প্রেম_আমার♥ #পার্ট-৩৭♥ #Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥ . 🌺

0
375

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩৭♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
নীবিড় ভাইয়া আরোও ২ মিনিট পর আমার ঠোঁটজোড়া ছেড়ে দিয়ে হাঁপাতে লাগলেন। আমি এদিকে রোবটের মতো শুধু দাঁড়িয়েই আছি। কেনো যেনো নিজেকে অনুভূতি শুণ্য একটা রোবটের মতো লাগছে আমার!
মাথাটা ভীষণ ভারী ভারী লাগছে, কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা আমি। মোটকথায় একপ্রকার শকের মধ্যে রয়ে গিয়েছি যেনো। সবকিছু কেমন আবছা আবছা লাগছে আমার কাছে।
.
—- ব্রো? পিকচার আভিভি বাকি হ্যায় ওর খাতাম হুয়া হ্যায়?
.
অগ্নি রুশো কথায় চোখ বন্ধ রেখেই বলে উঠলো,
—- এবার তুই দেখ! আগেরবার আমি দেখতে নিয়েছি তাই আবারও শুরু করেছিলো। তুই দেখলে করবে না আর। তোর লাকি চোখ আর আমার কুফা চোখ!
.
রুশো এক আঙুল দিয়ে কিছুক্ষণ মাথা চুলকে আবারও বলে উঠলো,
—- ব্রো, লাকি তো বুঝলাম, বাট হোয়াট ইজ কুফা চোখ?
.
অগ্নি ভ্র কুঁচকে রুশোর দিকে এক পলক চেয়েই নিজের হাত রুশোর চোখের সামনে থেকে সরিয়ে বলে উঠলো,
—- ভাই আমার, আগে দেখ সব ঠিক আছে কিনা!
.
রুশো নিজের চোখ পিতপিট করে খুলে সামনে তাকিয়ে দেখলো নীবিড় অনন্যার ঠোঁট ছেড়ে দিলেও এখনোও কোমড় জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
তাই সে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠলো,
.
—- ব্রো আধা ঠিক তো আধা বেঠিক!
.
অগ্নির রুশোর কথার আগা-মাথা কোনোকিছুই না বুঝে একরাশ বিরক্তি নিয়ে নিজেও চোখ খুলে সামনে তাকালো। সবাই নীবিড় আর অনন্যার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রয়েছে। কিন্তু কেউ টু শব্দও করছে না। হয়তো তারাও শকের মধ্যে রয়েছে।
সবাই যে যার স্থানে স্থির থেকে হা করে তাকিয়ে আছে ফিল্ডের মিডিল পয়েন্টে!
.
🍁
.
নীবিড় ভাইয়া আমায় ছেড়ে দিয়ে নিজের এক হাত দিয়ে আমার বা দিকের কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে একপ্রকার চেঁচিয়েই বলে উঠলেন,
.
—- আশা করছি এবার আর কারো কোনো কোয়েশ্চেন অর এনি টাইপ অফ প্রবেলমস নেই।
লুক এট দ্য গার্ল, শি ইজ মাই ওয়াইফ,
শি ইজ মাই লাইফ!
শি ইজ মাই এভরিথিং!
সো ওকে নিয়ে কোনো উল্টো পাল্টা কথাবার্তা এই সাদমান শাহরিয়ার নীবিড় সহ্য করবেনা। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, ওর আশেপাশেও যদি কোনো ছেলে অর এনি টাইপ অফ লো মাইন্ডেড মেয়ে ঘুরে ওকে ডিস্টার্ব করে দেন তাকে জ্যান্ত পুতে ফেলতে দু’বারও ভাববো না আমি।
.
উনার এতো জোড়ে চেঁচিয়ে বলা কথাগুলোও আমার কানে খুবই হাল্কা মনে হচ্ছে। কথাগুলো উনার এতো কাছে থাকা সত্ত্বেও কান পর্যন্ত পৌঁছোচ্ছে না আমার।
মাথাটা কেমন যেনো ঝিমঝিম করছে আমার। চোখে ইতিমধ্যে ঝাপসা দেখতে শুরু করে দিয়েছি আমি! বুঝতে পারছি আমি জ্ঞান হারাচ্ছি। দেহের ভার ছেড়ে দিচ্ছি ক্রমশই।
মাথাটা হঠাৎ চক্কর দিয়ে উঠলো আমার, সাথেসাথেই গা এলিয়ে দিলাম উনার ওপর।
তারপর আর কি হয়েছে তা আমার মনে নেই।
.
