এই_মন_তোমারি #পর্ব_৭ #লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

0
417

#এই_মন_তোমারি

#পর্ব_৭

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-” কি বলছেন আম্মি ? মেয়েটাকে পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি?আমি তো বাড়ি থেকে আসার সময় আমার রুমে দেখে এসেছিলাম।”

-” হ্যাঁ রে শাফি । কোথাও সূরা কে পাওয়া যাচ্ছে না।”

-” আপনি মেয়েটাকে চিনতে পারেন নি আম্মি।আস্ত একটা বিচ্ছু মেয়ে। দেখেন কোথাও মটকা মে’রে পড়ে রয়েছে।”

-” তুই সূরা কে চিনতে না পারলেও আমি তাকে চিনতে ভুল করি নি।মেয়েটা একদম ঘাঁটি সোনা। আমার তো সন্দেহ হচ্ছে তোকে নিয়ে।আমি শেষ বার সূরা কে তোর রুমে যেতে দেখেছিলাম। এরপর থেকে মেয়েটার আর দেখা মেলে নি। তুই সূরা কে আবার কিছু বলিস নি তো?”

-” হ্যাঁ বলেছি আম্মি। কিন্তু সেরকম কিছু তো বলি নি। শুধু বলেছি আমার রুমে আসবে না ব্যাস ।একটু কথা তো রাতেও বলেছিলাম। কিন্তু তারপরও মেয়েটা এসেছিলো আমার রুমে। তাহলে হঠাৎ করে কোথায় গেলো মেয়েটা?”

-” আমার এক‌ই প্রশ্ন। কোথায় গেলো মেয়েটা? ভেতর টা কেমন যেন কু গাইয়ে। ওর তো শহরের কিছুই চেনা জানা নেই। মেয়েটার কোনো বিপদ হলো না তো?”

-” ডোন্ট ওয়ারি আম্মি। আমি বাসায় আসছি।দেখছি কি করা যায় বলে শাফায়াত ফোন রেখে দিয়ে বললো, চার আঙ্গুলে মেয়ে আমার উপর রাগ দেখায়। সকাল বেলা একটু কথা শুনিয়েছি আর ওমনি তার দস্যিপনা শুরু হয়ে গিয়েছে ‌।সবাই কে টেনশনে ফেলে দিয়ে নিজে কোথাও মটকা মে’রে পড়ে রয়েছে। মেয়েটাকে একবার হাতে পাই একদম হাড্ডি গুড্ডি ভেঙ্গে জেলে ঢুকিয়ে দিবো। অ’স’ভ্য , বে’য়া’দ’ব একটা মেয়ে জ্বালিয়ে মা’র’ছে আমাকে।রাগে গজগজ করতে করতে শাফায়াত গাড়িতে উঠতে যাবে তার আগেই একজন কন্সটেবল এসে বললো, স্যার রাস্তার অপর প্রান্তে একটা মেয়ের অত্যন্ত বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে।হাত মনে হয় একদম লুলা হয়ে গিয়েছে। ব্লিডিং হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু অপরিচিত একটা মেয়েকে কেউ হসপিটালে নিয়ে যেতে চায়ছে না।”

-” তুমি এক কাজ কর শাকিল। অ্যাম্বুলেন্স কল করো আর মেয়েটাকে হসপিটালে নিয়ে যাও।আর মেয়েটার পরিবারের সদস্যদের খবর দাও।”

-” স্যার ছোট মাউথে একটা বিগ কথা বলছি।আপনি এমন ভাবে বলছেন যেন মেয়েটা আমার ম্যারিড করা ব‌উ। আমি যাবো আর আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি কে খবর দিয়ে বলবো যে, আপনার মেয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছে।আরে স্যার মেয়েটার পরিবারকে আমি কোথায় খুঁজে পাবো?”

-” রাবিশ আগে তাকে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে তো যাও। তারপর মেয়েটার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে তার পরিবারকে ইনফর্ম করো বলে শাফায়াত নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।”

-” শাফায়াত বাড়িতে এসে কলিং বেল দেওয়ার সাথে সাথে নাজমা দেওয়ান দরজা খুলে দিলো।যেন শাফায়াতের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। শাফায়াত কে দেখা মাত্র শাফায়াতের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বললেন, মেয়েটা কোথায় চলে গেল রে শাফি?মেয়েটার দায়িত্ব নিয়েছিলাম আমি। আমি ওর কাকা মনিরুল কে কি জবাব দিবো? গ্ৰামের লোকেদের সামনে মুখ দেখাবো কি করে?”

