#প্রেমময়নেশা(The Story of a psycho lover)
#পর্ব-55 ( পরিনতি)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আমিও একেবারে স্তব্ধ হয়ে যাই। সানা আপু আর নেই। আমাকে আর কে জুনিয়ার ভাবি বলে ডাকবে।উনার দিকে তাঁকাতেই চোখ থেকে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়লো। উনি চুপ হয়ে পাথরের মতো বসে আছেন। সানা উনার বড্ড আদরের বোন ছিলো। আমি তো দেখিছি উনি সানাকে কতটা ভালোবাসতেন। আমার এই মুহুর্তে চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। আমি উনার কাছে গিয়ে বলে উঠি—আপনি।
উনি আমাকে ঝাপটে ধরে কান্না করে দেয়।
—রিমিপরী আমি কী করে মেনে নিবো বলো??
আমার ছোট্ট বোনটা আর নেই।
আমি যে পারছিনা। গো।
আমান বলে উঠে–
আমান মনে হয় আমাদের এখন বাংলাদেশও যাওয়া উচিৎ শেষবারের মতো সানাকে দেখতে।
ইশান বলে উঠে–
আমিও যাবো। সানা তো আমারও বোন।
সুপ্তি কেঁদে বলে উঠে–
আমরা সবাই যাবো। এইভাবে আমাদের কোল থেকে আমাদের মানিক রা হারিয়ে যাচ্ছে।
আমার ছেলেটার লাশতো দেখতে পেলাম নাহ অন্তত
সানাকে শেষবার এর মতো দেখতে চাই।
মল্লিকার ছোট ভাই আর নেই সে মেনে নিতে পারছেনা। বাবা-মা ছোট বোন কবেই তাকে ছেড়ে চলে গেছে।
এই প্রতিশোধের নেশাই তার থেকে তার ভাইকে কেড়ে নিলো।
তখনি কিছু পুলিশ আসলো।
মল্লিকা তাদের কাছে নিজেকে সমর্পন করে দিলো।
আজ তার মুখে কোনো কথা নেই। না আছে সেই জেদ কিংবা রাগ।
।।।।।।।
🌸🌸
রুশনি চিন্তায় বসে আছে
রুশনিঃ কি যে হলো কে জানে এখনো কলি আপু কিংবা কারো কোনো দেখা নেই।
দুরর।।
তখুনি কলিং বেল বেজে উঠে–
রুশনিঃ আরে কে কোথায় আছিস??
দেখ তো কে এলো?
কিছু সার্ভেন্ট দরজা খুলে দেখে কলি সুমু ও
ফারহান দাঁড়িয়ে।
রুশনি বলে উঠে–
কলি আপু তুমি?। রুশান কোথায়?
এদের সাথে? আর তুমি( ফারহানকে উদ্দেশ্য করে)
তোমার পোষাকে এতো রক্ত কেন??
(অবাক হয়ে)
কলি কেঁদে দেয়।
তখনি দুইটা লাশ নিয়ে কিছু লোক প্রবেশ করে।
তারা লাশ দুটো রেখে দেয়।
রুশনিঃ এইসব কি?
এখানে এইসব কাদের লাশ??
আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা?
আচ্ছা এই রুশান আর সানা কোথায়?
এইবার সুমুও কেঁদে দেয়।
কলি বলে উঠে–
ওরা আর নেই
রুশনিঃ ওরা আর নেই মানে???
তুমি এইসব কি বলছো।মাথা ঠিক আছে তোমার? কিসব উল্টাপাল্টা বকছো হ্যা।
মানে এই লাশ দুটো সানা আর আমার রুশানের
(চিৎকার করে)
মিসেস কলিঃ এইটা সত্যি রে রুশনি(কাঁদতে কাঁদতে)
রুশনি লাশ দুটোর থেকে কাপড় সরিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়।
রুশনিঃ নাহ এরা আমার সানা আর রুশান নাহ।
সব মিথ্যে সব মিথ্যে।
রুশনি পাগলের মতো করতে থাকে।
তখনি ছুটে আসি আমরা
।
( নিদ্র এর রিসার্ভ করা প্লেন এর জন্য বাংলাদেশে আসতে বেশি সময় লাগেনি)
অয়ন ও সুপ্তিকে দেখে সবাই অবাক হয়নি তেমন।
আমান সবাইকে আগে থেকেই ফোন করে সব জানিয়ে দিয়েছে
অয়ন সানার লাশ দেখে ছুটে যায়। চিৎকার করে কান্না করতে থাকে।
অয়নঃ কি হয়েছিলো ফারহান।
সুমু বলে উঠে–
আমি বলছি।
সুমু প্রথম থেকে সব খুলে বলে।
আমি সুমুকে জড়িয়ে ধরি কেঁদে দেই।
লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
🌸🌸🌸🌸
আমি বলে উঠলাম–
মানুষ এতোটা নিশ্বার্থভাবে কাউকে ভালোবাসতে পারে??
