#এই_মন_তোমারি [ গল্পের নতুন মোড়]
#পর্ব_২৯
#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন
-” দেখতে দেখতে কে’টে গেলো দুইদিন।এই দুই দিনের মধ্যে যেনো হুট করে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।যার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সূরা আর নাজমা দেওয়ান। তরীর বাবা রবিউল শিকদার হুট করে বিজনেস এর কাজে দেশের বাইরে যাবেন।তাই তিনি চাচ্ছেন দেশের বাইরে যাওয়ার আগে ঘরোয়া ভাবে মেয়ের বিয়ে দিতে। তারপর দেশে আসার পর আবার মহা ধুমধাম করে মেয়েকে তুলে দিবেন। নাজমা মঞ্জিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়ে উঠেছে। কিন্তু মঞ্জিলের মালকিন’ই মঞ্জিলে নেই। তিনি কিছুতেই বিয়ের ব্যাপার টা মানতে পারছেন না। ইনফ্যাক্ট তার তরী কে পছন্দ নয়।তাই তো তরী কে যখন শফিকুল দেওয়ান তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে, তিনি তরীর ড্রেস আপ দেখে ঘৃণায় তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যান।আর যতোক্ষণ তরী বাড়িতে ছিলো ততোক্ষণ তিনি নিচে আসেন নি। এমন নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ের মুখ দেখতেও তার রুচিতে বাঁধে। তিনি প্রথমে ভেবেছিলো এসবের পেছনে শুধু মাত্র শফিকুল রয়েছে। শাফায়াত এই ব্যাপারে কিছু জানে না। কিন্তু তিনি যখন জানতে পারলেন শাফায়াত ঐ মেয়ের জন্য সূরা কে অপমান করেছে ,আর সূরা কোনো প্রতিবাদ না করে ব্যাপার মেনে নিয়েছে , তখন তিনি সূরা শাফায়াত কে একসাথে ডেকে বললেন,
-” তোরা ঠিক কি করতে চায়ছিস বল তো? আমার সাজানো সংসার টা কেনো এলোমেলো করে দিলি তোরা?আর সূরা তোকে আমি কতোবার বুঝিয়েছি কিন্তু আমার কথার কোনো দাম নেই তোর কাছে। নিজেকে অনেক বড় ভাবতে শুরু করেছিস তুই। বারংবার তোর কাছে জিজ্ঞেস করছি তোর কি হয়েছে বল মা? চুপ করে থাকা কোনো সমস্যার সমাধান নয়।সবটা খুলে বল। কিন্তু তুই? যায় হোক তোর প্রতি যে ভালোবাসা তৈরি হয়েছিলো সেটা তুই নিজে হাতে শেষ করে দিলি।আজকের পর থেকে আমি ভুলে যাবে সূরা নামের কাউকে আমি মেয়ের জায়গা দিয়েছিলাম।আজ থেকে আমার একটাই মেয়ে নুজাইফা। তুই আমার ভরসা বিশ্বাসের জায়গা হারিয়েছিস।আমি তোর কাকা কে কথা দিয়েছিলাম তোকে নতুন একটা জীবন উপহার দিবো।তোকে এমন একজন করে গড়ে তুলবো যেনো সারা বিশ্ব তোকে চিনতে পারে। কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়ে গেলাম।আমি পারলাম না তোর কাকা কে দেওয়া কথা রাখতে।”
-” প্রতিত্তরে সূরা কিছু বললো না। শুধু চোখের পানি ফেলতে লাগলো।যা দেখে শাফায়াত বললো, যে থাকতে না চায় তাকে জোর করে রাখার কোনো মানে হয় না আম্মি।আমি তার সবটা যেনে তাকে ভালোবেসেছি , আমার মন তার নামে লিখে দিয়েছি। কিন্তু সে আমাকে চায় নি।তাই আমি বাবার কথায় মেনে নিয়েছি।”
-” এতো দিন তোর বাপ জ্বালিয়ে মারছে আমাকে , আর এখন তোরা দুজন ও শুরু করেছিস। ঠিক আছে তোদের যা ভালো মনে হয় কর বলে তিনি রাগে , দুঃখে ক্ষোভে নাজমা মঞ্জিল ছেড়ে গ্ৰামে নিজের বাপের বাড়ি চলে আসেন। অবশ্য শফিকুল, শাফায়াত গ্ৰামে এসেছিলো তাকে ফিরিয়ে যেতে । কিন্তু তার এক কথা তরীর সাথে শাফায়াতের বিয়ে হলে তিনি আর কখনো নাজমা মঞ্জিলে ফিরবেন না।”
___________________________________
-” বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে।যদিও বিয়েটা একদম ঘরোয়া ভাবে হবে তবুও তরীর শপিং চলছে পুরোদমে। শপিং এ সূরা কেও সাথে নেওয়া হয়েছে। শাফায়াত সূরা কে দেখিয়ে দেখিয়ে তরীর সাথে হাসাহাসি করছে , যা দেখে সূরার কোমল হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শাফায়াতের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।সে তরীর সাথে শপিং এ ব্যস্ত।সূরা কি করবে বুঝতে না পেরে শপিং মল টা ঘুরে ঘুরে দেখছিলো।