#মৃগতৃষ্ণা
#পর্ব:০৬
ওরা সবাই রাজবাড়ী ফিরে এলো।হেমন্তি আর সিরাজের মধ্যে তেমন কোনো ঝগড়া হচ্ছে না কাল রাতের পর থেকে।দুজনে সারা গ্রাম ঘুরলো কিন্তু কেউ কাউকে খোঁচা দিয়ে একটা কথাও বললো না ভাবতে অবাক লাগে রফিকের। ওরা একমুহূর্ত একসাথে ভালোভাবে থাকতে পারেনা সারাক্ষণ ঝগড়া করে আর সেটা রফিক থামায়।
রফিকের হেমন্তির প্রতি একটু দুর্বলতা আছে, মনে মনে হেমন্তিকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে,ওদের দুজনের বোঝাপড়াটা অনেক ভালো, কার কখন কি প্রয়োজন কে কি বলতে চায় বলার আগেই দুজন দুজনের কথা বুঝে যায়। রফিক অনুভব করে ও হেমন্তিকে ভালোবাসে কিন্তু বলার সাহস পায়নি কখনো। যদি ওদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যায়।
দুপুরের খাবার সেরে নিয়ে ওরা ঠিক করলো ওদের একেকজনের এস্যাইনমেন্ট একেকজন দেখবে আর কোনো কারেকশন করার প্রয়োজন পরলে সেটাও অন্যজন বলে দিবে।এভাবেই ওরা গ্রুপ ওয়ার্ক গুলো করে থাকে আজও তাই।
দিগন্ত সোফিয়ার ডায়েরি আর হেমন্তি নিয়েছে সিরাজের ডায়েরি, সিরাজ আবার নিয়েছে হেমন্তির ডায়েরি । সোফিয়া নিয়েছে রফিকের ডায়েরি আর রফিক নিয়েছে দিগন্তের ডায়েরি।
সবাই গভীর মনোযোগ দিয়ে ডায়েরি গুলো দেখতে লাগলো, হেমন্তির ডায়েরি সবসময় রফিক কারেকশন করে দিতো কিন্তু আজ সিরাজকে দেখতে দিয়েছে হেমন্তি। অন্যদিন সিরাজ টানাটানি করলেও দিতো না কারন সিরাজ সবসময় হেমন্তিকে রাগাতো উল্টো পাল্টা কথা বলে।
হেমন্তি সিরাজের ডায়েরিটা খুব খতিয়ে দেখছে।সিরাজ বেশিকিছু লেখেনি ডায়েরিতে।খুব ছোট করে রাজবাড়ীর বর্ণনা দিয়েছে তাই পড়তেও বেশিক্ষণ সময় লাগলো না। কিন্তু শেষের কয়েকটা লাইন পড়ে হেমন্তি খুব হাসতে থাকে। হেমন্তির হাসির দিকে সিরাজ বিস্ময় চোখে তাকিয়ে থাকে এরমধ্যেই ওরা সবাই জিজ্ঞেস করে ডায়েরিতে সিরাজ কি এমন লিখেছে যে এত হাসছিস?
হেমন্তির হাসি যেন মুখ থেকে সরছেই না ও হাসতে হাসতে সিরাজের লেখা শেষের লাইনগুলো পড়তে লাগলো “- রাজবাড়ীতে আসার মূল উদ্দেশ্যই ছিলো মিস.সুনয়নাকে (জুলেখা) একটিবার নিজ চোখ দেখা। কিন্তু তাকে দেখা হলো না নিষেধাজ্ঞা আছে বলে, তাই আমার মনটা ভীষণ খারাপ, এতটা কাছে এসেও আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর চোখওয়ালা রমণীর দেখা পাবো না এরচেয়ে দুঃখের ভ্রমণ আর হতে পারে না।
এবার ওরা সবাই মিলে হো হো করে হেসে উঠল। হেমন্তি বললো সিরাজ তোর একটা জায়গায় সামান্য একটু ভুল আছে আমি কারেকশন করে দিচ্ছি দাঁড়া, এই বলেই হেমন্তি ডায়েরিতে মিস.শব্দটা কেটে মিসেস বানিয়ে দিলো। এরপর বললো মিস নয় মিসেস সুনয়না রে। হা হা হা হি হি হি
