#প্রেমময়নেশা(The Story of a psycho lover)
#পর্ব-51 ( রহস্য সমাধান-১)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ইশান পকেটে হাত রেখে বলে উঠে-অয়ন অপেক্ষা করছিস কেন?? মার আমায়। অয়ন পিছনে তাঁকিয়ে দেখে ইশান পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাড়াতাড়ি অয়নের পিছনে গিয়ে উনার শার্ট খামচে ধরে দাঁড়াই। অয়ন বলে উঠে–
রিমিপরী! তুমি ভয় পেয়ো নাহ। তোমার সাইকো আছে তো এদের আমি দেখে নিবো।
অয়ন রক্তচক্কু নিয়ে তাঁকিয়ে বলে উঠে–
ইশান আজ তুই শেষ!! তোকে আজ মেরেই ফেলবো।
এই বলে অয়ন গিয়ে ইশানের নাক বরাবর ঘুসি দেয়।
ইশান ছিটকে ফ্লোরে পড়ে যায়।
ইশানের নাক থেকেও রক্ত পড়ে যাচ্ছে।
ইশানঃ মার আজ যত খুশি মার।
অয়ন ইশানের কলার ঝাকিয়ে বলে–
আজ আমার রিমিপরীর শরীর থেকে যত রক্তু ঝড়িয়েছিস তার ১০ গুন ফিরত দিবো তোকে।
এই বলে অয়ন ইশানের পেটে ঘুসি দিতে লাগলো।
ইশানকে মেরেই যাচ্ছে অয়ন।
উনাকে অনেক ভয়ংকর লাগছে। আমি এক কোনায় গুটিশুটি হয়ে বসে থাকি।
আমার প্রচন্ড ভয় হচ্ছে।
পায়েল দৌড়ে এসে দেখে অয়ন ইশান কে মারতে মারতে একেবারে রক্তাক্ত করে ফেলেছে।
পায়েল দৌড়ে এসে বলে উঠে–
অয়ন ছাড়ো ইশান কে।
মরে যাবে তো।
অয়নঃ চুপ! তোমার মুখে আমি একটা কথাও শুনত চাইনা( চিৎকার করে)
অয়ন ইশান কে মারতে মারতে বলে উঠে–
এই ইশান কম পাপ করেনি।
ওর জন্য আমার রিমিপরী কস্ট পেয়েছি।
আমি আমার রিমিপরীর থেকে ২ই ২টা বছর দূরে থেকে
কস্টে থেকেছি।
এমনকি নিজের ভাইকে মারতেও ওর হাত কাঁপলো নাহ।
ইশার থেকে তার ভালোবাসা আয়ুশকে কেড়ে নিয়েছে।
অয়ন ইশান কে মেরেই যাচ্ছে কিন্তু ইশান একটুও টু-শব্দ করছেনা।
পায়েল এইবার আমার কাছে এসে আমার হাতদুটো ধরে বলে উঠে—
রিমি অয়নকে একটু বুঝাও নাহ।এইভাবে ইশান মারা যাচ্ছে।
আমি ভয়ে দুইকদম পিছিয়ে যাই।
পায়েল আবারও অয়নের কাছে গিয়ে বলে
উঠে–
ইশান কিচ্ছু করেনি অয়ন। ইশান আয়ুশ কে মারেনি।
ও শুধু নিজের উপর সব দোষ নিচ্ছে।
অয়ন ঃ হুম এইবার তো এইসব এক্সকিউজ বলবেই।
শুনে রাখো তোমাদের কাউকে আমি ছাড়ছিনা।
(রাগে ফুশতে ফুশতে)
ইশান ফ্লোরে পড়ে আছে।
অয়ন এইবার পিস্তল টা বের করে ইশানের মাথায় ঠেকিয়ে বলে উঠে–
ওর মতো রেপিস্ট আর খুনি যে নিজের আপন ভাইকেও মেরে ফেলতে পারে।
তার এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকার অধিকার নেই।
ওর জন্য অনেক গুলো জীবন নস্ট হয়ে গেছে।
ইশান কোনোরকম দাঁড়িয়ে অয়নের বন্ধুক
নিজের মাথায় ঠেকিয়ে বলে উঠে–
ওকে অয়ন। মার আমায়। আমার মতো রেপিস্ট আর নিজের ভাইয়ের খুনির সত্যি বেঁচে থাকার অধিকার নেই।
পায়েল চিৎকার করে বলে উঠে–
নাহহহহহহহহ
অয়ন শুট করবে তার আগেই কেউ তার পিস্তল ধরে ফেলে।
অয়ন তাঁকিয়ে দেখে আমান।
অয়নঃ আমান তুই।
আমানঃ ইশানের কোনো দোষ নেই
অয়ন।
আমি বলে উঠলাম–
আমান স্যার আপনি??