সানা আপু। তুমি কেন চলে গেলে?
(কাঁদতে কাঁদতে)
আমান বলে উঠে–
একতরফা ভালোবাসা গুলো বোধহয় সত্যি কস্টকর হয়।
অয়ন সানার লাশের পাশে বসে কেঁদে যাচ্ছে।
অয়ন বলে উঠে–
তুই এতোটা কস্টে ছিলিস বনু? আমি তো বুঝিইনি।
সবার দিকেই খেয়াল রেখেছিলাম কিন্তু তুই আড়ালে থেকে যে এতোটা কস্টে ছিলিস তা তো বুঝিনি।
সুমু বলে উঠে–
সব আমার দোষ।
আমি বলে উঠলাম– নাহ সুমু আসলে আমাদের জীবনটাই না এক নিমিষে পালটে গেলো।
ফারহান এক দৃস্টিতে দেখে যাচ্ছে।
তার শার্টে এখনো সানার রক্ত।
মেয়েটা তাকে এতোটা ভালোবাসতো।
কবে এতোটা ভালোবেসে ফেলেছিলো?
ফারহান কোনো দিন বুঝতে পারেনি সানা তাকে ভালোবাসতো।
ফারহান এর ও তো সানাকে নিয়ে কোনোদিন
কোনো ফিলিং ছিলো নাহ।
ফারহান তো শুধু সুমুকেই ভালোবাসে।
কলিঃ আমার অয়ন
কলি অয়নের
কাছে আসতে গেলে অয়ন হাত দিয়ে আটকিয়ে দেয়।
অয়নঃ প্লিয মাহ।
আজকে আমাদের বনু আমাদের সাথে নেই।
এর পিছনে কিন্তু তোমারোও দোষ আছে।
কলিঃ অয়ন!
কলি মুখ চেপে কেঁদে দেয়।
এতোদিন পর সে তার ছেলেকে কাছে পেয়েছিলো আর অয়ন তাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
এইটাও কি স্বাভাবিক নয়? সেদিন তার জন্যই মল্লিকার জীবন টা নস্ট হয়ে গিয়েছিলো
তাই মল্লিকা ও রুশান প্রতিশোধ নিতো নাহ।
আমি বলে উঠলাম–
ভালোমার তো কোনো দোষ নেই।
ভালোমা তো আংকেল কে ভালোবাসতো তাই তারা
পালিয়ে গিয়েছিলো।
ভালোমা বলে উঠে– নাহ রে রিমি অয়ন ঠিকই বলেছে
আমারও দোষ
ছিলো।
সুপ্তি রুশনির কাছে ছুটে যায়।
রুশনি পাগলের মতো করছে।
রুশনিঃ শেষে কিনা রুশান তার নিজের মেয়েকেই মেরে ফেললো??
আচ্ছা আমাকে তার আগে মারতে পারলো নাহ।
তাহলে আমাকেও এই দিন দেখতে হতো নাহ।
সুপ্তি কি বলে রুশনিকে শান্তনা দিবে সে তো নিজের ছেলেকেও হারিয়েছে।
পায়েল আর ইশান ও কেঁদে ফেললো।
সত্যি মানুষের জীবন কি থেকে কী হয়ে গেলো।
সবাই তো খুব সুখেই ছিলো কিন্তু কিছু অতীত সবার বর্তমানকে শেষ করে দিলো।
।।।।।।। 🌿🌿🌿🌿🌿
৫ মাস পর,,,
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আপনমনে আকাশের পানে তাঁকিয়ে আছে ফারহান।
তখনি কেউ কাঁধে হাত রাখে।
ফারহান তাঁকিয়ে দেখে সুমু।
ফারহানঃ সুমু!
