#সুখ_পাখি
#Ayrah_Rahman
#part_06
পরদিন সকালে..
চারিদিকে তখন তী’ব্র রোদ, সূর্যের তীর্যক র’শ্মি এসে হানা দিলো আ’রুর ঘরেও, চোখে মুখে সূর্যের আ’লো পড়ায় ঘুম পুরোপুরি ছুটে গেল আরুর, আড়মোরা ভেঙে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেছে, কারণ ঘড়িতে বর্তমানে ৮ টা বেজে ২৬ মিনিট, আর আরুর ক্লাস শুরু ৯ টাই।
আরু দ্রুত বিছানা ছেড়ে নেমে সোজা ওয়াসরুমে দৌড়,
তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিচে যাচ্ছে আর ভাবছে
“আজ কেউ ডাক দিলো না কেন?”
নিচে গিয়ে দেখে তরু বসে বসে খবরের কাগজ পড়ছে,
আরু গিয়ে তরুর সামনে দাড়ায়,
,সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তরু মুখ তুলে তাকিয়ে একটা বিদ্রুপের হাসি হেসে আরুকে জিজ্ঞেস করে,
“এত তাড়াতাড়ি আরুর ঘুম কিভাবে ভাঙলো!”
তরুর হাসি দেখে আরু তো পারে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে,
একেই তো ডাক দিলো না তার তার উপর হাসছে, আর সহ্য করতে না পেরে আরু অনেকটা রেগেই জিজ্ঞেস করে,
” কিরে কাজের বেটি সখিনা আমাকে ডাক দিলি না কেন?”
তরু অবাক হয়ে বলল,
” আমি ডাক দেই নি!”
” ডাক দিলে আমার এতো দেরি হবে কেন বল?”
তরু খানিকটা ভেবে বলল,
“ওয়েট,দেখাচ্ছি”
বলেই তরু তার ফোন বের করে সকালের ভিডিও ক্লিপ বের করলো যেখানে তরু আরুকে ডাকছে আর আরু বারবার মুখ বা’কাচ্ছে,,
ভিডিও টা প্রায় ৩০ মতো মিনিটের,
ভিডিও দেখে আরু বেশ ল’জ্জায় পরে যায়
কারণ তরু তো ওকে ডাকছে কিন্তু ওরই তো ঘুম ছুটে নাই,
তাই নিজের ল’জ্জা ধামা চাপা দিয়ে,
, মিছিমিছি রাগ দেখিয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায়, তরু পিছন থেকে খাবার জন্য ডাকলেও সেদিকে পাত্তা দিলো না
রাস্তায় এসে আরেক ঝামেলা কোন রিক্সা নাই,
ক্লাস শুরু হতে আর ২০ মিনিটের মতো,
,তাই উপায় না পেয়ে হাটা শুরু করলো,
হাটার মাঝেই হঠাৎ করে আরুর সাইডে একটা সাদা রঙের কার এসে ব্রে’ক করে,
অনেকটা জোরে হওয়ায় আরু ভ*য়ে খানিকটা পিছিয়ে যায়,
গাড়িতে থাকা ছেলেটি কাঁচ নামিয়ে আরুকে বলল।
” আপনি কি গাড়ির জন্য অ’পেক্ষা করছেন?আপনাকে তো দেখে মনে হচ্ছে খুব তাড়ায় আছেন!”
আরু মুখ বেঁকিয়ে কাটকাট কন্ঠে বলল,
” আমি গাড়ির জন্য অ’পেক্ষা করছি নাকি হাতির জন্য অ’পেক্ষা করছি সেটা কি আমার আপনাকে বলতে হবে, আ’জাইরা”
ছেলেটি মুচকি হেসে বলল,
“না অনে’কক্ষণ ধরে দেখছি আপনি দাড়িয়ে আছেন,আপনি তো মনে হয়, কলেজে যাবেন, আমি সেই দিকেই যাচ্ছি,”
আরু ভ্রু কুচকে বলল,
” আমি কলেজে পড়ি সেটা আপনাকে কে বলল?”