🍂
.
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে আমার বেডরুমে আবিষ্কার করলাম আমি। আমায় ঘিরে বসে আছে আম্মু-আব্বু, অগ্নি ভাইয়া, নিত্য আপু, রুশো ভাইয়া আর রাত্রি।
আরেকটু ঘরের চারপাশে চোখ বোলাতেই চোখে পড়লো নীবিড় ভাইয়াকে। উনি দরজার সাথে হেলান দিয়ে এক পা ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছেন। এক হাত উনার পকেটে আরেক হাতের দু আঙুল দিয়ে কপালে স্লাইড করে যাচ্ছেন উনি।
.
আমায় জ্ঞান ফিরে পেতে দেখে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। নীবিড় ভাইয়া আমার জ্ঞান ফিরায় এক পলক চেয়েই আবারও মুখ ঘুড়িয়ে নিলেন।
আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলো,
—- এখন কেমন লাগছে রে মা? তুই এমন কেনো বলতো? আমার একটা কথাও শুনিস না। খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করিস না। এই রোদে না খেয়ে দুপুর পর্যন্ত থাকলে তো জ্ঞান হারাবিই!
.
আব্বু আম্মুকে থামিয়ে সামান্য বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে বলে উঠলো,
—- আহ! অনামিকা, থাক না সেসব কথা। আগে ওকে উঠিয়ে খাইয়ে দাও।
.
পাশেই নিত্য আপু বসে ছিলো। আপু আমার গাল টেনে দিয়ে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
—- অনন্যা, দুধ, ডিম ফ্রুটস এসব খুব কম খায় তাইনা?
.
ওমনি আম্মু যেনো নোবেল জিতার সুযোগ পেয়ে গেলো। পেটে চেপে থাকা বারো বছরের নালিশ যেনো একদিনেই পারা শুরু করে দিলো।

—- আর বলিস না, কিচ্ছু খেতে চায় না। ফলমূল কিছু তো খায়ই না তার ওপর দুধের নাম শুনেই বাড়ি ছেড়ে পালায় এমন অবস্থা! ডিম ও খেতে চায় না।
শুধু খায় এক মুরগী! শাক-সবজি জীবনেও খাওয়াতে পারিনি ওকে আমি।
শুধু আজেবাজে খাবার খেয়ে বেরোয়! সকালে ব্রেকফাস্ট টাও ঠিকমতো করে না। বলে ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নেবে।
.
আম্মুর ননস্টপ নালিশে আমি শুধু অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে রইলাম আম্মুর দিকে। এদিকে অগ্নি ভাইয়া আমার এমন করুন অবস্থায় যেনো ভীষণ মজা পাচ্ছে!
আম্মু আরোও কিছুক্ষণ আমার বিরুদ্ধে নালিশ পাড়তে পাড়তে একসময় থেমে গিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলো। সব শুনে নিত্য আপুর মুখে গম্ভীরতার সৃষ্টি হলো।
আপু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠলো,
.
—- মামনি, আমি একটা চার্ট বানিয়ে দেবো সেই অনুযায়ী ওকে খাওয়াতে হবে।
.
আমি আবারও অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম আম্মুর দিকে। যার অর্থ, “আম্মু গো আমি শহীদ হয়ে যাবো, তাও ওসব ঘাস-ফুস খেতে পারবোনা!”
কিন্তু মা জননী আমার অসহায় দৃষ্টি একেবারেই তুচ্ছ ভেবে উপেক্ষা করে আবারও বলে উঠলো,
.
—- এবার তোদের দ্বায়িত্ব দিলাম ওকে খাওয়ানোর, আমি আর পারবোনা।
.
অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়া দুজনেই আম্মুর কথায় ঠোঁট উল্টালো! যার অর্থ তারা নিজেরাও আমায় জোড় করে খাওয়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত!
