#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১৮
,
ওয়াও অনেক সুন্দর কেউ এতোটা সুন্দর কীভাবে হতে পারে? আসলে আমিও বোকা যে ছবিটা এঁকেছে তার হাতে জাদু আছে এই জন্য সামান্য কিছুও অনেক অসামান্য হয়ে উঠে।
পিছন থেকে আসা চিকন মেয়েলি গলার স্বর শুনে রোদ্র পিছনে তাকালো, তারপর হাতের তুলিটা পাশের টেবিলে রেখে মুচকি হেসে আর্ট বোর্ডের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি ভুল বললে লিজা ছবির মানুষ টাই এতো সুন্দর যে আমিই তার সৌন্দর্য তুলে ধরতে পারেনি। তুমি তাকে সামনাসামনি দেখলে চোখ ফেরাতে পারবে নাহ, সে চঞ্চলা হরিণীর মতো, মুক্ত পাখির ন্যায় তার দুই ডানা মেলে নীল আকাশে উড়ে বেড়ায় যেনো মনে হয় তার ওই দুটো চোখের দিকে তাকিয়ে আমি এক জীবন পাড় করে দিতে পারবো।
আচ্ছা তাহলে এনিই বুঝি তিনি যার জন্য আমার এই বন্ধুটা তার মহা মূল্যবান মনটা সেই সুদূর বাংলাদেশে রেখে এসেছে।
লিজার কথাশুনে রোদ্র আনমনে হাসলো শশীর ছবির দিকে তাকিয়ে বলল, আমিতো সেই কবেই মন হারিয়েছি। সেই রোদ্র উজ্জ্বল দুপুরে একটা মেয়ে দূরন্ত পায়ে ছুটে চলছিলো মাটির রাস্তা দিয়ে। আমি মুগ্ধ হয়ে সেদিকে চেয়েছিলাম হঠাৎই সে চোখের পলকে হারিয়ে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে অনেক খুঁজেছি কিন্তু তাকে আর কোথাও পায়নি।
রোদ্র এতো হেয়ালি না করে পুরো কাহিনী টা খুলে বলো নাহ, আমার ভীষণ শুনতে ইচ্ছে করছে।
রোদ্র চোখ বন্ধ করে সেইদিন টার কথা মনে করল যেদিন শশীকে প্রথমবার দেখেছিলো। জয় আর মায়ের সাথে শহর থেকে অনেক দূরে হিজলতলী গ্রামে যাচ্ছিল। শহরের ইট পাথরের দালান ছেড়ে গ্রামের ধূলো মাখা মাটির রাস্তা ধরে এঁকেবেঁকে গাড়ি চলছিলো। তখনি পিছনে বসে থাকা মায়ের দিকে তাকিয়ে রোদ্র বলল, এখান থেকে কোন দিকে যাবো তুমি ঠিক করে চেনো তো?
ছেলের কথায় শাহানারা গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে আশেপাশে তাকিয়ে আবার রোদ্রের দিকে চেয়ে বলল, আমিও ঠিক বুঝতে পারছি নাহ, কতদিন হলো গ্রামে আসি নাহ বাড়ি ঘর রাস্তা ঘাট কত বদলে গেছে ওদের বাড়িটা ঠিক কোন দিকে সেটাই তো বুঝতে পারছি নাহ।
মায়ের কথায় রোদ্র কিছু না বলে গাড়ি চালানোই মন দিলো। খানিক দূর গিয়ে এক পাশে গাড়ি থামিয়ে নিজে গাড়ি থেকে নামল কারো কাছ থেকে জামশেদ মাস্টার এর বাড়ি কোনটা জিগাস করার জন্য। রোদ্র কিছুটা হাঁটতেই দেখলো রাস্তার পাশে ক্ষেতের জমিতে কিছু কৃষক কাজ করছে রোদ্র ওনাদের কাছে গেলো তারপর ওনাদের কাছে জিগাস করতেই একজন রাস্তা চিনিয়ে দিলো। রোদ্র ওনাদের ধন্যবাদ জানিয়ে কেবলি রাস্তায় উঠতে যাবে তখনি পাশ থেকে মেয়েদের হাসাহাসির শব্দ শুনে সেদিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেল। লম্বা চুলের ছোট্ট একটা মেয়ে ক্ষেতের মাঝ দিয়ে আইল ধরে দৌড়ে সামনের দিকে যাচ্ছে তার পিছন পিছন আরো অনেকগুলো মেয়ে। তাদের মধ্যে থেকেই একটা মেয়ে সামনের মেয়েটাকে বলল, আস্তে দৌড়া শশী নয়ত পড়ে যাবি আর আমরাও তো যাবো নাকি।
