সুখ_পাখি #Ayrah_Rahman #part:-24

0
366

#সুখ_পাখি
#Ayrah_Rahman
#part:-24

আজ আরুদের মেডিক্যাল এ নবীন বরণ অনুষ্ঠান,, যদিও আরুর তাতে কোন প্রকার ইন্টারেস্ট নেই,,আরু শুধু দিশার কথা তেই মেডিক্যাল এ এসেছে নয়তো সে ভুলেও আসতো না,,এত কোলাহল আরুর পছন্দ না,,

আরু মুখ ভোতা করে বসে আছে। তবে কারণ টা আলাদা,,

আজ অনুষ্ঠানে,, ১২ টা গান এবং ৬ টা নাচ হবার কথা ছিলো,সবাই যেহেতু মেডিক্যাল এর স্টুডেন্ট তাই সমস্যা হবার কথাও না,যদিও এসব হিসাব করে করা হয় না,,তবে প্রিন্সিপালের মতে সবকিছু একটা গননার মাঝে থাকা ভালো,,তার কথা সবকিছুই লিমিটেশনে চলা উচিত,, বেচারা প্রিন্সিপাল গনিত টা বেশি ভালবাসে তো তাই,,

এখন যারা গান গাইবে তাদের মধ্যে একজন অসুস্থ গান সে গাইতে পারবে না,,এখন আরেকজন গায়ক পাবে কই থেকে,,যেহেতু এরেন্জমেন্ট এর দায়িত্ব সম্পুর্ন শুভ্রের উপর ছিল তাই এখন গায়ক বের তাকেই করতে হবে,,বেচারা শুভ্র পড়েছে ফেসাদে,,

শুভ্র অডিটোরিয়ামে খোঁজার চেষ্টা করছে কে ভালো গান পারে,,হঠাৎ দিশা আর আরু শুভ্রের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দিশা খেয়াল করে শুভ্র র মুখ লটকিয়ে বসে কিছু ভাবছে,,,

দিশাঃ- কি শুভ্র ভাইয়া! এনি প্রবলেম?

শুভ্র ঃ– হ্যা দিশা,, একজন গানের মানুষ লাগবে,, একটা গান গাইতে হবে স্টেজে,,কিন্তু বুঝতে পারছি না কি করবো!

দিশাঃ- ওহ এই ব্যপার,,তো আমাদের আরু বেবি থাকলে আর চিন্তা কোথায়? আরু গাইবে,,

শুভ্র আড় চোখে আরুর দিকে তাকালো,,,

আরু চোখ বড় করে দিশার দিকে তাকালো,,

আরুঃ- এই না না আমি গান টান পারি না,,তুই অন্য কাউকে বল আমি পারবো না,,

দিশাঃ- কি বলস,,তুই না কলেজে কত বার গান গাইলি,,তোর গানের গলা ও তো মাশাআল্লাহ,,

আরু ঃ– না আমি পারবো না,,

দিশা কিছু বলতে নিবে অমনি শুভ্র বলে উঠলো,,,

— দিশা থাক বাদ দাও,,সবার ধারা সব কিছু হয় না,,সবাই যে সব পারে তার তো কোন কথা নেই,,আর রাস্তার পাগল তো আরু আগে পারবেনা,,,

শুভ্র যে কথা গুলো আরুকে উদ্দেশ্য করে বলছে সেটা আরু ঢের টের পাচ্ছে,,, শুভ্র তাকে অপমান করছে,,
আরু মনে মনে নিয়ত করলো,, সে গান গাইবে…

— দিশা তোর এই পাতানো ভাই কে বলে দে আরু গান গাইবে,,সে যে সব পারে সেটা কারো দেখা উচিত,, বলেই আরু দিশার হাত ধরে চলে আসে,,

এদিকে আরুর যাবার দিকে তাকিয়ে শুভ্র মুচকি হাসে,, সেতো আরুকে রাগানোর জন্য ই এমন কথা বলেছে যেন সে স্টেজে গান গাই,,,

সেই থেকে আরু মুড অফ করে রেখেছে,,,

দিশাঃ- কিরে মুখটা এমন ভেটকি মাছের মতো করে রেখেছিস কেন?

