#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_11
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
দিনের পর রাত, রাতের পর দিন এভাবে চলছে সময়।
শ্রাবণ অফিসের কাজ শেষ করে অফিস থেকে বের হলো।
গাড়িতে উঠতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো।
শ্রাবণ চুপচাপ বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। শ্রাবণ এমনিতেই কম কথা বলতো আর এখন তো প্রয়োজন ছাড়া কোনো শব্দ বের করে না। হঠাৎ ওর মনে হলো সামনে কাউকে দেখেছে! ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে বলে বাহিরে তাকালো।
এতিম খানা থেকে মেঘলা বের হয়ে এদিক ওদিকে তাকালো। কিছু সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে।
শ্রাবণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেঘলার দিকে। মনে উঁকি দিচ্ছে হাজারটা প্রশ্ন, এই মেয়ে এতো রাতে এখানে কি করে..? এতিম খানায় এর কাজ কি..? নাকি এতিম খানা থেকে চুরি করতে এসেছে..? হঠাৎ শান্ত মস্তিষ্ক গরম হয়ে গেলো।মন মেজাজ বিগড়ে গেলো! লাস্ট পর্যায় এতিম খানা!..? শ্রাবণ চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলো আজ এই মেয়ে কোনো কুকীর্তি করতে গিয়ে ধরা খেলে কাল নিউজে খুব সুন্দর করে লেখা থাকবে বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী শ্রাবণ চৌধুরীর বউ চুরি, ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে!… মুখে না মানলেও কাগজ কলমে তো বউ।
শ্রাবণ চোখ মেলে আবার রাস্তার পাশে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে তাকালো। সাদা টিশার্টের উপর সবুজ শার্ট আর জিন্স পড়া, চুল গুলো উপরে করে জুটি বাঁধা, মুখে কোনো সাজ সজ্জা নেই। একটা বাস আসতেই চলন্ত বাসের ভিতর লাফ দিয়ে উঠে গেলো।
শ্রাবণ শুধু দূর থেকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে বলে উঠলো, ‘ মেয়েটার কি মৃত্যুর ভয় নেই!!..?”
ম্যানেজার কে ফোন দিয়ে বলে উঠলো এক ঘন্টার ভেতরে মেঘলার সব ইনফরমেশন এনে দিতে আর এতিম খানা থেকে কতো টাকা চুরি হয়েছে তাও জানাতে।
ফোন রেখে চুপচাপ বসে রইলো৷
_____________
সারা রুম জুড়ে পায়চারী করছে ছোঁয়া। কি করবে ভেবে ভেবে হাত কচলাচ্ছে। দুইদিন পর এক্সাম কিন্তু সে তো কিছুই পাড়ে না। কলেজ যায় আর আসে এটাই তো অনেক বই খুলে পড়ার মতো ধৈর্য ওর নেই। এখন এক রাতে কিভাবে সব বই শেষ করা যায় কিছু আইডিয়া নিতে হবে ইউটিউব থেকে সার্চ দিয়ে। যেই ভাবা সেই কাজ মোবাইল নিয়ে সার্চ দিলো।
মহুয়া ছোঁয়ার অবস্থা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে বারান্দায় দাঁড়িয়ে।
মহুয়া ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার, আর ছোঁয়া সেকেন্ড ইয়ার। দুইদিন পড়েই এইচএসসি পরীক্ষা।
ছোঁয়া অনেক ভাবে সার্চ দিচ্ছে শুধু একটা সহজ উপায় পাক এক রাতে সবগুলো বই মুখস্থ করে ফেলবে।