আমানঃ অবাক হচ্ছো??
অয়ন আমাকে কালকেই তার আসল পরিচয় বলে দিয়েছিলে।
তোমাকে যখন পাওয়া যাচ্ছিলো নাহ আমিই অয়নকে খবর দেই।
তারপর অয়ন সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে জানতে পারে তুমি এখানে ইশান আর পায়েল এর কবলে।
তখন আমাকেও এখানে আসতে বলে।
তখনি টকোপি আমার কাছে ছুটে আসে।
টকোপিকে দেখে বোধহয় আমার অনেকটাই শান্তি লাগছে।
আমি তাড়াতাড়ি টকোপিকে কোলে নিয়ে আদর করতে থাকি।
অয়ন বলে উঠে–
তুই এইসব কি বলছিস??আমান
ইশানের কোনো দোষ নেই মানে?
আমানঃ ইশান কোনো রেপিস্ট হয় আর সে আয়ুশকেও খুন করেনি।
শুধু ও আয়ুশের খুনের দোষ নিজের ঘাড়ে নিচ্ছে।
আমরা সবাই অবাক।
অয়নঃ
মানে??
আমানঃ মনে আছে সেদিন হসপিটালে
সায়ারীর কথা??
অয়ন ঃ মনে থাকবেনা আবার( দাঁতে দাঁত চেপে)
।।।।।।
অতীত,,,
আমান, ইশান ও অয়ন।
লন্ডনে একটি হসপিটালে পড়াশোনা করতো।
ইশান ছিলো অয়ন এর খালাতো ভাই।
মিসেস কলির বড় বোনের ছেলে।
ইশান রা দুই ভাই আয়ুশ ও ইশান।
কাকতালিয়ভাবে আয়ুশ ও অয়নের চেহারা প্রায় অনেক এক।
তাই দুজনকে অনেক সময় অনেকেই গুলিয়ে ফেলতো।
মিসেস কলির সাথে খান বাড়ির কোনো একটা কারনে সম্পর্ক বিছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো।।
অয়ন লন্ডনে এসে খান বাড়িতে না গেলেও
আয়ুশ ও ইশানের সাথে ঠিকই যোগাযোগ রাখতো।
তার মধ্যে ইশান আবার অয়নের ক্লাসমেট।
ইশান আবার বেশি বেশি জিএফ বানাতো।
মেয়েদের সাথে ফ্লাট করা তার একটা স্বভাব।
তখন আয়ুশ স্কটলেন্ডের একটি
ভার্সিটিতে পড়তো। ইশার সাথে রিলেশনে ছিলো। ইশাও সেই ভার্সিটিতে পড়তো।
সবাই বেশ ভালোই ছিলো।
কিন্তু একদিন সায়রী(ইশার জিএফ)
সায়রীকে নাকি পাওয়া যাচ্ছিলোনাহ।
যেদিন পাওয়া যায় সেদিন খবর পাওয়া যায়।
সায়রীকে নাকি কেউ রেপ করেছিলো।
সায়রী নাকি পুলিশের কাছে বলেছে —
ইশান নাকি একটি হোটেলে তাকে একা ডেকে রেপ করেছি।
সবাই একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু এইসব এর কিছুই ইশান জানেনা।
সেদিন সায়ারী কাঁদতে কাঁদতে হসপিটালের সবার কাছে বিচার চেয়েছিলো।
সেদিন অয়ন সায়ারীর পাশে দাঁড়ায়। সায়ারীকে ন্যায় দেওয়ার জন্যে সে সবকিছুই করে।
ইশানের লাইসেন্স ক্যান্সাল হয়ে যায়।
ইশান অনেকবার অয়নকে বুঝিয়েছিলো সে এইসব করেনি।
কিন্তু সেদিন অয়ন তার কথা বিশ্বাস করেনি।
আমানেরও সেদিন কিছু করার ছিলো নাহ।
পুলিশ ইশানকে নিয়ে যায়। নিদ্র খান নিজের পাওয়ার দিয়ে ইশানকে ছাড়িয়ে নেয়।
ইশানের বড্ড রাগ হয়েছিলো অয়ন কীভাবে তাকে অবিশ্বাস করতে পারলো।
তাই অয়নের থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য
পায়েলকে অয়নের জীবনে আনে।
এমনকি অয়ন নতুন করে রিমির সাথে শুরু করলো সেখানেও পায়েলকে আবার তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে দাঁড় করায়।
বর্তমান,,
আমানঃ সায়ারী মিথ্যে বলেছে অয়ন!
অয়নঃ ওয়াট??বাট অই মেডিকাল রিপোর্ট?
