সুখ_পাখি #Ayrah_Rahman #part;–18

0
398

#সুখ_পাখি
#Ayrah_Rahman
#part;–18

তরু উপরে তাকিয়ে দেখে…

অভ্র ছাতা নিয়ে তারই দিকে তাকিয়ে আছে,,

সে একবার অভ্রের দিকে তাকায় আবার নিচে তাকিয়ে থাকে,,

অভ্রঃ- এভাবে বৃষ্টি তে ভিজো না,,ঠান্ডা লাগবে,,জ্বর ও আসতে পারে,,

তরু নিচে তাকিয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসলো,,

তারপর উঠে সোজা হয়ে অভ্রের মুখোমুখি দাঁড়ালো..কিন্তু কিছুই বলছে না,,

তরু কিছু বলছে না দেখে অভ্র নিজেই বলে উঠলো,,

অভ্রঃ– চলো আমি তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসি।

তরুঃ– Tnx Mr. Haidar.. আপনি এমনি তেই আমার ঢের উপকার করেছেন আর লাগবে না,,
আগে ওই উপকারের প্রতিদান দেই তারপর না হয় আপনার উপকার নিবো,,আজ থাক,,
আমি একাই যেতে পারবো,,
জানেন তো গত দুই বছরে এই তরু অনেক কিছু শিখে গেছে,,
এখন আর কারো দরকার হয়না,
,একাই চলতে পারে,,
একটা সময় এমন ও ছিলো,,তরু তার প্রিয় মানুষ টাকে ছাড়া কিছুই দেখতে পেতো না,
so called…
অন্ধ ছিলো,,
এখন তার কথা মনেও হয় না,,বুঝলেন তো..
সবই পরিস্থিতি,, পরিস্থিতি মানুষ কে অনেক জায়গায় দাড় করায় যেখানে দাড়াবার মানুষের বিন্দু মাত্র কল্পনা ও থাকে না,
,থাক অনেক কথা বলে ফেললাম,,
আজ তাহলে আসি,,ভালো থাকবেন,,
আশা করি আর কখনোই দেখা হবে না,,

বলেই তরু পার্ক ছেড়ে চলে আসলো,,

আর অভ্র ঠিক সেই খানটাই দাড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ করে বলতে লাগলো…

— হ্যা মানছি আমি ভুল করেছি,,অপরাধ করেছি তাই বলে কি এর কোন ক্ষমা নেই,,
আমি জানি তরু তুমি আজো আমায় সেই আগের মতোই ভালোবাসো,,
সেই আগের মতোই অনুভব করো,,
আজও আমার কথা মনে হলে তোমার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়
,শুধু কিছু অভিমানের নিচে তা চাপা পরে গেছে,তোমার ভালোবাসাকে আমি আবার আগের মতো করবো,,
অভিমানের পাহাড় ভেঙে তোমাকে আমার করে নেবো,,এটা আমার তোমার কাছে রাখা প্রমিস,,তোমার ” অসভ্য ” তোমাকে কথা দিলো,,কথা সে রাখবেই,,

বলে অভ্র সেখান থেকে চলে আসে,,,

এদিকে তরু বাসায় আসে,,

ক্রলিং বেল বাজানোর সাথে সাথে ই আরু এসে দরজা খোলে,,
যেন আরু এতোক্ষণ তরুর জন্য ই অপেক্ষা করছে,,
দরজা খুলে যেই না জরিয়ে ধরতে যাবে অমনি দেখে তরুর সারা শরীর ভেজা,
,কিছু টা সন্দেহের দৃষ্টিতে আরু তরু কে দেখে কারণ তরু সচরাচর বৃষ্টি তে ভেজে না,,

আরুঃ- আপ্পু তুই বৃষ্টি তে ভিজেছিস?( অবাক হয়ে)

তরুঃ– হ্যা,, এই রাস্তায় আসার সময় বৃষ্টি নামলো তাই ভিজে গেছি,,সর তো চেঞ্জ করে আসি,,

আরুঃ- আরে আপি দাড়া আগে শোন তো,,

তরুঃ– কি শুনবো?

আরুঃ- এমা তুই ভুলে গেলি আজ না আমার পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে..

তরুঃ– ওহহহো একদম ই খেয়াল নেই,,তো দিয়ে দিয়েছে?

