# চন্দ্রাণী২১
চন্দ্র অস্থির হয়ে বসে রইলো নিয়াজের মেসেজের আশায়।কিন্তু মেসেজ এলো না।অপেক্ষা করতে করতে শর্মী ঘুমিয়ে গেলো।ঘুম এলো না চন্দ্রর চোখে। দুই চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু কিন্তু মস্তিষ্ক বারবার জানান দিচ্ছে কিছুতেই ঘুমানো যাবে না।
ঘুমন্ত শর্মীর মুখের দিকে তাকিয়ে চন্দ্রর মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। আহা বেচারি!
কতো স্বপ্ন দেখেছিলো নিয়াজকে নিয়ে। বুঝতে পারে নি অপাত্রে ভালোবাসা দান করছে।আর যখন বুঝলো তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
এই মুখোশের দুনিয়ায় ভালোবাসা যেনো স্বপ্ন।চাইলেই পাওয়া যায় না।
ফজরের আজান হচ্ছে চারদিকে,চন্দ্র ঘুমাচ্ছে না।আরো একটা মানুষ ও ঘুমাচ্ছে না। টগর সে।সে ব্যস্ত তার হিসেব মেলাতে।
ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি তার।সামনে ল্যাপটপে একটা ভিডিও প্লে করে রেখেছে।
শর্মীর ঘুম ভেঙে গেলো হঠাৎ করে। ধড়ফড়িয়ে উঠে দেঝে চন্দ্র সেই আগের মতো বসে আছে। লজ্জা পেলো শর্মী।আপা বসে আছে তার কাজে অথচ সে কি-না ঘুমিয়ে গেছে।
চন্দ্র হেসে বললো, “কোনো ছবি আসে নি।মনে হচ্ছে না ছবি পাঠাবে,তোকে সম্ভবত ভয় দেখাতে চাইছে।তবে ও যেই ছেলে ওকে বিশ্বাস নেই।”
শর্মীর বুকের ভেতরে হাতুড়ি পেটা হচ্ছে যেনো।কেমন একটা অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে বুকজুড়ে।আব্বা যদি একবার এসব কিছু জানতে পারে আব্বার সামনে শর্মী দাঁড়াবে কিভাবে?
আব্বা কি সহ্য করতে পারবে মেয়ের এই বেহায়াপনা?
আব্বা ম//রেই যাবে লজ্জায় অপমানে।সারা গ্রাম জেনে যাবে এরপর।
শর্মীর কেমন দমবন্ধ অনুভূতি হচ্ছে। চন্দ্র উঠে এসে বোনকে জড়িয়ে ধরে। বোনের বুকে পিঠে মালিশ করতে করতে বলে,” তুই একদম চিন্তা করবি না।তোর আপা বেঁচে আছে। আমি থাকতে তোর কোনো ভয় নেই।আমি যা করার করবো।”
শর্মীর বুক ফেটে কান্না আসছে।বুক উজাড় করে ভালোবাসার পরেও কেনো ভাগ্য তাকে এভাবে ঠকালো।সে তো ছলনা করে নি,ধোঁকা দেয় নি।নিজেদের শত্রু জেনেও ছেড়ে দেয় নি।মন থেকে ভালোবেসেছিলো।অথচ বিনিময়ে কি পাচ্ছে সে!
শর্মীর আর সহ্য হচ্ছিলো না এতো কিছু। চন্দ্র সময় নিয়ে বোনকে সামলায়।এই সময়টা ভীষণ নাজুক সময়। শর্মীকে ভালো করে কাউন্সেলিং করতে হবে। তা না হলে শর্মী আবারও ভুল পদক্ষেপ নিতে পারে।
চন্দ্র নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, “দেখ,আগে তোকে শক্ত হতে হবে।এই পরিস্থিতি এতটা সেনসেটিভ আমি জানি।কিন্তু যাই হয়ে যাক,নিয়াজ যা-ই করুক তোকে সাহস রাখতে হবে মনে। আব্বার কাছে যদি ছবি পাঠায় নিয়াজ তখন কি হবে?
আব্বা খুব মানসিক আঘাত পাবে।ধর তোর সাথে অভিমান করবে,নিয়াজ ট্র্যাপে ফেলে চাইবে আব্বাকে ইলেকশন থেকে বিরত রাখতে।
তুই যদি ভবিষ্যতে এসব হবে ভেবে মনে মনে কোনো ভুল স্টেপ নেওয়ার চিন্তা করিস তবে মনে রাখিস,তোর এসব ছবি দেখলে আব্বা হয়তো কষ্ট পাবে কিন্তু তোর ভুল পদক্ষেপে আব্বা দুনিয়া থেকে চলে যেতে পারে। আব্বা কতটা নরম মনের মানুষ তোর নিশ্চয় অজানা না?তোর মনে আছে কখনো আমার তোর কোথাও আঘাত লাগলে,রক্ত বের হলে আব্বা পাগলের মতো কান্না করতো?
