#সুখ_পাখি
#Ayrah_Rahman
#part:– 28
বাবা তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে…
মাহমুদ রাহমান মাত্র ই খবরের কাগজ পড়ে শেষ করে টেবিলের উপর রাখতে যাবে,,
হঠাৎ মেয়ের কথা শুনে মুখ তুলে তরুর দিকে তাকালো,
আরুকে হসপিটালের থেকে ডিসচার্জ করেছে আজ ১ সপ্তাহ….
এত দিন তরু বাসায়ই ছিলো,,ছোট বোনের দেখা শুনা করেছে…
সকাল সকাল বড় মেয়ের কি এমন সিরিয়াস কথা শুনার জন্য কৌতুহলও মনে হলো, তাকে,,
— কি বলবি রে মা,
— বাবা এই শহরে আর থাকব না…
— কেন? কি হয়েছে?
— যেখানে আমার বোন নিরাপদ না আমি নিরাপদ না সেখানে আমি থাকব না,,
— কেন বলবি তো?
— আর কোন কারণ তোমার দরকার আছে বাবা?
— আচ্ছা আচ্ছা কিছু বলতে হবে না আমি অন্য জায়গায় দেখছি,,,
— হুম…আচ্ছা বাবা,, ঢাকা আর চাঁদপুরে র মাঝামাঝি তে আমাদের যে ফ্ল্যাট টা আছে না,,ওই টা কি বিক্রি করে দিসো?
— না তো,, কেন?
–আমরা ওই খানেই শিফট হই,,আর এই ফ্ল্যাট টা ভাড়া দিয়ে দিতে পারি…
— হুম তা ঠিক,,আচ্ছা ঠিক আছে,, তোর মায়ের সাথে কথা বলে দেখি,,,
— মায়ের সাথে আমার কথা বলা হয়ে গেছে,, আজই লোক ঠিক করো ওই খানে সব পরিষ্কার করে জিনিস পত্র সব নিয়ে যেতে হবে,,,
বলেই তরু চলে গেলো,,
মাহমুদ রাহমান মেয়ের যাওয়ার দিকে কিছু ক্ষন তাকিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন,,তিনি জানেন তার বড় মেয়ে যেই সিদ্ধান্ত ই নেক না কেন,,কখনো ভুল কোন সিদ্ধান্ত নেবে না,,,
বেশ কিছু দিন পরে….
আরুর অবস্থা এখন কিছু টা ভালো,,,তরু আরুর পাশে বসে ভাবছে সেই দিনের কথা যেদিন আরুর জ্ঞান ফিরেছিলো,,,
ডাক্তার ৪৮ ঘন্টার কথা বললেও আরুর জ্ঞান ফিরে প্রায় ৭২ ঘন্টা পরে,,ডাক্তার বলেছে আরুর মাথার পিছনের দিকে আঘাত পাওয়ার কারনে সব স্মৃতি মুছে না গেলেও বেশ কিছু বছরের স্মৃতি মুছে যেতে পারে,,আর হলোও তাই আরুর গত ১ -২ বছরের কোন ঘটনাই মনে নেই,,ডাক্তার বলেছে স্মৃতি ফিরে আসতেও পারে নাও আসতে পারে,,তবে মাথায় যেন কোন রুপ প্রেসার দেওয়া না হয়,, যদি প্রসার দিয়ে কোন কিছু মনে করার চেষ্টা করে তবে হিতে বিপরীত হতে পারে,,,
তাই তরু আরুকে আর কিছু জিগ্যেস করে নি,,
আজ তাড়া এই ফ্ল্যাট ছেড়ে তাদের অন্য আরেক ফ্ল্যাটে শিফট হচ্ছে,,
আর তখন থেকেই শুরু হয় তাদের আলাদা জীবন,,,
_______________________
হঠাৎ আজানের শব্দে তরু অতীত থেকে ফিরে এলো,,
চারদিকে থেকে আজানের সুমধুর কন্ঠ ভেসে আসছে,,
তরু আর কিছু না ভেবে শোয়া থেকে উঠে নামাজের জন্য অযু করে নামাজ আদায় করে দু হাত তুলে আল্লাহর কাছে মন খুলে দোয়া করে,,
নামাজ শেষে তরু রুম থেকে বের হয়ে আরুর রুমে যায়,,,
গিয়ে দেখে আরু উল্টো হয়ে ঘুমিয়ে আছে,, চার হাত পা চারদিকে ছড়ানো ছিটানো,, আরুর ঘুমের সুরত দেখে তরু ফিক করে হেসে ফেলে,, তার বোন টা যে এমন ই একটু আধ পাগল,,
তরু আরু কে সুন্দর ভাবে সুইয়ে বাইরে বের হয়,,মা তখন টেবিলে কাজ করছে,,মায়ের সাথে কিছুক্ষন গল্প করে তরু নিজের রুমে,,,
তরু নিজের ঘরে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে মোবাইলে ২০+ কল আর মেসেজ,,এত কল দেখে তরু কপাল খানিকটা কুচকে গেলো,, কললিস্ট এ গিয়ে দেখে এই কাজ আর কারো নয়,,তারই অভদ্রের,,
তরু আর কাল বিলম্ব না করে অভ্রকে ফোন বেক করে,, অভ্র ও হয়তো তার ফোনের অপেক্ষাতেই ছিলো,,রিং বাজার সাথে সাথে ই কল পিক করে…
— আসসালামু আলাইকুম,,
— ওয়ালাইকুম সালাম,, শালিক কোথায় ছিলে তুমি,,এতগুলো কল দিলাম…
— আরে নিচে ছিলাম,,,,কেন কোন দরকার ছিলো?