নির্জন ছোঁয়ার দরজার সামনে এসে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় নির্জনের কাজের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই তবে সে পড়াশোনায় ভীষণ ভালো স্টুডেন্ট ছিলো। কলেজের টপ বয়। এইচএসসি পরীক্ষার আগে রাতে সাথে পানির মগ আর চা নিয়ে রাতে বসতো। পড়তে পড়তে ঘুম আসলে পানি নিয়ে চোখে ছিটা দিতো আর হামি আসলে চা খেতো। এই কষ্টের ফলাফল ছিলো কলেজের সেরা স্টুডেন্ট মধ্যে নির্জনের নাম প্রথমে। সে একটু প্লে বয় তবে স্টুডেন্ট হিসেবে অনেক ভালো। এই গাধা মেয়ে এক্সামের দুইদিন আগেও মোবাইল নিয়ে বসে আছে! হঠাৎ রাগ হলো।
এইসব ভাবে ছোঁয়ার পেছনে এসে দাঁড়ালো।
ছোঁয়ার মনে করলো মহুয়া পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। হাত পা ছড়িয়ে, মোবাইল কপালে ঠেসে ছোঁয়া গোঙ্গিয়ে বলে উঠলো ” মেহু আমি এখন কি করবো..?? কোনো আইডিয়া পাচ্ছি না কিভাবে এতো বই শেষ করবো..? আমি তো শেষ! আবার বুঝি একই ক্লাসে থাকতে হবে..? তবে ভালোই হবে তুমি আর আমি তাহলে এক সাথে আগামী বছর পরীক্ষা দিবো! ভালো হবে না..?? বলেই পেছন ফিরে দেখে মহুয়ার জায়গায় নির্জন বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!!..।
ছোঁয়াঃ তুই!..? তুই এখানে কেনো.? মেহু কই..?
নির্জন ছোঁয়ার থেকে চোখ সরিয়ে রুমে দেখে নিলো কেউ নেই। বারান্দায় ও নেই তার মানে মেহু রুমে নেই।
নির্জনঃ এতো এতো বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাস কিভাবে..??
ছোঁয়াঃ ঘুমানোর সময় মোবাইলে সব বুদ্ধি জমা রাখি সকালে আবার নিজের মাথায় মস্তিষ্কে ডাউনলোড করে নেই।
নির্জনঃ বাহ্ এতো বুদ্ধি, আইডিয়া থাকতে তোর কেনো আবার পরীক্ষা দেওয়ার টেনশন করতে হবে। বড় আব্বুকে শুনলাম বলছেন” পরীক্ষায় পাস না করলে কোম্পানির সামনে চায়ের ছোটো একটা দোকান নিয়ে বসে থাকে আবুল ভাই উনার সাথে তোর বিয়ে দিবে।
ছোঁয়া অবিশ্বাস্য চোখে নির্জনের দিকে তাকাতেই নির্জন সিরিয়াস মুখ করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,’ বিশ্বাস না হলে বড় আব্বুকে জিজ্ঞেস কর! আমি নিজ কানে শুনেছি। ‘
ছোঁয়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে একদম কান্না করে দিলো।
ছোঁয়াঃ এটা কোনো কথা..? আবুলের সামনের দুইটা দাঁত নেই। হাসলে ফোকলা দাঁতের কপাটি বেরিয়ে থাকে কি যে বিশ্রী লাগে!. হেঁসে তাকালে লুচ্চা ভিলেন গুলোর মতো লাগে। আল্লাহ ছিঃ শেষে কিনা আবুল!! ।
নির্জনঃ তোর সাথে ভালো মানাবে। পড়া শোনা করার কি দরকার নাক ডেকে ঘুমা কাঁথা গায়ে দিয়ে। বলেই শিষ বাজাতে বাজাতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
ছোঁয়া গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো এখন সে কি করবে!!.? বড় মামাকে সে ভীষণ ভয় পায় কিছু বলতে পারবে না। দৌড় লাগালো বইয়ের দিকে। এক এক করে সব গুলো বই সামনে সাজিয়ে পড়া শুরু করলো। কিন্তু মাথায় কিছুই ঢুকছে না শুধু আবুল ছাড়া!।