-” আপনি সব জায়গায় ঠিক করে দেখেছেন তো?”

-” হ্যাঁ, আমি বাড়ির প্রতিটি কোনা দেখেছি। কোথাও সূরা নেই।আর না আমরা কেউ সূরা কে বাড়ির বাইরে যেতে দেখেছি।”

-” আম্মি প্লিজ আপনার কান্না বন্ধ করুন।এই জিনিস টা আমার খুব বিরক্ত লাগে। চলুন আমি বাড়ির বাইরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করে দেখছি।তাহলে জানা যাবে মেয়ে টা বাইরে গিয়েছে কিনা? শাফায়াত সিসি ক্যামেরা চেক করে দেখে সূরা সত্যি সত্যিই সবার চোখে ধুলো দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।যা দেখে শাফায়াত বললো, দেখেছেন আম্মি আপনার আদরের সূরার কান্ডকারখানা? ওকে একবার আমি হাতের কাছে পাই ওর ঠ্যাং ভেঙ্গে রুমের মধ্যে বসিয়ে রাখবো।এই আমি বলে দিলাম আম্মি।”

-” নাজমা দেওয়ান তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো কোন অধিকারে সূরার ঠ্যাং ভাঙ্গতে চায়ছিস শাফি?শাসন করার জন্য একটা অধিকার লাগে।তোর কি আদৌ সেই অধিকার আছে? তাছাড়া তুই তো নিজেই সূরা কে বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিস।তাহলে শুধু শুধু আমাকে মিথ্যা কেন বললি শাফি? আমি তোকে এই শিক্ষা দিয়েছি?সূরার কিছু হয়ে গেলে আমি তোকে ক্ষমা করতে পারবো না শাফি।”

-” আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন আম্মি? আমি কেন মেয়েটাকে বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করবো?”

-” তুই যদি কিছু না বলিস তাহলে কি মেয়েটা এমনি এমনি বাড়ি ছেড়ে চলে গেল? সূরা গ্ৰামের সহজ সরল মেয়ে। ছোটবেলা থেকে বাবা মায়ের আদর ভালোবাসা পায় নি।পেয়েছে অনাদর অবহেলা ।ওকে নিশ্চয় তুই এমন কিছু বলছিস যাতে ও খুবই কষ্ট পেয়েছে।”

-” আমি সত্যিই সেরকম কিছু বলি নি আম্মি।”

-” তাহলে মেয়েটা কি এমনি এমনি চলে গেল?”

-” তৎক্ষণাৎ কোথা থেকে মাজেদা এসে বললো,এমনি এমনি চলে যায় নি আপা। মেয়েটা সকালে আপনাকে আর ভাইজান কে ঝগড়া করতে দেখেছে।সে হয়তো চায় নি তার জন্য আপনাদের মধ্যে কোনো অশান্তির সৃষ্টি হোক।”

-” অশান্তি তো এবার সৃষ্টি করবো আমি।ভালোই ভালোই একবার মেয়েটা কে পেয়ে যাই , তারপর ওকে নিয়ে আমি অন্যত্র চলে যাবো।ওকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলে তোর ভাইজান আর শাফি কে দেখিয়ে দিবো গোবরের মধ্যে ও পদ্ম ফুল ফোটে।”

-” আপনি একটু শান্ত হন আপা।আগে মেয়ে টাকে খুঁজে বের করতে তো হবে। তারপর নাহয় ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিবেন।”