সিরাজ ওদেরকে হাসতে দেখে বললো আমার সুনয়নাকে আমি যা ইচ্ছে তাই বলবো তাতে তোদের কি? ও আমার স্বপ্নের অবিবাহিত সুনয়না।আর আমি ওর হবু স্বামী।
এবার রাজবাড়ীতে যেন হাসির রোল পরে গেলো।এরপর হেমন্তি সিরাজকে বললো তোর লেখার বর্ণনা খুব সংক্ষিপ্ত হয়েছে যা দেখলে মাষ্টারমশাই রেগে যেতে পারেন। এতদিনের সফরের এইটুকু বর্ণনা!! আমি তোর ডায়েরিটা নিয়ে নিচ্ছি সাথে করে রাতে তোর এসাইনমেন্ট করে দিবো।
সিরাজ বললো তোর সময় বেশি হয়ে থাকে তাহলে করতে পারিস।
বিকেলে আবার ওরা রাজবাড়ীটা ঘুরে দেখছে। নিষিদ্ধ কোনো কিছুর ওপর মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি তাই ঘুরে ঘুরে সেই জুলেখার কক্ষের আশেপাশেই চোখ যায় ওদের। হেমন্তি আর সোফিয়া ঘুরে ঘুরে সেখানেই যাচ্ছে তবে নিষেধ করায় সাহস পেল না সামনে যাওয়ার।
জুলেখা কারও পায়ের আওয়াজ পাচ্ছে। সে লক্ষ্য করছে বারবার তার কক্ষের সামনে পায়চারি করা হচ্ছে, জুলেখা বোরকা ও নিকাব আটকে নিলো এরপর আওয়াজ দিলো- আমার কক্ষের বাইরে কারা আছো??
হেমন্তি আর সোফিয়া কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো, দুজন দুজনের দিকে বারবার দৃষ্টি দিচ্ছে আর ইশারায় বলছে উত্তর দে! কিন্তু দুজনের কেউই জবাব দিচ্ছে না।
ভেতর থেকে জুলেখা আবার বললো কারা এখানে?
হেমন্তি আমতা আমতা করে বললো আ-আমরা এখানে বেগম জুলেখা। হেমন্তি নিজের শাড়ির আঁচলটা শক্ত করে ধরে আছে আর সোফিয়ার দৃষ্টি ওঠানামা করছে, কি করবে বুঝতে পারছেনা।
জুলেখা আবার বললো ভেতরে আসুন। এবার ওরা দুজন আস্তে আস্তে পা ফেলে বেগম জুলেখার কক্ষে প্রবেশ করলো। নিকাব পরিহিতা জুলেখাকে কি অপরূপ সুন্দর লাগছে।দুজনেই থ হয়ে তাকিয়ে থাকে জুলেখার দিকে।কারো চোখ এতটাও সুন্দর হতে পারে জানা ছিলো না ওদের। তাহলে মানুষ ভুল প্রশংসা করেনি বরং যতটুকু শুনেছে তার চেয়েও হাজার গুন বেশি সুন্দর মনে হচ্ছিল। জুলেখা ওদের বসতে বললে ওরা ওনার দিকে তাকিয়েই বসে। হেমন্তি আর সোফিয়ার দৃষ্টি যেন জুলেখার ওপর থেকে সরছেই না অপলকভাবে তাকিয়ে আছে ওরা দুজন।
জুলেখা : আপনারা রাজবাড়ীতে এসেছেন আমি জানি তবে আমি বাইরের কারো সাথেই দেখা করিনা। কিন্তু আপনারা যখন মেয়েমানুষ তাই দেখা দেওয়াই যায়। শুনলাম আপনাদের সাথে নাকি আরও তিনজন মেহমান এসেছে তারা কোথায়?
হেমন্তি উত্তর দিল ওরা রাজবাড়ী ঘুরে দেখছে, কালকে দেখেও পুরোপুরি শেষ করতে পারনি তাই আরকি!
