#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১০
,
রাতে এতোটা জার্নি করে এসে ওভাবেই গাড়ি থেকে নেমে এক রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। এখন ঠিক কয়টা বাজে সেটা শশীর অজানা তবে জানালার ফাঁক গলে আসা তীব্র সূর্যের আলোয় বলে দিচ্ছে সকাল অনেক আগেই হয়ে গেছে। কোনো রকমে শোয়া থেকে উঠে বসতেই মাথাটা ঘুরে উঠল। অতিরিক্ত কান্নার করার ফলে প্রচন্ড মাথা বেথ্যা করছে। হাঁটু সমান চুলগুলো বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। হাতে বেথ্যার জন্য সেগুলোকে খোঁপায় বাঁধতেও পারছে নাহ৷ তখনি দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ হলো। শশী বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে দরজা খুলে দিলো। ওমনি জয় ভিতরে ঢুকে শশীকে পা থেকে মাথা অবধি দেখে নিয়ে বলল,
যদিও তুমি একটু দুষ্টু তবুও আমি মানিয়ে নিতাম। কালকে যখন আম্মু বড় ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়ের কথা বলল তখন তো বড় ভাইয়া না করে দিলো তবে আমাকে বললে আমি না করতাম নাহ। তুমি দেখতে সুন্দরী আর আমিও দেখতে সুন্দর যদিও তোমার বোন আমায় ছোটো হাতি বলে তবে আমি কিছু মনে করিনি ছোটো মানুষ বলতেই পারে। তবে তুমি কোনো চিন্তা করো নাহ তোমাকে বিয়ে আমিই করবো শুধু একটু অপেক্ষা করো।
জয়ের পাঁকা পাঁকা কথাশুনে শশী অবাক হয়ে তাকালো তবে হাসলো নাহ। জয়ের মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। জয় হাত দিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলল, বোকা মেয়ে আমার স্টাইল করা চুল গুলো এলোমেলো করে দিলো এখন আবার আয়নার সামনে গিয়ে ঠিক করতে হবে। উফফ আমার হয়েছে যত জ্বালা সত্যি মেয়েদের মন পাওয়া খুবি শক্ত কাজ।
,,,,,,,
সিঁড়ি বেঁয়ে গুঁটি গুঁটি পায়ে নামছে আর চারপাশে চোখ বোলাচ্ছে শশী। বাড়িটা বড় ঠিকি কিন্তু মানুষ কম। এই বদ্ধ বাড়িতে থাকবে কীভাবে ও যে মেয়ে মুক্ত পাখির মতো খোলা আকাশে ডানা মেলে উড়াল দেওয়ার অভ্যাস। মন খারাপ থাকলে পুকুর পাড়ে বসে গাছ পাখি ফুলদের কাছে মনের সব জমানো কথা বলার অভ্যাস সে কীভাবে এই চার দেওয়ালের মাঝে থাকবে। আদেও মানিয়ে নিতে পারবে কি এই ইট পাথুরে যান্ত্রিক শহরে। শেষ সিঁড়িতে পা দিয়ে সামনে তাকাতেই দেখল সমুদ্র সোফায় বসে কফি খাচ্ছে আর খবরের কাগজ পড়ছে৷ চোখ মুখ ভীষণ রকমের গম্ভীর যেনো খবরের কাগজের পাতায় থাকা খবরগুলো তার মনের মতো হয়নি। শশী বেশ কিছুক্ষণ তার সামনে থাকা সুঠাম দেহের গম্ভীর সুদর্শন পুরুষটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। কালকে