ছেলেটি আবারো হাসলো,
” কেউ বলে নি, আপনার আইডি কার্ড এ লেখা”
“জি আমি কলেজে যাবো, এখন আমার সময় নষ্ট না করে আপনি আসতে পারেন”
ছেলেটা আমতা আমতা করে বলল,
“কিছু মনে না করলে আমি কি আপনাকে ড্রপ করতে পারি? আপনার হাতে কিন্তু সময় বেশি নেই”
আরু মনে মনে ভাবতে লাগলো ছেলেটা তো ঠিক ই বলছে এখন তর্ক না করে কলেজে গেলেই হয়,আর ছেলেটা কে তো খারাপ ও লাগছে না,যাক উঠেই পড়ি,
আরু আর কিছু না বলে ছেলেটার পাশে সামনের সিটে বসে পরলো
,তা দেখে ছেলেটি শুধু হাসলো,গাড়ি স্টা’র্ট দিয়ে প্রায় ১০ মিনিটে আরুদের কলেজে পৌছে যায়,
,আরু গাড়ে থেকে নামার আগে,
ছেলেটা নিজের হাত বাড়িয়ে হ্যা’ন্ড শেক করার উদ্দেশ্যে বলে
–হাই আমি অভ্র হায়দার, তুমি আমাকে অভ্র ভাইয়া বলেই ডাকতে পারো,তুমি আইরাহ তাই তো?”
” হ্যা,!
” তুমি আমার ছোট বোনের মতো,আমাকে ভাইয়া ই ডাকতে পারো”
” আ’চ্ছা, আমি আইরাহ ,আমাকে সবাই আরু ডাকে আপনিও চাইলে ডাকতে পারেন”
এই বলে আরু গাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে যায়,
,অভ্র শুধু তাকিয়ে আরুর চলে যাওয়া দেখে,বলতে থাকে,
“আরু তুমি আগেও আমার বোন ছিলে এখনো আছো, কিন্তু তোমার বোন টা যে ব’ড্ড অভিমানী, তাকে মানাতে আমার জীবন তো কয়লা হয়ে যাবে, তবে দোষ টা কিন্তু আমার ছিলো না আর না তোমাদের, শুধু একটু ভুল বোঝা বুঝি তে ৪ টে জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে,
,তোমাদের মতে দোষ যখন আমার ঠিক আমি ই করবো,শুধু সময়ের অ’পেক্ষা, বলেই অভ্র গাড়ি নিয়ে চলে যায়,
আরু ক্লাসে যেতে যেতে ভাবছে,
অভ্র লোকটা কে? তার সাথে এমন ব্যবহার করছে যেন তাকে কত আগে থেকে চেনে।
আরুর মনে হচ্ছে এই লোকটাকে সে আগে কোথাও দেখেছে, অভ্রকে সে চিনে কি’ন্তু কিভাবে?হাজার ও প্র’শ্ন আরুর মনে উকি দিচ্ছ
কিন্তু কোনটার ই উত্তর তার কাছে নেই,এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে তার ক্লাসের সামনে চলে এসেছে সেই খেয়াল ই নেই,স্যারের অনুমতি নিয়ে ক্লা’সে প্রবেশ করে আরু,
আ’শ্চর্যের বিষয় আজ এত লেট করে আসার পরও স্যার কিছুই বলল না আরুকে, যা নিয়ে খানিক টা অবাক সে,কিন্তু সেখানে সে পা’ত্তা না দিয়ে ক্লাসে মনোযোগ দিলো,
আরুর এই কাজে দিশা বেশ অবাক ই হলো, কারণ যেই মেয়ে ক্লাসে এসেই গ’ল্পের ঝুড়ি খুলে বসে সেই মেয়ে আজ এত চুপচাপ,দিশার বুঝতে আর বাকি নেই আরু কোন বিষয় নিয়ে চি’ন্তিত বা ভাবছে…
ক্লাস শেষে সবাই কে বলা হয়েছে যেন সকলে অডিটোরিয়াম এ চলে যায়,
সেখানে মেডিক্যাল এর কাজের ব্যাপারে কথা বলা হবে,,
ক্লাস শেষে,
সকলে অডিটোরিয়াম এ চলে যায় কি’ন্তু আরু নিজের জায়গায় বসে আছে আরুকে যেতে না দেখে দিশা আরুর কাছে আসে
“কিরে আরু যাবি না?”