_____________
মহুয়া ছাঁদ থেকে নেমে নিচে আসলো। আমেনা বেগমের সাথে বসে বসে টিভি দেখছে। আমেনা বেগম টিভি দেখার থেকে বেশি মহুয়ার সাথে কথা বলছে। হালিমা বেগম বিরক্ত হয়ে আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ ভাবি প্লিজ এই সিরিয়ালটা ঠিক মতো দেখতে দাও, ওই মেঘলা না টেগলাকে ছেলের বউ না করে এই মহুয়াকে ছেলের বউ করে নিলেই পারতে! আমরাও সিরিয়ালের মতো বউ শাশুড়ীর যুদ্ধ না দেখে ভালোবাসা দেখতাম। তোমার কথা বলতে হলে রুমে নিয়ে সারা রাত কথা বলো।
মহুয়া চুপচাপ বসে হালিমা বেগমের কথা শুনে মাথা নিচু করে আছে।
আমেনা বেগম রেগে বলে উঠলো, ‘ ওই মেয়ে আকাশ থেকে টপকে না পড়লে আমি মহুয়াকেই বউ বানিয়ে নিতাম। ওই রাক্ষসী মেয়ে এসে সব শেষ করে দিলো।তোর মন টিভিতে দে এদিকে কি!!?..।’
হালিমা বেগমঃ এখন তো আরেক ছেলে আছে বউ করে নিও।। বলেই হালিমা বেগম হেঁসে উঠলেন। বুঝাই যাচ্ছে উনি মজা করে বলেছেন।
আমেনা বেগমঃ হুম ঠিক বলেছো কষ্ট করে আর মেয়ে খুঁজতে হবে না।
মহুয়া কোনো একটা অজুহাত দিয়ে উঠে গেলো। বুঝা যাচ্ছে উনারা মজা করছে তবে মহুয়া বার বার লজ্জা পাচ্ছে ।
পেছন ফিরে আহনাফ কে দেখে থমকে গেলো। আহনাফের পেছনেই শ্রাবণ দাঁড়িয়ে। মহুয়া লজ্জায় পড়ে গেলো। এই দুইজন কি তাদের সব কথা শুনে ফেলেছে!.?
আহনাফ একবার মহুয়ার দিকে তাকিয়ে পকেটে এক হাত দিয়ে গম্ভীর মুখে সিঁড়ির দিকে চলে গেলো। মহুয়ার সামনে থেকে গিয়ে মুচকি হেঁসে ফেললো, মেয়েটার গাল, নাক লাল হয়ে আছে, চোখ নিজের পায়ের দিকে স্থির,ওড়না দিয়ে মাথার অর্ধভাগ ডাকা, কালো সেলোয়ার-কামিজ পড়া দেখতে অসম্ভব সুন্দরী। কোনো কারনে কি মেয়েটা লজ্জা পেয়ে আছে.??
আহনাফ, শ্রাবণ কেউই কিছু শুনেনি।
শ্রাবণ মহুয়াকে দেখে নিজের রুমে না গিয়ে সোফায় বসলো। মহুয়ার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো, ‘ এক গ্লাস পানি দিবেন..?’
পেছন থেকে কেউ হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাস ধরলো।
শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে পেছনে ফিরে রেগে গেলো। গ্লাসটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। ধীর পায়ে মেঘলার সামনে দাঁড়িয়ে গ্লাসটা ওর মুখের সামনে তুলে ধরলো৷
মহুয়া ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘলার মুখের রিয়াকশন বুঝতে পারছে না। না আছে বিরক্তির ছাপ, আর না সে খুশি। শুধু শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে।
শ্রাবণ মেঘলার মুখের সামনে গ্লাসটা ছেড়ে দিলো।চোখের সামনে গ্লাসটা নিচে পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।
ঝনঝন শব্দে টিভি বন্ধ করে পেছনে ফিরলো সবাই।
মেঘলাঃ যাহ বাবাহ্ ভেঙে ফেললেন!..? আপনি তো বললেন পানি দিতে!।
শ্রাবণঃ তুমি ভাবলে কিভাবে তোমার মতো মেয়ের হাতে শ্রাবণ চৌধুরী কিছু খাবে!! আমার থেকে দূরে থাকবে..
