#নিশীভাতি
#২৩তম_পর্ব
“আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন, দয়া করে আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন”
মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো রাশাদ। বাহিরে তখন উত্তরীয়া বাদলের উম্মাদনা, মেঘপতনের তীব্র আওয়াজের চুরমার হচ্ছে নিস্তব্ধ শীতল ঘরের নীরবতা। এদিকে ইলহার চোখে বিষাদসিন্ধুর ঢেউ, যা চূর্ণবিচূর্ণ করছে রাশাদ হৃদয়ের অটল প্রহরীদের। আবেগশুন্য হৃদয় নড়ে চড়ে উঠলো। একই সাথে নাড়িয়ে দিচ্ছে আকিব শাহরিয়ারের দম্ভকে। গম্ভীর স্বরে তিনি মেয়েকে ডেকে উঠলেন,
“ইলহা, এদিকে আসো। ওই ছেলেটিকে ছেড়ে দাও”
বাবার বজ্রকণ্ঠ অন্তরাত্মা কাঁপালো ইলহা। হাটুর দৃঢ়তা নড়বড়ে হলো। কিন্তু সে সরে এলো না। বরং আরোও নিবিড়ভাবে আকড়ে ধরলো রাশাদকে। বাবার তীব্র ঘৃণিত দৃষ্টি শিরদাঁড়ায় সন্ত্রাশ তৈরি করতে সক্ষম। আকিব শাহরিয়ারের ক্রোধিত নয়ন এখনো দেখছে ইলহার স্পর্ধাকে। সে তার মেয়েকে একটা সামান্য দোকানীর সাথে মোটেই দেখতে পারবেন না। এজন্য মোটেই নয় যে রাশাদ তার মেয়ের যোগ্য নয়। বরং রাশাদ তার দাম্ভিক অস্তিত্ব এবং প্রতিপত্তির সাম্রাজ্যের সমকক্ষ নয়। মেয়ের স্পর্ধা তাকে অবাক করছে তাকে ক্রমশ, প্রথমবার স্পর্ধার শাস্তি সে পেয়েছে। কঠিন শাস্তি। তবুও দ্বিতীয়বার স্পর্ধা দেখানোর দুঃসাহস করেছে ইলহা। এবারের শাস্তি কতটা ভয়ানক সে জানে। তবুও সে কিছুর পরোয়া না করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে আকিব শাহরিয়ারের দাম্ভিক সত্ত্বায় প্রগাঢ় আহাত হানলো তার আচরণ। এদিকের ফাইজানের ঠোঁটের কোনায় দূর্বোধ্য হাসি। যেন এমন কিছুই সে চাচ্ছিলো। তাই গম্ভীর স্বরে মিনহাজের উদ্দেশ্যে বলল,
“যেখানে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী তার স্ব-ইচ্ছায় রাশাদুল ইসলামের সাথে পালিয়েছিলো। সেখানে তার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ কি বেবনিয়াদ নয়? তবুও যদি তাকে অভিযুক্ত প্রমাণ করতে চান, তবে আমি আদালত অবধি টানবো এই মামলা। লস কিন্তু আপনাদের ই হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে পছন্দ করে। এখানে আইনের হাতও বাধা”
ফাইজানের বক্তব্যে নাখোশ হলেন আকিব শাহরিয়ার। তার ক্রোধ উপচে উঠছে। থমথমে স্বরে বললেন,
“অন্যের পারিবারিক ব্যাপারে আপনার খবরদারিটা বেমানান”
“আমারও ইচ্ছে নেই অন্যের পরিবারে নাকগলানোর। কিন্তু এখন ব্যাপারটা আমার পরিবারের উপর এসেছে। তাই আমিতো ব্যাপারটা উপেক্ষা করতে পারছি না”
আকিব শাহরিয়ার কথা বাড়ালো না। উল্টো নিজের মেয়েকে ধমকে উঠলেন,
“তোমার কি কান খসে গেছে ইলহা, আমি তোমাকে এখানে আসতে বলছি। ওই বা*স্টা*র্ডটাকে ছেড়ে এখানে আসো। এখনই”
ইলহা কাঁপছে। ভয়, সন্ত্রাশ তার অন্তরকে কাবু করছে ক্রমশ। অশ্রুসিক্ত নয়ন তুললো রাশাদের পানে। প্রতীক্ষা উত্তরের। মানুষটির মুখোভাব বোঝার নেই। সে স্থির নয়নে তাকিয়ে আছে ইলহার দিকে। চোখের চাহনীতে হাজারোও প্রশ্ন। ফোলা শুষ্ক ঠোঁট সামান্য নড়লো যেনো ইলহার, কিছু বলতে চাইছে কি? কিন্তু স্বর কান অবধি এলো না। রাশাদ নিপুন দৃষ্টিতে দেখছে ইলহাকে। ইলহার মুখের কালচে দাগটি তাকে বেশ অস্থির করছে। ক্ষীন স্বরে শুধালো,
“আপনাকে কি মেরেছে ইলহা?”