— তোমাকে আমাার সবসময় ই দরকার,, সামনে আরো শীত আসছে,,শীতে কি বউ ছাড়া থাকতে পারব নাকি? হুম?
— সকাল সকাল ই লুচুগিরী শুরু করে দিসেন,,রাখেন ফোন,,আমি ভার্সিটি তে যাবো…
— হা হা.. আচ্ছা ঠিক আছে বাবা,,রাখি আর না খেয়ে একদম বের হবা না,,,মনে থাকে যেন…
— আচ্ছা বাবা…
____________________
আপু এই আপুনি, দেখ তো কোন ড্রেস টা পড়ব?
তরু ফোন রেখে যেই না বিছানায় বসতে যাবে অমনি আরু হুরমুর করে তরুর ঘরে ঢুকে পরে,,হাতে কয়েকটা ড্রেস….
— এই বল না,,কোনটা পড়ব
— তোর যেটা ভালো লাগে ওইটাই পর,,আমাকে বলছিস কেন?
— তুই পছন্দ করে দে না বাবা…
তরু ভালো করে জামা গুলো দিকে তাকিয়ে দেখে সবগুলো জামাই সাদা,,,
— ওই বিধবার বিধবা সব সাদা আনছিস কেন? সাদাই যখন পড়বি আমাকে জিজ্ঞেস করস কেন?
— এভাবে বলছিস কেন? ( আবেগী কন্ঠে) তুই জানিস না আমার সব জামা সাদা,,,
–হুম বুঝতে পারছি,, দেখি দে জামা গুলো..
— হুম নাও,,,
তরু জামা গুলো ভালো করে দেখে এর মাঝ থেকে সাদার মাঝে নীল রঙের একটা জামা বের করে আরুর হাতে দিলো,,
— নে এইটা নে,,
জামা পাওয়ার সাথে সাথে ই আরু নিজের রুমে চলে গেলো,,,
ম্যাডিকেলের জন্য তৈরি হয়ে আরু আর দিশা মেডিক্যাল এ চলে যায়,,,
আরু আর দিশা হাঁটছে,, এমন সময় দিশার ফোনের কল আসায় সে কথা বলতে বলতে দাড়িয়ে যায়,,আরু আর দিশার অপেক্ষা না করে ক্লাসের দিকে এগিয়ে যায়,,
আরুদের ক্লাস টা হয় ৪র্থ তলায়,,আরু সেদিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ কেউ পিছন থেকে আরুর মুখ চেপেধরে একটা ফাকা রুমে নিয়ে যায়,,,আরু চার পাশে তাকিয়ে দেখে অনেক অন্ধকার,, আর ভাঙা বেঞ্চ পরে আছে আরু বুঝলো এটা হয়তো স্টোর রুম,,অনেক দিন যাবত হয়ত খোলা হয় না তাই আস্টে গন্ধ,, আর ধুলোই ভরপুর,,হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দের আরুর ঘোর ভাঙে…
— কে কে ওই খানে?
–…………..
–কি হলো কথা বলছেন না কেন? কে?
হঠাৎ আরুর মনে হলো তার বাহু জোড়া কেউ একজন চেপে দাঁড়িয়ে আছে আবছা আলোই তার মুখ স্পষ্ট দেখা না গেলেও তার চোখ স্পষ্ট,, আরুর বুঝতে একটুও সময় লাগল না যে লোকটা কে..
–কে আপনি? আর আমাকে এখানে কেন এনেছেন?
— তুমি কি বুঝতে পারছো না পিচ্চি?
— সরি টু সে মিস্টার শুভ্র খান,,আমি পিচ্চি নই,,আর আমাকে এভাবে আনার মানে কি? কি বোঝাতে চাচ্ছেন আপনি?
–তুমি আমার কাছে পিচ্চি ই থাকবে..সারাজীবন..
— আমাকে যেতে দেন শুভ্র ভাইয়া…
— আরু তোমার কি কিছু মনে নেই? তুমি কি আমায় ভুলে গেছো আরু? আমি তোমার শুভ্র আরু..
–কি আজেবাজে কথা বলছেন আপনি?
শুভ্র আরুর আরো কাছে এসে শুভ্রের দু হাতে আরুর দু গাল আঁকড়ে ধরে শুভ্র বলল..
— আরু তুমি কি সত্যি আমাকে চিনতে পারছো না?
— কতবার বলব,,আমি আপনাকে চিনি না,, জীবনে দেখিও নি…সরেন আমি ক্লাসে যাবো,,আজাইরা ফালতু….
বলেই আরু কাঁধে ব্যগ ঠিক করে দরজা খুলে বের হয়ে আসে..
আরু বারান্দায় হাটছে আর মনে মনে বলছে…
— এত সহজে তো আমি ধরা দিচ্ছি না মিস্টার ঘাড়ত্যাড়া,, আরো কাঠখড় পোড়াও,,তারপর দেখো,,
হোতা হে কিয়া,,বলেই আরু মুচকি হাসে….
চলবে…..
—