#এই_মন_তোমারি
#লেখিকা_নুজাইফা_নূন
#পর্ব_৩
-” তুই আমাকে একা রেখে যেতে পারিস না সুন্দর ব্যাডা মানুষ। আমার একা থাকতে ডর লাগে।আমি তো কখনো একা একটা বিছানায় থাকি নি।আমার সাথে মলি আপা থাকতো।আমি একা একা থাকলে যদি পেত্মী এসে আমার ঘাড় মটকে দেয়? যদি আমার গোশত খেতে হাড্ডি গুলো ফেলে দিয়ে যায়? তখন আমার কি হবে সুন্দর ব্যাডা মানুষ?”
-” শাফায়াত কখনো ভাবতে পারে নি সূরা এইভাবে দুহাতে তাকে জড়িয়ে ধরবে। শাফায়াত বিরক্ত হয়ে সূরার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, তোমার সাহস দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়ে যাচ্ছি? আমাকে জড়িয়ে ধরার সাহস হয় কি করে তোমার?”
-” জড়িয়ে ধরছি তো কি হয়েছে।তোর শরীরের এক অংশ খসে পড়ে গেছে?নাকি ঝলসে গেছে? জড়িয়ে ধরছি বেশ করছি। আমার পাড়ার দাদীরা বলছে বরকে জড়িয়ে ধরতে হয়,চুমা দিতে হয় আরো কতো কি বলছে।”
-” আর একটা কথা যদি তোমার মুখ থেকে বের হয় আমি সোজা তোমাকে জেলে ভরে দিয়ে আসবো। বে’য়া’দ’ব মেয়ে কোথাকার।যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো।এটা শহর। তোমাদের গ্ৰামের মতো সস্তা ভূত, পেত্মী আমাদের এইখানে থাকে না।আর যদি পেত্মী থেকেও থাকে সে মানুষের ঘাড়ে ভর করবে, কোনো পেত্মীর ঘাড়ে নয়। পেত্মীদের ঘাড়ে কটা মাথা আছে যে সে আর একটা পেত্মীর ঘাড়ে ভর করবে?”
-” খোঁচা ডা কি তুই আমারে দিলি সুন্দর ব্যাডা মানুষ? তুই ঠিক কি বোঝাতে চায়ছিস? আমি পেত্মী?”
-” অশিক্ষিত হলেও বুদ্ধিমতী আছো তুমি । এখন দয়া করে নিজে ঘুমাও আর আমাকে ঘুমোতে দাও।”
-” তুই এই ঘরে থাক না রে সুন্দর ব্যাডা মানুষ। আমার সাথে এক বিছানায় থাকলে তোর গায়ে ফোস্কা পড়ে যাবে তাই তো? ঠিক আছে তুই বিছানায় থাক। আমি নিচে শুয়ে পড়বো।এমনিতেও আমি ঐ নরম তুলতুলে বিছানায় শুতে পারবো না।এতো নরম বিছানা রে বাবা। আমি বিছানায় বসলেই ঠাস করে নিচে চলে যাচ্ছি।”
-” শাফায়াত কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় টোকা পড়ে। শাফায়াত দরজা খুলে দেখে তার আম্মি এসেছে। নাজমা দেওয়ান কে দরজায় দেখে অবাক হয়ে যায় সূরা।সে জোর গলায় বলে উঠে ভালো খালা তুই এইখানে? তুই না সেই ভালো খালা যে আমার বিয়ের দিন আমাকে আদর করে ভাত মেখে খাইয়ে দিছিলি? আমি তো ভাবছিলাম তুই বরের পক্ষের কেউ? তাই আমাকে এতো আদর করছিলি।”
-” তুমি ঠিক ধরেছো সূরা। আমি বরের পক্ষের লোক।”
-” কিন্তু আমার তো বুড়ো চেয়ারম্যান এর সাথে বিয়ে হয় নি।এই যে সুন্দর ব্যাডা মানুষ দেখছিস ও আমার বর রে বর। আমার বর অনেক সুন্দর না বল? এজন্যই আমি ওর নাম দিসি সুন্দর ব্যাডা মানুষ।”
-” তোমার ঐ সুন্দর ব্যাডা মানুষের মা আমি।এটা আমার বাড়ি।আর আজ থেকে তোমার ও বাড়ি।আমি শুধু তোমার সুন্দর ব্যাডা মানুষের মা না।আমি তোমার ও মা।এখন থেকে আমাকে ভালো খালা নয়,মা বলে ডাকবে কেমন।”
-” সূরার কি হলো কে জানে দৌড়ে গিয়ে নাজমা দেওয়ানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। তিনি ও দুহাতে জড়িয়ে ধরলো সূরা কে।সূরা নাক টেনে বললো , তুই সত্যি বলছিস ? আমি তোকে মা ডাকবো? জানিস ছোট বেলায় বাবা মাকে হারোনোর পর তোর মতো করে কেউ আমাকে আদর করে নি,বুকে টেনে নেয় নি,খাইয়ে দেয় নি। তুই সত্যিই আমার মা হবি?”