জুলেখা : আমার পরিচয় সম্পর্কে তো তোমরা অবগত তবুও বলছি আমি জনাব সুলায়মানের বেগম।
সোফিয়া: হ্যা নিশ্চয়ই অবগত। আপনার সম্পর্কে জানিয়াছি বলিয়াই আরও আগ্রহ হইয়াছে রাজবাড়ী ভ্রমণ করিতে। আমি মিস.সোফিয়া।
জুলেখা: আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনি ইংরেজ।
হেমন্তি: জ্বি বেগম জুলেখা। ও ইংরেজ। আমি হেমন্তি ইতিহাস বিভাগে পড়াশুনা করছি আমরা। সেই সুবাদেই এখানে আসা আর আপনার রূপের অনেক প্রশংসা শুনেছি আমরা, তাইতো আপনাকে দেখার আরও আগ্রহ হচ্ছিল কিন্তু জনাব সুলায়মান আমাদেরকে নিষেধ করেন আপনার কক্ষে আসার।
জুলেখা মৃদু হেসে হাত দিয়ে তার মুখের ওপর থেকে নিকাবটা সরালো, একমুহূর্তে জন্য ওরা নিস্তব্ধ ও বিস্মিত হয়ে গেলো আসলেই উনি রূপবতী সুনয়না।
সুলায়মানের পাশে রূপবতী সুনয়নাকেই মানায়, আসলেই ওই লোকটার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আছে তা না হলে এমন রমনীকে বেছে নিতে পারতো না।মনে মনে বললো হেমন্তি।
সোফিয়ার দ্বিতীয় ভুলটি ভাঙলো জুলেখাকে দেখে।তার জীবদ্দশায় সে এত সুন্দর নারী এর আগে দেখেনি।সোফিয়া কিছুক্ষণ নিজের দিকে তাকাচ্ছে আবার কিছুক্ষণ জুলেখার দিকে।সে নিজেকে সবচেয়ে সুন্দর রমনী মনে করতো কিন্তু না জুলেখা তার চেয়েও হাজারগুন বেশি সুন্দর। গায়ের রং সাদা হলেই যে সুন্দর হওয়া যায় না সেটা সোফিয়া উপলব্ধি করতে পারলো।
হেমন্তির মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো “মাশাল্লাহ “।
হেমন্তির মুখে মাশাল্লাহ শুনে জুলেখা বলে উঠলো জনাব সুলায়মান ও আমাকে প্রথম দেখে বলেছিলো মাশাল্লাহ যা আজও আমার কানে বাজে।
হেমন্তি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে আর কিছু কি মনে আছে আপনার বেগম জুলেখা যা আজও আপনার কানে বাজে?
– হ্যা মনে আছে। আমাদের যেদিন দ্বিতীয় বারের মতো দেখা হয়েছিল সেদিন সে বলেছিলো
~ ❝ চোখ বুজলেও আমি আপনাকে দেখি, চোখ খোলা রাখলেও আপনারেই ভাবি। দ্বিবারাত্রি আপনারে স্বয়নে-স্বপনে আমার হৃদয়ে যত্ন করিয়া রাখি ❞
হেমন্তি আর সোফিয়া মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো জুলেখার দিকে। তাদের ২০ বছর আগের কথা এখনো মনে আছে! তার চেয়েও বড় কথা সুলায়মান বড্ড ভালোবাসে জুলেখাকে নয়তো এভাবে কেউ বলতে পারে না।
হেমন্তি জুলেখাকে আবার প্রশ্ন করে বসলো জনাব সুলায়মান কি আপনাকে অনেক ভালোবাসে??
জুলেখা মুখে একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো এই পৃথিবীর পুরো প্রেম একদিকে আর আমার প্রতি তার প্রেম অন্যদিকে রেখে মাপা হলে তার প্রেমের পাল্লাটাই ভারি হবে।এতটাই ভালোবাসেন উনি আমায়।
হেমন্তি প্রশ্নাত্মক স্বরে বলল এতোটাই ভালোবাসেন?
জুলেখা মুখে হাসি নিয়ে হেমন্তির দিকে এগিয়ে এলো আর ওর মাথা থেকে বুক পর্যন্ত হাত বুলাতে বুলাতে বললো এরচেয়েও হয়তো বেশি যতটা মাপা যায়না বললেই চলে। যেমন ধরো আমি বললাম হেমন্তির ক*লিজা আমার খে*তে খুব ইচ্ছে করছে! উনি সঙ্গে সঙ্গে তোমার কলিজা কে*টে আমার সামনে হাজির করবে। এতটাই ভালোবাসেন উনি আমায়। এই বলেই জুলেখা মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলো।
হেমন্তি বসা থেকে হুট করে দাড়িয়ে পড়লো এমন কথা কারো মুখে কোনোদিন শুনেছে বলে তার মনে হয়না এভাবে কেউ ভালোবাসার সংজ্ঞা দেয় কিনা তাও জানা নেই ওদের। হেমন্তির বুক ধরফর করছে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে পুরো শরীরে একটা কম্পনের সৃষ্টি হয়েছে।