-” এটা অবশ্য তুই ঠিক বলেছিস। তুই চল আমার সাথে । আমি নিজেই আমার সূরা কে খুঁজে নিয়ে আসবো।কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই আমার বলে বাইরে পা রাখার আগেই শাফায়াত তার হাত ধরে বললো, আ’ম সরি আম্মি। আমি সত্যিই বুঝতে পারি নি মেয়েটা আমার সামান্য কথায় বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। আপনার কোথাও যেতে হবে না আম্মি। আমার জন্য যখন মেয়েটা চলে গিয়েছে আমি নিজেই তাকে খুঁজে নিয়ে আসবো বলে শাফায়াত বের হতে যাবে এমন সময় তার ফোন বেজে ওঠে। শাফায়াত দেখলো ফোনের স্ক্রিনে শাকিল নাম টা জ্বলজ্বল করছে।শাকিলের কল দেখে শাফায়াতের তৎক্ষণাৎ এক্সিডেন্টের ঘটনা মনে পড়ে গেল। সূরার টেনশনে এক্সিডেন্ট এর ঘটনা তার মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো।সে তৎক্ষণাৎ ফোন রিসিভ করে বললো, হ্যাঁ শাকিল মেয়েটার কি অবস্থা এখন? ওর পরিবারের কারো খোঁজ পেয়েছো কি?”

-” হ্যাঁ স্যার । মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছে।তবে ডান হাত টা একদম লুলা হয়ে গিয়েছে। মেয়েটার ড্রেস আপ দেখে মনে হচ্ছে ভালো কোনো পরিবারের অথচ কথা শুনে মনে হচ্ছে কোনো গ্ৰামের মেয়ে।”

-” গ্ৰামের মেয়ে কথা টা শোনা ‌মাত্র হকচকিয়ে উঠে শাফায়াত।সে মনে মনে বললো, তাহলে কি সূরার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো? ও গড! এটা যেন সত্যি না হয়। শাফায়াত নিজেকে সামলে নিয়ে শাকিল কে জিজ্ঞেস করলো , আচ্ছা মেয়েটা কি পরে আছে? আই মিন শাড়ি না থ্রি পিস?”

-” কেন স্যার?”

-” তোমাকে যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও।”

-” মেয়েটা কালো কালারের শাড়ি পরে আছে। গাঁয়ে কিছু গহনা ও দেখা যাচ্ছে।মনে হচ্ছে কোনো নতুন ব‌উ। আমি মেয়েটার কাছে ওর বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞেস করছি। কিন্তু মেয়েটা তেমন কিছু বলতে পারছে না। শুধু বলছে ও কোনো সুন্দর ব্যাডা মানুষের বাড়িতে থাকে। সুন্দর ব্যাডা মানুষ কথা টা শোনা মাত্র শাফায়াত দৌড়ে তার গাড়ি নিয়ে হসপিটালে ছুটে এলো।সে শাকিলের বলা কেবিনে প্রবেশ করে দেখলো সাদা বেডের উপর সূরার কোমল দেহ টা পড়ে রয়েছে।যা দেখে কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো শাফায়াতের।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।
পরের পর্ব :https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=261219816769754&id=100086452137176&mibextid=Nif5oz

________________________________________________
-” আমাকে ও চান না? অবশ্য এখন আমি আমার দুই রাজকন্যা সূরা ও সিজদা কে জন্ম দিয়েছি, কালো হয়ে গিয়েছি, মোটা হয়ে গিয়েছি, চেহারায় মাতৃত্বের ছাপ ফুটে উঠেছে। এখন কি আর আমাকে আপনার ভালো লাগবে? আপনার মনের উঠোনে রাখবেন আমাকে?”

-” তুই শুধু দুটো বাচ্চা কেন যদি পুরো ক্রিকেট টিমের ও জন্ম দিস , যদি তোর হাত পায়ের চামড়া ঝুলে ও পড়ে , তবু এখন যেমন আমার মনের উঠোনে রেখেছি তোকে, তখনো ঠিক সেই জায়গাতেই থাকবি বলে সাহিত্য উষ্ণতার কপালে চুমু এঁকে দেয় সাথে তার দুই রাজকন্যা সূরা সিজদা কেও।

আমার প্রথম ইবুক #মনের_উঠোনে_রেখেছি_তোকে সোমবার দুপুর ২ টা বাজে ব‌ইট‌ই অ্যাপে আসবে ইনশাআল্লাহ।ব‌ইট‌ই অ্যাপ থেকে সম্পূর্ণ গল্প টা পড়তে পারবে মাত্র ৩০ টাকায়। আশা করি সাহিত্য, শিক্ষার ভালোবাসায় তোমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।

আমার গ্ৰুপ : নূনের গল্প সাম্রাজ্য-Nuzaifa Nun ❤️নূনের গল্প সাম্রাজ্য-Nuzaifa Nun ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here