আরুঃ- বড় বড় করে যে বলে এলাম আমি গান গাইবো এখন ছাতার মাথা কোন গান গাইবো,,এখন তো চর্চা ও করি না,,,

দিশাঃ- টেনশন করিস না তো,,তুই তো অনেক গানই পারিস একটা বলে দিস,,

আরুঃ- হুম…

অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে,,,আরু স্টেজে তাকিয়ে দেখে প্রেজেন্টেশনের দায়িত্বে আছে আকাশ ভাই আর উর্মি আপু,,বেশ সুন্দর লাগছে দুজন কে,,

এখন অতিথিদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে,,,,

আরু দেখে সামনের সারিতে সকল অতিথি রা বসছে,,

পাশে তাকিয়ে দেখে দিশা নেই,,আরু আশপাশে তাকিয়ে দেখে দিশা চলে গেলো অতিথি দের সাথে সেলফি নিতে,,,

আরুঃ- এই মেয়েকে নিয়ে আর পারা গেলো না,,যখন তখন যা নয় তাই করে,,কি যে হবে এই মেয়ের,,,

আরু চোখ বন্ধ করে গান মনে করার চেষ্টা করছে,,

হঠাৎ পাশে দুম করে কারো বসা টের পেয়ে পাশে তাকালো,, দেখে দিশা,,,

— দোস্ত দেখ,,ছবি গুলো কত সুন্দর হয়ছে সবার সাথে একটা করে ছবি,,সবগুলা আপলোড দিমু,,( খুশি হয়ে)

আরুঃ- যা মন চাই তাই কর,,আমাকে বলস কেন,,

ধীরে ধীরে গানের পর্ব শুরু হলো,,পর্যায় ক্রমে নাম ঘোষণা করা হচ্ছে আর সে গিয়ে গান গেয়ে আসছে,,সবার শেষে ঘোষণা করা হলো আরুর নাম,,আরু ধীর পায়ে স্টেজে চলে গেলো,,এর আগেও আরু অনেক বার স্টেজে গান গেয়েছে,, তাই তার কোন প্রবলেম হচ্ছে না তবে কিছু টা ভয়ে আছে,,,হঠাৎ আরু চোখ পড়লো দুরে দাঁড়িয়ে থাকা অপলক নয়নে তারই দিকে তাকিয়ে থাকা শুভ্রের দিকে,,আরুর মনে হলো শুভ্র তাকে তার চোখের পলক ফেলে আস্বস্ত করছে,,আরু আর কিছু না ভেবে গান ধরলো…..
গানটা আরুর কেন জানি অকারণে ই ভালো লাগে..

আমি শুনেছি সেদিন তুমি
সাগরের ঢেউয়ে চেপে
নীল জল দিগন্ত ছুঁয়ে এসেছ।
আমি শুনেছি সেদিন তুমি
নোনাবালি তীর ধরে
বহুদুর বহুদুর হেঁটে এসেছ।
আমি কখনও যাই নি জলে
কখনও ভাসিনি নীলে,
কখনও রাখিনি চোখ, ডানা মেলা গাংচিলে।
আবার যেদিন তুমি সমুদ্র স্নানে যাবে
আমাকেও সাথে নিও
নেবে তো আমায়?
বল নেবে তো আমায়?

আমি শুনেছি সেদিন নাকি
তুমি তুমি তুমি মিলে
তোমরা সদলবলে সভা করেছিলে।
আর সেদিন তোমরা নাকি অনেক জটিল ধাঁধা
না বলা অনেক কথা, কথা তুলেছিলে?

কেন শুধু ছুটে ছুটে চলা
একে একে কথা বলা
নিজের জন্য বাঁচা নিজেকে নিয়ে।
যদি ভালবাসা নাই থাকে
শুধু একা একা লাগে
কোথায় শান্তি পাব কোথায় গিয়ে?
বল কোথায় গিয়ে?

আমি শুনেছি
তোমরা নাকি এখনও স্বপ্ন দেখ,
এখনও গল্প লেখ গান গাও প্রাণ ভরে।
মানুষের বাঁচা মরা এখনও ভাবিয়ে তোলে
তোমাদের ভালবাসা এখনও গোলাপে ফোটে

আস্থা হারানো এই মন নিয়ে আমি আজ
তোমাদের কাছে এসে দু হাত পেতেছি।
আমি দু চোখের গল ভরে শুন্যতা দেখি শুধু
রাত ঘুমে আমি কোন স্বপ্ন দেখি না
তাই স্বপ্ন দেখবো বলে আমি দু চোখ পেতেছি,
তাই তোমাদের কাছে এসে আমি দু হাত পেতেছি,
তাই স্বপ্ন দেখবো বলে আমি দু চোখ পেতেছি।

পুরোটা গান আরু চোখ বন্ধ করে ই গেয়েছিলো,,গান শেষে করতালির শব্দে আরু চোখ খুলে,,
দেখে সবাই হাসি মুখে করতালি দিচ্ছে,,,