শ্রাবণ হনহন করে ফিরে যেতে নিলে নিজের ভাঙা গ্লাসের টুকরোর মধ্যে পা দিয়ে বসলো। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো।
আমেনা বেগম দৌড়ে ছেলের কাছে আসলেন।
শ্রাবণ পা থেকে কাঁচের টুকরো বের করলো। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
মহুয়া কি বলবে.? কি করবে.? বুঝতে পারছে না। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে হাঁটু ভেঙে বসলো। শ্রাবণ থমকে গেলো, হৃদপিণ্ড অস্বাভাবিক ভাবে লাফাচ্ছে। বুকের ভেতর ধুকপুক বেড়ে চলছে।
মহুয়া মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তোমার হাতের রুমালটা দাও’
মেঘলা শ্রাবণের দিকে তাকালো। শ্রাবণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মহুয়ার দিকে।
মেঘলা রুমাল মহুয়ার হাতে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। মহুয়া শ্রাবণের পায়ে রুমাল পেচিয়ে দিয়ে বললো,’ আহনাফ চৌধুরীর কাছ থেকে মেডিসিন নিয়ে নিবেন।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে পাশের ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে আছে মহুয়া।
পাশের ব্যালকনিটা আহনাফের। দুইটাই এক সাথে লাগানো।
আহনাফের ব্যালকনিতে অনেকগুলো বেলীফুলের মালা রাখা। বেলীফুলের ঘ্রাণেই ওই দিকে নজর গিয়েছে।
ফুল মহুয়ার ভীষণ পছন্দ তার উপর বেলীফুলের ঘ্রাণ তো আরও বেশি ভালো লাগে। আগে প্রায় বাহিরে গেলে বেলীফুলের মালা এনে খোঁপায় দিয়ে রাখতো। লোভ সামলাতে না পেরে ধীর পায়ে ব্যালকনির কিনারায় গিয়ে ওকি দিলো। নাহ্ আহনাফ নেই। হাত বাড়িয়ে বেলীফুলের মালা গুলো হাতে নিয়ে খোঁপায় গুঁজে নিলো একটা। বাকি মালাগুলো জায়গায় রেখে দিলো। পেছন ফিরে চলে আসতে নিলেই আহনাফ বলে উঠলো ” মালিক কে না বলে তার জিনিসে হাত দেওয়া অপরাধ আর সাথে করে নিয়ে যাওয়াকে বলে চুরি!!.।
ভয়ে মহুয়া কেঁপে উঠল। লজ্জা, ভয়ে পেছন না ফিরে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আস্তে করে খোঁপা থেকে বেলীফুলের মালা খুলে পেছন ফিরলো। ঘোমটা দিয়ে মাথা নিচু করে আহনাফের দিকে মালা এগিয়ে দিলো।
আহনাফ এটিটিউড দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ কারো ব্যাবহার করা জিনিস আহনাফ চৌধুরী নেয় না!’
মহুয়া হঠাৎ বলে উঠলো, ‘ তাহলে তো বাকি গুলোও আমি ধরেছি, হাতে দিয়েছি।সব গুলোই তো ব্যাবহার হলো! বলেই নিজের মুখ নিজে চেপে ধরলো। ভুল সময় ভুল কথা বলার জন্য কবেনা জেলে বসে মশার কামড় খেতে হয়!..
আহনাফ সবগুলো ফুল মহুয়ার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে রুমে চলে গিয়ে ব্যালকনির দরজা বন্ধ করে দিলো।
মহুয়া অপমানে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আহনাফের দরজার দিকে। অসভ্য, বেয়াদব লোক।বড়লোকী দেখাতে আসে নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ডের জন্য এনে ছিলো। আমি তো জাস্ট খোঁপায় একটা দিয়েছি আরও তো নয়টা মালা ছিলো। এতো এটিটিউড দেখানোর কি আছে.??