আরুঃ- নাহ এখনো তোর জন্য বসে আছে,,রেজাল্ট তো সেই কবে দিয়েছে,, তোর জন্য ই তো অপেক্ষা করছি লাম,,

তরুঃ– তো রেজাল্ট কি?

আরুঃ- জিপিএ ৫:০০,,অল সাবজেক্টে প্লাস( খুশি হয়ে)

তরুঃ– মাশাআল্লাহ,, Congratulations বোন আমার( জরিয়ে ধরে)

আরুঃ- এমা কি করছিস,,ভিজিয়ে দিচ্ছিস তো যা গিয়ে চেঞ্জ করে আস..

তরুঃ– আচ্ছা,,

বলেই তরু উপরে চলে যায়,,

আরু তরুর চলে যাবার দিকে তাকিয়ে থাকে,,
কেন জানো তার তরুকে আপসেট লাগছে,,হয়তো বিষয়ে চিন্তিত,,

থাক পরে একসময় জিজ্ঞেস করে নিলেই হবে,,

তরু রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়ে পরে,,

শরীর টা ভালো লাগছে না,,
মনে হয় জ্বর আসবে,,

আরু শুয়ে শুয়ে ভাবছে সেই দিনের কথা যেদিন অভ্র আরুকে মনের কথা বলেছিলো,,,

আরুর ফুপ্পির বাড়ি থেকে এসেছে আজ প্রায় ২ মাস,,এই দুই মাসে তরুর অভ্রের সাথে মোটেও যোগাযোগ হয় নি,,

রাতে তরু বসে,, অরণ্যক”” উপন্যাস পড়ছিলো,,ছোট বেলা থেকেই বইয়ের প্রতি তরুর বেশ ঝোঁক,, বইয়ের পোকা ডাকতো তাকে তার বন্ধু রা,,

হঠাৎ করেই ফোনটা বেজে উঠলো,,

তরু বেশ চমকিত ও হলো কারণ সচরাচর তরুর ফোনে কখনো কল আসে না,,

আসবে কিভাবে তরুর নাম্বার ই তো নেই কারো কাছে,,এই গনা বাছা কয়েক জনের কাছে আছে,,

তরু ফোনটার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো ধরবে কি ধরবে না,,
তার ভাবনা র মধ্যে ই ফোন কেটে গেলো সাথে সাথে ই আবার বেজে উঠলো,,
এবার কাল বিলম্ব না করেই তরু ফোন টা পিক করে,,

তরুঃ– আসসালামু আলাইকুম,,

অভ্রঃ- ওয়ালাইকুম সালাম,,

কন্ঠস্বর শুনে তরু খানিকটা চমকে উঠে,, সত্যি ই কি অভ্র তাকে ফোন দিয়েছে? কণ্ঠ তো হুবহু তারই মতো,,তাহলে,?

অভ্রঃ- শালিক…..

অভ্রের কন্ঠে শালিক নাম টা শুনে তার শরীরে কাঁপুনি অনুভব করে,,অদ্ভুত রকমের কাপছে সে,,,

তরুর শব্দ না পেয়ে অভ্র পুনরায় বলে উঠলো..

অভ্রঃ- শালিক পাখি,, শুনতে পাচ্ছো আমার কথা? আমি তোমার মিস্টার অভদ্র..চিনতে পারোনি?

তরুঃ– হুম.

অভ্রঃ- কেমন আছো শালিক?

তরুঃ– আলহামদুলিল্লাহ ভালো,,আপনি?

অভ্রঃ- আগে ভালো ছিলাম না তবে এখন চাঙা আছি,
,
তরুঃ– ওহ,,

অভ্রঃ- শালিক তুমি কি কালকে ফ্রি আছো?

তরুঃ– কেন?

অভ্রঃ- আরে এমনি,, বলো তো,

তরুঃ– হুম,

অভ্রঃ- তাহলে ঠিক আছে,,আমি একটা জায়গা মেসেজ করে দিচ্ছি,,
কাল সময় মতো চলে এসো হ্যা? আল্লাহ হাফেজ শালিক পাখি..