সেই কয়দিন বাড়ি থেকে কবুতরের মাংস ফুরাতো না।কবুতর খেতে রক্ত হয় এই ভেবে আব্বা সবসময় কবুতর আনতো আমাদের খাওয়াতে।
তোর মনে আছে, তোর একবার ওজন অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় তুই সিদ্ধান্ত নিলি ডায়েট করার।৪ মাস তুই ডায়েট করলি,ভাত খেলি না।সেই ৪ মাস আব্বা ও ভাত খায় নি তোর মনে আছে?
সেই তুই যদি ঘুণাক্ষরেও ভাবিস যে এই লজ্জা নিয়ে আব্বার সামনে যেতে পারবি না এরচেয়ে পৃথিবী ছেড়ে যাবি তো আব্বা কি করবে তখন?
আর মেইন কথা নিয়াজ এটাই চায় বুঝলি?
নিয়াজ চায় তুই একটা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেল।তাতে আব্বা ভেঙে পড়ুক আর ওরা জিতে যাক।পরিস্থিতি যাই হোক নিজেকে শান্ত কর।এটাও মনে রাখবি আব্বার ইলেকশনে জিতে যাওয়ার একটা ধাপ।তুই যদি হেরে যাস আব্বা ও হেরে যাবে।তুই যদি সাহস রাখিস মনে বিপদ মোকাবিলা করার তো আব্বা জয়ের পথে এক ধাপ এগিয়ে যাবে।”
শর্মীর কেমন মন হালকা হয়ে গেলো বোনের কথা শুনে।সে সত্যিই আবারও একটা ভুল ভাবনা ভেবে ফেলেছিলো।আপার কথা ম্যাজিকের মতো কাজ করলো।
শর্মী বোনকে ছেড়ে দিয়ে বললো, “এখন আমরা কি করবো? ”
চন্দ্র বললো, “ইন্সপেক্টরের সাথে কথা বলতে হবে।নিয়াজকে পুলিশ খুঁজছে জানিস তো।ইন্সপেক্টরের জানা উচিত নিয়াজের এই কান্ড। ”
চন্দ্র নির্ঝর কে কল দিলো।নির্ঝর তখনও বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। ফোন বাজতেই উঠে বসে রিসিভ করে হ্যালো বলতেই শুনলো ওপাশ থেকে মেয়েলী একটা কণ্ঠ। চেনা চেনা লাগছে নির্ঝরের।
চন্দ্র পরিচয় দিয়ে বললো নিয়াজের কথা। রাতে শর্মীকে যা যা বলেছে সেসব বললো।
নির্ঝর অবাক হয়ে বললো, “নিয়াজ কল করেছে? কোন নাম্বার থেকে? ওর ফোনটা অফ,ওর সিম কার্ড ও ব্যবহার করছে না।ওর নতুন নাম্বার আমাকে এক্ষুনি সেন্ড করুন।ওর লোকেশন বের করতে হবে এক্ষুনি। ”
চন্দ্র সাথে সাথে নিয়াজের ফোন নাম্বার পাঠিয়ে দিলো।
দ্রুত তৈরি হয়ে নির্ঝর বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।নাম্বারটা পাঠিয়ে দিলো লোকেশন জানার জন্য। ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসছে সে।শর্মী কে এভাবে থ্রেট করছে নিয়াজ!এতো বড় স্পর্ধা ওর!
নিয়াজকে একবার ধরতে পেলে নির্ঝর কি কি মামলা দিবে ওর নামে সেসব ভাবছে।
চোখের সামনে শর্মীর বিরক্তি নিয়ে তাকানো মুখখানা ভেসে উঠছে।নির্ঝরের বুকের ভেতরে কেমন ঝড় উঠলো হঠাৎ করে। কোমল,নির্মল মুখখানা বুঝি এখন আষাঢ়ের আকাশের রূপ নিয়েছে!
নিশ্চয় খুব কান্না করছে।কখনো কি নির্ঝরের ভাগ্য হবে শর্মীর চোখের জল মুছে দেওয়ার?
জানে না নির্ঝর। থানায় গিয়ে জানতে পারলো নিয়াজের লাস্ট লোকেশন কুশি নদী দেখাচ্ছে। নির্ঝর আবারও কল দিলো,রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না কেউ।
নির্ঝর আবারও কল দিলো নিয়াজের নাম্বারে যত ইনকামিং এবং আউটগোয়িং কল হয়েছে, ডিটেইলস আনার জন্য।
মাথায় রাগ চেপে বসেছে নির্ঝরের। কিছুতেই আর নিয়াজকে ছাড়বে না সে।
চলবে……
রাজিয়া রহমান
বাবু ঘুমানোয়এইটুকু লিখতে পেরেছি।বাবু অসুস্থ, অনেকেই জানেন না হয়তো তাই জানিয়ে দিলাম।
আমি রেগুলার হতে চাইলেও পারছি না এখন আর।বাবুর একের পর এক অসুস্থতা লেগে থাকে।যাই হোক,ভালো খারাপ সময় মিলিয়ে জীবন যেহেতু, আলহামদুলিল্লাহ।