-” হ্যাঁ হবো তো।তবে একটা শর্তে।”
-” কি শর্ত বল না? আমি মায়ের আদর ভালোবাসার জন্য সব শর্ত পূরণ করবো।”
-” বড়দের সাথে এরকম তুই তুকারি করা যাবে না।এটা ভালো দেখায় না মা। বড়রা গুরুজন।আর গুরুজন হচ্ছে সম্মানীয় ব্যক্তি। তাদের সাথে তুই তুকারি করতে হয় না।”
-” কিন্তু আমি তো এইভাবেই কথা বলি।গ্ৰামে আমার বন্ধুরা সবাই এমন করেই কথা বলে।”
-” সবাই বললে তোমাকে ও যে বলতে হবে এমন কোনো কথা নেই মা।তোমাকে আদব কায়দা শিখতে হবে। পড়ালেখা শিখতে হবে। মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠতে হবে। আমি তোমার কাকা কে কথা দিয়েছি তোমাকে একটা সুন্দর জীবন উপহার দিবো আমি।”
-” ঠিক আছে মা।আপনি যা বলবেন তাই হবে।”
-” আমি লক্ষ্য করেছি তুমি মাঝে মাঝে কয়েকটা কথা শুদ্ধ ভাষায় ও বলো।আমি জানি তুমি পারবে। শুধু একটু চেষ্টা করতে হবে।”
-” আমি চেষ্টা করবো মা।”
-” এই তো আমার লক্ষী মেয়ে বলে নাজমা দেওয়ান সূরার কপালে চুমু এঁকে দিলেন।”
-” নাজমা দেওয়ান যাওয়ার সময় শাফায়াতের হাত ধরে বললো, দেখলি তো মেয়েটা ভালোবাসার কতোটা কাঙাল। তোরা দুই ভাইবোন সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছিস। যখন যা চেয়েছিস তাই পেয়েছিস। বরং প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেয়েছিস। অভাব কাকে বলে বুঝতে পারিস নি। আর মেয়েটা?মেয়েটার ও তোদের মতো সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম হয়েছিলো। কিন্তু বেশি দিন সেই সুখ ওর কপালে সহ্য হলো না। শুনেছি ওর যখন ছয় বছর বয়স ওর মা ওকে ছেড়ে চলে যায়। কিছুদিন পর ওর বাবা ও মারা যায়। মেয়েটার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।যে বয়সে ওর হাতে বই থাকার কথা সেই বয়সে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়েছে কড়াই, খুন্তি , গোয়ালের গোবর।আমি এইখানে এসেছিলাম সূরা কে আমার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।পরে মনে হলো তুই আমার ছেলে।আমি তোকে সেই শিক্ষায় বড় করে নি।আমি জানি তুই সূরা কে না মানতে পারলেও সূরার অসম্মান করবি না।দেখ বাবা শাফি বিয়েটা যেভাবেই হোক হয়েছে।আমি বলছি না তুই সূরা কে এই মূহুর্তে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নে। কিন্তু ভালো না বাসিস ফুলটার অযত্ন করিস না বাবা বলে তিনি প্রস্থান করলেন। নাজমা দেওয়ানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে শাফায়াত মনে মনে বললো, আম্মি আমাকে কতো বিশ্বাস করে , ভরসা করে।আর আমি? সত্যিই তো মেয়েটাকে স্ত্রী হিসেবে না মানলেও তার সাথে ভালো ব্যবহার তো করতে পারি। শাফায়াত দেখলো সূরা শুধু মাত্র একটা বালিশ নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়েছে।যা দেখে শাফায়াত সূরা কে ডেকে তুলে বললো,
-” বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ো।”
-” না। আমি বিছানায় গেলে তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি।আর সেই সুযোগে পেত্মী এসে আমার ঘাড় মটকে দিবো।”
-” আমি কোথাও যাচ্ছি না।আমি ও বিছানায় ঘুমোচ্ছি।”
-” সত্যি?”
