#এই_মন_তোমারি [ মুখোশ উন্মোচন]
#পর্ব_৩৫
#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন
-” আমি তোমাদের ছেড়ে আসতে চাইনি বাজান।আমাকে নাজমা মঞ্জিল ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিলো।তোমরা যেমন আমাকে তোমাদের পরিবারের একজন সদস্য মনে করতে, তেমনি আমিও তোমাদের কে আমার পরিবার মনে করতাম।দশ টা বছর তোমাদের নূন খেয়েছি। সবসময় মনে হয়েছে বাড়িটা আমার নিজের।যখন যা মন চেয়েছে তাই করেছি।আমি চেয়েছিলাম বাকি জীবন টাও তোমাদের সাথে কাটিয়ে দিবো। কিন্তু আমার ভাগ্যে জোটে নি। তোমাদের বাড়ি থেকে এসে আমার সংসারে অভাব অনটন শুরু হয়েছে।গ্ৰামে কাজের লোকদের কেউ দাম দেয় না বাজান।তারা শুধু মাত্র নামমাত্র বড়লোক। কিন্তু তাদের ব্যবহার ছোটলোকের মতো। তাদের বাড়ির সব কাজ করে দিলেও মাস শেষে এক হাজার টাকা ও দিতে চায় না। এ কয়টা মাস যে আমার সংসার কতো কষ্টে চলছে শুধু মাত্র আমি জানি। সেসব বাদ দাও বাজান।যা হবার তা হয়ে গেছে।এখন আর সেসব বলে লাভ নেই। আমার সূরা পাগলি টা কেমন আছে বললে না তো বাজান?”
-“সূরা আর বেঁচে নেই খালা।আমি সূরার কাকাকে সূরার মৃত্যুর খবর জানতে এসেছিলাম।”
-“এসব কি বলছো তুমি? আমাকে মিথ্যে বলছো তাই না?”
-” মিথ্যা না।এটাই সত্যি যে সূরা আর বেঁচে নেই।একটা বাস এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে।আমরা তার লাশ টাও পাই নি।”
-” বাস এক্সিডেন্ট মানে? সূরা কি কোথাও গিয়েছিলো?”
-” হ্যাঁ বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।এসব হয়েছে আমার জন্য খালা। তুমি আসার আগ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে চলছিলো। তুমি তো জানো আরাব সূরা কে পড়াতে এসেছিলো।আরাবের সাথে সূরা কে দেখে আমার জেলাস ফিল হয়।সূরা কে হারানোর ভয় জেঁকে বসে।আমি বুঝতে পারছিলাম না আমার ভয়ের কারণ টা কি। এরপর আমি উপলব্ধি করতে পারলাম যে আমি সূরা কে ভালোবাসি। এজন্য সূরা অন্য কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে এটা আমার সহ্য হচ্ছিলো না।আমি সূরা কে আমার মনের কথা জানিয়ে দেই। তারপর থেকে সূরা আমাকে ইগনোর করতে শুরু করে।আমার সাথে ঠিকমতো কথা বলতো না, আমার রুমে আসতো না।সব দেখে আশাহত হয়ে যায় আমি।এর মধ্যে আবার বাবা তরীর সাথে আমার বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগে।তরী আমার ফ্রেন্ড ছিলো। আমরা আগে থেকেই পরিচিত ছিলাম।আমরা দুজনে মিলে আমাদের বিয়ের নাটক করি।আমরা চেয়েছিলাম সূরা আম্মি সবাই কে সারপ্রাইজ দিতে। আমাদের প্ল্যান ছিলো বিয়ের দিন আমি সূরা কে বিয়ে করবো।আর তরী তার বয়ফ্রেন্ড তাসিন কে বিয়ে করবে। কিন্তু সূরা ভাবে আমি সত্যি সত্যিই তরী কে ভালোবেসে বিয়ে করছি।বোকা মেয়ে আমাদের নাটক কে সত্যি মনে করে বৃহস্পতিবার রাতে সবাই ঘুমোনোর পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।সেই বেরিয়েছে সূরা আর ফিরে আসে নি।এসেছে সূরার মৃত্যুর খবর।”
-” সব কিছু শুনে মাজেদা স্তব্ধ হয়ে রাস্তায় বসে পড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে পড়লো, এসব হয়েছে আমার জন্য।আমি যদি সেদিন সবটা বলে দিতাম তাহলে আজ হয়তো সূরা বেঁচে থাকতো।সূরার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী।”
-” এসব তুমি কি বলছো খালা?”