সুমুঃ কি ভাবছো?
ফারহানঃ কিছু নাহ।
সুমুঃ আমি জানি তুমি সানার কথা ভাবছো?
ফারহান সুমুর দিকে তাঁকায়।
সুমুঃ এইটা ভেবো নাহ আমি তোমাকে ভুল বুঝছি।
জানো আমারও সানার কথা মনে পড়ে। সানা মেয়েটিই এমন। ওর কথা আমরা সারাজীবন মনে রাখবো।
ফারহানঃ আমি চাই সানা যেখানেই থাকুক। ভালো থাকুক।
সুমু ও বলে উঠে-
আমিও তা চাই।
।।।।।।
৫ মাস অতিক্রম হয়ে গেছে।
রুশনি এখন আর এই বাড়িতে থাকেনা। সে এখন প্রায়-সময় গ্রামের বাড়িতেই থাকে। এই বাড়িতে থাকলে তার সবসময় সানা আর রুশানের কথা মনে পড়বে তাই সে এখন গ্রামের বাড়িতেই থাকে।
লন্ডনে,,
ইশান ও পায়েল তাদের সংসার করছে। ইশান এখন
নিদ্র এর সাথে তার অফিস সামলায়। সুপ্তিও তার সংসারে ফিরে গেছে।
কিন্তু আজও আয়ুশের জন্য রাতের আধারে নিদ্র ও সুপ্তি কেঁদে উঠে।
ইশা অন্য দেশে চলে গেছে সে নিজের মতো করে নতুন করে সব শুরু করবে কিন্তু সে আর তার জীবনে আর কাউকে চায়না। আয়ুশের স্মৃতি নিয়েই সে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিবে।
আর মল্লিকা জেলে রয়েছে। সে এখন পাগল প্রায় । নাহ পারছে মরতে নাহ পারছে বেঁচে থাকতে
এদিকে,,
সানার ছবিতে
হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।
কলি। মেয়েটা পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখতো আজ সে নেই ভাবতেই মনটা কেঁদে উঠে কলির।
অয়ন হাতের ঘড়িটা পড়তে পড়তে নীচে নামতে নামতে বলে উঠে–
মা আমি যাচ্ছি হসপিটালে,,
মিসেস কলি নিজের চোখের জল মুছে নেয়।
অয়ন বুঝতে পারলো সানার কথা ভেবে
তার মা কান্না করছে।
অয়ন বলে উঠে–
মা
কলি বলে উঠে- আমি জানি তুই কি বলবি
আমি জানি সেদিন তোর হয়তো মাথা ঠিক ছিলো নাহ। কিন্তু যুক্তি দিয়ে দেখতে গেলে আমার আর রাফসানের ও (অয়নের বাবা) দোষ ছিলো।
অয়ন বলে উঠে–
মা প্লিয আমি আর এইসব শুনতে চাইনা। আমি শুধু জানি আমার বোন যেখানেই থাকুক
কলি
বলে উঠে–
রিমিকে নিয়ে কিন্তু বিয়ের শপিং যেতে হবে মনে আছে তো।
হসপিটাল থেকে দুজনে একসাথেই আসিস।
অয়ন মুচকি হেঁসে বলে–
আচ্ছা।।।
(অয়ন এখন আবার ডক্টর অয়ন চৌধুরী হিসেবে জয়েন করেছে)
আমি মনোযোগ সহকারে ক্লাস করছি
আমান স্যার ক্লাস করাচ্ছে। তখনি উনি প্রবেশ করে।
উনাকে দেখে আমরা সবাই দাঁড়িয়ে যাই।
সবাই বলে উঠি-
গুড মর্নিং স্যার!!
অয়নঃ গুড মর্নিং।
তোমরা বসো।
আমান বলে উঠে–
কি ব্যাপার। ডক্টর অয়ন চৌধুরী এই সময়।
অয়নঃ দোস্ত তোর ভাবিকে নিতে এসেছি বুঝতেই পারছিস। বিয়ের শপিং এ যেতে হবে। আমি কি তোর ভাবিকে এখন নিয়ে যেতে পারি?
(দাঁত কেলিয়ে)
বিয়ের কথা শুনে আমানের মুখ অন্ধকারে ঘিড়ে যায়।
তাও সে কোনোরকম মুখে হাঁসি ফুটিয়ে বলে-
তোর হবু বউ আবার জিজ্ঞেসা করতে হয় নাকি?
সবাই আমার দিকে তাঁকিয়ে মিটিমিটি হাঁসছে।
অয়নঃ এইযে আমাদের বিয়েতে কিন্তু তোমাদের সবার দাওয়াত রইলো।
সবাই বলে উঠে–
অবশ্যই স্যার!
কিছু কিছু মেয়েতো আফসোস ই শেষ তাদের ক্রাশ প্রফেসরেরে বিয়ে বলে কথা।
ইসস এই লোকটাও নাহ কোথায় কোন কথা বলতে হয়
জানেই নাহ।
ক্লাসেএ সবার সামনে বলে দিচ্ছে।
অয়নঃ রিমিপরী চলো।
সবাই এখনো আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে।
এদিকে আমি লজ্জায় শেষ।
কি হলো চলো
এই বলে উনি আমার হাত ধরে বাইরের দিকে নিয়ে যায়।
আমান বলে উঠে–
ক্লাস আপতত শেষ।
আপাতত আমি এখন উনার কেবিনে বসে আছি।
উনি ওয়ার্ডে কিছু পেশেন্ট দেখতে গিয়েছেন।
(ওহ আপ্নাদের তো বলা ই হয়নি আর ১৫ দিন পরে আমাদের বিয়ে। হ্যা অনেক প্রতিকলুতা পেরিয়ে আমরা আবারও এক হতে চলেছি।)
তখুনি উনি কেবিনে আসেন এবং বলে উঠেন–
চলো রিমিপরী আজকে শপিং যেতে হবে।
আমি বলে উঠলাম–
আপনি সবার সামনে অইরকম বললেন কেন??
অয়নঃ আমার হবু বউকে আমি বলেছি সমস্যা কি?
(ভ্রু কুচকে)
রিমিঃ জানেন সবাই হাঁসছিলো
আমাকে একেবারে লজ্জায় পড়তে হয়েছে।
আপনিও না নির্লজজ হয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।
অয়ন আমাকে হেচকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে মিহি কন্ঠে বলে উঠে–
রিমিপরী কি জানে? যখন সে লজ্জায় লাল হয়ে যায় তখন তার সাইকো নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা।
তোমার এই মায়াবতী লজ্জাময়ী চেহারার জন্য আমি যে সব করতে পারি।
ইসস উনার এই মিহি কন্ঠে এক প্রকার নেশা আছে।
শরীরে এক প্রকার শিহরব বয়ে গেলো।
আমার যে বড্ড লজজা লাগছে।
আমি লজ্জা ঢাকতে উনার বুকে মুখ গুজে রইলাম।
রিমিকে ও অয়নকে এতো কাছে দেখে আমানের বুকটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসার মানুষকে
অন্যকারো সাথে দেখা যে কতটা কস্টের তা আমান ছাড়া কেউ বুঝবেনা।
যতই সে সকলের সামনে হাঁসি থাকুক। দিনশেষে সেও মানুষ।
সে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে যায়।
অয়ন বলে উঠে–
রিমিপরী আজকে সারাদিন এইখানেই থেকে যাওয়ার প্ল্যান করেছেন?
আমি বলে উঠলাম–
আমার সাইকো চাইলে থাকতেই পারি।
অয়ন ঃ কিন্তু ম্যাডাম সামনে যে আমাদের বিয়ে তা কি আপনি ভুলে গেছেন?শপিং এ যেতে হবে তাইনা?
আমি বলে উঠলাম- চলুন!
।( রিমি অয়নের বিয়েতে সবাই দাওয়াত রইলো আসবেন কিন্তু আগেরবার আমি জানতাম বিয়েটা হবেনা তাই কাউকে দাওয়াত দেইনি এইবার দিলাম
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
চলবে কি?