আমানঃ সব ফলস।
পায়েলঃ ইশান সেদিন আমার সাথে ছিলো। সায়ারীর
সাথে ইশানের সেদিন দেখাই হয়নি।
সায়ারী তো ওর টাইম্পাস এর জিএফ ছিলো।
অয়ন ঃ কিন্তু তাহলে সায়ারী সেদিন মিথ্যে কেন বলেছিলো??
আমানঃ ইশান কে ফাঁসানোর জন্য!
আমি বলে উঠলাম–
কিন্তু সে কে??
আমানঃ ইশান তুই বলবি নাকি আমি??
ইশান মুখ ঘুড়িয়ে বলে উঠে–
মিসেস মল্লিকাঃ
অয়নঃ কিহ!!
পায়েলঃ সেদিন বাংলাদেশে আয়ুশ ভাইয়ার মৃত্য তোমার এক্সিডেন্ট সব
মল্লিকা আন্টি আর রুশান আংকেল করিয়েছে।
আমরা তো শুধু তাদের দোষ নিজেদের ঘাড়ে নিয়েছি।
রিমিকেও মল্লিকা আন্টির কথায় আমরা কিডন্যাপ করিয়েছিলাম
আমি বলে উঠলাম–
কিন্তু কেন??
ইশানঃ বাধ্য হয়ে।
আমানঃ কিন্তু কেন???
পায়েলঃ অনেক কারন আছে।
অয়নঃ রুশান আংকেল এইসব এর পিছনে।
(অবাক হয়ে)
আমান ঃ হ্যা অয়ন।
সবকিছু এই দুই ভাই বোন এর কাজ।
পায়েলঃ রুশান আংকেল আর মল্লিকা আংটি।
জঘন্য দুইজন।
আমি বলে উঠলাম–
রুশান আংকেল এমন একটা কাজ করতে পারে
আমি ভাবতেও পারছিনা
অয়নঃ আমাদের সাথে থেকে আমাদেরই ক্ষতি করেছে রুশান আংকেল।
(রেগে)
এদিকে,,,,
সারা রাস্তায় যেনো রক্তের বন্যা বইছে।
সুমু রাস্তার এক কিনারে পড়ে গেছে।
সুমু নিজেকে সাম্লে তাড়াতাড়ি সানার কাছে গেলো।
সানা রক্তাক্ত অবস্হায় রাস্তায় পড়ে আছে।
গুলিটা সানা লেগেছে।
( আসলে সুমু যখন দৌড়াচ্ছিলো। সেই রাস্তা দিয়ে সানাও যাচ্ছিলো। সুমুকে এইভাবে দৌড়াতে দেখে সে অবাক হয়ে যায়। সব থেকেই বেশি অবাক হয়ে যাই যখন দেখে তার বাবা সুমুকে গুলি করতে যাচ্ছে।
সে তাড়াতাড়ি সুমুকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার সাইডে ফেলে দেয় আর নিজে মাঝখানে চলে আসে)
গুলিটা সানার বুক বরাবর লাগে।
সুমুঃ এইটা কি করলে সানা(কাঁদতে কাঁদতে)
রুশান গাড়ি থেকে থেমে একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায়। এ সে কি করেছে নিজের হাত নিজের মেয়েকে গুলি করেছে সে।
হাত-পা কাঁপছে রুশানের।
সানার প্রচন্ড কস্ট হচ্ছে তাও কোনোরকম কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে উঠে–
আমি যদি মাঝখানে না চলে আসতাম।
বাবা তো তোমাকে গুলি করে দিতো সুমাইয়া।
তোমার কিছু হলে ফারহান ভাইয়ার এর কি হবে??
ফারহান ভাইয়া তো তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।
ফারহান ভাইয়া তো একেবারে মরেই যেতো। তোমার কিছু হলে।
আমি তা কি করে দেখতে পারতাম।
??বলো।
তাছাড়া তোমাদের একটা ছোট্ট পুচকে আছে।
তোমার কিছু হলে যে পুচকো টাও মা হারা হতো।
সুমাইয়া শব্দ করে কেঁদে দেয়।
সুমাইয়া ঃ তোমার কিচ্ছু হবেনা
সানার রক্তে সুমাইয়া জামাও ভিজে যাচ্ছে।
সানাঃ নাহ গো এইবার যে আমার সময় এসে গেছে।
সানার প্রচন্ড পরিমানে ব্লাড যাচ্ছে।
রুশান নিজের মেয়ের অবস্হা দেখতে পারছেনা।
তার আদরের একমাত্র মেয়েকে সে নিজের হাতে গুলি করেছে।
সানাঃ তুমি আর ফারহান ভাইয়া সুখে থেকো।
সানার প্রচন্ড শ্বাসকস্টও হচ্ছে।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
চলবে কি?