প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি #সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী #পর্ব_১৯

0
537

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১৯
,
এখানেই থাকার ইচ্ছে আছে নাকি? যদি থাকে তাহলে বলতে পারো আমি সেই ব্যাবস্হা করে দিতে পারি।

কাঁদার মধ্যে দাঁড়িয়ে নিচে থেকে পা ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম তখনি কেউ পিছন থেকে কথাটা বলল। আমি কাঙ্খিত কন্ঠটি পেয়ে তড়িত গতিতে পিছন ফিরে সমুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বললাম, আপনি? কোথায় ছিলেন এতোক্ষণ? আর ওটা কিসের শব্দ ছিলো?

আমি এখানেই ছিলাম তোমার চোখে সম্যসা তাই দেখতে পাওনি। এখন ওখান থেকে উঠবে নাকি এভাবেই থাকবে।

উঠতেই তো পারছি নাহ।

কথাটা বলে শশী ঠোঁট উল্টে সমুদ্রের দিকে তাকালো, দেখলো সমুদ্র ওর দিকেই তাকিয়ে আছে৷ সাথে সাথে শশী চোখ নামিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে পুনরায় উঠার চেষ্টা করলো তবে বরাবরের মতোই ব্যার্থ হলো। পায়ের কাঁটা জায়গাতেও জ্বলছে, লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে কেবলি সমুদ্র কে বলতে যাবে এখান থেকে উঠতে সাহায্য করার জন্য। তখনি হাতে টান অনুভব করল, সমুদ্র এক টানে শশীকে নিজের কোলে তুলে নিলো। হাঁটু অবধি কাঁদায় মাখামাখি কমর অবধি ভেজা। শশী পড়ে যাওয়ার ভয়ে সমুদ্রের গলা জড়িয়ে ধরলো, সমুদ্র শশীকে ঘুরিয়ে ঝড়নার দিকে করলো, ঝড়নার পরিষ্কার পানিতে শশীর পায়ের কাঁদা আস্তে আস্তে ধুয়ে যাচ্ছে। শশী আড় চোখে বারবার শুধু সমুদ্র কে দেখছে তবে সরাসরি তাকানোর সাহস নাই। সমুদ্র একবারও শশীর দিকে তাকালো নাহ সে আপাতত নিজের কাজে মগ্ন, পা ধোয়া হয়ে গেলে সমুদ্র আশেপাশে তাকিয়ে তারপর শশীকে কোলে নিয়েই হাঁটতে লাগল।

তোমরা তো চাষী নিজেদের ক্ষেত আছে।

হুম কেনো বলেন তো?

নিজেদের ক্ষেতের ভেজাল ছাড়া ধানের চাউলের ভাত খাও তাও এতো পাতলা কেনো তুমি? মনে হচ্ছে একটা আট বছরের বাচ্চা কে কোলে নিয়ে হাঁটছি।

সমুদ্রের কথা শুনে শশী মুখ অভিমানে অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখল, এই লোকটা সব সময় এভাবে খোঁচা দিয়ে কথা বলে সবাইকে নিজের মতো পালোয়ান মনে করে নাকি, নিজেকে তো পাঁচজন মিলেও উঠাতে পারবে কিনা সন্দেহ আবার আমাকে বলতে আসে। সমুদ্র নিজের মতো হেঁটে জঙ্গল ছেড়ে রাস্তায় উঠল, সেখানে কালো রঙের জীপ দাঁড় করানো। সমুদ্র কে আসতে দেখে ড্রাইভার চাবিটা দিয়ে চলে গেলো, সমুদ্র শশীকে সিটে বসায়ে পা ধরে উঁচু করলো। তারপর কাঁটা জায়গাটা পরিষ্কার করে সেখানে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো। পায়ের জুতোটা সেই কাঁদার মধ্যেই রয়ে গেছে, শশী পুরোটা সময় সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলো এই লোকটাকে ও ঠিক বুঝতে পারে নাহ৷ কখনো কষ্ট দেয় খোঁচা দিয়ে কথা বলে আবার নিজেই সেইখানে মলম লাগিয়ে দেয়। সমুদ্র গাড়ি স্টার্ট করল পেশি বহুল দুটো হাত দিয়ে এক মনে গাড়ি চালাচ্ছে, চোখ দুটি কালো দুটো গ্লাসের আড়ালে ঢাকা। শশী আড় চোখে বারবার সমুদ্র কে দেখছে, এতোকিছু হওয়ার পরেও তার মনে হচ্ছে এই ট্রিপটা তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর একটা ট্রিপ। ইস যদি আরো কিছুটা সময় এভাবে ওনার সাথে থাকা যেতো, কিন্তু সেটাতো সম্ভব নয় ওনি এখানে ওনার কাজের জন্য আছে আর কাজ ফেলে রেখে ওনি নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে ঢ্যাংঢ্যাং করে পুরো খাগড়াছড়ি ঘুরবে নাহ। শশীর এসব ভাবনার মাঝেই গাড়ি তার গন্তব্যে এসে থেমে গেলো, সমুদ্র গাড়ি থেকে নেমে শশীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

আগেই গাড়ি থেকে নামবে নাহ আমি ভিতর থেকে আসবো তারপর।

শশীও বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। সমুদ্র রিসোর্টের ভিতরে যেতে গেলে শশী পিছন থেকে জেরে চিল্লিয়ে বলল, আবার কবে আপনার সাথে দেখা হবে?