আরু ধীর পায়ে নিচে নেমে আসে,,দিশা দৌড়ে এসে আরুকে জরিয়ে ধরে,,,

— অনেক সুন্দর হয়েছে দোস্ত,, তুই তো পুরা ফাটিয়ে দিয়েছিস,,,

শুভ্র নিজেও গানটা মন দিয়ে শুনেছে,,তার চড়ুই যে এতো ভালো গান শিখেছে,, সে তো ধারণা ও করতে পারে নি,,,অনুষ্ঠান শেষে আরু বের হবার সময় শুভ্রের মুখোমুখি হয়,,শুভ্র কে দেখা মাত্র ই আরু মুখ ভেঙচিয়ে চলে যায়,,শুভ্র আরুর কান্ডে খানিকটা থমকালেও পরবর্তী তে প্রচন্ড হাসি পায়,,

আরু বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে তরুর রুমে যায়,,গিয়ে দেখে তরু বই পড়ছে মুখে লেগে আছে মিষ্টি হাসি,,,

— কি ব্যপার তরুপি,, আজ বেশ খুশি খুশি লাগছে,?

আরুর কথায় তরু বই থেকে মুখ তুলে আরুকে এক পলক দেখে নিলো,,,

— না তেমন কিছু না,,আজ না তোদের নবীন বরণ অনুষ্ঠান ছিলো,,কেমন কাটলো?

— হুম ভালই,,,

— ছবি তুলিস নি? দেখি,,

— না আমি তুলি নি,,দিশা তুলেছে,,, মনে হয় পোস্ট ও করে দিসে,,দেখি দাড়াও,,,

আরু ফেসবুকে ঢুকে দিশার করা পোস্ট গুলো বের করে তরুর হাতে দিলো,,

তরুও ছবি গুলো দেখতে লাগলো,,,

হঠাৎ তরুর একটা ছবিতে চোখ আটকে গেলো,,,

দিশার সাথে একটা ভদ্রলোকের ছবি,,,

হুম লোকটাকে সে চেনে খুব ভালো করে চেনে,,,

তরুর আর ছবি দেখার ইচ্ছে হলো না,,,

আরুকে ঘরে পাঠিয়ে দরজা লাগিয়ে সে ভাবতে লাগলো সেই লোকটার কথা,,যেদিন তাকে সে প্রথম দেখেছিলো….

সময়টা ছিলো তরু আর অভ্রের রিলেশনশিপ শুরু হবার মাস খানেক পর…

তরু কলেজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলো সাথে তরুর দুই বান্ধবী।
সে সময় তরুদের বাসা টা ছিলো একটা সরু গলির ভিতর দিয়ে।
গলির মুখে এসে তরু তার দুই বান্ধবী দের বিদায় জানিয়ে মাথার দুই পাশে দুই বেণী দুলিয়ে দুলিয়ে বাকি পথ টুকু যাচ্ছিলো,,
এমন সময় সে একটু দুরে তাকিয়ে দেখে
দুইজন লোক কি নিয়ে জানি তর্ক লেগেছে।

বিষয় টা জানার জন্য তরু একটু সামনে এগুলো,,

যেহেতু প্রায় সন্ধ্যা হয় হয় সেজন্য লোক গুলো তরুকে খেয়াল করলো না,
,তরুর বাচ্চা মন কেন জানি তখন বলছিলো,,লোকগুলো ভালো না,,তাই সে একটা দেয়ালের আড়ালে দাড়িয়ে লোকগুলোর কথা শোনার চেষ্টা করছিলো মাত্র।

লোক গুলো বলছিলো….

— দেখ চন্দন,, তুই কিন্তু আমার সাথে বাড়াবাড়ি করছিস..

— আমি বাড়াবাড়ি করছি? তাহলে তুই কি করছিস? তুই ও তো না বুঝে লাফাচ্ছিস।

— দেখ,, বস বলেছে ১০০ টা মেয়ে হলেই ওদের দিয়ে দেবে,,

–১০০ টা মেয়ে? ১০০ টা মেয়ে কি ছেলের হাতের মোয়া নাকি যে চাইলি আর পেয়ে গেলি,,,

— তাই তো বলছি তোকে..

— মেয়ে কয়টা লাগবে আর বলতে পারিস?

— গণি নাই,,তবে ৭৫ বা ৮০ মতো হবে হয়তো…

— তাও তো আরও অনেক লাগবে,,এদিকে পুলিশেও করছে আরেক ঝামেলা,,

— আজ তো আবার বস আসবে.. ওই দিকে সব ঠিক আছে তো?

