এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️ #লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️ — পর্বঃ২৩

0
835

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৩

আকাশ জুড়ে মেঘ নেমেছে। শীতের আভাস নামছে দারুণ। মাগরিবের আযান শেষ হলো কিছু সময় পেরিয়েছে। সন্ধ্যা হয়েছে প্রায়। চারপাশ লালচে দেখাচ্ছে। জনসমূহ থেকে খানিক দূরে নিরিবিলি এক পরিবেশ। পাখিরা ছুটছে সূদুরে। ফারিশ আদ্রিতা বসে আছে একটা আলোহীন ল্যামপোস্টের নিচে। নীরব দুজনেই। কথা নেই কারো মুখে। তারা কফিশপ থেকে বেরিয়ে এসেছে প্রায় মিনিট পনের হবে। ফারিশ তার হুডির টুপি আর মাস্ক দুটোই পড়ে নিয়েছে। আদ্রিতা অনেক দ্বন্দ্ব হাটিয়ে নীরব স্বরে শুধালো,“আমরা কি এখন থেকে রিলেশনে আছি?”

ফারিশের দ্রুত জবাব,“না।”
আদ্রিতা বেশ অবাক হয়ে বললো,“তবে?”
ফারিশ কিছু বলে না চুপ করে রয়। অনেকক্ষণ পর আকাশ পানে তাকিয়ে বলে,“গত সাতদিন আপনার সাথে সাক্ষাৎ না করে আমি ভেবেছিলাম আমি বোধহয় আপনায় ভুলে যেতে পারবো। কিন্তু হলো না। আপনি হতে দিলেন না। আপনার সাথে দেখা না হওয়ায় গত সাতদিন আমার নিজেকে বড্ড এলেমেলো লেগেছে। আমাকে এতটা এলেমেলো না বানালেও কিন্তু পারতেন ডাক্তার ম্যাডাম।”

ফারিশ থামতেই আদ্রিতা বলে উঠল,“আর আপনি যে আমায় পাগল বানাচ্ছেন তার বেলা। আপনি জানেন গত সাতদিন আমি কতটা অস্থিরতায় ছিলাম। আমি রোজ আপনার জন্য আমার রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতাম। অপেক্ষা করতাম। আমার মন বলতো, আপনি আসবেন। অথচ আপনি আসতেন না। কতটা নিরাশ ছিলাম জানেন। কালকে তো মা ভাত রান্না করতে বলেছিল। আমি চুলায় পানি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি চাল দিতে আর মনে নেই।”

আদ্রিতার শেষের কথা শুনে ফারিশ হেঁসে উঠলো। খানিকটা শব্দও হলো সেই হাসিতে। আদ্রিতা চোখ মুখ কুঁচকে বললো,“একদম হাসবেন না তো আপনার হাসিতে আমার বড্ড অসহ্য লাগে।”

ফারিশ তার হাসি থামালো ঠিকই। তবে শীতল স্বরে আওড়ালো,
“আর আপনার অসহ্যকেই যে আমার দারুণ লাগে।”

আদ্রিতার মুগ্ধনীয় আঁখি। গলায় দৃঢ়তার ছোঁয়া। লোকটা এত সুন্দর করে কথা কেন বলে। কে জানে! আদ্রিতা মৃদু স্বরে বললো,
“আপনি এত সুন্দর করে কথা কেন বলেন ফারিশ?”
“আপনাকে পাগল বানানোর জন্য।”
“হয়ে তো গেছি কবেই।”
“আমি তো দেখি না।”
“আপনার চোখ আছে?”
“নেই।”
“আছে তো না থাকার মতো।”

ফারিশ মৃদু হাসলো। আদ্রিতা চোখ রাঙিয়ে বললো,
“আবার হাসছেন?”
“আমার দারুণ লাগছে।”

আচমকাই আদ্রিতাদের ল্যামপোস্টায় লাইট জ্বলে উঠলো। খানিকটা চমকে উঠলো আদ্রিতা। পরক্ষণেই নিজেকে সামলালো । ফারিশ বললো,
“আমি কিন্তু ভালোবাসতে জানি না ডাক্তার ম্যাডাম।”
“সমস্যা নেই আমি শিখিয়ে নিবো।”
“আমার বাবা, মা, ভাই, বোন কেউ নেই।”
“তাতে কি আমার তো আছে।”
“আপনি বিপাকে পড়বেন।”
“আপনি সঙ্গে থাকলে সব বিপাক আমি ঘুচিয়ে নিবো।”
“আমার বারে বারে মনে হয় আপনি আমার সাথে ভালো থাকবেন না।”
“একবার রাখতে তো শিখুন ভালো থাকা আমি বুঝে নিবো।”