সে সময়মত না আসলে আজকে সত্যি ওর গলায় কলসি বেঁধে পুকুরে ডুব দেওয়া লাগতো৷ শশী সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে সামনে যেতে যেতে ডাইনিং টেবিলের সাথে ধাক্কা খেলো। যার দরুন টেবিলে থাকা কাঁচের গ্লাসটা মেঝেতে পড়ে শব্দ করে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেলো। শশী চমকে উঠে ভয়ে ভয়ে ভাঙ্গা গ্লাসটার দিকে তাকালো। শব্দ পেয়ে সমুদ্র বিরক্ত নিয়ে সামনে তাকালো হঠাৎ শশীকে দেখে ভ্রু কুঁচকে শশীর দিকে তাকিয়ে থাকলো৷ যেনো সে মনে করার চেষ্টা করছে এই মেয়েটা এখানে কীভাবে আসলো মাথায় খানিক চাপ প্রয়োগ করতেই মনে পড়ল কালকের কথা। চোখ নামিয়ে নিয়ে আবার কাগজের পাতায় মনযোগ দিলো। রান্নাঘর থেকে শাহানারা দ্রুত বেরিয়ে বলতে বলতে আসলেন।
আবার কি ভাঙলি জয় এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারি নাহ সব সময় কিছুনা কিছু খেতে থাকবে আর সাথে জিনিসও ভাঙ্গতে থাকবে।
কথাগুলো বলতে বলতে ডয়িং রুমে এসে শশীকে দেখতেই মুচকি হেসে কিছু বলবে তার আগেই শশী আমতা আমতা করে ভাঙা গলায় বলল, জয় নয় ওই আমি আসলে বুঝতে পারিনি কিভাবে।
আরে মা তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো আমার বাড়িতে এসব ভাঙাচোরা নিত্যদিনের ব্যাপার। বড় ছেলে রাগ উঠলে ভাঙ্গে আর ছোটো ছেলে খেতে গিয়ে ভাঙে তবে রোদ্রটা আবার এমন না ও আমার মতো ঠান্ডা মেজাজের। আচ্ছা তুই হাতমুখ ধুয়ে নে অনেক বেলা হয়েছে খেতে হবে তো।
আমি আব্বার সাথে কথা বলবো।
ওহ হ্যাঁ জামশেদ ভাই সকালে ফোন করেছিলো তুই ঘুমিয়ে ছিলি বিধায় তোকে ডাকা হয়নি তুই বস আমি রুম থেকে ফোনটা নিয়ে আসছি।
কথাটা বলে শাহানারার উপরে চলে গেলো শশী সেদিকে তাকিয়ে গুঁটি গুঁটি পায়ে সিঁড়ির কাছে এসে দাঁড়ালো। মাথার চুলগুলো দু ভাগ হয়ে একভাগ সামনে আরেক ভাগ পিছনে পড়ে আছে। শশী মাথা বাঁকিয়ে আবার সমুদ্রের দিকে তাকালো এই লোকটাকে ওর কেমন জানি ভয় লাগে৷ ঠিক বুঝে উঠতে পারে নাহ, সেদিন কেমন গলা চেপে ধরেছিলো। কথাটা মনে হতেই হাত আপনা আপনি গলায় চলে গেলো। সমুদ্র সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গায়ে থাকা টির্শাট টা নিচের দিকে একটু টেনে সিঁড়ির দিকে গেলো। শশীকে এমন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো বাড়িতে কি বসার কোনো জিনিস নাই?
সমুদ্রের কথায় শশী কি বলবে ভেবে পাচ্ছে নাহ তাই চুপ করে আছে। সমুদ্র শশীর চুপ থাকা দেখে একটু ধমকে বলল, এই মেয়ে কথা বলতে পারো নাহ? গ্রামে তো দেখলাম সব সময় মুখ চলতেই থাকে এখন চুপ কেন?
রোদ্র ভাইয়া কোথায়?
