প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি #সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী #পর্ব_৪০

0
394

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৪০
,
“আপনার সাহস তো কম নাহ। আপনি একজন সিনিয়র আর্মি অফিসার এর বউয়ের শরীরে হাত দেন। আপনাকে তো পুলিশ এ দেওয়া উচিত।

শশীর কথা শুনে সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো। নিজের হাতটা শশীর হাতের মুঠো থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে। একটু নিচু হয়ে শশীর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে উঠে দাঁড়িয়ে শার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে বলল।

” আচ্ছা তাই নাকি। জেলে যখন যেতেই হবে তখন আরো কিছু করে তারপর যাওয়া উচিত নয় কি?

সমুদ্রের কথাশুনে শশী কিছু বলল নাহ। বিছানা থেকে নেমে সমুদ্রের থেকে শার্টটা নিয়ে রেখে দিলো। সমুদ্রের পিছনে দাঁড়িয়ে বলল।

“আসলেন কেনো না আসলেই পারতেন। আপনি তো বোধহয় ভুলেই গিয়েছিলেন যে আপনার জন্যও কেউ পথ চেয়ে বসে আছে। আর ভুলে তো যাবেনই নিষ্ঠুর মনের মানুষ তো এই জন্য।

” হুম বুঝলাম অভিমান হয়েছে আমার বউ এর। তবে আমি খুবি দুঃখিত এই মুহূর্তে তোমার অভিমান ভাঙাতে পারছি নাহ। রাত পযন্ত অপেক্ষা করো সোনা। এখন ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর লম্বা একটা ঘুম। আসলে রাতে জাগতে হবে তো এই জন্য।

কথাটা বলে সমুদ্র শশীর হাত থেকে টাওয়াল টা নিয়ে ওর মাথায় একটা চাটি মেরে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মাথা ডলতে ডলতে সমুদ্রের যাওয়ার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে শশী।

“হুম আইসেন রাতে একদম চৈত্র মাসের ঠাঁডা পড়া তপ্ত সূর্য দেখিয়ে দেবো।
,,,,,,,,,,

“তুমি আমার হাতে কাঁমড় দিলে কেনো এখন আমাকে চৌদ্দটা ইনজেকশন নিতে হবে।

হাত ডলতে ডলতে কথাটা বলল জয়। জোনাকি প্রতিশোধ নিতে পেরে মনে মনে ভীষণ খুশি। আগের বার জয় নাকের উপর কাঁমড়ে দিয়েছিলো। কথাটা সবাইকে বললেও কেউ তেমন রাগ করেনি ওকে শুধু শাহানারা আন্টি ব্যাথিত। কাঁমড়ের কথাটা মনে মনেই রেখে ছিলো। আজকে সুযোগ বুঝে জয় এর হাতে বেশ জোরে সোরেই কাঁমড়টা দিয়েছে। কিন্তু ইনজেকশন কেনো নেওয়া লাগবে সেটাই বুঝতে পারছে নাহ। জয়ের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলল।

” কেনো কেনো ইনজেকশন কেনো নিতে হবে। আমার কি সাপের মতো বিষ আছে নাকি যে ইনজেকশন নিতে হবে। তুমিও তো আমায় কাঁমড় দিয়েছিলে কই আমিতো ইনজেকশন নেইনি।

“আরে আমি কাঁমড়ালে ইনজেকশন নিতে হবে কেনো আমিতো মানুষ। আর তুমিতো জঙ্গলি। বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াও। বলা যায় বিষ থাকলেও থাকতে পারে।

জয়ের কথাশুনে জোনাকি বেজায় রেগে গেলো। দুইহাতে জয়ের চুল ধরে টানতে টানতে বলল।

” তুমি আমায় জঙ্গলি বললে কেনো আমি আন্টিকে বলে দেবো। আমিতো আর থাকবোই নাহ। এক্ষুনি বাড়ি চলে যাবো।

“আরে পঁচা মেয়ে আমার চুল ছাড়ো বলছি৷ একটু আগেই ভাইয়ার ঘর থেকে জেল মেখেছি চুলে সবতো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছাড়ো আমার চুল।

” আমি চুল ছাড়বোই নাহ। আজকে তোমায় টাক বানায় দেবো। আমাকে জঙ্গলি বলা।

“কি ভেবেছো আমি ছেড়ে দেবো? হাত আমারও আছে।

কথাটা বলেই জয়ও জোনাকির ঝুঁটি করে রাখা চুল ধরে টানতে লাগলো। দুজনে দুজনের চুল টানছে আর কাঁদছে। শশী সমুদ্রের উপর রাগ করে রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। খাবার গরম করতে হবে। সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নামতেই ডয়িং রুমে দেখলো জয় আর জোনাকি মারামারি করছে। দুজনেরই বেহাল দশা। জোনাকির চুল খুলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জয়েরও স্টাইল করে রাখা চুলগুলোর অবস্থা পুরাই কাহিল। কাঁধ দিয়ে গেঞ্জি খুলে পড়বে পড়বে ভাব। শশী দৌড়ে গিয়ে দুজনকে থামালো। দুজনেই হাঁপাচ্ছে। শশী জয়কে জিগাস করলো।

“এসব কি? এভাবে মারামারি করছো কেনো দুজনে?