তরু কিছু বলার আগেই অভ্র ফোন কেটে দিলো,,

তরু কান থেকে ফোন নামিয়ে কিছু ক্ষন ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো,,
ঠিক তখনই ফোনের মেসেজ নোটিফিকেশন বেজে উঠলো,,

তরু মেসেজ টি অপেন করে দেখলো,অভ্র জায়গার নাম আর সময় মেসেজ করে দিয়েছে,,সে বলেছে কাল বিকেল ৪ টাই সেই জায়গায় যেনো সে উপস্থিত থাকে,,
____________________

পরের দিন বিকেলে,,

তরু রেডি হয়ে অভ্রের বলা জায়গায় চলে আসে সেটা ছিলো একটা ক্যাফে,,

তরু একলা হাটছে তো হাটছেই কিন্তু ক্যাফেতে তখন কেউ ছিলো না,,

যেই না পিছন ফিরতে যাবে ঠিক তখনই

হঠাৎ পিছন থেকে কেউ তরুর চোখ টা কাপড় দিয়ে বেধে দিলো,,

তরুঃ– কে? কে আপনি?

তরুর ছটফট দেকে অভ্র মুচকি হাসলো,,
তরুর কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীরে ধীরে বলতে লাগলো,,

— ভয় পেয়ো না সুন্দরী,, কিছু করবো না তোমাকে,,শুধু আমার সাথে চলো,,কথা বলবে না একদম,,

অভ্রের কন্ঠ পেয়ে তরু কিছু টা স্বস্তি পেলো,,

তরুঃ– কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে,,

অভ্রঃ- প্রশ্ন করো না শুধু চলো আমার সাথে,,

অভ্র তরুকে সাথে নিয়ে হাটছে তরুও বাধ্য মেয়ের মতো হাটছে,,

হঠাৎ এক জায়গায় এসে অভ্র তরুর চোখের বাধন খুলে দিলো,,তরু সামনে তাকিয়ে দেখে,,

সামনে একটা সাদা রঙের টেবিল,,সেখানে দুটো চেয়ার,,টেবিলে রাখা চকলেট কেক সাথে বিভিন্ন ধরনের খাবার,, চারপাশে সাদা পর্দা দিয়ে সুন্দর ডিজাইন করা,,এটা একটা নদীর পাড়,,খুব সুন্দর জায়গা টা,,

তরু চারপাশে তাকিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে তার সামনে অভ্র হাঁটু গেড়ে বসে আছে,,হাতে কাঠগোলাপ ফুলের তোরা

তরুর দিকে তাকিয়ে অভ্র বলতে শুরু করলো,,

–কি বলে শুরু করবো বুঝতে পারছি না,,কোথা ত্থেকে শুরু করবো তাও জানি না,, শুধু জানি,তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না,,দু মাসে অনেক চেষ্টা করেছি ভুলে থাকার কিন্তু পারি নি,,শুধু জানি আমার এই অবাধ্য মন তোমাকেই ভালোবাসে,, আর ভালোবেসে যাবে,,
শুধু বলতে পারবো..
ভালোবেসে যাবো.. আজীবন,,

তুমি কি আমার এই অবাধ্য মন৷ কে বাধ্য করার কারণ হবে গো মেয়ে,,

তরুর ফেলফেল দৃষ্টি তে খালি চেয়েই রইল,,

কথায় আছে না,,অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর,,

তরুর ও ঠিক সেম অবস্থা,,

তরুর ঘোর কাটে অভ্রের ডাকে,,

অভ্রঃ- কিগো শালিক পাখি এভাবেই বসিয়ে রাখবে নাকি,,পায়ে ব্যথা করছে তো,,
তরু চটজলদি ফুলের তোরাটা নিয়ে নেই,,কিন্তু কিছু বলে না,,

অভ্র সোজা হয়ে দাড়ায়,,আর বলে…

“”” আমি শুনতে চাই না তুমি আমায় ভালোবাসো,,
আমি বুঝতে চাই,,আমি অনুভব করতে চাই তুমি আমায় ভালোবাসো,,

তরু অবাক দৃষ্টিতে শুধু অভ্রকেই দেখে যাচ্ছে,, আজ যেন তার মধ্যে কোন খেয়ালিপনা নেই,,তরুর তা ভালো লাগছে,,

অভ্রঃ- শালিক এসো বসো এখানে( টেবিলের কাছে নিয়ে)

তরুও বাধ্য মেয়ের মতো বসে পরে অভ্রও সামনের চেয়ারে বসে পরে,,

গোটা বিকেল দুজন দুজনের মতো কাটালো,,,

হঠাৎ……

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here