আরু দিশার দিকে তাকিয়ে বলল,
“হুম যাবো, চল”.
“- চল”
আরু আশেপাশে তাকিয়ে বলল
“- আহান, রাকিব, রিয়া কোথায়?”
দিশা হাটতে হাটতে বলল,
“ওদের পাঠিয়ে দিয়েছি,, বলেছি তোকে নিয়ে আমি আসছি”
” ওহ,তাহলে চল,”
আরু আর দিশা অডিটোরিয়াম এ গিয়ে দেখে সকলে দাঁড়িয়ে আছে,
তারাও গিয়ে এক ক’র্নারে দাড়িয়ে পরে,
স্টেজে শুভ্র আর তার দলের অনেকেই উ’পস্থিত, ওরা কাজের ব্যাপারে বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছে, আরু আর দিশা বক্তব্য শুনছে,হঠাৎ পাশ থেকে কিছু কথা আরুর কানে আসে, যেখানে কিছু মেয়েরা শুভ্র কে নিয়ে নানান ধরনের কথা বলা হচ্ছে,
“জানিস,ওই শুভ্র খান তো আমার ক্রা’স,সেই রকমের ক্রা’স খেয়েছি”
” ওই ওর দিকে নজর দিবি না, ও আমার জা’মাই হয়,”
” ইসস আসছে,শুভ্র শুধু তোর না মে’ডিক্যাল এ এক নামে ওকে সবাই চেনে, ক্রা’স বয় বলে কথা, যেমন সুন্দর পড়াতেও আজ পর্যন্ত কেউ পেছনে ফেলতে পারে নি, কি’ন্তু শুভ্র কখনোই কোন মেয়ের স’ঙ্গে কথা বলে না, এমন কি তার কোন মেয়ে ব’ন্ধু ও নেই”
মেয়ে গুলোর এসব কথা শুনে আরুর পেট ফেটে হাসি আসছে, কিন্তু এখানে কোন ভাবেই হাসা যাবে না, তাই মুখ চেপে দাঁড়িয়ে আছে, নিচের দিকে তাকিয়ে
হঠাৎ আরুর মনে হলো কোন এক জোড়া চোখ তার দিকেই তাকিয়ে আছে কিন্তু আশেপাশে তাকিয়ে কোথাও কাউকে না দেখতে পেয়ে মনের ভুল ভেবে বাদ দিয়ে দেই,
বক্তব্য শেষে এখন গ্রু’প করার পালা,
প্রতিটি গ্রুপে ৫ জন থাকবে এটা হবে ভোট প্র’ক্রিয়ায়।
ভোট প্র’ক্রিয়া শেষে এবার ফলাফল প্রকাশের পালা।
এখানে দেখা যায় আরু পড়েছে একটা গ্রুপে যার লিডার শুভ্র নিজে,দিশা আর আহান আরেকটা গ্রুপে,
রিয়া আর রাকিব আলাদা গ্রুপে,
ফলাফল শেষে আজকের মতো কলেজ ছুটি ঘোষণা করা হলো, আরুর তো মন খারাপ সে দিশার সাথে পড়ে নি।
তাই নিয়ে দিশার সাথে তার কত আফসোস,
দিশার ও যে মন খারাপ হয় নি সেটা না তবে সে আরুকে সান্ত্বনা দেই,
যে সেটা তো কয়েকদিনের ব্যাপার,আরু আর দিশা অডিটোরিয়াম থেকে বের হয়ে চলে যায়।
এতোক্ষণ শুভ্র তাদের কথা শুনছিলো,ওদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে,তার ঠোঁটের কোনে ভেসে উঠে বাঁ’কা হাসি
যার অর্থ কেউ ধরতে পারল না।
আসলে আরুকে একা ফালানোর বু’দ্ধি তার ই,
–
– “চড়ুই, কাল থেকে শুরু হবে তোমার আমার নতুন পথ চলা,অনেক উড়তে দিয়েছি এবার তো নীড়ে ফিরতেই হবে, মনে মনে এই কথা বলে শুভ্র প্রশান্তির হাসি হাসে..
____________________________
রাতে……
চলবে??….
[ কেমন লাগলো? ]