-” আমি ঠিকই বলছি। আমাদের সবার একটাই পরিচয় আমরা মানুষ। কিন্তু আমাদের সমাজে মানুষের মুখোশ পরে অনেক অমানুষ ঘুরে বেড়ায়।সেই অমানুষের মধ্যে একজন হলো তোমার বাবা শফিকুল দেওয়ান।যে নিজের স্বার্থের জন্য সব করতে পারে।”
-” খালা তুমি কার সর্ম্পকে কি বলছো জানো? শফিকুল দেওয়ান বাবা হয় আমার। হ্যাঁ আমি জানি আমার বাবা খারাপ তাই বলে এতোটাও খারাপ না যতোটা তুমি বলছো।তোমাকে ভালোবাসি , সম্মান করি তার মানে এই নয় যে তুমি আমার বাবার সম্পর্কে যা নয় তাই বলবে।”
-” আমি জানতাম তুমি তোমার বাবার নামে অপবাদ সহ্য করতে পারবে না। তোমার বাবার নামে কিছু বললে বিশ্বাস করতে পারবে না। অতঃপর মাজেদা শাফায়াতের হাতে একটা ভিডিও প্লে করে দিয়ে বললো, এজন্য আমি প্রমাণ স্বরূপ এই ভিডিও টা করে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি হয়তো সত্যটা যাচাই করতে আমার কাছে আসবে। কিন্তু তুমি তো তোমার বাবা কে অন্ধের মতো বিশ্বাস করো। ভিডিও ও টা দেখে শাফায়াত বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।চোখের কার্ণিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।সে ভাবতেও পারে নি তারা বাবা এতোটা নিচু মানসিকতার লোক। তৎক্ষণাৎ শাফায়াতের সূরার বলা কথাটা মনে পড়ে গেল।সূরা বলেছিলো আমি নিজের ইচ্ছায় কিছু করছি না।আমাকে বাধ্য করা হয়েছে। অথচ শাফায়াত ভেবেছিলো সূরা মিথ্যা এক্সকিউজ দিচ্ছে। শাফায়াতের ভাবনার মাঝে মাজেদা বললো,
-” সেদিন সূরা তোমার রুম থেকে বের হওয়ার পর তোমার বাবার মুখোমুখি হয়।আমি তখন নুজাইফার রুম থেকে বের হচ্ছিলাম , আর তখনি সূরা আর তোমার বাবার কথা শুনে সাইডে দাঁড়িয়ে সবটা ভিডিও করছিলাম।তোমার বাবা নিজের স্বার্থের জন্য তরীর সাথে তোমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলো।সেলিম কে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে সূরা কে তোমার থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছিলো। ভিডিও তে নিশ্চয় দেখেছো মেয়েটা কিভাবে তোমার বাবার পা জড়িয়ে ধরে আকুতি মিনতি করছিলো । তবুও তোমার পাষাণ বাবার হৃদয় গলে নি।এক পর্যায়ে ভাইজান আমাকে দরজায় দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনতে দেখে ফেলে।ভাগ্য ভালো যে ভাইজান ভিডিও করতে দেখে নি। ভাইজান কে দেখে তখন আমার ঘৃণা হচ্ছিলো।সে আমার মালিক ভুলে গিয়ে বলেছিলাম,
-” ছিঃ ভাইজান ছিঃ আপনি নিজের স্বার্থের জন্য এতোটা নিচে নামতে পারেন? আমি এই নিষ্পাপ মেয়ের সাথে কোনো অন্যায় হতে দিবো না। আমি নিচে গিয়ে সবাইকে সব সত্যি টা বলে দিবো।”
-” তুই যখন সবটা জেনে গিয়েছিস তখন আর তোর থেকে কিছু লুকিয়ে লাভ নেই।একটা খু’ন করলে ও যে শাস্তি দশটা খু’নে’র ও সেই শাস্তি। তোর একটা মাত্র ছেলে তাই না? নিজের ছেলের ভালো যদি চাস তাহলে আজ এক্ষুনি এই মুহূর্তে নাজমা মঞ্জিল ছেড়ে চলে যাবি।নাজমা কে বলবি তোর আর এই বাড়িতে কাজ করতে ভালো লাগছে না ।ব্যাস তোকে যেনো এই বাড়িতে আর কখনো না দেখি।তাহলে তোকে মা ডাকার মতো আর কেউ থাকবে না।”
-” নিজের ছেলের ভালো কে না চায় বলো তো বাজান। ভাইজান কে নিয়ে আমার বিশ্বাস ছিলো না।সে আমার ছেলের সাথে যা নয় তাই করতে পারতো। আমার ছেলেটার কথা ভেবে আমি নাজমা মঞ্জিল ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়। পাপ যেমন বাপকেও ছাড়ে না। তেমনি ভাইজান কে ও ছাড়বে না। ভাইজান তার কর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করবে।কারণ আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।”
_________________________________
-” শফিকুল দেওয়ান প্ল্যান করেছে সেই চুরি করা গহনা , টাকা নিয়ে চুপিচুপি রেণুর রুমে রেখে এসে রেণুর ঘাড়ে সমস্ত চুরির দায় দিবেন। বাড়িতে শাফায়াতের নানা নানু সবাই এসেছেন। নিজের মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ আর নাতনির মৃত্যুর খবরে তাদের মধ্যে শোকের কালো ছায়া নেমে এসেছে।নিচে সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছেন।এই সুযোগে শফিকুল দেওয়ান তার গুপ্ত কুঠুরি তে এসেছেন টাকা , গহনা নিতে। কিন্তু এইখানে এসে তার চক্ষু চড়কগাছ। কোথাও সেই টাকা , গহনা নেই। শফিকুল দেওয়ান মনে মনে বললো , টাকা গহনার ব্যাপারে তো আমি ছাড়া আর কেউ জানে না।তাহলে কোথায় গেলো এতো গুলো টাকা গহনা? শফিকুল দেওয়ান এর ভাবনার মাঝে রুমের লাইট জ্বলে উঠলো। শফিকুল ঘাবড়ে গিয়ে বললো , কে আছে রুমে?”
-” ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট মিষ্টার শফিকুল দেওয়ান।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।
আমার গ্ৰুপ : নূনের গল্প সাম্রাজ্য-Nuzaifa Nun ❤️