-” আই ওয়ান্ট ডিভোর্স। একটা হাঁটুর বয়সী, অশিক্ষিত ,গ্ৰামের গাইয়া মেয়ের সাথে একই ছাদের তলায় আমি বসবাস করতে পারবো না। তুমি আমার যোগ্য না।আর না কখনো আমার যোগ্য হয়ে উঠতে পারবে।সবাই যখন আমার বউ দেখতে চায়বে,তখন লজ্জায় মাথা কা’টা যাবে আমার। তোমাকে কখনো আমার বউয়ের পরিচয়ে সবার সামনে দাঁড় করাতে পারবো। তাই আমি ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছি ।”
-” বাসর রাতে ঘোমটার আড়ালে থেকে কোনো পুরুষের কণ্ঠে ডিভোর্সের কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল সূরা।সে অশিক্ষিত হলেও ডিভোর্সের মানে জানা আছে তার।যাকে গ্ৰামের মানুষেরা তালাক বলে।এই তালাক শব্দটা তার জীবন থেকে সমস্ত সুখ শান্তি কেড়ে নিয়েছে। বঞ্চিত করেছে বাবা মায়ের আদর ভালোবাসা থেকে।তার যখন ছয় বছর বয়স কোনো কারণে তার বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। অথচ তার বাবা মায়ের লাভ ম্যারেজ ছিলো। সূরা লোকমুখে শুনতে পেতো তার মা নাকি তার বাবা কে ডিভোর্স দিয়ে অন্য একটা লোকের সাথে বিয়ে করে নতুন করে সংসার পেতেছেন।সূরা ছোট হলেও বুঝতে পারতো তার মায়ের নামে মন্দ কথা বলছে লোকজন। কিন্তু মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া আর কিছু করার ছিলো না সূরার। লোকে পরামর্শ দিয়েছিলো সেলিম শেখ কে দ্বিতীয় বিয়ে করার। কিন্তু তিনি সূরার কথা চিন্তা করে দ্বিতীয় বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। বাবার আদর ভালোবাসায় মা ছাড়া বেড়ে উঠতে লাগলো সূরা।তার বাবা সেলিম শেখ কখনো তার চোখে পানি আসতে দেয় নি।বড্ড ভালোবাসতো তার সূরা কে। কিন্তু সূরার কপালে যেন সুখ সহ্য হলো না। সেলিম শেখ বিদ্যুৎ অফিসে চাকরি করতো।আর সেই বিদ্যুৎ ই তার বাবার প্রাণ কেড়ে নেয়। বাবা মাকে হারিয়ে একা হয়ে পড়ে ছয় বছরের সূরা।তার মায়ের লাভ ম্যারেজের কারণে তার নানা ,নানী মামাদের সাথে তাদের কোনো প্রকার সম্পর্ক ছিলো না। ছোট্ট সূরা কার কাছে যাবে? কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিলো না। এমন সময় তার দুঃসম্পর্কের কাকা মনিরুল শেখ তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। সূরা কে নিয়ে আসে নিজের গ্ৰামের বাড়িতে। কিন্তু তার ছিলো অভাবের সংসার।ঠিকমতো দুই বেলা দুই মুঠো ভাত ও জুটতো না তার।একে তো সংসারে অভাব অনটন এর মধ্যে আবার সূরা কে তাদের পরিবারে নিয়ে আসার জন্য মনিরুল শেখের স্ত্রী রহিমা বেগম যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন মনিরুল শেখ কে। সূরা কে ঠিক মতো দুই বেলা দুই মুঠো পেট ভরে খেতে দিতো না।পান থেকে চুন খসলেই গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিতো।সব সহ্য করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না সূরার কাছে। প্রতিনিয়ত কাকির অনাদর ,অবহেলা , অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে বড় হতে থাকে সূরা। হঠাৎ ঘোমটার আড়ালে থাকা পুরুষের মুখে আবারো তালাকের কথা শুনে অতীত থেকে বাস্তবে ফিরে আসে সূরা।লোকটার মুখে তালাক দেওয়ার কথা শুনে বুঝতে পারলো এই লোকটা তার বর।যার সাথে আজ সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু তাকে দেখার সৌভাগ্য হয়ে ওঠে নি তার। সূরা দেখতে নজরকাড়া সুন্দরী না হলেও যথেষ্ট সুন্দরী বলা চলে। ডাগর ডাগর চোখ, হাঁটু পর্যন্ত ঢেউ খেলা চুল, পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চির হালকা পাতলা গড়নের মিষ্টি একটা মেয়ে।সে জানে তার বিয়ে একটা বুড়ো দুই বাচ্চার বাপের সাথে ঠিক হয়েছিলো।অবশ্য সূরার কাকা এই বিয়েতে রাজী ছিলো না। কিন্তু সূরার কাকির লোভ আর জেদের কাছে হার মানতে হয়েছে তার। সূরার যায় সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে লোকটা এলাকার চেয়ারম্যান।তার টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই। শুধু অভাব একটা বউয়ের।তার বউটা ছোট মেয়েটার জন্ম দিতে গিয়ে মা’রা গিয়েছে।