ফারিশ আর কিছু বলে না। চুপ করে রয়। তার বড্ড ছন্নছাড়া লাগছে। বিষাক্ত প্রেম তাকে বড্ড ভাবাচ্ছে। ফারিশ জোরে একটা নিশ্বাস ফেললো। আদ্রিতার হঠাৎ মনে পড়লো ফারিশের পিঠে থাকা সেই ক্ষতের কথা। এতবারের দেখা হওয়াতেও সে একবারও জিজ্ঞেস করে নি পিঠের যন্ত্রণা কি কমেছিল। আদ্রিতা এ কথা ভুলে কি করে গেল। আদ্রিতা দ্রুত প্রশ্ন করলো,“আপনার পিঠের ক্ষতটা কি কমেছিল? সেলাই কি কেটেছিলেন?”

ফারিশ দৃষ্টি রাখলো আদ্রিতার চোখের দিকে। মেয়েটাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। ফারিশ বললো,
“হুম সেরেছে।”
“সেলাই কাটা হয়েছিল?”
“হুম আদিব কিছুদিন আগে একজন ডক্টর এনেছিল।”
“যাক ভালো।”

আবারও নীরবতা ভর করলো দুজনের মাঝে। একটু একটু করে সময় গড়ালো। সন্ধ্যা সরিয়ে ধীরে ধীরে অন্ধকার ঘনিয়ে আসতে লাগলো। আদ্রিতা অনেকক্ষণ পর বললো,
“আমরা কি সারাদিন এখানেই বসে থাকবো?”
“তুমি বললে আমি তাও করতে রাজি।”

আদ্রিতা বুঝি খুশি হলো। ফারিশ তাকে আবার তুমি করে বলেছে। সেদিনের তুমিটার চেয়েও আজকের তুমিটা যেন তাকে অন্যরকম অনুভূতি দিচ্ছে। আদ্রিতা মৃদু হাসলো। সাহস জুগিয়ে ফারিশের হাতখানা ধরলো। ফারিশের নিষ্পলক চাহনি। আদ্রিতা বললো,“আপনার মুখের তুমি ডাক আমায় বড্ড আনন্দ দেয়। আমায় তুমি করেই ডাকবেন।”

ফারিশের তখনই উত্তর আসে,“আর আপনার ভালো লাগা আমায় যে বড্ড পীড়া দেয় ডাক্তার ম্যাডাম।”
—-
রান্নাঘরে কাজ করছে আদ্রিতার মা। রাগে ফুঁসছেন তিনি। রাগটা হলো আরাফাতের ওপর। তার নাকি আদ্রিতাকে ভালো লাগে নি। কথাটা শোনার পর থেকেই আদ্রিতার মায়ের মেজাজ চরম খারাপ। ভালো যখন লাগে নি আগেই বলতো, ছবি দেখে কেন বলেছিল ভালো লেগেছে। খামোখা মেয়েটা তার পায়ে ব্যাথা নিয়ে ছেলেটার সাথে দেখা করতে গেল। বাড়ির কলিংবেল বাজার শব্দ আসলো তখনই। রাফিন নিজের পড়ার টেবিলে বসে বই পড়ছিল। আদ্রিতার মা আওয়াজ করে বললেন,“রাফিন দরজাটা খোল তো। তোর আপু এসেছে বুঝি।”

রাফিন উঠে দাঁড়ালো। দ্রুত গিয়ে দরজা খুললো। সত্যিই অাদ্রিতা এসেছে। আদ্রিতা আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকলো। রাফিন বললো,“আরাফাত ভাইকে তোর কেমন লাগলো আপু?”

আদ্রিতার জবাব,“মোটামুটি।”
রাফিন দরজা আঁটকে বোনের পিছু পিছু গেল। বললো,
“জানিস আপা আরাফাত ভাই বলেছে সে নাকি এখন বিয়ে করবে না।”
“ভালো তো। সত্যি বলতে আমিও এই বিয়েটা করতে চাচ্ছিলাম না।”

আদ্রিতার মা এগিয়ে এলেন। তড়তড় করে বললেন,“একদম ঠিক চেয়েছিলি আরাফাতকে আমারও ভালো লাগে নি। আমি তোর জন্য অন্য পাত্র দেখবো।”

আদ্রিতা কিছু বললো না চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। শীত করছে।”
—-
রাত ১১ঃ০০টা। নিজের কাজ সেরে বাড়ির বেলকনিতে বসে আছে ফারিশ। হাতে জলন্ত সিগারেটের ধুঁয়া উড়ছে। ফারিশ এখনও খায় নি। জাস্ট ধরিয়ে হাতে নিয়ে বসে আছে। তার নিজেকে বড্ড বিষণ্ণ লাগছে। আদিব পাশে এসে বসলো। বললো,“ভাই আপনি ঠিক আছেন তো?”

ফারিশ খানিকটা নড়েচড়ে উঠলো। হাতের সিগারেটটায় এক টান দিয়ে বললো,
“আমি কি ভুল করেছি আদিব?”
“কিসের ভুল ভাই।”
“আমার জীবনে কোনো মেয়েমানুষ আনা কি ঠিক হলো আদিব।”
“কেন হবে না। পৃথিবীতে সব পুরুষের জীবনেই মেয়েমানুষ আসে ভাই।”

ফারিশ আদিবের দিকে তাকালো। হেঁসে হেঁসে বললো,
“তার মানে তোমার জীবনেও কোনো মেয়েমানুষ এসেছে আদিব।”

আদিব লজ্জা পেয়ে গেল। এ কথা আশা করে নি সে। ফারিশ বললো,“কে সে? নাম বল তোমাদের বিয়ে পড়িয়ে দেই।”

আদিব থতমত খেল। দোনামনা করলো কি বলবে বুঝতে পারছে না। তাও অনেক ভেবে জবাব দিলো,“আপনি না করলে আমি কেমনে করি ভাই।”

ফারিশ সিগারেটে পর পর দু’বার টান দিয়ে বললো,“আচ্ছা বিয়েটা না হয় পরে দেখছি। মেয়েটাকে কে? নাম কি? তা তো বলো।”

আদিব লজ্জা মাখা মুখশ্রী নিয়ে বললো,
“নাম বললে আপনি হাসবেন ভাই।”
“কেন নাম সুন্দর নয়। ”
“তা না। নাম সুন্দর। কিন্তু?”
“কিন্তু কি?”

আদিব অনেকক্ষণ ভেবে বললো,“মেয়েটা ডাক্তার ম্যাডামের বন্ধু ভাই। নাম চাঁদনী।”

সঙ্গে সঙ্গে বিস্ময়কর চাহনী দিলো ফারিশ। আদিবের মাথা নোয়ানো। আচমকাই ফারিশ হেঁসে উঠলো। উচ্চ শব্দের সেই হাসি। আদিব বললো,“বলেছিলাম না ভাই আপনি হাসবেন।”

ফারিশ তার হাসি থামিয়ে বললো,“খারাপ না কিন্তু। প্রপোজ কবে করছো বলো?”

আদিব অবাক হয়ে বললো,
“এসব কি বলছেন ভাই। ওসব প্রপোজ ফ্রপোজ আমার ধারা সম্ভব নয়।”
“কিসের সম্ভব নয়! তুমি কালই মেয়েটাকে প্রপোজ করতে যাবে আদিব। ভাবি কি তোমার একার চাই আমার চাই না।”

আদিব এ কথার পিঠে কি বলবে বুঝতে পারছে না। তার লজ্জা লাগছে। মেয়েটাকে কি করে ফারিশ ভাইয়ের ভাবি বানাবে। মেয়েটা যদি রাজি না হয় তখন। আদিব বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। মিনমিনিয়ে বললো,
“আমি নিজের রুমে যাই ভাই। আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন।”
“ঠিক আছে যাও।”

আদিব চলে গেল। ফারিশ পর পর কয়েকটা সিগারেটে সুখটান দিয়ে শেষ করলো। এরপর মদের গ্লাসে চুমুক দিলো। তার চোখ লাল হয়ে গেছে। প্রকৃতির বুক বেয়ে উপচে আসছে শীতল হাওয়া। ফারিশের শরীর কাঁপছে। তাও উঠছে না। হঠাৎই ফারিশ আধভেজা চোখে ওই আকাশ পানে তাকালো। রক্তলাল আঁখি নিয়ে আদুুরে স্বরে আওয়ালো,
“ওহে প্রকৃতি, তুমি তো জানতে ফারিশের বুকে প্রেম এক নিষিদ্ধ অধ্যায়। অথচ তুমি সেই প্রেমে ডুবিয়েই মারতে চাইছো আমায়। কাজটা কি ঠিক করছো?”

আকাশটা মৃদু বর্জপাতে কেঁপে উঠলো হঠাৎ। মৃদু শব্দে বইতে লাগলো বাতাস। তারা বুঝি জানান দিচ্ছিল কিছুর। ফারিশের প্রশ্নে উত্তরে বোধহয় বলছিল,
“ওহে নিঃস্ব পথিক, তুমি হয়তো বুঝচ্ছো না তোমার নিষিদ্ধ শহরে প্রেমই হবে এক শুদ্ধ প্রতীক।”

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here