্তিমের বুকে সৃষ্ট দগদগে ঘায়ে সবে অল্প প্রলেপ পরেছিল। মুহূর্ত ব্যবধানে সেই ঘা অজান্তেই দৃষ্টি আবার খুঁচিয়ে তাজা করে দিল। জীবনটাকে অল্প-স্বল্প গোছানোর প্রস্তুতি নেওয়া রক্তিমকে আবারও পথভ্রষ্ট করে দিল। এলোমেলো করে দিল মন-মস্তিষ্ক। বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিরিবিলি এক কাঁঠাল বাগের ভিতরে গিয়ে গাছের গুড়ায় বসে পরে রক্তিম। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সর্বশক্তি দিয়ে টেনে ধরে নিজের চুল। বুকের ভিতরে সদ্য তাজা হওয়া ঘায়ের জ্বলনে অশান্ত হয় বক্ষ পিঞ্জর। ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাওয়া হৃদয়টা সৃষ্টিকর্তার কাছে অভিযোগ জানায়, কেন তার জীবনটা এমন এক কালো আধারে ডুবে গেল? কি এমন জঘণ্য অন্যায় করেছিল সে, যে অন্যায়ের শাস্তি স্বরুপ পুরো জীবনটা এলোমেলো হলো তার! অন্যায় কথাটা স্বরণ হতেই থমকে যায় রক্তিম। শরীর ছেড়ে গাছের সাথে হেলান দিয়ে ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,
“অন্যায় তো করেছিই আমি। ভালোবাসার মতো মস্ত বড় অন্যায়। এ অন্যায়ের শাস্তি তো এখন ভোগ করতেই হবে। যে হৃদয় ভালোবেসে মহা পাপ করেছে সে হৃদয় তো পুড়বেই। মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত তাকে পুড়তে হবেই।”
অসাঢ় মস্তিষ্ক। নিস্তেজ শরীর। ক্লান্ত হয়ে গেছে ভাবনারাও। বুঝে গেছে রক্তিম সুখ তার জন্য না। এক বিন্দু সুখের পরিবর্তে যার জীবনে মুহূর্তেই নেমে আসে ঘুট্ঘুটে অন্ধকার তার সুখের সন্ধান করা অনুচিত। ভাবনা-চিন্তা, সুখ-দুঃখের হিসাব রেখে ক্লান্ত দেহ টেনে ওঠে দাড়ায় রক্তিম। ভঙ্গুর হৃদয়টাকে কাঠিন্যতার খোলসে ভরে এগিয়ে যায় বাড়ির দিকে। জাগতিক সমস্ত কিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে ইচ্ছে হলেও উপায় নেই এই মুহূর্তে। যে দায়িত্ব কাধে নিয়েছে তা তো পালন করতেই হবে তাকে।
শিকদার মঞ্জিলের কাছাকাছি আসতেই পকেটে থাকা যান্ত্রিক বস্তুটা ভাইব্রেশন থাকায় বিপ বিপ শব্দ তুলে কেঁপে ওঠে। আনমনে হাঁটতে হাঁটতেই পকেট হাতরে ফোন বের করে রিসিভ করে কানে ঠেকায় রক্তিম। জলদগম্ভীর কন্ঠে বলে,
“কে?”
“দৃষ্টির বাবা বলছিলাম।”
তৎক্ষণাৎ থেমে যায় রক্তিম। চোখ দুটো বন্ধ গভীর নিঃশ্বাস ফেলে। ভাবে আজ কি এসব উটকো ঝামেলা তার পিছু ছাড়বেনা? কতক্ষণ আগেই মেয়েটা অতীত নাড়িয়ে বুকের ঘা তাজা করেছে। সেই যন্ত্রণা সামলে উঠতে না উঠতেই এখন আবার বাপ হাজির। বিতৃষ্ণায় তেতু হয়ে ওঠে রক্তিমের গলা অব্দি। নিরবতার জাল ছিঁড়ে ফোনের অপর পাশ থেকে সাদেক সাহেব দ্বিধান্বিত কন্ঠে বলে ওঠেন,
“তোমার বাবা এসেছিল বিয়ের দাওয়াত নিয়ে। একটু ঝামেলায় পরে গেছি তাই যেতে পারলাম না। তাছাড়া তোমাদের বিয়েটা যে পরিস্থিতিতে হয়েছে এখন পযর্ন্ত দৃষ্টির মা মেয়ের উপর রেগে আছে। সে কিছুতেই যাবেনা। তোমার বাবাকে বলে দিও কোনো কষ্ট না পায় যাতে। আত্মীয়তা যখন হয়েছেই, তখন আজ হোক কাল। সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে আসা-যাওয়া হবেই।”