-” হ্যাঁ বলে দুজনের মাঝখানে একটা কোলবালিশ দিয়ে শাফায়াত শুয়ে পড়লো।যা দেখে সূরা ও শাফায়াতের অপর পাশে আস্তে করে শুয়ে বললো, হে আল্লাহ আমি মনে হয় শহীদ হয়ে যাবো এই তুলতুলে বিছানায় শুতে গিয়ে। তুমি এই বিছানা টা কে শক্ত করে দাও আল্লাহ। সূরার কথা শুনে শাফায়াত বললো, তুমি যদি না ঘুমিয়ে আর একটা কথা ও বলো আমি সোজা বাইরে চলে যাবো।আর জানালা দিয়ে পেত্মী এসে তোমার র’ক্ত খেয়ে চলে যাবে।”
-” সূরা ভয় পেয়ে শাফায়াতের গেঞ্জি ধরে বললো, আমি ঘুমাচ্ছি। অতঃপর সূরা তার কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বললো,
” আয় ঘুম ঘুম সূরার চোখের পাতায় ,
না হলে যে সুন্দর ব্যাডা মানুষ আমাকে
ছেড়ে দিবে পেত্মীদের খাঁচায়”
_________________________________
-” মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে শাফায়াতের মনে হলো যেন কেউ তার হাত কা’ম’ড়ে গোশত উঠিয়ে নিয়ে যেতে চায়ছে। শাফায়াত ব্যাথায় ককিয়ে উঠে জলদি রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে দেখে ঘুমের মধ্যে সূরা সত্যি সত্যি তার হাত কা’ম’ড়ে ধরে রেখেছে।মনে হচ্ছে তার হাত একটা লেগ পিস।আর সূরা সেই লেগ পিস থেকে গোশত ছিঁড়ে খেতে চায়ছে। শাফায়াত তৎক্ষণাৎ সূরার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দেখে সূরার দাঁতের কা’ম’ড়ে’র ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার হাতে। শাফায়াত একটু জোর দিয়ে সূরার থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয় যার ফলে জেগে যায় সূরা।সূরা কে জাগতে দেখে শাফায়াত রাগান্বিত হয়ে বলে, আর ইউ ক্রেজি? জীবনে কখনো গোশত খাও নি?আর খাবে কিভাবে? মনে হয় না জীবনে কখনো গোশত চোখে দেখেছো। শেষ পর্যন্ত আমার হাত বেছে নিলে ছিঁড়ে খাওয়ার জন্য?”
-” সূরা তার বত্রিশ টা দাঁত বের করে এক গাল হেসে বললো, ঐ কি হয়ছে জানিস সুন্দর ব্যাডা মানুষ? আমি স্বপ্নে দেখছিলাম তুই আমাকে বড়ো রেস্টুফেস্টু তে নিয়ে গিছিস ।তো .. শাফায়াত সূরা কে হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললো এক মিনিট! রেস্টুফেস্টু কি?”
-” আরে রেস্টুফেস্টু যেইখানে বড়ো বড়ো সাহেবরা খাবার খেতে যায়।”
-” ওটা রেস্টুরেন্টে রেস্টুফেস্টু নয়।”
-” ঐ হলো আরকি।যে মিতের মা সেই মাওই মা। শুনবি তো তারপর কি হয়ছে। তুই আমাকে ঐখানে নিয়ে গিছিস ।আমি গিয়ে দেখি যে টেবিলের উপর এতো এতো খাবার রয়ছে। যা দেখে আমার জিভে পানি এসে গেছে।আমি খপ করে একটা মুরগির রান নিয়ে সবে কা ম ড় দিছি , খেতেও পারলাম না এর মধ্যে তুই আমার থেকে রান টা ছিনিয়ে নিয়ে গেলি।”
-” ওটা রান ছিলো না গা’ধা , আমার হাত ছিলো।”
-” সূরা মন খারাপ করে বললো , ওহ্।আমি তো সত্যি মনে করছিলাম। আমার সাথেই শুধু এরকম হয় ক্যা বল তো সুন্দর ব্যাডা মানুষ ?জানিস আমাদের ঘরের পাশে একটা নারিকেল গাছ আছে।তো আমি ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতাম যে আমি ঐ নারকেল গাছের গোড়ায় বসে হিসি করছি । কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখতাম আমার বিছানা ভিজে গেছে।আমি বিছানায় হিসি করে দিছি বলে আবারো বত্রিশ টা দাঁত বের করে হো হো করে হেসে উঠলো সূরা।
চলবে ইনশাআল্লাহ।।
পরের পর্ব: https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=254528697438866&id=100086452137176&mibextid=Nif5oz
আমার গ্ৰুপ নূনের গল্প সাম্রাজ্য-Nuzaifa Nun ❤️