— হুম আছে,,চল চল বস আবার চলে আসতে পারে,,এসে যদি আমাদের না পায় তাহলে আর রক্ষা থাকবে না,,

হুম চল,,

বলেই লোক দুটো হাটা শুরু করলো,,

এতোক্ষণে তরু বুঝতে পারলো ওরা কি নিয়ে কথা বলছিলো,,তরু লোক গুলো কে লক্ষ্য করে তাদের পিছনে পিছনে যাচ্ছে,,

লোকগুলো কথা বলতে বলতে হাটছে তাই পিছনের দিকে তাদের কোন খেয়াল নেই।
লোক গুলো বেশ খানিকক্ষন হাটার পর একটা পোড়া বাড়ির সামনে এসে হাজির হয়,,
বাড়িটা বেশ পুড়ানো,, বেশ খানিক জায়গা ভাঙা ও,, জায়গা অনেকটা জঙ্গলের সাইডে হওয়ায় লোক সমাগম ও নেই বললেই চলে।
এই ভর সন্ধ্যায় তো আরও নির্জন। অনেকটা গা ছমছমে বাড়িটা,,স্বাভাবিক ভাবে তরু খানিকটা ভিতু প্রকৃতির মেয়ে,,

তবে কেন জানি এখন তার মোটেও ভয় লাগছে না,,

সে বাড়িটার থেকে একটু দুরে একটা মোটা গাছের আড়ালে দাড়িয়ে রইলো,,
বেশ খানিক্ষন হয়ে গেলো কিন্তু কারো কোন সাড়া শব্দ নেই,,সেই লোক দুটো যে ভেতরে ঢুকলো তাদের ও কোন খোজ নেই,,

এদিকে মশা করছে অত্যাচার,,মনে হয় কয়েকশত বছর ধরে অনাহারে আছে মশা গুলো,,তরু একবার পায়ে থাবর দিচ্ছে তো আরেকবার হাতে…

— কিরে ভাই মশা,,তোরা কি আমাকে বিরিয়ানি ভাবছিস? আমি কিন্তু বিরিয়ানি না,,এবারের মতো ছেড়ে দে ভাই,,তোরা না আমার মায়ের পেটে থুক্কু আমার পাতানো ভাই হোস,,প্লিজ আর কামড়া স না,,

তরু আড়াল থেকে বের হতে নেবে,,
এমন সময় হটাৎ করেই একটা বিশাল গাড়ি এসে থামলো পুড়া বাড়িটার সামনে। একজন বডিগার্ড এসে গাড়ির দরজা খুলে দিলো,,

গাড়ি থেকে নেমে এলো এক ভদ্রলোক,, অন্ধকারে তেমন বোঝা না গেলেও কিছু টা আন্দাজ করতে পারলো তরু,,লোকটার পড়নে পাঞ্জাবি আর পায়জামা,,মুখে রয়েছে এক বিস্তর হাসি,,সবাই তাকে বস বস বলে সম্বোধন করছে

তরু বুঝতে পারলো এতোক্ষণ লোকগুলো এই লোকের কথাই বলছিলো,,তরু ভালো করে খেয়াল করে দেখলো,,লোকটার গায়ে কেমন জানি আভিজাত্যের ছোয়া,,দেখেও খারাপ বলে মনে হয় না,,কে বলতে পারে লোকটা নারী পাচারের মতো এতো জঘন্য কাজ করতে পারে,,,

লোকটা ধীর পায়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো,,,তরু ও ওদের পিছনে পিছনে যেতে গিয়ে দেখলো বাড়ির বাইরেও বডিগার্ড দাড়ানো,,তরু ভাবতে লাগলো কিভাবে বাড়ির ভেতরে ঢুকার কিন্তু কোন ভাবেই ঢুকতে পারলো না। তাই সে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে বাড়িটার পিছন দিকে গেলো,,,
দেখে একটা খোলা জানালা,,তাই সে জানালা দিয়ে উকি দেবার চেষ্টা করে কিন্তু সেখানে কেউই ছিলো না.,

তরু মনে মনে ভাবতে থাকে…

— ওমা লোক গুলো গেলো কোথায়?..

কি খুকি আমাদের খুজছো নাকি?….

পিছন থেকে কারো কথা শুনে তরু ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকাই,,,দেখে.. কিছুক্ষন আগের সেই লোক দুটো,,,

লোক গুলো বিচ্ছিরি হাসি দিতে দিতে সামনে এগুচ্ছে,, আরু তরু ঢোক গিলতে গিলতে পিছুচ্ছে…

হঠাৎ…..

চলবে……

[সবাই খালি বলেন পার্ট যেন বড় করে দেই,,নেন আজ বড় করে দিলাম,,আপনারাও কিন্তু রিয়েক্ট দিয়েন আর কেমন হয়েছে তার গঠন গত মন্তব্য করবেন,, ধন্যবাদ সবাইকে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here