জয় কান্না করতে করতে বাম হাতে চোখ মুছে। গেঞ্জি টেনে কাঁধের উপর উঠায়ে বলল।

” ও আমার হাতে কাঁমড় মারলো কেনো?

“আর তুমি যে আমায় জংলী বললে তার বেলায়?

জোনাকি কাঁদছে আর নাক মুছতেছে। কথাটা বলে আবার শশীর দিকে তাকিয়ে বলল।

” ও আগে আমায় কামড় মেরেছে। সেই জন্যই তো আমিও ওকে কাঁমড় দিয়েছি। আবার আমাকে জংলী ও বলেছে। আমি থাকবোই না। আব্বাকে কল দে আপা আমি চলেই যাবো।

নাক টানছে আর কথা বলছে জোনাকি৷ জয় এর কান্না থেমে গেছে তবে কান্না করার দরুন নাক চোখ লাল হয়ে আছে। শশী পড়েছে বিপাকে কাকে কি বলবে সেটাই খুঁজে পাচ্ছে নাহ। কিছুক্ষণ পর জোনাকির দিকে তাকিয়ে শাসন এর সূরে বলল।

“তো তুই ওর হাতে কাঁমড় দিলি কেনো? সব সময় শুধু অকাজ করা। এক জায়গায় এসে যে একটু স্থির হয়ে থাকতে মন চাই নাহ?

শশীর বকা শুনে জোনাকি আবার কান্না শুরু করে দিলো। সমুদ্র টিশার্ট পড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল।

” কি হয়েছে?

সমুদ্রের কথাশুনে কেউ কিছু বলল নাহ৷ জোনাকির কান্নাও বন্ধ হয়ে গেলো৷ শুধু থেকে থেকে হেঁচকি তুলছে৷ সমুদ্র কে দেখে শশী একবার তাকিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো। সমুদ্র শশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার জয় আর জোনাকির দিকে তাকালো। দুজনের হাত ধরে সোফায় বসে জিগাস করলো।

“এবার বলো কি হয়েছে?
,,,,,,,,,,
আকাশে তখন বিশাল বড় চাঁদ উঠেছে৷ বেশ ভালো ঠন্ডা বাতাসও বইছে। চাঁদের আলোয় চারপাশটা আলোকিত। শশী ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গ্রীল এর ফাঁক দিয়ে চাঁদ দেখছে। সমুদ্র বাড়িতে নেই বিকালে এসে ঘুমানোর কথা বললেও ঘুমায়নি। কোথায় গেছে কে জানে৷ এতোরাত হয়ে গেলো তবুও তার কোনো পাত্তা নেই। শশী মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল।

” তুইও একা আর আমিও। তোর আজকে মন ভালো হলেও আমার আজকে মোটেও মন ভাল নেই। কি জানি কি খায়ে ওই গম্ভীর পাষাণ লোকটাকে ভালোবেসে ছিলাম। আমার তো মনে হয় ওনি আমায় ভালোইবাসে নাহ।

“এটা তোমার মনের সম্যসা। তোমার মন সব সময় ভুলভাল কথা বলে। এই জন্যই তো তোমার এসব মনে হয়।

কথাটা শুনতেই শশী ঘাড় বাঁকিয়ে পিছনে দেখতে গেলো। কিন্তু পারলো নাহ। কারণ ওর পিছনে শক্ত বুকের প্রাচীর। সমুদ্র পিছন থেকে শশীর কমর জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। শশী পুনরায় সামনের দিকে তাকিয়ে বলল।

” আমার মন সব সময় সঠিক কথায় বলে। আর এখনোও সঠিক কথায় বলছে।

“আমার তো মনে হয় তোমার মন ডাহা মিথ্যা কথা বলছে।

” কীভাবে?

“ওই যে তোমার মন বলছে আমি তোমায় ভালোবাসি নাহ। এটা মিথ্যা নয়?

” ঠিকি তো আপনি আমায় ভালোবাসেন নাকি?

শশীর কথাশুনে সমুদ্র শশীকে নিজের দিকে ফিরায়ে। ওর দুইকাঁধে হাত দিয়ে একটু ঝুঁকে শশীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল।

“তোমরা মেয়েরাও নাহ। সব জানো অথচ তোমাদের মুখ থেকে শুনতেই হবে।

কথাটা বলে সমুদ্র শশীকে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের শক্ত বুকের সাথে শশীর নরম শরীরটাকে মিলিয়ে নিলো অতঃপর ফিসফিস করে শশীর কানে বলল।

“শুনেছি মানুষ নাকি হাসির প্রেমে পড়ে কিন্তু আমিতো তোমার অশ্রু ভেজা ওই টলটলে দুটো মায়াবী চোখের প্রেমে পড়েছিলাম।

সমুদ্রের কথা শশী বুঝতে না পেরে বলল। মানে?