শশী নামটা শুনতেই রোদ্র মুখ ফুঁটে উচ্চারণ করল চাঁদ, তাহলে ওই এলোকেশীর নামটা বুঝি চাঁদ? তখনি সামনে থেকে জবাব দিলো মেয়েটা, মালেক কাকারা জমিতে পানি দেওয়ার জন্য নতুন মেশিন বসাইছে কি সুন্দর পরিষ্কার পানি একদম কাঁচের মতো। তাই জন্যই তো আমি আগে যাচ্ছি তোরা পানি নষ্ট করার আগেই আমি পানিতে ভিজবো।
রোদ্র মোহিত হলো সেই কন্ঠে একটু খানি অন্যমনষ্ক হতেই চোখের পলকে হারিয়ে গেলো তার দিনের বেলা পাওয়া চাঁদ। রোদ্র যখন অধীর চোখে আশেপাশে তাকিয়ে শশীকে খুঁজতে ব্যাস্ত তখনি রাস্তার উপর থেকে জয় রোদ্রকে ডাকলো। রোদ্র আরো কয়েকবার দেখে চলে গেলো, গাড়িতে উঠার আগে আরো একবার ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল, রাতের আকাশের চাঁদ দিনের বেলায় ধরতে গেলে বুঝি এমন ভাবেই মুখ থুবরে পড়তে হয়।
যাহ তারমানে তুমি মেয়েটাকে হারিয়ে ফেললে? তাহলে তোমার ভালোবাসাতো অসমাপ্ত রয়ে গেলো এখন কি হবে?
লিজার বোকা বোকা কথাশুনে রোদ্র হেসে বলল, আমিও প্রথমে এটাই ভেবে ছিলাম কিন্তু পরে কি হলো জানো? আমরা যেই জামশেদ মাস্টার এর বাড়িতে গিয়েছিলাম শশী আসলে ওনারই মেয়ে।
বলো কি এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।
হুম সেইতো আমিতো ওকে ওখানে দেখে পুরাই অবাক বনে গিছিলাম। কিন্তু ভিতরে ভিতরে অনেক খুশি লাগছিলো।
তারপর?
ওমমম আজকে আর নাহ বাকি কথা অন্য কোনো একদিন বলবো ঠিক আছে?
,,,,,,,
আর কত হাঁটবো আমার পা বেথ্যা করছে।
কথাটা বলেই শশী বসে পড়ল, সমুদ্র হাঁটা থামিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল, সামনে রাস্তায় উঠে তারপর গাড়ি নিবো। জলদি আসো তোমাকে নিয়ে ঘুরার সময় নেই আমার আর এখানে থাকা অনেক রিস্ক। কথাটা বলেই সমুদ্র হাঁটা শুরু করলো শশী এখনো মুখ গোমড়া করে বসে আছে আর বিরবির করে বলল, কি নিষ্ঠুর মানুষ ওনি জানেন আমার পায়ে ব্যাথা তবুও আমাকে হাঁটাচ্ছে আমি জানি ওনি ইচ্ছে করে এমনটা করছে। একা একা বকবক করে শশী আবার আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু করলো। কালকের বৃষ্টিতে পুরোটা কাঁদা হয়ে আছে তার উপর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে উঁচু নিচু পথ হাঁটতেও ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে। শশী সামনে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র ততক্ষণে বেশ খানি দূর চলে গেছে। শশী খোঁড়াতে খোঁড়াতে সামনের দিকে যেতে লাগল, বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর শশী পানির কলকল শব্দ শুনতে পেলো হয়ত সামনেই কোথাও ঝড়না আছে। ইস যদি ওনার সাথে ঝড়নাটা দেখতে পারতাম তাহলে কত সুন্দর হতো, এসব ভাবতে ভাবতে আনমনে হেঁটে যেতেই ঠাস করে কিছু একটর সাথে ধাক্কা খেলো। শশী কপাল ঘষতে ঘষতে সামনে তাকিয়ে দেখে ও আসোলে সমুদ্রের পিঠের সাথে ধাক্কা খেয়েছে। হঠাৎ করে এভাবে এখানে সমুদ্র কে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে শশী সমুদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে বলল, কি ব্যাপার এখানে দাঁড়িয়ে পড়লেন যে ঝড়না দেখছেন বুঝি?
মুখটা বন্ধ করে চুপ করে দাঁড়াও।
কথাটা বলে সমুদ্র পকেট থেকে ওর ফোনটা বের করে কাউকে ফোন দিলো, কিন্তু ওপাশ থেকে বোধ-হয় সে ফোন রিসিভ করলো নাহ এই জন্য টপাটপ চপটপে হাতে মেসেজ টাইপ করে ফোনটা পকেটে রেখে সামনে তাকিয়েই ডান হাত দিয়ে শশীকে নিজের পিছনে নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালো। হাত বাড়িয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি দেখলো শশী ওর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সমুদ্র শশীর এভাবে তাকানো দেখে নিজের হাতের দিকে তাকালো দেখলো ওর হাত ঠিক শশীর বুক বরাবর আর একটু পিছালে সমুদ্রের হাতটা শশীর শরীলের লজ্জাষ্কর স্থানে লাগবে। বিষয়টা সমুদ্র বুঝতে পেরে দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, আমার পিছনে সরিয়ে যাও।
শশী ব্যাপারটা ঠিক বুঝলো নাহ তবে সমুদ্রের কথামতো একপাশে সরে গেলো। ওদের পাশেই একটা ছোট্ট ঝড়না আর ওরা ছোটো খাটো একটা খাঁরা পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্র তীক্ষ্ণ চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে যেনো কোনো কিছুর অপেক্ষা করছে। কিছু একটা ভেবে সমুদ্র শশীর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি সাঁতার জানো?
হ্যাঁ কেনো বলুন তো? কথাটা বলে শশী একবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে পাশের ঝড়নার দিকে চেয়ে আতংকিত চোখে বলল, এই আপনি কি আমায় এখানে ফেলে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন?
চিন্তা করছি না তোমাকে এখানেই ফেলে দেবো। কথাটা বলেই সমুদ্র শশীকে ধাক্কা দিয়ে পাশের পানির স্রোত বয়ে যাওয়া কাঁদা মাখা ছোট একটা খালমতো জায়গায় ফেলে দিলো। শশী অবাকের চমর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে রাগে পুরো শরীল টগবগ করছে, সারা শরীল পানিতে ভিজে একাকার পায়েও বেশ খানিকটা বেথ্যা পেয়েছে। কাঁটা জায়গায় নতুন করে আবার বেথ্যা পাওয়াই ভীষণ রকম জ্বলছে। প্রায় হাঁটু অবধি কাঁদার মধ্যে অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ায়ে সামনে তাকাতেই দেখলো সমুদ্র ওখানে নেই। শশী আশেপাশে তাকালো কিন্তু কোথাও সমুদ্র কে দেখতে পেলো নাহ ঠিক তখনি সামনের দিক থেকে বিকট একটা শব্দে শশী কান চেপে ধরে বসে পড়ল। এটা কীসের আওয়াজ ও জানে নাহ তবে মুভিতে দেখেছে গুলির আওয়াজ ঠিক এমনটাই। তাহলে এটা কি কোনো গুলির শব্দ? কিন্তু সমুদ্র কোথায় গেলো কোনো ভাবে গুলিটা ওনার লাগেনি তো? কিন্তু ওনাকে কে গুলি করবে ওনার কি কারো সাথে শুত্রুতা আছে?
#চলবে?
এখানে লেখা সবটা কাল্পনিক তাই কোনো জায়গার সাথে হুবুহু মেলাতে যাবেন নাহ। আমি নিতান্তই নিজের মনের কল্পনা থেকে লিখেছি।