আগুনে ঘি ঢেলে দিলে আগুন যে রূপে গর্জে ওঠে,রক্তিমের অবস্থাও ঠিক সেরকম। সাদেক সাহেবের কথা গুলো যেন রক্তিমের রাগে ঘি ঢালার কাজটাই করে দিয়েছে। অত্যধিক রাগে কপালের দুপাশের শিরা ধপ ধপ করছে। কপাল কুঁচকে কিছু যেই ফোনটা কান থেকে নিঃশব্দে নামিয়ে লাইন কাটতে যাবে ওমনি ভেসে আসে সাদেক সাহেবের কিছু কথা,
“দেখো বাবা! বিয়েটা যেভাবেই হোক আমার মেয়ে এখন তোমার দায়িত্বে। তাকে ভালো রাখার দায়িত্বটাও সম্পূর্ণ তোমার। তুমি কেমন তা আমার জানার প্রয়োজন নেই। তোমার কি আছে কি নেই, সেটাও কখনো জানতে চাইবনা আমি। আমি যা চাইব তা শুধু আমার মেয়ের সুখ। বলতে পারো এক অসহায় বাবা তোমার কাছে হাত জোর করে অনুরোধ করছে তার মেয়েটার খেয়াল রাখার জন্য। আমার মেয়েটা বড্ড সরল। ওর চাহিদা গুলোও খুব স্বস্তা, আবার বলা চলে খুব দামিও। কারণ আমার মেয়েকে সুখে রাখার জন্য দামি দামি পোশাক, কসমেটিকস এর প্রয়োজন হয়না। একটু ভালোবাসা আর অল্প যত্ন পেলেই আমার মেয়ে সুখী। এর বেশি কিছুই চায়না তার। তুমি যদি তাকে এক বিন্দু ভালোবাসা উপহার দাও। বিনিময়ে তোমাকে সে তার পুরো হৃদয়টা দিয়ে দিবে।”
কথার মাঝে একটু থামে সাদেক সাহেব। এই প্রথম মেয়ের জামাইয়ের সাথে কথা হচ্ছে। সেটাও তিনি নিজেই যা বলার বলে যাচ্ছে। শশুর হিসেবে যে সাদেক সাহেব অন্ততপক্ষে একটা সালামপ্রাপ্য এটাও হয়তো রক্তিমের জানা নেই। জানা থাকলেও হয়তো ছেলেটা ইচ্ছে করেই সাদেক সাহেবকে অসম্মান করছে। কথা গুলো ভাবতেই মেয়ের প্রতি রাগটা আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। মেয়েটা তার এই ছেলের মাঝে কি দেখে পাগল হয়েছে? যে ছেলের মাঝে সামান্য সহবত নেই সেই ছেলে কি আদও ভালোবাসা বুঝে? বুঝলেও কিছু করার নেই না বুঝলেও কিছু করার নেই। যেখানে নিজের মেয়েই কথায় নেই সেখানে পরের ছেলের সম্মান দিয়ে কি হবে! ফোনের মাঝেও রক্তিম ঠিক টের পায় সাদেক সাহেবের দীর্ঘশ্বাস। মৌনতা ভেঙ্গে অনুরোধের স্বরে সাদেক আবারও বলে ওঠে,
“দৃষ্টির সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা আর চারদিন পর। জানিনা মেয়েটা পড়ছে কি না। ওকে পরীক্ষাটা দেওয়ার সুযোগ দিও। আমার মেয়েটা পড়াশোনায় খুব ভালো। ওকে নিয়ে ওর মা-বাবার অনেক স্বপ্ন। মেয়েটাকে তো কেড়ে নিলে। তাকে ঘিরে দেখা আমাদের স্বপ্ন গুলোকে কেড়ে নিওনা। দয়া করে হলেও ওকে পড়ালেখার সুযোগ দিও। আমার বিশ্বাস সাত কলেজের যেকোন একটাতে ওর চান্স হবেই।”
যে ছেলে নিজের দায়িত্বটাও নিজে পালন করতে পারেনা, সে ছেলের কাছে কি না এক বাবা তার মেয়ের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করছে! শ্লেষাত্বক হাসে রক্তিম। তবে কেন যেন মুখের উপর না করে দিতে পারেনা। না শব্দটা উচ্চারণ করতে গিয়েই টের পায় গলার কাছে কিছু একটা চেপে ধরে রেখেছে। বলবেনা বলবেনা করেও জ্বিভের ডগায় শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে ক্ষীণ স্বরে বলে,
“পরীক্ষা দিবে। চিন্তা করবেন না।”
চলবে….