#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২০
,
অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে কিন্তু এখনো কারো বাড়ি যাওয়ার যেনো কোনো তাড়া নেই। কী সুন্দর মাঠের মাঝে গোল হয়ে বসে গল্প জুড়ে দিয়েছে, অথচ আর কিছুক্ষণ পরেই মাগরিবের আযান দিবে৷ মিলি বেশ করে ধরেছিলো ওদের সাথে আরো কিছুক্ষণ সময় কাটানোর জন্য তবে আমি না করে দিয়েছি। বর্তমানে কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, বাড়ির গাড়ি একটু পরেই চলে আসবে। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অধৈর্য হয়ে কখন যে ডান হতের আঙুল গুলো মুখের ভিতর চলে গেছে বুঝতেই পারিনি।
আপনাকে না তখন বললাম নখ কাঁমড়ানো ব্যাড ম্যার্নাস তবুও আপনি এভাবে বাচ্চাদের মতো নখ কাঁমড়াচ্ছেন? শরীল খারাপ করবে কিন্তু।
পিছন থেকে কথাগুলো বলতে বলতে লোকটি শশীর সামনে এসে দাঁড়ালো। শশী মুখ থেকে হাত নামিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে যে লোকটি কথাটা বলেছে সে আর কেউ না তাদের কলেজে আসা স্পেশাল গেস্ট। কিন্তু এই লোকটার ওর সাথে কি কাজ? এসব ভাবনার মাঝেই লোকটা আবার বলে উঠল, অনেকক্ষণ থেকেই দেখছি আপনি এখানে একা দাঁড়িয়ে আছেন কোনো সম্যসা? নাকি গাড়ি পাচ্ছেন নাহ। কিছু মনে না করলে আমি আপনাকে ড্রপ করে দিই?
লোকটার কথাশুনে শশী একটু হাসার চেষ্টা করে খুবি নম্র স্বরে বলল, না না তার কোনো প্রয়োজন নেই আমার গাড়ি এখনি চলে আসবে। আসলে আমিই আজকে একটু তাড়াতাড়ি কলেজ থেকে বের হয়ে গেছি এই জন্য। কথাগুলো বলে শশী পুনরায় তার বলা কথাগুলো মনে করল ও বোঝার চেষ্টা করছে লোকটির সাথে কোনো খারাপ ব্যাবহার সে করে ফেললো কি না। কারণ তিনি একজন মন্ত্রীর ছেলে তার সাথে কোনো রূপ খারাপ আচরণ করলে আমাকেই বিপদে পড়তে হবে। আর আমার বাবার এতো টাকা নেই যে এদের সাথে লড়বে আর তাছাড়া সমুদ্রের পরিবারের একটা সম্মান আছে আমি চাই নাহ আমার জন্য তাদের কোনো অসম্মান হয়। কথাগুলো ভেবে শশী আবার সামনের দিকে তাকালো নাহ তার গাড়ি এখনো আসছে নাহ, আজকে এতো দেরি কেনো হচ্ছে কে জানে। শশী কথা বলতে না চাইলেও তার পাশে দাঁড়ানো লোকটা বোধহয় ঠিক করেই নিয়েছে আজকে সে শশীর সাথে পরিচিত হয়েই ছাড়বে এই জন্য সে মিষ্টি হেসে বলল।
আচ্ছা আপনি যখন সাহায্য নিবেনই না তখন তো আর কিছু করার নেই। কি বলুন তো নেতা মানুষ তো এই জন্য সাধারণ জনগণ বিপদে পড়লে সেটা সবার আগে চোখে পড়ে৷ এই দেখুন এতোটা সময় ধরে আপনার সাথে কথা বলছি অথচ আপনাকে আমার পরিচয় টাই দিইনি, আমি জোসেফ মির্জা আপনি?