উত্তরস্বরুপ ইলহার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো অশ্রুরেখা। আকিব শাহরিয়ার এবার বসে থাকতে পারলেন না। উঠে গিয়ে মেয়ের হাত চেপে তাকে শায়েস্তা করতে চাইলেন। কিন্তু তার পূর্বেই বাধা দিলো রাশাদ। আকিব শাহরিয়ারের আয়ত্ত থেকে ছাড়ালো ইলহাকে। তারপর তাকে আড়াল করে শান্ত স্বরে বললো,
“ইলহা যখন যেতে চাইছে না, কেনো জোর করছেন ওকে? আপনাদের ধনীরা কি বোধবুদ্ধিও অর্থের দম্ভে হারিয়ে ফেলেন?”
রাশাদের কথাটি আগুনে ঘি ঢাললো যেন। রাশাদের কটাক্ষ যেনো তার আঁতে আবারোও আঘাত করলো। মেয়ের স্পর্ধা তার মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রে গোলযোগ প্রথমেই করেছিলো। এখন বাহিরের এই ছেলের কথায় মস্তিষ্কে আগুণ জ্বললো,
“সামনে থেকে সরে যাও, আমি স্কাউড্রেলদের সাথে কথা বলতে চাই না। এটা আমার আর আমার মেয়ের ভেতরকার ব্যাপার। তুমি নাক গলানোর কেউ নয়”
“আপনার এবং আপনার মেয়ের ভেতরকার কথাটি যদি তার উপর হাত তুলে বা তাকে কষ্ট দিয়ে হয়, তবে আমি বাধ্য হচ্ছি নাকগলাতে। কারণ ইলহা আপনার সাথে যেতে চান না। সুতরাং আপনি তার উপর জোর করতে পারেন না”
“আমাকে তুমি চিনো না ছোকরা”
“আমার চেনার প্রয়োজনও নেই। আমি যা দেখছি, যথেষ্ট। আপনি একজন নিষ্ঠুর, অযোগ্য বাবা। যার কাছ থেকে তার মেয়ে অবধি পালাতে চায়। আমার চেনার জন্য এটুকুই যথেষ্ট”
আকিব শাহরিয়ার মেয়ের দিকে চেয়ে রাগান্বিত স্বরে শুধালেন,
“এটাই কি তোমার শেষ সিদ্ধান্ত ইলহা?”
“আমি রাশাদ সাহেবের সাথেই থাকতে চাই”
“একটা শেয়ানা মেয়ে, কি পরিচয়ে থাকবে তুমি? আর এই ছেলেটির কি যোগ্যতা আছে তোমাকে রাখার?”