আর তখনি একটা লাল জামদানি শাড়ি দেখে তার চোখ আটকে যায়। সূরা শাড়িটার দাম জিজ্ঞেস করলে দোকানদার জানায় শাড়িটার দাম চার হাজার টাকা। অথচ সূরার কাছে এক টাকাও নেই ভাবতেই সূরা মন খারাপ করে শাড়ির দোকান থেকে বেরিয়ে আসে।যা নজর এড়িয়ে যায় না শাফায়াতের।সে দোকানদার কে শাড়ি টা প্যাক করে দিতে হবে। শুধু তাই নয়। লাল শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে লাল চুড়ি, লাল টিপ ও কিনতে ভুলে যায় না শাফায়াত। শপিংয়ের এক পর্যায়ে তরী বললো, বাবু চলো না আমরা কিছু খাই। খুব ক্ষুধা লাগছে আমার।”
-” হুম চলো বলে শাফায়াত তাদের কে নিয়ে নামকরা একটা রেস্টুরেন্টে আসে।সূরা তখনো নিশ্চুপ।তবে শাফায়াত সূরার ব্যথিত চেহারা দেখে বেশ বুঝতে পারে মেয়েটা ভেতরে ভেতরে জ্বলছে খুব।তার জ্বলন বাড়িয়ে দিতে শাফায়াত তরী কে খাইয়ে দেয় ।আর তরী শাফায়াত কে।যা দেখে সূরা খাবার ফেলে বাইরে চলে আসে।সূরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে হো হো করে হেঁসে উঠে শাফায়াত তরী দুজনেই।এক পর্যায়ে তরী হাসি থামিয়ে বললো, অনেক হয়েছে ভাই মেয়েটা কে আর জ্বালাস না।দেখ না বাচ্চা মেয়েটার কি হাল হয়েছে? মুখখানি শুকিয়ে এতো টুকু হয়ে গিয়েছে।আমারি কেমন মায়া লাগছে। ইচ্ছে করছে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করে দেই।তোর এমন ইচ্ছে করছে না?”
-” ইচ্ছে তো অনেক কিছু করার জাগে।মেয়েটা কম জ্বালায় নি আমাকে।এখন নিজে একটু জ্বলে দেখুক ভালোবাসার দহনে পুড়তে কেমন লাগে।আমি জানি মেয়েটা আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।ও আরাব কে ভালোবাসা দূরে থাক ওর দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে নি পর্যন্ত। শুধু মাত্র আজকের রাতটা । আগামীকাল ওর সব কষ্ট আদরে আদরে ভুলিয়ে দিবো। নতুন এক গল্পের সূচনা করবো।”
-” কিন্তু আন্টি যে ভুল বুঝে দূরে সরে গেলো?”
-” আম্মির ব্যাপার টা আমার উপর ছেড়ে দে।এটা আম্মির জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ।আম্মি যখন জানতে পারবে এ সব টা আমার আর তোর প্ল্যান ছিলো সূরা কে নিজের করে নেওয়ার তখন খুব খুশি হবে। থ্যাংক ইউ তরী।আমার জন্য আম্মির কাছে তোকে এতো ছোট হতে হলো। আম্মি ভুল বুঝলো তোকে। অথচ আম্মি জানে না তুই আমার জন্য কতো কিছু করলি।”
-” থ্যাংকস তো আমার তোকে দেওয়া উচিত শাফি। শুধু মাত্র তোর জন্য আমি আগামীকাল আমার বয়ফ্রেন্ড তাসিন কে বিয়ে করতে যাচ্ছি।যার সাথে আমার দশ বছরের সম্পর্ক। কিন্তু বেকার বলে বাবা আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে চান না। তুই’ই বল ভালোবাসা কি কখনো ধনী , গরিব , চাকরিজীবী , বেকার দেখে হয়? বাবা শুধু মাত্র নিজের স্বার্থের জন্য আমাকে তোর সাথে বিয়ে দিতে চায়ছেন।কিন্তু একজন মানুষের মন তো একটাই থাকে তাই না। আমার মন যে তাসিন কে দিয়ে দিয়েছি।সেটা যে আর কাউকে দেওয়া সম্ভব নয়।বাবা আর শফিকুল আঙ্কেল এর ইচ্ছে অনুযায়ী সবটা হচ্ছে তবে বিয়ে হবে আমাদের ইচ্ছে অনুযায়ী। অর্থাৎ আমার আর তাসিনের , তোর আর সূরার।”
__________________________________
-” রাত এগারোটা। প্রত্যেকের রুমের লাইট অফ হয়ে গিয়েছে।সূরা যেনো এই সময়টার অপেক্ষায় ছিলো।তার হৃদয় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।সে কিছুতেই তার সুন্দর ব্যাডা মানুষের সাথে অন্য কোনো মেয়েকে মেনে নিতে পারছে না। শুধু মাত্র আর কয়েক ঘণ্টা বাকি। এরপর তার সুন্দর ব্যাডা মানুষ সারাজীবনের জন্য অন্য কারো হয়ে যাবে এটা কিছুতেই চোখের সামনে দেখতে পারবে না সূরা।তাই তো সে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সূরা একটা চিরকুট লিখে টেবিলের উপর রেখে আলমারি থেকে কিছু টাকা নিজের হ্যান্ডপার্সে নিয়ে রাতের আঁধারে চুপিচুপি নাজমা মঞ্জিল থেকে বেরিয়ে পড়ে।।
চলবে ইনশাআল্লাহ।।