সমুদ্র পিছন ঘুরে শশীর দিকে তাকিয়ে তার চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে টির্শাট এর সামনে বুকের সাথে ঝুলিয়ে রেখে বলল, আমার যখন ইচ্ছে হবে তখন। এখন এতো কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকো আমি না আসা অবধি নামবে নাহ।

কথাগুলো বলে সমুদ্র ভিতরে চলে গেলো এদিকে শশী বসে বসে ভাবছে। ওনি কি বলে গেলো ওনার ইচ্ছে হলে তবেই আবার দেখা হবে? আচ্ছা তাহলে এই যে আমি এখানে আসলাম ঝড়ের কবলে পড়লাম তারপর ওনার সাথে দেখা হলো এগুলোও কি ওনার ইচ্ছে হয়েছে বলে হয়েছে? ধ্যাত আমিও কি যা তা ভাবছি, এখানে ওনার সাথে দেখা হওয়াটা পুরোটাই একটা এক্সিডেন্ট, আচ্ছা আমি যে পুরো একটা রাত আবার দিনের এতোটা সময় ধরে মিসিং তবুও কেউ আমার খোঁজ করলো নাহ কেনো? আন্টিতো স্যারকে বলে দিয়েছিলো আমার খেয়াল রাখতে তাহলে আমি এতোটা সময় ধরে এখানে নাই স্যার একটা বারও আমার খোঁজ নিলো নাহ? এতোটা দায়িত্ব ঙ্গানহীন তো স্যার নয় তাহলে আসলে কাহিনি টা কি? শশীর এতোসব ভাবনার মাঝেই দেখলো ওর দুই বান্ধবী ওর দিকে আসছে আর পিছনে সমুদ্র ওর স্যারদের সাথে কথা বলছে। মিলি এসে শশীর হাত ধরে বলল,

তুই ঠিক আছিস? আচ্ছা আস্তে আস্তে নেমে আয় আমরা কত টেনশনে ছিলাম জানিস? ভাগ্যিস তোকে আর্মিরা পেয়েছিলো নয়ত কি হতো এই অচেনা জায়গায়।

শশী দুজনের হাত ধরে নিচে নেমে এসে ওদের কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, তোরা জানলি কীভাবে যে আমি কোথায় আছি?

আরে ওই যে সমুদ্র স্যার ওনিই তো, বাকিটা বলার আগেই ওখানে সমুদ্র চলে আসলো তারপর শশীকে উদ্দেশ্য করে বলল, ভিতরে গিয়ে রেস্ট নাও কালকে সকালেই সবাই ফিরে যাবে আজকে আর কোথাও বের হওয়ার দরকার নাই। আর তোমরা ওকে ধরে ভিতরে নিয়ে যাও।

কথাগুলো বলে সমুদ্র বুকের সাথে ঝুলানো সানগ্লাস টা খুলে চোখে পড়ে গাড়িতে উঠে বসল, অতঃপর সোজা ওখান থেকে বেরিয়ে গেলো। যতদূর অবধি গাড়িটা দেখা যায় শশী তাকিয়ে ছিলো কিন্তু সমুদ্র সেতো নিষ্ঠুর, পাষান তার হৃদয় একটা বারের জন্যও ফিরে তাকায়নি।
,,,,,,,,,,,,,
বাড়ি ফিরে আসার দুইদিন হয়ে গেছে পায়ের কাঁটাটা আগের থেকে অনেক টাই কমেছে। শশী নিজের ঘরে বসে বসে বই পড়ছিলো তখনি পাশে রাখা ফোনটা বেজে উঠল, কোলের উপর রাখা বইটা বন্ধ করে বা হাতে ফোনটা তুলতেই দেখলো রোদ্র কল দিয়েছে। শশী মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে রোদ্র চিন্তিত আর রাগমিশ্রিত গলায় বলল, এই মেয়ে তোমার ফোন কই থাকে হ্যাঁ? এতোবার ফোন দেওয়ার পরেও কোনো খোঁজ খবর নাই। বলি ফোনটা দেওয়া হয়েছে কিসের জন্য নিশ্চয়ই সকাল সন্ধ্যা ধুয়ে মুছে সৌকেছে সাজিয়ে রাখার জন্য নাহ। আর মায়ের থেকে শুনলাম তুমি নাকি পিকনিকে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলে ভাগ্যিস ভাই তোমাকে পেয়েছিলো নয়ত কি হতো হ্যাঁ? এই জন্যই আমি তোমার ওতোদূরে যাওয়ার কথাশুনে রাজি ছিলাম নাহ কিন্তু ভাই বলল সে ওখানে আছে তাই নয়ত কখনোই যেতে দিতাম নাহ।