______________
শ্রাবণ ফ্রেশ হয়ে এসে বসলো। রুমাল বাঁধা পায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। আজ প্রথম মহুয়া ওর এতো কাছে এসেছে ওকে কেয়ার করেছে। মহুয়া ও কি আমাকে পছন্দ করে..? থুর কি ভাবছি মহুয়ার জায়গায় অন্য কেউ হলেও এগিয়ে আসতো। যে আঘাতে তোমার ছুঁয়া পাওয়া যায় তবে এমন আঘাত আমি প্রতিদিন পেতে চাই মায়াবতী।
এইসব ভাবনার মাঝে ফোনটা বেজে উঠলো।
ম্যানেজার সাহেব কল দিয়েছে।
ম্যানেজার সাহেবঃ স্যার ভাবির বিষয় সব কিছু জানতে পারিনি যা একটু জেনেছি তা হলো, মেয়েটা ছোটো থেকে এই বস্তিতে বেড়ে উঠেছে। পড়াশোনা বেশি করতে পারেনি দরিদ্রতার জন্য। এতিম খানায় চুরি করতে না বরং ৫০হাজার টাকা দিয়ে ছিলো আজকে বাচ্চাদের জন্য। আর এক লাক্ষ টাকা বস্তিতে খরচ করছে সবার জন্য বাথরুম, গোসলখানা তৈরি করছে। বস্তিতে দুইটা হাতকল আর কয়েকটা মাত্র বাথরুম আছে৷ ভাবি….
আর কিছু বলার আগে শ্রাবণ বলে উঠলো, ‘ আপনার কথা বলা আগে শিখা উচিত। আর একবার ভাবি বললে আপনার চাকরি খুঁজে পাবেন না। বলেই ফোরাম কেটে দিলো। ওর বিশ্বাস হলো না ম্যানেজারের একটা কথাও কাল ও নিজে ওই মেয়ের সম্পর্কে নিজেই খুঁজ নিবে।ম্যানেজার হয়তো অন্য কারো সাথে এই মেয়েকে ঘুলিয়ে ফেলেছে।
___________
সকালে টিউশন থেকে বের হয়ে কলেজ চলে গেলো। আজ অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।
ছুটির পর ছোঁয়া দুইটা মেয়ে নিয়ে এসে মহুয়ার সাথে পরিচয় করছি দিলো। মেয়েগুলো ভীষণ মিশুক ছোঁয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড।
একটা মেয়ে প্রচুর কথা বলে বিরক্ত হয়ে হাত দিয়ে কান চেপে ধরে আছে মহুয়া।
মেয়েটা হঠাৎ খুশি হয়ে ওদের বলে উঠলো, ‘ একটু পর আমার বয়ফ্রেন্ড আসবে আমার সাথে দেখা করতে।’
সবাই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে এই বাচাল মেয়ের বয়ফ্রেন্ড দেখার জন্য। যেখানে একটু তে ওরা সবাই বিরক্ত সেখানে ওই লোক কিভাবে মেয়েটিকে সামলায় তা দেখার জন্য মূলতঃ সবাই বসে আছে।
কিছু সময় পর মেয়েটা বলে উঠলো, ‘ এই তো চলে এসেছে ‘
সবাই মাঠের দিকে তাকালো। বাইক থেকে হ্যান্ডসাম একটা ছেলে নামলো হাতে অনেকগুলো গোলাপ।
ছেলেটা ফুল নিয়ে ওদের সামনে আসতেই মহুয়া সবার মতো ছেলেটার দিকে তাকালো। কাঁপা কাঁপা পায়ে সে দাঁড়িয়ে গেলো। রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো ছেলেটার দিকে আর মনে মনে বলে উঠলো ” আমাদের তো এক সময় সামনা-সামনি হতেই হতো কিন্তু এতো জলদি হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি। এখন শুধু হিসাব করা বাকি,জীবনের হিসাব,মৃত্যুর হিসাব!!
(সরি অপেক্ষা করানোর জন্য।)
চলবে..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।