জুলেখার দৃষ্টি হেমন্তির দৃষ্টির সীমানায় পড়লে হেমন্তি চোখ নামিয়ে ফেলে কেমন যেন ভয়ংকর চাহনি ওনার।
জুলেখা মুখে বেশ উজ্জ্বল হাসি নিয়ে বললো এই তোমরা আবার ভয় পেলে নাকি? আমি কিন্তু রসিকতা করেছি।। তবে উনি আমায় সত্যিসত্যিই অনেক ভালোবাসেন।যা একজন মানুষের কল্পনাতীত।
সোফিয়া আর হেমন্তি বললো আমরা বরং আজ আসি অন্যদিন কথা হবে। হেমন্তি একটা ঢোক গিলে বলল অনেক্ক্ষণ হয়েছে আমরা এখানে আছি আমরা না গেলে ওরা হয়তো খুঁজতে পারে আমাদের। এই বলেই ওরা জুলেখার কক্ষ থেকে এলোমেলো পা ফেলে বাইরে বেড়িয়ে এলো।
হেমন্তি সোফিয়াকে ফিসফিস করে বললো – জানো সোফিয়া আমার মনে হলো আমি যেন নিজের কলিজাটা হাতে নিয়ে বের হয়ে এলাম।উফ! কি ভয়ংকর কথার ধরন!ভুত দেখলেও বোধহয় আমি এতটা ভয় পেতাম না যতটা ওনার কথায় ভয় পেলাম।
সোফিয়া বললো উনি যেমনি ভয়ংকর রকমের সুন্দর তেমনি ওনার কথা বলিবার ধরণও ভয়ংকর রকমের।
ওরা দুজন কক্ষের মধ্যে এসে বসে রইলো আর কি যেন আনমনে ভাবতে লাগলো, এরমধ্যেই সিরাজ, দিগন্ত আর রফিক এসে বললো কিরে! তোরা কই ছিলি এতক্ষণ, দেখলাম না যে? ওদের দুজনের সেদিকে খেয়াল নেই।ওরা ভাবনার ঘোরে রয়েছে।
সিরাজ বললো দেখ না হেমন্তি কি সুন্দর! দিগন্ত রাজবাড়ীর চিত্র এঁকেছে। একদম হুবহু রাজবাড়ী। আরে সোফিয়া দেখো না।কি ভাবছো তোমরা?
এবার সোফিয়া আর হেমন্তির হুস ফিরল দুজনেই ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে এলো। রাজবাড়ীর চিত্র দেখে তো ওরা পুরাই মুগ্ধ। খুব সুন্দর করে এঁকেছে দিগন্ত।দিগন্তের আঁকার হাত এতো ভালো ওরা কেউ সেটা জানতো না। তবে মাঝে মাঝেই দেখতে দিগন্ত চিত্র আঁকছে।
সোফিয়া দিগন্তের দিকে চেয়ে বললো খুব সুন্দর করিয়া স্কেচ করিতে পারো তুমি দিগন্ত। ইট’স বিউটিফুল।
দিগন্ত তো খুশিতে আত্মহারা সোফিয়ার মুখে তার প্রশংসা শুনে। হা হয়ে তাকিয়ে আছে সোফিয়ার মুখপানে। খুশির ঝলকানি যেন বেড়েই চলেছে। মনে মনে দিগন্ত নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো আরও আগে কেনো সোফিয়াকে আমার আঁকা স্কেচখাতাটা দেখালাম না? আমি তো সোফিয়ার অনেকগুলো স্কেচ করেছি সেগুলো কি এখন দেখাবো? না না ও কি ভাববে থাক পরেই দেখাবো না হয়।
কিছুক্ষণ পর হেমন্তি বলে উঠলো সিরাজ আমি আর সোফিয়া তোর স্বপ্নের সুনয়নাকে দেখে এলাম, সত্যিসত্যিই অনেক সুন্দর যা বর্ণনা করার ভাষা আমাদের নেই।
সিরাজ ভ্রু জোড়া কুচকে নিয়ে বললো মজা করছিস নাতো?
হেমন্তি বলল না রসিকতা করছি তোর সাথে।
সিরাজ দাড়ানো থেকে ধপ করে বসে পড়লো বিছানার উপর, মুখে বিস্ময়কর ও প্রশ্নাত্মক ভাব নিয়ে বললো বল না হেমন্তি কেমন দেখতে আমার মিস.সুনয়না? অনেক সুন্দর তাইনা?
হেমন্তি আর সোফিয়া হেসে উঠল। বললো অনেএএএক অনেএএএক সুন্দর যা বলার মতো ভাষা আমরা খুজে পাচ্ছিনা।তোকে একটা ধন্যবাদ দিতেই হয় এখানে আসার আইডিয়া টা যদি তুই না দিতি তবে হয়তো কখনোই এমন সুদর্শন পুরুষ ও রূপবতী নারীকে দেখতে পেতাম না।
সিরাজ মুখটা মলিন করে বলল কি লাভ হলো বলতো? আমি নিজেই তো দেখতে পেলাম না।
হেমন্তি সিরাজের জুলেখাকে দেখার এত আকুলতা দেখে ভাবতে বসলো কি করে জুলেখাকে দেখানো যায়। হুট করেই হেমন্তি মাথায় একটা বুদ্ধি আসে, ও দিগন্তের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে- দিগন্ত আমরা যদি তোকে বেগম জুলেখার রূপের ও চোখ মুখের বর্ণনা দেই তবে পারবি না একটা স্কেচ আঁকতে?