সমুদ্রের কথা শুনতেই শশীর বুকের মধ্যে উথাল পাথাল ঢেউ বইতে শুরু হলো। যে সে সত্যি সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়েছে এবার আর তার রেহায় নাই৷ শশী যখন সমুদ্রের ভাবনায় মত্ত ফোনের ওপাশে রোদ্র তখন অধীর কন্ঠে হ্যালো বলতে ব্যাস্ত। আরে কথা বলছো নাহ কেনো ঘুমিয়ে পড়লে নাকি।

এটা কি ধরনের কথা রোদ্র ভাইয়া এই দিনে দুপুরে কথা বলতে বলতে কেউ ঘুমায় নাকি।

শশীর কথাশুনে রোদ্র মুচকি হাসলো, মাথাটা নরম বালিয়ে রেখে চোখ বন্ধ করে বলল, হতেও পারে বাচ্চা মানুষের বলে আবার বিশ্বাস নাই।

আমি মোটেও বাচ্চা নই ওকে।

হুম তুমিতো পাকা বুড়ি আচ্ছা শোনো আমি আর দুইমাস পর বাড়ি আসছি আর তোমার জন্যও বিশাল বড়সড় একটা সারপ্রাইজ ও আনছি।

শশী রোদ্রের কথাশুনে লজ্জা মিশ্রিত হেসে বলল, হুম আমিও তো আপনার অপেক্ষায় আছি আপনার জন্যও একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। কথাটা বলে শশী মনে মনে বলল, একমাত্র রোদ্র ভাইয়ার সাথেই আমি সমুদ্রের ব্যাপারটা শেয়ার করতে পারবো। ওনি ছাড়া আমাকে কেউ সাহায্য করতে পারবে নাহ, আর সমুদ্র যে রাগী বাবা যদি একবার শুনে আমি ওনাকে পছন্দ করি তাহলে হয়ত বলবে, এতো ছোট্ট মাথায় এসব ভুলভাল চিন্তা তোমার আসে কীভাবে?
,,,,,,,,,,,
আজকে কলেজে অনুষ্ঠান এই জন্য সকাল সকাল আসা লাগলো। গাড়ি থেকে কলেজের গেটে নেমে দাঁড়াতেই গাড়ি চলে গেলো, শশী গাড়ি যাওয়ার আগে গাড়ির মধ্যে থাকা ইউনিফর্ম পড়া জয়কে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো। আজকে কলেজে প্রবীনদের বিদায় জানানো হবে সেই উপলক্ষে বিশেষ অতিথি হিসাবে মন্ত্রী সাহেব এর আসার কথা ছিলো। তবে শেষ মুহুর্তে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার বদলে তার ছেলে আসবে। শশী আর আরো কিছু মেয়ে মিলে গেটের পাশ থেকে সারি সারি হয়ে ফুল ভর্তি ডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কাঙ্ক্ষিত মানুষ টা এলেই তার উপর ফুলের বর্ষণ করা হবে। লম্বা বেণীটা পিছন থেকে এনে সামনের একপাশে রেখে দিয়েছে শশী, ফুলের ডালাটা কমরের সাথে ঠেকিয়ে রেখে এক হাতে ধরে রেখেছে। আর অন্য হাতের নখ কামড়াচ্ছে তখনি স্বরগোল শুনে শশী দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়ালো ততক্ষণে বিশেষ অতিথির আগমন হয়ে গেছে। সবাই তার উপর ফুলের বর্ষণ করতে ব্যাস্ত লোকটা ধীর গতিতে সামনের দিকে এগোচ্ছো। শশীও তার উপর ফুল দিচ্ছে লোকটা শশী পযন্ত এসে থেমে গেলো চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে শশীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

হাতের নখ কাঁমড়ানো ব্যাড মার্নাস ম্যাডাম৷

কথাটা বলেই হাসি মুখেই লোকটা সামনে দিকে চলে গেলো, আর এদিকে শশী লোকটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে এই লোকটাকে ভীষণ রকম চেনা চেনা লাগছে যেনো এর আগেও কোথাও দেখেছে কিন্তু কোথায়?

#চলবে?

দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত আসলে পরিক্ষা চলছে তো এই জন্য। পরিক্ষা শেষ হয়ে গেলেই নিয়মিত দিবো ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here