নামটা অচেনা লাগলেও শেষের পদবিটা ভীষণ রকম চেনা লাগল শশীর যেনো এই পদবী আরো একজনের সাথে মিলে যাচ্ছে। কিন্তু তার সাথে এর সম্পর্ক কি? আদেও কি তার সাথে এর কোনো সম্পর্ক আছে নাকি নিতান্তই মনের ভুল। হতে পারে তবে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সব কিছুই কি মনের ভুল? কথাগুলো বলে শশী নিজের নাম বলল।জোসেফ আরো কিছু জিগাস করার আগেই শশীর গাড়ি এসে গেলো তাই আর কিছু জিগাস করার সুযোগ পেলো নাহ। শশী গাড়িতে উঠতেই ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে চলে গেলো চলন্ত গাড়ির দিকে চেয়ে জোসেফ বাঁকা হেসে বলল,
তুমি ঠিকি বলেছিলে ফুপি শক্তি আর বুদ্ধির সাথে না পারলে দুর্বল জায়গায় আঘাত করতে আর আমি আপাতত সেটাই করছি। বাকিটা সময় হলেই বোঝা যাবে
কথাগুলো বলে হাতে থাকা সানগ্লাস টা চোখে পড়ে নিজের গাড়িতে গিয়ে উঠে বসল জোসেফ।
,,,,,,,,,
খুবি চিন্তিত মুখে নিজের বিছানায় বসে আছে জামশেদ মাস্টার আজকে তার বাড়ির ইজ্জত তার মেয়েকে নিয়ে সালিশ বসেছে এটা একজন বাবার জন্য অনেকটা লজ্জা আর খুবি কষ্টকর। সময় নিয়েছেন ওনি যা বলার বিকেলে বলবে কিন্তু বিকেলে তিনি কি বলবেন? এর কোনো উত্তর তার কাছে নেই। আর তিনি বেঁচে থাকতে কোনোদিনই ওই শাহিন এর সাথে মেয়ে বিয়ে দিবেন নাহ প্রয়োজনে মেয়েকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেবো তবুও নয়। এসব ভাবনার মাঝেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো এতে যেনো তিনি খুবি বিরক্ত হলেন চোখ বন্ধ অবস্থায় বিরক্তিকর গলায় বললেন, তোমাকে বলেছি নাহ বড় বউ আমাকে একটু একা থাকতে দেও। যাও তুমি আমি ঠিক আছি প্রয়োজন হলে তোমাকে ডেকে নিবো।
নিজের মতো কথাটা বলেই ওনি খাটের সাথে মাথাটা এলিয়ে দিলেন। তবে তার পঞ্চইন্দ্রিয় বলছে ঘরে প্রবেশ করা মানুষ টা মোটেও বাইরে যায়নি বরং সে ধপাধপ পা ফেলে আরো ভিতরে এসে তার পাশে দাঁড়িয়েছে। এবার জামশেদ মাস্টার বরই বিরক্ত হলেন কপাল থেকে হাত সরিয়ে চোখটা খুলে কিছু বলতে যাবে তখনি সামনে তাকিয়ে দেখেন তার সম্মুখে আসলে সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে।
তুমি?
আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো। খুবি শান্ত আর গম্ভীর স্বরে কথাটা বলল সমুদ্র। জামশেদ মাস্টার সমুদ্রের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচের দিকে তাকালো এই সময়ে ছেলেটা তাকে কি বলবে আজকে এই ছেলেটার জন্যই তো তার বাড়িতে প্রথম বারের মতো সালিশ বসেছে তাও আবার তারই মেয়েকে নিয়ে, এই কথাটা ভাবলেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার। একজন শিক্ষক এর জন্য এটা খুবি অপমান জনক,তবুও তিনি ভেঙে না পড়ে কন্ঠে কঠোরতা এনে বললেন, বলো?
আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।
সমুদ্রের কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে জামশেদ মাস্টার অবাক চোখে সমুদ্রের দিকে তাকালো। এবার তিনি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো রাগী গলায় সমুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল, তুমি কি আমার সাথে মশকরা করতে এসেছো? ভরা সালিশে আমার মেয়েকে বিয়ে করবে না বলে আবার এখানে এসে বলছো বিয়ে করবে। খেলা পেয়েছো তুমি? আর একটা কথা শুনে রাখো আজকে এই সব যা হচ্ছে সবটা তোমার জন্য এবং আমি কখনোই তোমার সাথে আমার মেয়েকে বিয়ে দেবো নাহ। যার নিজের জীবনের প্রতি কোনো মায়া নেই যে মরণ নিয়ে খেলা করে জেনেশুনে একজন পিতা হয়ে কীভাবে মেয়েকে তার হাতে তুলে দেবো, যার নিজের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই সে আমার মেয়েকে কীভাবে ভালো রাখবে।
সমুদ্র কোনো কথা বললো নাহ সবটা শোনার পর সোজা হেঁটে জামশেদ মাস্টার এর সামনে বুক টানটান করে দাঁড়িয়ে বলল, দেখুন এখন যেই পরিস্থিতি হয়েছে আপনার মেয়েকে যে কারো সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য আপনি বাধ্য আর আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন নাহ শাহিন এর সাথে ওর বিয়ে হোক তাই আমার কথা মেনে নেওয়া ছাড়া আপনার আর কোনো উপায় নেই।
সমুদ্রের কথা শুনে শশীর বাবা কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, তাহলে তুমি কি চাইছো? বাইরে ভরা বৈঠকে বললে বিয়ে করবে নাহ আর এখন বলছো বিয়ে করবে আসলে তুমি করতে কি চাইছো?
আমাদের জীবনে আপনাদের অবদান অনেক, দাদুকে খুব বেশিদিন কাছে পাইনি তবে যে কটাদিন পেয়েছি তার মুখে আপনাদের কথায় বেশি শুনেছি। আপনারা বাবা দাদুর অনেক ভালো বন্ধু ছিলো এমনকি তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে দাদুকে বাঁচিয়ে ছিলো। দাদু বলেছিলো জীবনে যদি একবার ও আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ আসে আমি যেনো আমার সবটা দিয়ে আপনাদের পাশে থাকি। আমি শশী কে এই জন্য বিয়ে করবো কারণ ওকে আমার পছন্দ হয়ত কখনো ভালোও বেসে ফেলবো সেটা নিতান্তই সময়ের ব্যাপার, তবে আমি যদি ওকে এখন বিয়ে করি তখন আপনারসহ বাকিদের মনে হবে আমি আপনাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছি, করুণা করছি। এই জন্য আমি চাই শশীকে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে ওর কোনো রকম অসুবিধা হবে হবে নাহ। কিন্তু যখন আমি ওর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখবো তখন আপনার হাজার নিষেধ থাকা সত্বেও ওকে আমি বিয়ে করবো।
সমুদ্রের কথা বলার এই পর্যায়ে জামশেদ মাস্টার উঠে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের মুখোমুখি হয়ে বলল, তবে যদি কখনো কোনো সময় তোমার জন্য আমার মেয়ের চোখে এক ফোঁটাও পানি আসে আমি ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবো হোক সে তোমার বিয়ে করা স্ত্রী তবুও। একটা কথা মনে রেখো আমি কোনোভাবেই আমার মেয়ের কষ্ট মেনে নেবো নাহ।
ঠিক আছে আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আমার জীবন থাকা অবধি কোনো বিপদ শশী অবধি পৌঁছাতে পারবে নাহ তাকে আগে সমুদ্রের মুখোমুখি হতে হবে।
ঠিক আছে নিয়ে যাও শশীকে তবে মনে রেখো আমার মেয়ে যেনো ভালো থাকে।
আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, আর একটা কথা আমি চাইনা আমাদের মাঝে এই কথাগুলো অন্যকেউ জানুক এমনকি আমার মাও নয়।
কেউ জানবে নাহ।
বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে অতীতের কথাগুলো ভাবছিলো সমুদ্র হঠাৎ কিছু মনে হতেই চোখ খুলে উঠে বসলো। পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে কাউকে কল দিলো, ফোনের ওপাশের ব্যাক্তিটা বোধহয় ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিলো। কল দেওয়ার সাথে সাথে ফোনটা রিসিভ করলো, সমুদ্র গম্ভীর স্বরে ফোনের ওপাশের ব্যাক্তিকে বলল, কালকে সকালে গাড়ি নিয়ে আমার কোয়াটারের সামনে থাকবে দরকার আছে।
#চলবে?