তার বউ মা’রা যাওয়ার পর সূরার দিকে তার নজর পড়ে।সূরার কাকি কে ডেকে নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি।এটাও বলেন যে বিয়ের পর তাঁদের পরিবারের দায়িত্ব নিবেন তিনি। রহিমা বেগম কে আর লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝি এর কাজ করতে হবে না।কথাটা শোনা মাত্র লোভে চকচক হয়ে উঠে রহিমার মুখ।তিনি আর কোনো কিছু না ভেবেই রাজী হয়ে যান। বিষয় টা জানার পর সূরা তার নিজের ভাগ্য কে মেনে নিয়েছিলো।যার এই পৃথিবীতে বাবা মা নেই তার সাথে এর থেকে ভালো আর কি বা হতে পারে?সূরা এটা খুব ভালো করে জানে আর যায় হোক চেয়ারম্যান তাকে কখনো ডিভোর্স দিতে চায়বে না। কিন্তু লোকটার মুখে ডিভোর্সের কথা শুনে সূরা তৎক্ষণাৎ ঘোমটা ফেলে দিয়ে ডাগর ডাগর চোখে তার সামনে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে যেন চমকে উঠলো।সে মুখে হাত দিয়ে একটু জোরেই বলে উঠলো, ও মোর খোদা ! এ কি সুন্দর ব্যাডা মানুষ?এই সুন্দর ব্যাডা মানুষ তুই কি আমার বর রে?আমি তো ভাবছিলাম আমার হয়তো কোনো বুড়ো ভুরিওয়ালা লোকের সাথে বিয়ে হয়ছে। কিন্তু এখন তো দেখছি তুই অনেক সুন্দর রে।এক্কারে সিনেমার নায়কের মতো।”
-” সূরার মুখে তুই তোকারি শুনে রেগে আগুন হয়ে গেল শাফায়াত দেওয়ান।সে কখনো ভাবেনি একটা হাঁটুর বয়সী মেয়ে তার সাথে এইভাবে তুই তুকারি করে কথা বলবে। শাফায়াত দেওয়ান রেগে গর্জন তুলে বললো, হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস হয় কি করে আমার সাথে তুই তুকারি করার? তুমি জানো আমি কে?”
-” মনে হচ্ছে তুই আমার বর ।”
-” কিসের বর হ্যাঁ কিসের বর? আমি তোমার বর নই। আমি মানি না এই বিয়ে। খুব শ্রীঘ্রই আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।”
-” আবারো ডিভোর্সের কথা শুনে চোখ জ্বলে উঠলো সূরার। সূরা বিছানা থেকে নেমে শাফায়াতের দিকে তেড়ে এসে বললো, ডিভোর্স ই যখন দিবি, তখন বিয়ে করছিস ক্যান আমারে?বিয়ে করার আগে মনে ছিলো না তোর?আমি কি তোর পায়ে ধরে কইছিলাম যে আমারে বিয়া কর।কই নি তো এমন কথা তাই না? তাহলে আর একবার যদি ডিভোর্স এর কথা বলিস তোর মুখ আমি ছিঁড়ে দেবো।এই আমি বলে রাখলাম। তুই সূরা কে চিনিস না সূরা কি জিনিস?”
-” তোমার মতো বে’য়া’দ’ব মেয়েকে চেনার কোনো ইচ্ছাও নেই আমার।”
-” শাফায়াতের কথা শুনে সূরা তৎক্ষণাৎ তার শাড়ির আঁচলের নিচে থেকে একটা ছুরি বের করে শাফায়াতের দিকে এগিয়ে যেতেই শাফায়াত বললো, আরে আরে কি করছো টা কি?”
-” হা হা হা। সুন্দর ব্যাডা মানুষ বুঝি ভয় পায়ছে? এটা তোর জন্য নারে।এটা সাথে রাখছি ঐ বুড়োর জন্য।যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ছিলো। ভাবছিলাম বাসর রাতে ব্যাডার বিয়ে করার শখ মিটিয়ে দেব। কিন্তু তোর জন্য আমার সেই ইচ্ছাটা পূরণ হলো না।”
-“তোমাকে তো ভেবেছিলাম তুমি হয়তো গ্ৰামের মেয়ে সহজ সরল হবে। কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম। তুমি একটা বিচ্চুর থেকে ও ভ’য়ং’ক’র। ফালতু একটা মেয়ে।আর একটা কথা যদি তোমার ঐ মুখ দিয়ে বের করো , তাহলে কিন্তু তোমার খাবার খাওয়ার জন্য নকল দাঁতের ব্যবহার করা লাগবে।”
-” আমি গ্ৰামের মেয়ে হতে পারি কিন্তু অবলা নারী না। তুই আমাকে অত্যাচার নির্যাতন করবি আর আমি বসে বসে কি তোর সুন্দর চেহারা ধুয়ে পানি খাবো রে? আমি সোজা পুলিশের কাছে চলে যাবো।তোর নামে মামলা দেবো।তখন বুঝতে পারবি কতো গোবরে কতো গন্ধ?”
-” লাইক সিরিয়াসলি? তুমি আমাকে পুলিশের ভয় দেখাচ্ছো? এই শাফায়াত দেওয়ান কে? যে কিনা নিজেই একজন পুলিশ অফিসার।”
-” পুলিশ অফিসার কথা টা যেন সূরা ঠিক হজম করতে পারলো না। তৎক্ষণাৎ সূরা জ্ঞান হারিয়ে শাফায়াতের বুকে ঢলে পড়লো।”
চলবে কি??
#এই_মন_তোমারি
#সূচনা_পর্ব
#নুজাইফা_নূন
পর্ব:২
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=250567574501645&id=100086452137176&mibextid=Nif5oz
আমার গ্ৰুপ : নূনের গল্প সাম্রাজ্য-Nuzaifa Nun ❤️