তোমাকে জিগাস করলাম কি আর তুমি বলছো কি বড়ই বিয়াদপ মেয়ে তুমি। আর চুলগুলো এমন করে রেখেছো কেনো? দেখো মেয়ে আমি অপরিষ্কার কিছু পছন্দ করি নাহ। তাই আমার বাড়িতে থাকতে হলে পরিষ্কার পরিছন্ন হয়ে থাকবে আর সরো সামনে থেকে।
কথাগুলো বলে সমুদ্র গটগট করে উপরে চলে গেলো৷ শাহানারা ফোন কানে নিয়ে কথা বলতে বলতে এসে ফোনটা শশীর কাছে দিতেই শশী ফোনটা কানে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
আব্বা আমাকে নিয়ে যান আমি এখানে থাকবো নাহ। এখানে আমার একটুও ভালো লাগছে নাহ কেমন দম বন্ধ বন্ধ লাগছে।
,,,,,,,,,,,,
দুপুরে বেলা সবাই খাওয়া শেষ করে ভাতঘুম দিয়েছে। শাহানারা শশীর চুল গুলো আঁচড়ে বেণী করে দিয়েছে। রোদ্রের সাথে তেমন একটা কথা হয়নি শুধু একবার একটু কথা হয়েছিলো। রোদ্র অনেক তাড়ায় আছে একটু ও বসার সময়ও নেই ওর। জানালার গ্রিল ধরে একমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে শশী। কিছুই ভালো লাগছে নাহ এভাবে একটা রুমে বসে থাকা যায় নাকি। শশী ভাবলো একবার পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখা যাক তাহলে সময়টা যদি একটু কাটে। যেই ভাবা সেই কাজ শশী আস্তে করে রুম থেকে বেরিয়ে ডান দিকে গেলো। কোনটা কার রুম সেটা এখনো জানা হয়নি তাই কোনো রুমে ঢোকাও ঠিক হবে নাহ। শশী হাঁটতে হাঁটতে সামনের দিকে গেলো একদম এক কোণায় একটা আধখোলা রুম দেখতে পেলো। বাইরে থেকেই রুমের মধ্যে বইয়ের তাক দেখা যাচ্ছে। তাহলে এটা হয়ত কারো রুম নয় কোনো লাইব্রেরি হবে হয়ত। শশী আস্তে আস্তে রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে গেলো। বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখলো আর্মি পোশাক পড়া একজন ব্যাক্তি খুবি সম্মানের সহিত আরেকজন এর হাত থেকে পুরুষ্কার নিচ্ছে। লোকটাকে শশী চিনতে পারলো নাহ ঘরে লোকটার আরো অনেক গুলো ছবি টাঙ্গানো ছিলো। হয়ত এই ঘরটা ওই ছবিতে থাকা লোকটার শশী তাঁক থেকে একটা বই বের করে হাতে নিতেই দরজায় শব্দ হলো। শশী দরজার দিকে তাকিয়ে ভয়ে হরবরিয়ে পিছনের দিকে যেতে গেলে বইয়ের তাঁকে বেঁধে গেলো। ওমনি উপর থেকে কয়েকটা বই শশীর মাথার উপর টুপ করে পড়লো। শশী বেথ্যায় মাথায় হাত দিয়ে ডলতে লাগল। সমুদ্র এই সময় শশীকে এখানে দেখে বেশ অবাক হলো। বাবার এই ছোট্ট লাইব্রেরি তে কেউ তেমন আসে না। মাঝেমধ্যে রোদ্র আসে সমুদ্র তেমন একটা আসে নাহ তবে যখন বাবাকে খুব বেশি মনে পড়ে তখন বাবার রেখে যাওয়া এই ঘরটাতে এসে কিছু একান্ত সময় কাটায়। সমুদ্র শশীর দিকে এদিকে গেলো শশী মাথা ডলা বাদ দিয়ে আবার পিছাতে গেলে সমুদ্র ধমকে বলল,
এই মেয়ে আমাকে দেখলে এতো ভয় পাও কেনো আমি কি তোমাকে খেয়ে ফেলবো নাকি। চুপচাপ এখানে দাঁড়াও কথা আছে আমার তোমার সাথে।
#চলবে?