নীবিড় ভাইয়া এবার দরজায় হেলান দেওয়া থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চুলগুলো এক হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিয়ে বলে উঠলো,
—- ও তুমি চিন্তা করো না মামনি! আমাদের ওপর ছেড়ে দাও।
.
আম্মু-আব্বু মুচকি হেসে উঠে চলে গেলো লাঞ্চ সার্ভ করতে। এদিকে রুশো ভাইয়া এতোক্ষণ বোধহয় পেটের সাথে যুদ্ধ করে কথা আটকিয়ে রেখেছিলো।
আম্মু আব্বু যেতেই উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে বসলো,
.
—- তার মানে ছুটকি ওই ইয়ের জন্য সেন্সলেস হয়নি, শরীর দূর্বল ছিলো তাই সেন্স হারিয়েছিলো?
.
রুশো ভাইয়ার প্রশ্নে অগ্নি ভাইয়া মুখ ফুলিয়ে চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই, রুশো ভাইয়া আমতাআমতা করে বলে উঠলো “উউউপপসসস…! সরি!”
এদিকে নিত্য আপু আর রাত্রি মুখ চেপে হেসে চলেছে। নিত্য আপু হাসি থামিয়ে বলে উঠলো,
.
—- এক্সাক্টলি!
.
এদিকে আমি মনে করার চেষ্টা করছি ক্যাম্পাসে তখন কি ঘটছিলো? উনি তো আমায় টেনে মিডিল পয়েন্টে গিয়ে থামলেন। দেন আমার কোমড় জড়িয়ে ধরেও ছিলেন তারপর………আর কিছু মনে আসছে না কেনো আমার?
কিছু মনে করতে চেষ্টা করলেই সব কিছু কেমন ঘোলাটে লাগছে আমার কাছে।
আমি মাথা ধরে আস্তে আস্তে উঠে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে সবার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করে উঠলাম,
.
—- তখন কি হয়েছিলো? আমার কিছু মনে পড়ছেনা কেনো?
.
আমার এমন প্রশ্নে সবাই যেনো সাত আসমান থেকে ধপাস করে পড়ে গেলো! রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া চোখ বড়বড় করে দুজন দুজনের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে।
রাত্রি আমায় ঝাঁকিয়ে বলে উঠলো,
.
—- সিরিয়াসলি অনন্যা, তোর কিচ্ছু মনে নেই?
.
আমি আবারও মনে করার চেষ্টা করেও কিছু মনে করতে না পেরে ঠোঁট উল্টালাম।
—- শরীরটা তখন কেমন যেনো করছিলো, উনি তো আমায় টেনে নিয়ে গেলেন। তারপর থেকেই কেমন যেনো সবকিছু ঘোলাটে ঘোলাটে লাগছিলো। আচ্ছা এক্সাক্টলি কি হয়েছিলো?
.
সবাই যেনো আমার কথায় একপ্রকার হাফ ছেড়ে বাঁচলো। অগ্নি ভাইয়া তো পারেনা লুঙ্গি ড্যান্স দেয়।
আর রুশো ভাইয়া তো অলরেডি লাফ মেরে উঠে “ঢিংকাচিকা!” বলে ছাম্মাক ছাল্লো শুরু করে দিয়েছে।
কিন্তু নীবিড় ভাইয়া এখনো আগের মতোই রয়েছেন। এতে যেনো কিছু যায়ই আসছে না উনার।
.
—- রুশো ভাইয়া লাফাচ্ছো কেনো?
.
রুশো ভাইয়া লাফাতে লাফাতে হঠাৎ থেমে গিয়ে আমায় টেনে বসা থেকে উঠিয়ে বলে উঠলো,
“মনে বড় খুশি রে! বাদ দে, খেয়ে নিবি ছুটকি, চল! আর ব্রো, সিস, এটম বোম্ব তোমরাও চলে এসো।
বলেই আমায় ড্রয়ইরুমে নিয়ে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিলো রুশো ভাইয়া। আমাদের পেছন পেছন বাকি সবাইও এসে উপস্থিত হলো।
.
আমার একপাশে অগ্নি ভাইয়া আর এক পাশে রুশো ভাইয়া, রুশো ভাইয়ার পাশে রাত্রি। আমার ঠিক সামনে আছেন নীবিড় ভাইয়া, তার ঠিক পাশে নিত্য আপু।সবাই যে যার মতো খেয়ে যাচ্ছে, শুধু আমার গুনোধর ভাইটা ছাড়া। অগ্নি ভাইয়া খেতে খেতে একটু পর পরই কেঁপে কেঁপে উঠছে। ব্যাপারটা ঠিক সুবিধের ঠেকছে না আমার। টেবিলের নিচে কিছু তো গড়বড় ঘটছেই।কিন্তু কি?
ভাইয়ার হঠাৎ মৃগী রোগ হওয়ার কারণটা তো জানতে হচ্ছে। তাই রুশো ভাইয়ার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলাম,
.
—- রুশো ভাইয়া, একটু হেলো তো।
.
রুশো ভাইয়া আমার কথায় খাওয়া থামিয়ে ভ্রঁ কুঁচকে লো ভয়েজে বলে উঠলো,
—- কেনো রে? কি হয়েছে ছুটকি?
.
—- আরে টেবিলের নিচে তাকাও। অগ্নি ভাইয়া একটু পর পর কেঁপে উঠছে কেনো তার কোনো উত্তর পাও কিনা দেখো!
.
রুশো ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে সম্মতি জানিয়ে সবার আড়ালে মাথা হেলে টেবিলের নিচে তাকালো। কিন্তু কথা হচ্ছে রুশো ভাইয়া গত ২ মিনিটেও উঠছে না। সবাই খাওয়া থেকে চোখ সরিয়ে ভাইয়াকে এভাবে হেলে থাকতে দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। তাই হাতের কুনুই দিয়ে রুশো ভাইয়ার পিঠে আস্তে করে গুঁতো মেরে দিলাম আমি।
রুশো ভাইয়া পিঠে খোঁচা লাগায় তাড়াহুড়ো করে উঠতে যেয়ে টেবিলের সাথে “ঢাস” করে বারি খেয়ে “আউউচ্চ!” করে উঠলো।
রুশো ভাইয়ার আওয়াজে সবাই খাওয়া থামিয়ে এদিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। রুশো ভাই মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে উঠে বসতেই সবার নজর বন্দি হয়ে যাওয়ায় একটা শুকনো ঢোক গিলে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। ভাইয়ার অসহায় চাহুনী দেখে আমি শুধু ঠোঁট উল্টালাম।
রুশো ভাইয়া আবারও দাঁত কেলিয়ে সবার উদ্দেশ্য বলে উঠলো,
.
—- ইয়ে মানে ওই, পা চুল্কোচ্ছিলো তাই হেলে চুলকোচ্ছিলাম আরকি। তোমরা খাও ব্যাপার না। আম ফাইন।
.
রুশো ভাইয়ার কথায় সবাই সন্তুষ্ট হলেও হলো না শুধু রাত্রি। সে ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলো,
—- এখন কেনো টেবিলে ইচ্ছে করে ২ বার বারি খেলেন না? আপনার তো আবার একবার বারি খেলে সিং গজায়।
.
রাত্রির কথায় রুশো ভাইয়া আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে আবারও অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঠাস করে আবারও টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বারি খেলো। তাতে রাত্রির যেনো কোনো ভাবাবেগ হলোনা। আরও নিশ্চিন্ত হয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো সে।
রুশো ভাইয়া কিছুক্ষণ মুখ ফুলিয়ে থেকে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
.
—- ছুটকি,, কাবাডি কাবাডি কাবাডি।
.
—- মানে? কাবাডি খেলা কোথায় থেকে আসলো?
.
রুশো ভাইয়া আবারও দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো,
—- ব্রো আর ভাবী টেবিলের নিচে কাবাডি খেলছে। ভাবী ব্রোর পায়ে খোঁচা দিচ্ছে!
.
এতোক্ষণে বুঝলাম রুশো ভাইয়ার কাবাডি খেলার আসল মানেটা। তারমানে হলো এই যে নিত্য আপু আর অগ্নি ভাইয়া টেবিলের নিচে পা দিয়ে রোমান্স করছে। আমার ভাই তো এমনিতেই নিরামিষ! বেচারী নিত্য আপুকেই সবকিছু প্রথমে শুরু করতে হবে।
ভেবেই মুচকি মুচকি হাসতে লাগলাম আমি আর রুশো ভাইয়া!😂
.
🌸
.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এসেছে। রুশো ভাইয়া রাত্রিকে পৌঁছে দিতে গিয়েছে। এদিকে আজ নিত্য আপুর আব্বু আবারও ঢাকায় গেছেন বিজনেসের জন্য! আম্মু এই শুনে আপু আর নীবিড় ভাইয়াকে একদম আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলেছে যেনো। কোনোভাবেই যেতে দেবেনা আজ। নীবিড় ভাইয়া অনেক বলার পরও কোনো কাজ হলো না। অগত্যাই তাদের আজ আমাদের বাসাতেই থাকতে হবে বলে মুখ কালো করে রেখেছেন উনি। এদিকে নিত্য আপুতো ভীষণ খুশি যা আপুর চেহারা দেখে বেশ বুঝতে পারছি আমি।
হঠাৎ কলিং বেল বাজায় চমকে উঠলাম আমি। রুশো ভাইয়া এসে গেছে হয়তো।
.
দরজা খুলতেই চোখে যেটা সর্বপ্রথম পড়লো সেটা হলো লাল টকটকে টমেটো!
রুশো ভাইয়া আবারও নিজের নাকটা টমেটো বানিয়ে এনেছে। কিন্তু ব্যাপারটা ভীষণ অদ্ভুত লাগছে আমার। বাসায় থাকতে তো রাত্রি ঠিকই ছিলো। তবে আবারও কি করে বসলো রুশো ভাইয়া যে আবারও রাত্রি তার ঢাই কিলোর হাত দিয়ে রুশো ভাইয়ার নাকটা ফাটিয়ে লাল বানিয়ে ফেললো?
.
রুশো ভাইয়া সোফায় বসে মুখ ফুলিয়ে রয়েছে। এদিকে আমি আইস ব্যাগ নিয়ে এসে ভাইয়ার নাকে লাগাচ্ছি।
.
—- ভাইয়া, এবার তো বলো কি করে কি হলো?
.
রুশো ভাইয়া আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো,
—– জানিস তো ওদের বাসার সামনে গাড়ি থামাতেই রোডে একজন মহিলাকে ঝাড়ু দিতে দেখেছিলাম আমি। তো ওই মুহূর্তে কেনো যেনো রাত্রির হাতে ঝাড়ু থাকার সিনটা কল্পনায় আসতে লেগেছিলো।
তো আমি আনমনেই ওকে বলে ফেলেছিলা যে, “এটম বোম্ব, তোমাকে না ঝাড়ু হাতে টম এন্ড জেরীর ওই ঝাড়ুর পিঠে উঠে উড়ে বেরানো ডাইনি গুলোর মতো লাগে!”
ব্যাস! তারপর যা হওয়ার তাই হলো। সোজা নাক বরাবর একটা পাঞ্চ মেরে চলে গেলো। আমার কি ফল্ট বল? আমি তো জাস্ট ইমাজিন করে যার মতো লাগে সেটাই বলেছিলাম। ওর তো আরো প্রাউড ফিল করা উচিৎ তাইনা? কজ, টম এন্ড জেরীর একটা ক্যারেক্টার হতে পারাটা তো ভাগ্যের ব্যাপার! আমার তো এখনও কার্টুনটা ভালো লাগে। নিজেকে কেমন যেনো টমের মতো লাগে।
.
রুশো ভাইয়ার কথা শুনে আমি হাসবো না কাঁদবো, না গড়াগড়ি খাবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা! কিন্তু এটা বেশ বুঝে উঠতে পারছি আমার পেটে হাসির বোম্ব গুলো ইতিমধ্যে আকুপাকু করা শুরু করে দিয়েছে।
আমি রুশো ভাইয়াকে কোনো রকমে সান্ত্বনা দিয়ে ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।
দরজা লাগানোর পরে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে হু হা করে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়া শুরু করে দিলাম। উফফফফফ……! হাসতে হাসতে আমার পেট টাই না ফেটে যায়।😆
.
🌹
.
ড্রয়ইরুমের মাঝে পিনপতন নীরবতা বিরাজমান! আব্বু আজ নাকি খুব জরুরী একটা কথা বলবে বলে আমাদের সবাইকে ডেকে পাঠিয়েছে। যার দরুন আমরা সকলে উপস্থিত এখানে।
রুশো ভাইয়া আবারও দাঁতটাকে নেইল কাটার বানিয়ে ফেলেছে। তবে আমি আজ পানি নিয়ে বসিনি। তাই অগত্যাই গলা শুকিয়ে গেলেও গলা ভেজাতে পারছিনা। পুরো জীবনে এতোটা সিরিয়াস আব্বুকে সচরাচর কখনো দেখিনি আমি। আজ হঠাৎ আব্বুর এমন গম্ভীরতা বড্ড ভাবাচ্ছে আমায়।
এদিকে অগ্নি ভাইয়ার হাটু কাঁপা শুরু হয়ে গিয়েছে।
আর নীবিড় ভাইয়া ভাবলেশহীন ভাবে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে রয়েছেন। নিত্য আপুও বেশ চিন্তিত আব্বুর এমন সিরিয়াসনেস দেখে।
আব্বুকে এখনোও চুপচাপ থাকতে দেখে আমি আপুকে বললাম এক গ্লাস পানি এনে দিতে। যেহেতু ইম্পর্ট্যান্ট কথাটা আমায় নিয়েই তাই আমি আর নড়লাম না।
.
একটুপরই নিত্য আপু পানির গ্লাস নিয়ে হাজির হতেই আব্বু মুখ খুললো!
—- শোন অনন্যা! তুই তোর নাহিন আংকেল কে তো চিনিস তাইনা?
.
আমি একটু মনের করার চেষ্টা করে বলে উঠলাম,
—- ওইযে আমার বার্থডেতে পেট মোটা, ভূরি ওয়ালা গোপ বিশিষ্ট একটা লোক এসেছিলো উনি?
.
আমার কথায় নীবিড় ভাইয়া বাদে সবাই ফিক করে হেসে আবারও নীরবতা পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
আব্বু আবারও গম্ভীরতা ধারণ করে বলে উঠলো,

—- হুম উনিই! উনার একমাত্র ছেলে নিহাম এবার মেডিকেল পাশ করে বেরিয়েছে! উনি তোমায় দেখে ভীষণ পছন্দ করেছে তাই উনি চান তোমার সাথে নিজের ছেলের বিয়ে দিতে। আর তোমারও তো বয়স ১৯ রানিং!
ছেলে ভালো পরিবারও ভালো। আগামী সপ্তাহে ওরা ছেলে সহ তোমায় দেখতে আসবে। তুমি সুন্দর ভাবে নম্র ভদ্র আচরণ করবে, যা যা জিজ্ঞেস করে তার ঠিকঠাক উত্তর দেবে।
.
আব্বুর কথা শুনে আমার অর্ধেক খাওয়া পানি ভুসসসস….করে মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো। এদিকে রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া কাশতে কাশতে বোধহয় যক্ষ্মা রোগীর খেতাব ছিনিয়ে নেবে।
নিত্য আপু মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বসে পড়লো।
শুধুমাত্র সাদা বিলাইয়েরই কোনো রিয়াকশন চোখে পড়লো না আমার। উনি এখনোও ভাবলেশহীন ভাবে ফোনে মুখ গুঁজে রয়েছেন।
.
—- ওহ নো…….! ব্রো, এটা কি হলো? আমি তো শুনেছি মেয়েদের সতিন হয়। এখন তো দেখছি নীবিড় ব্রোর ও সতিন হবে।
.
—- আরে রাখ তোর সতিন!
হায় কপাল আমার, আমাকে যে দুজনের শালা হতে হবে তার বেলা?
.
.
.
চলবে………………💕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here