দিগন্ত আমতা আমতা করে বলে উঠলো আমি ঠিকঠাক পারবো কিনা জানিনা তবে চেষ্টা করে দেখতে পারি। হেমন্তির বর্ণনা শুনে কয়েকবার চেষ্টা করেও দিগন্ত স্কেচ আঁকতে পারলো না।দিগন্ত বললো তোর বর্ণনা আমার মনকে ঠিক স্পর্শ করতে পারছেনা সোফিয়াকে বল বর্ণনা করতে তবেই আমি পারবো।হেমন্তি ভ্রু কুচকে বলল ও তাই নাকি! আচ্ছা দেখি তো কেমন বর্ণনা দেয় তোমার সোফিয়া।এবার যদি আঁকতে না পারিস তবে তোর খবর করে ছাড়বো বলে দিলাম।
এরপর সোফিয়া জুলেখার রূপের বর্ণনা দিতে লাগলো দিগন্ত সেই মতো আঁকতে শুরু করলো একদম হুবহু না হলেও অনেকটাই জুলেখার মতো হয়েছে।
ওরা সবাই স্কেচটা দেখে হা হয়ে গেলো এতো সুন্দর রমনীও হয় নাকি!
সিরাজের মুখ থেকে বেরিয়ে এলো এত সুন্দর কোনো নারী হয় নাকি?
হেমন্তি কেমন যেনো অভিমানী সুরে বলে উঠলো এটা দেখেই এই কথা বলছিস আর জুলেখাকে দেখলে কি করবি? তবে যাই বলিস মি.সুলায়মান কিন্তু এর চেয়েও বেশি সুন্দরী রমণী পেতে পারতো শুধু আরেকটু সবুর করলেই পারতো।
-কাকে পেতো শুনি?
-কেনো! আমাকে।
-হা হা হা হা হা হিহিহিহি উনি নাকি সুনয়নার চেয়ে বেশি সুন্দর! হা হা হা
হেমন্তির চোখ মুখে কেমন যানি বেদনার ছাপ ফুটে উঠেছে সাথে অভিমানের ছাপও স্পষ্ট।
সিরাজ এবার ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলে উঠল হাহ্ যেই না তোমার সুলায়মানের চেহারা আমার সুনয়নাকে পেয়েছে এটা তার চৌদ্দ গোষ্ঠীর ভাগ্য। এবার ওদের দুজনের ঝগড়া বেধে গেলো সুলায়মান ও জুলেখা কে নিয়ে সিরাজ বলছে জুলেখা বেশি সুন্দর আর হেমন্তি বলছে সুলায়মান বেশি সুন্দর।
ওদের এই ঝগড়ার মাঝে কোনো দ্বন্দ নেই বরং খুনসুটি বিদ্যমান।রফিক বেশ বুঝতে পারছে সেটা তাই ওদেরকে আজকে আর থামালো না। মনের মধ্যে একটা কষ্ট অনুভূত হচ্ছে। মনে হচ্ছে হেমন্তি ওর থেকে অনেকটা দূরে সরে যাচ্ছে।
পরেরদিন সকালে বিভিন্ন গ্রামের গ্রাম প্রধানরা এসেছে সুলায়মানের কাছে গত একমাসে অনেকগুলো গ্রাম থেকে ধাপে ধাপে বাচ্চা চুরি হচ্ছে সেটা নিয়ে সুলায়মানের কাছ থেকে তারা পরামর্শ নিতে এসেছে কিভাবে বন্ধ করা যায় এই অপহরণ। আর অপরাধীদেরকেই বা কিভাবে ধরা যায় সেই বিষয়ে কথা বলছে সবাই। রফিক আর সিরাজ সেইসব কথাগুলো আড়াল থেকে শুনছে। তীক্ষ্ণ মনোযোগ দিয়ে শুনছে রফিক।কেন যেন মনে হচ্ছে এ বাড়িতেই লুকিয়ে আছে অপরাধী…………..
চলবে,,,
#লেখা: মুন্নি ইসলাম
[নেক্সট লেখার পাশাপাশি গল্প সম্পর্কে মন্তব্য করলে আরও বেশি খুশি হবো। লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করে পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ]