#সুখ_পাখি
#Ayrah_ Rahman
#part:-33
মাঝরাতে ফোনের রিংটোনে শুভ্রের ঘুম ভেঙ্গে গেল,,
শুভ্র পিটপিট করে চোখ খুলে চারপাশে তাকিয়ে সে নিজেকে ছাদের দোলনায় আবিস্কার করে এবং তার বুকের মাঝে বেড়াল শাবকের মতো চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে আরু,,
ছাদের হালকা বাতাসে আরুর চুল গুলো উড়ে এসে চোখে মুখে পড়ছে আর আরু বিরক্তি তে চোখ মুখ কুচকে ফেলছে,,আরুর দিকে তাকিয়ে শুভ্র হেসে দেই পরক্ষণেই আরুর চুল গুলো সরুয়ে কানের পাশে গুজে দেই,,
পুনরায় আবার ফোনের আওয়াজে শুভ্রে ঘোর কাটে,, এক হাতে আরুকে ধরে আরেক হাতে পকেট থেকে ফোন বের করে,, ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে ফোনের স্ক্রিনে আংকেল নামটা ভেসে উঠেছে,,এত রাতে আংকেল এর ফোন দেখে শুভ্র খানিকটা অবাক ই হয়,,
পরক্ষণেই ফোনটা পিক করে কানের কাছে নেই,,
— আসসালামু আলাইকুম আংকেল
— ওয়ালাইকুম সালাম বাবা শুভ্র,,
— কেমন আছেন আংকেল?
— আমি ভালো আছি বাবা,,একটা জরুরি খবর দিতে ফোন দিয়ে ছিলাম বাবা
— জি আংকেল বলুন
— বাবা আজ সদর ঘাট থেকে নারী পাচার কারী দল প্রায় ১০০ টা মেয়ে আর প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার মাদক দ্রব্য পাচারের আশংকা রয়েছে,,
— কখন?
— রাত প্রায় ৩ টার দিকে,,,
— আচ্ছা আংকেল আপনি কোন চিন্তা করবেন না,,আমি দেখছি
— আচ্ছা বাবা যা কর সাবধানে করবে,,ওরা খুব খারাপ মানুষ বাবা
— চিন্তা করবেন না তো আংকেল সব ভালো হবে..
— আচ্ছা বাবা
— আপনি এখন কোথায়?
— আমি চট্টগ্রাম আছি,,
— আচ্ছা ঠিক আছে আংকেল,, আপনি থাকেন আমি দেখছি,,
বলেই শুভ্র ফোনটা রেখে দেই,,
ফোন রেখে নিচে তাকাতে ই দেখে আরু জেগে গেছে,,
শুভ্র তার এক ভ্রু উচু করে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে..
— আপনি কি এখন বের হবেন?
— হ্যা তো,,
— না আপনি কোথাও যাবেন না আপনি আমার সাথে ই থাকবেন,,
— সেটা বললে কি করে হয় আরু পাখি,,
— না আমি কিছু শুনতে চাই না আপনি যাবেন না মানে যাবেননা
— আরু বোকার মতো কথা বলে না,,দেখো আমি যদি এখন না যাই তো ওদের বাঁচাবে কে? তোমার মতো হাজারো মেয়ের জীবন থেমে আছে,, কত মায়ের বুক খালি করে দিয়েছে ওরা,,কত ভাই থেকে তার বোনকে কেড়ে নিছে,,তাদের অপরাধের শাস্তুি দিতে হবে তো,,
আরু চুপ করে আছে,,
— কি হয়েছে বলো,,তাদের শাস্তি প্রাপ্য নই?
— হুম,,।।
— তাহলে আমি যায়?
— আচ্ছা যান তবে তাড়াতাড়ি আসবেন,,
— আচ্ছা আমি তাড়াতাড়ি আসবো,,আমার আরু পাখির কাছে,,
— আর সাবধানে থাকবেন ওরা খুব ভয়ানক জঘন্য মানুষ,,
— আরে বাবা আমার কিছু হবে না আমি প্রমিজ করছি আমার কিচ্ছু হবে না তো,,,
— আচ্ছা,,
— এবার চলো নিচে যায়,,
— হুম,,
শুভ্র আরুকে নিয়ে নিচে নেমে আসে,,
আরুকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দেই কারণ শুভ্র জানে এখন আরুকে ঘুমের ঔষধ না খাওয়ালে আরু সারারাত চিন্তা করবে,,তাই ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দেই,, এখন নিশ্চিন্তে ১০-১২ ঘন্টা ঘুমাবে,,
ঔষধ খাবার সাথে সাথে ই আরুর চোখ বন্ধ হয়ে আসে,,
শুভ্র আরুকে খাটে শুইয়ে দিয়ে কাঁথা দিয়ে ভালো করে মুড়িয়ে দেই,,
আরু ড্রয়ার থেকে তার লাইসেন্স করা পিস্তল নিয়ে বেরিয়ে যায়,,,
________________
ঘুটঘুটে অন্ধকারে দুর থেকে দেখা যাচ্ছে দুটো বড় গাড়ি সারি করে একটার পিছনে আরেকটা আসছে তারই সামনে আরেকটা প্রাইভেট কার,,
গাড়ি দুটো সদর ঘাট থেকে কিছু টা দুরে এসে ব্রেক কষে,,আর প্রাইভেট কারটা সদর ঘাট এসে থেমে যায়,,
গাড়ির দরজা খুলেকালো কুচকুচে একজন লোক বেরিয়ে আসে,,
লোকটা পিছনে গিয়ে গাড়ির পিছনের দরজা খুলে দিলো, এর ভেতরে থেকে বের হয়ে আসলো,,একজন পাঞ্জাবি পরা ভদ্রলোক,,
মুখে তার অমায়িক হাসি,,
একটু দুরেই একটা জাহাজ নদীতে ভিরানো,,ভেতরে বাতি জলছে তার কিছুক্ষণ পরেই একজন টাই সুট পরা ভদ্রলোক বেরিয়ে আসলো জাহাজের ভেতর থেকে পিছনে পিছনে আরেকজন লোক ও আসে,,
–ওয়েলকাম ওয়েলকাম মিস্টার অনিল হায়দার
— থ্যাংক্স মিস্টার জিংসন
— এখানে কতজন আছে?
— ১০০ জন
— গুড
জিংসন নামের লোকটা তার পাশে থাকা লোকটার দিকে কিছু একটা ইশারা করতেই লোকটা একটা বিফকেস এনে তার সামনে রাখল,,
— এই নিন আপনার সাথে ডিল করা পুরো এমাউন্ট আছে
— ধন্যবাদ মিস্টার,,
বলেই বড় গাড়ির দিকে কিছু একটা ইশারা করতেই গাড়ি দুটোর দরজা খুলে দিলো,,
সেখান থেকে প্রায় শতেক মেয়ে বেরিয়ে আসলো,, সআার বয়স প্রায় ১৮-২২,, প্রাপ্ত বয়স তাদের,, মুখে কস টেপ আর হাত পিছনে বাঁধা,,
মেয়ে দের জাহাজে উঠাতে নিলে পিছনে থেকে গুলির আওয়াজে সবাই আতকে উঠে,,
পিছনে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না,,
হঠাৎ পাশ থেকে বড় দুই গাড়ির মাঝে একটা গাড়ি বিস্ফোরিত হয়ে যায়, আগুনের লাভা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে,,
এটার ধোঁয়া কাটার সাথে সাথে ই আবার চারিদিকে রঙিন ধোয়াই ভরে উঠে,,,
অনিল হায়দার ঘাবড়ে যায়,, এসব হচ্ছে টা কি,,
ধোয়া কেটে যাওয়ার পরে অনিল হায়দার খেয়াল করে পাশে কোন মেয়ে নেই সব হাওয়া হয়ে গেছে,,
সামনে তাকিয়ে দেখে দুরে একটা প্রাইভেট কারের হেডলাইট জলছে কিন্তু এটা এতক্ষণ ছিলো না,,গাড়ির ভেতরের লাইট জ্বলছে আর নিভছে,,
বেচারা অনিল হায়দার ভয়ে ঢোক গিলে,, ঘাম তার শরীর ছুয়ে ছুয়ে পরছে,,,পাশে তাকিয়ে দেখে জিংসন ও তার মতোই ভীতু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,
হঠাৎ সে খেয়াল করে দুর থেকে কোন একজন লোক কে দেখা যাচ্ছে,, কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না সে কে,,
ধীরে ধীরে লোকটা কাছে আসাই লোকটার মুখ স্পষ্ট হয়ে যায়,,
অনিল হায়দার বারবার ঢোক গিলে,, জানুয়ারির মাঝামাঝি তে বেশ ভালোই শীত বিরাজ করে এই শীতেও অনিল হায়দার তিরতির করে ঘামছে,, মুখ দিয়ে যেন কোন কথা ই বের হচ্ছে না,,,
সে তোতলানো গলায় বলে উঠলো,,
…. শশশুভ্রওও….
চলবে……