“আমি রাশেদ সাহেবকে ভালোবাসি, সে একজন সৎ মানুষ। তার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা, তার কাছে আমার ইচ্ছের গুরুত্ব আছে”
কাঁপা স্বরে কথাটা বললো ইলহা। রাশাদ বিমূঢ় দৃষ্টিতে চাইলো ইলহার পানে। কানকে যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না তার। এতোটা সময় শুধু ভেবেছিলো, বাবার অত্যাচার থেকে বাঁচতেই সে তার কাছে আশ্রয় চাইছে। কিন্তু তা নয়। আকিব শাহরিয়ার দাঁতে দাঁত পিষছেন। রাশাদ ইলহার পেলব হাতটা মুঠোবন্দি করলো। খুব শান্ত স্বরে আকিব শাহরিয়ারের উদ্দেশ্যে বললো,
“আমার টাকা নেই, ক্ষমতা নেই। তবে আপনার মেয়ের কান্নার কারণ আমি হবো না”
“কাজটা তুমি ভালো করলে না ইলহা, অন্তত তোমার মার কথা চিন্তা করা উচিত ছিলো”
ইতোমধ্যে মিনহাজের টেলিফোনে একটি ফোন আসলো। মিনহাজ ধরতেই “স্যার, স্যার” বলে ফেনা তুললো। একটা সময় ফোনটা এগিয়ে দিলো ফাইজানের দিকে। মিনমিনিয়ে বলল,
“তৌফিক স্যার ফোন দিয়েছেন”
ফাইজান বিকারহীন চিত্তে ফোনটা ধরলো, সালাম দিলো,
“আসসালামু আলাইকুম স্যার, কি উপকার করতে পারি?”
“ক্ষমতার খুব ভালো ব্যবহার শিখে গেছো। দেখে ভালো লাগলো”
“আমার গুরু তো আপনারা স্যার। যার শিখেছি আপনাদের থেকেই। তবে এখানে আমি ক্ষমতার প্রয়োগ করি নি কিন্তু। আমি শুধু সত্যের পক্ষ নিয়েছি”
“মেয়েটি আমার ছেলের হবু বউ”
“ছিলো, সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী। নিজ ইচ্ছেতে সে আমার স্ত্রীর বড় ভাইকে বেঁছেছে”
“কথা ভালোই যুক্তি দিয়ে বলতে শিখেছো দেখছি। ভালো, ভালো। এমপি না হলে ভালো বক্তৃতা দিতে পারতে। অবশ্য বক্তৃতা রেডি করেছো তো! শুনেছি, মানুষ তোমার উপর ততটা খুশি নয়। দেখো, এতো কষ্টের পদমর্যাদা সামান্য ভুলের জন্য হারাতে না হয়”
তৌফিক সাহেবের কথার মর্মার্থ বুঝতে পারি রইলো ফাইজানের। মৃদু হাসলো সে। অনুগত স্বরে বললো,
“আপনার উপদেশ ভুলবো না আমি”
ফাইজানের মুখোভাব বদলে গেলো। এদিকে আকিব শাহরিয়ার পরাজিত হয়ে ফিরে গেলেন। ইলহা এখনো রাশাদের শার্টের কোনা ধরে রেখেছে। তার শরীর কাঁপছে। রাশাদের চোখে এখনো প্রশ্নের ঝুড়ি। তার উত্তর না পাওয়া অবধি মনটা শান্ত হচ্ছে না।
****
কাঠের বেঞ্চিতে পাশাপাশি বসে রয়েছে রাশাদ এবং ইলহা। রাশাদের শুন্য দৃষ্টি নীলাম্বরে স্থির। গুমোট আবহাওয়া। উত্তরীয়া মেঘেরা তান্ডবে ব্যস্ত। হিনহিনে শীতে কাঁপছে ইলহার পেলব শরীর। রক্তশুণ্য ফ্যাকাশে মুখে রা নেই। নিস্তব্ধতা ভাঙ্গলো রাশাদ,
“তখন যা বলেছেন, সেটা কি শুধুই শব্দ নাকি আপনার অনুভূতি?”
“আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না তাই নাই? ভাবছেন স্বার্থের জন্য বলেছি!”
“আপনি যদি নিজ স্বার্থেও বলতেন তাহলে আমার আপত্তি ছিলো না। কিন্তু যদি আপনার বলা “ভালবাসি” উক্তির পেছনে যদি সত্যিকারের অনুভূতি থাকে আমার আপত্তি আছে”
রাশাদের কথাগুলো শান্তচিত্তে শুনলো ইলহা। বুকে চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে। অধৈর্য্য স্বরে বলল,
“কেনো? আমি কি আপনার অযোগ্য?”
“এতটা স্পর্ধা আমার নেই। ছাপোষা মানুষ। আমার পড়াশোনা বেশী না। একটা সামান্য দোকানী। আগেও বলেছি, এখনো বলছি। আমরা একে অপরের জন্য নয়। আপনার অনেক স্বপ্ন থাকতে পারে, অনেক ইচ্ছে থাকতে পারে। কিন্তু আমার নেই। আমি আমার পরিবারকে নিয়ে দুমুঠো ভাত খেলেই খুশি। বৃষ্টির দিনে আমাদের টিনের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে। গ্যাসের চুলা আমার দাদী চালাতে পারেন না। আমরা রেস্টুরেন্টে কখনো খাই নি। ঈদে চাঁদে আমার বোনকে আমি নতুন জামা কিনে দেই। মাঝে মাঝে সেটাও হয় না। মাংস জিনিসটা আমাদের কাছে খুব বিলাসিতা। এগুলো শুনলে ভাববেন, কি বলছি! এমন ও হয় নাকি। কিন্তু এমনটা হয়। আমার কাছে আলুপোড়া খেতেই শান্তি লাগে। তাই বলছি, আপনি যদি অত্যাচার থেকে বাঁচতে আমার সহায়তা চান। আমি নির্দ্বিধায় করতে রাজি, কিন্তু আমার জীবনে জড়ালে আফসোস করেও কুল পাবেন না। প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও অভাব নামক ঘুন ধীরে ধীরে আপনার ভালোবাসাকে ক্ষইয়ে দিবে”
কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললো রাশাদ। বুক চিরে একটা জমে থাকা বিমর্ষ আক্ষেপ বের হলো। ইলহার প্রতি টানকে সে অস্বীকার করবে না। কিন্তু একটি সুন্দর ভবিষ্যত যার জন্য হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তাকে টেনে হিচড়ে শিকলের জীবনে আনবে না সে। ইলহা স্মিত হাসলো। রাশাদের রুক্ষ্ণ হাতের উপর নিজের হাত রাখলো। মৃদু স্বরে বলল,
“নাতীসাহেব, আমার ওই জঞ্জালে ভরা বিষন্ন কষা মাংস চাই না; শান্তির একটুকরো পোড়া আলু আমার জন্য অনেক”
রাশাদ নিলীন চোখে চেয়ে আছে ইলহার দিকে। অমীমাংসিত চাহনী। মেয়েটির চোখ হাসছে। রাশাদ মৃদু হেসে বলল,
“বিয়ের আগে কিছু জিনিস বলার আছে”
“কি?”