শশীর কথা শুনে সমুদ্র নিজের মাথা দিয়ে শশীর মাথায় হালকা গুঁতা দিয়ে বলল।

“বোকা মেয়ে কিছুই বোঝে নাহ। মনে আছে তোমার তুমি পেয়ারা হাতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পেয়ারা খাচ্ছিলে। ছোটখাটো গড়নের পিচ্চি একটা মেয়ে। চুরি করছে আবার অন্যকে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে কীভাবে চুরি করতে হয়। আমি তোমাকে ভালো ভাবে জিগাস করলাম জামশেদ মাস্টার এর বাড়ি কোনটা আর তুমি বললেও নাহ। অথচ তোমার বাপের বাড়িটাই আমি খুঁজতে ছিলাম।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী নাক উঁচিয়ে বলল। তো ভালো করে জিগাস করতেন তাহলে অবশ্যই বলতাম। কীভাবে গুন্ডার মতো ফাঁটা বাঁশের কন্ঠে কথা বলছিলেন। একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলতে হয়?

শশীর কথায় সমুদ্র মুচকি হেসে ওর নাকটা টেনে দিয়ে বলল।

“তাহলে কি প্রথম দেখায় কোনো মেয়ের সাথে গম্ভীর কন্ঠে কথা বলবো নাতো লুতুপুতু কন্ঠে কথা বলবো?

সমুদ্রের কথায় শশী আর কিছু বলল নাহ। পরক্ষণেই সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল।

” তাহলে ওইদিন সালিশে আমায় বিয়ে করতে বললে বিয়ে করলেন না কেনো? যদি শাহিন এর সাথে বিয়ে হয়ে যেতো তখন?

“ওতোই সোজা? তখন পরিস্থিতি খারাপ ছিলো। আমার কারণে তোমরা বিপদে পড়তে। তখন তোমায় বিয়ে করলে মালবিকা তোমাদের পরিবারের পিছনে লাগত। আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। এই জন্য তোমার বাপকে বলেছিলাম। তোমায় যেনো দেখে রাখে আমি সময় সুযোগ বুঝে তারপর বিয়ে করবো৷ আর তখন তো তোমায় ভালোও বাসতাম নাহ এই জন্য তোমার বাপকে ভুংভাং বুঝ দিয়ে ছিলাম।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী রেগে সমুদ্রের বুকে কিল ঘুষি দিতে দিতে বলল।

” ভালোবাসেন না তাহলে বিয়ে করলেন কেনো বদ লোক একটা।

“আরে করছো কি মেরে ফেলবে নাকি। এই জন্যই বলে মেয়ে মানুষের বুদ্ধি কম আরে পুরো কথাটা তো শেষ করতে দিবা। তোমায় ভালোবাসতাম না ঠিক কিন্তু একটু একটু পছন্দ করতাম। কি সুন্দর ছোট খাটো নাদুসনুদুস একটা বাচ্চা।

সমুদ্রের এমন কথাশুনে শশী চোখ পাঁকিয়ে তাকাতেই সমুদ্র সিরিয়াস মুখ করে বলল।

” আচ্ছা আর মজা করছি নাহ। তোমায় নিয়ে যেদিন প্রথম আমাদের বাড়ি আসছিলাম। ওইদিন তুমি গাড়িতে বসে কাঁদছিলে। ব্যাস ওইদিন তোমার কন্দনরত মুখের দিকে তাকিয়েই আমার সর্বনাশটা হলো।

কথাটা বলেই সমুদ্র শশীর কপালে চুমু দিলো। শশীও লজ্জা মাখা মুখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে নিলো। কিছুক্ষণ পর সমুদ্র কিছু একটা মনে পড়ার ভঙ্গিতে বলল।

“আরে আমার তো মনেই ছিলো নাহ। ইস কীভাবে যে ভুলে গেলাম।

সমুদ্রের কথা শুনে শশী চিন্তিত মুখে বলল।

” কী হয়েছে?

“আরো রাত তো বেড়েই যাচ্ছে অথচ আমার বউকে আদর করার কথা মনেই ছিলো নাহ। কেমন বেমালুম ভুলে বসে আছি৷ কেমন ধারা স্বামী আমি তোমার বলতো?

সমুদ্রের কথা শুনতেই শশী লজ্জায় মুখ ঢেকে বলল।

” ছিঃ কীসব ভুলভাল কথা বলেন ছাড়ুনতো আমায়।

সমুদ্র শশীকে কোলে তুলতে তুলতে বলল।

“কিসের ছাড়াছাড়ি এখন শুধু ধরাধরি হবে।

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here