“দাবি বলতে পারেন”
“বলুন”
“পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বেন। আর আমার দাদা-দাদী, বোনকে কখন অবহেলা করবেন না”
ইলহা মৃদু হাসলো। মানুষটির প্রতি অদ্ভুত মুগ্ধতা কাজ করে; এই কারণটিও যে এই মানুষটি-ই___
******
ফাইজানদের বাসায় আনন্দের ঢল পড়েছে। একই সাথে দুটো অনুষ্ঠান। একদিকে ফাইজান এবং হুমায়রার বৌভাত। অপরদিকে রাশাদ এবং ইলহার বিয়ে। বিয়েটা খুব সিমসাম ভাবেই হবে। মসজিদে বিয়ে করার ইচ্ছে বরাবরই রাশাদের। তাই কোনো আড়ম্বরতা ছাড়াই বিয়ে। দাদা, দাদী এবং বাবাকে নিয়ে আসা হয়েছে। কাওছার ক্ষণে ক্ষণে মুখ ভচকাচ্ছে। কিন্তু মেয়ের বাড়ির এতোটা ধনাঢ্য অবস্থা তার চোখ চকচকে করে তুলছে। দাদার সামান্য মনক্ষুন্নতা ছিলো, কিন্তু আতিয়া খাতুনের বক্তব্য,
“নাতী খুশি হইলেই হবো। আর মাইয়্যাডা খারাপ না”
এদিকে হুমায়রার খুশি দেখে কে! সে মনে মনে চাইছিলো-ই। ভাইজানের জীবনে এমন কেউ আসুক যে ভাইজানের আধারের জীবনে একবিন্দু আলো হবে। নিশীভাতির ন্যায়। তাই যখন ই রাশাদ জানিয়েছে সে ইলহাকে বিয়ে করছে সবথেকে খুশী হয়েছিলো হুমায়রা। আজ একটি সুন্দর শাড়ি পড়েছে হুমায়রা। হালকা গোলাপী রঙ্গের শাড়িটি তার শুভ্র শরীরে মিশে আছে যেনো। হাতের বেল্টটা খুলে দিলে অনেক কাজ করতে পারতো সে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। ফাইজানের কড়া নির্দেশ। “যাই করেন, স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখবেন”— মানুষটি কয়েকদিন যাবৎ আবার ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে রাশাদ জেল থেকে বের হবার পর থেকেই। প্রতি রাতেই আসে দেরিতে। এমন কি বিয়েতে আজ বিয়ের দিন ও সে বলেছ সে থাকতে পারবে না। অবশ্য রাশাদকে অভিনন্দন জানাতে সে ভুল করে নি। আজকে পার্টির মিটিং আছে। তাই সে বিয়েতে থাকতে পারবে না। এখন-ই বেরিয়ে যাবে। হুমায়রা অবশ্য খুব করে চেয়েছিলো, মানুষটি থাকুক। রাশাদের জন্য সে যা করেছে তারজন্য সে খুব ই কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হচ্ছে না বটে। আসলে সুযোগ পাচ্ছে না সে। তাই সে ভেবেছে ফাইজানের জন্য উপযুক্ত স্ত্রী হবে সে। তার ছোটখাটো ব্যাপারে নিজের হস্তক্ষেপ দিবে। তাই তো নিজেই তার কাপড়, মানিব্যাগ, চাবি গুছিয়ে রেখেছে। বাথরুম থেকে বের হতেই ফাইজান যখন সব গুছানো পাবে তার ভালো লাগবে। প্রতিদিন এসব গুছাতে গুছাতে খুব সময় যায় তার। যা ভাবা তাই কাজ। বাথরুম থেকে চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো ফাইজান। শ্যাম বদনে পানির ছিটে মুক্তোর ন্যায় লেগে আছে। ফাইজানকে দেখেই নরম গাল জোড়া রক্তিম হলো হুমায়রার। দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে ধীর গলায় বলল,
“আপনার কাপড় এখানে”
ফাইজান একপলক চাইলো বিছানার দিকে। হুট করেই মুখখানা মলিন হয়ে গেলো। কিছু সময় চেয়ে রইলো হুমায়রার নামানো পাঞ্জাবিটির দিকে। কিছু না বলেই পাঞ্জাবিটার ভাঁজ না খুলেই আলমারীতে তুলে রাখলো। আরেকটি পাঞ্জাবী নামালো। হুমায়রা অবাক হলো। বিস্মিত স্বরে বললো,
“ওই পাঞ্জাবীটায় কি কোনো সমস্যা?”
“রংটা আমার পছন্দ নয়”
“কিন্তু সবগুলোই তো সাদা”
“কিছু সাদার মাঝেও দাগ থাকে। খালি চোখে দেখা যায় না। ওই পাঞ্জাবীটাও তেমন”
ফাইজান জলদি তৈরি হয়ে গেলো। ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পূর্বে হুমায়রার উদ্দেশ্যে বললো,
“আগামীবার আমার জিনিসে হাত দেবার পূর্বে অনুমতি নিবেন। আমার ব্যক্তিগত জিনিসে সবার হস্তক্ষেপ আমার পছন্দ নয়…………………
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি