#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩৩♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌹
.
নীবিড় ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন। চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠলেন,
— চিন্তা করো না অনন্যা! তোমার আর আমার বিয়ের খবর কেউ জানবে না। তুমি আগের মতোই চলাফেরা করবা। তোমার ওপর কোনো রকম অধিকার খাটাতে আসবো না আমি।
এবার প্লিজ একটু হাসো। এরকম ভাবলেশহীন ভাবে থেকো না। (হঠাৎ শান্ত হয়ে বললো নীবিড়)
.
আমি উনার কথার কোনো উত্তর দিলাম না। শুধু ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলাম উনার দিকে। ভাবতেই অবাক লাগছে আমার। এই মানুষটা যাকে আমি যমের মতো ভয় পাই সেই কিনা আমার হাজবেন্ড।
.
উনি আবারও আমার দিকে মুখ করে বসে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলেন,
— তুমি কি আমায় বিশ্বাস করো?
.
আমি শুধু হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালাম। জানি উনি বদমেজাজি, খিটখিটে স্বভাবের। আমায় সহ্যই করতে পারেন না আবার সময়ে সময়ে পাল্টি খেয়ে যান। তাও উনাকে আমি বিশ্বাস করি। বিশ্বাস করতে একপ্রকার বাধ্যই হই। কারণ উনি যা বলেন তা ঠিকই করেন। আজ পর্যন্ত ভুলের জন্য অনেক শাস্তি দিলেও বাহ্যিক কোনো ক্ষতি করেন নি আমার। বরং সবসময় বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমার একটুখানি চোট লাগলেই ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। আমার বিশ্বাস উনি আমার সাথে যতই রুড বিহেভ করুক না কেনো, কখনোই কোনো পরিস্থিতিতে আমার ক্ষতি হতে দিবেন না।
.
নীবিড় ভাইয়া মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালেন। দাঁড়িয়েই হাসি মুখে বলে উঠলেন,
.
— জানো কটা বাজে? দুপুর ৩ টে বেজে ১২ মিনিট। (হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)
.
চট করে আমি লাফিয়ে উঠলাম। ৩ টে পাড় হয়ে গিয়েছে! বাসায় নিশ্চয় আম্মু টেনিশন করছে! ভার্সিটি ছেড়েছিলো ১ টার একটু আগেই। তার মানে দু দুটো ঘন্টা যাবৎ শহরের বাইরে আছি আমরা।
উনি আমায় দাড়িয়ে যেতে দেখে আবারোও বলে উঠলেন,
.
— আমার পেটে মেবি শুধু ইঁদুরই নয় সাথে তোমার বলা সাদা বিলাইও দৌঁড়োচ্ছে। ভীষণ খিদে পেয়েছে। পাকস্থলী মহাশয় কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠছে বারবার।
আচ্ছা তোমার খিদে পায় নি? এমনি সময় টেনশনে পানি খেতে খেতে তো পেট টাকে কূয়ো বানিয়ে ফেলো। আজ কি হলো?
.
উনার কথায় হাল্কা স্বরে হেসে উঠলাম আমি। মনে মনেই ভাবতে লাগলাম ” উনি নিজেই তো সাদা বিলাই। নিজেই নিজের পেটে কিভাবে দৌঁড়োবেন?
আমায় হাসতে দেখে হেসে উঠলেন উনি নিজেও।
“চলো এবার যাওয়া যাক” বলেই আমায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন উনি।
.
🌺
.
অগ্নি ভাইয়া দেওয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বুজে উপরের দিকে চেয়ে রয়েছে। রুশো ভাইয়া পাশেই মাথায় দুহাত চেপে বসে আছে। আমরা ঘর থেকে বেরোতেই যেনো শ্বাস ফিরে পায় দুজনেই।
রুশো ভাইয়া একছুটে আমার সামনে এসে চিন্তিত হয়ে বলে উঠলো,
— ছুটকি, তুই ঠিক আছিস? কি ডিসিশন নিলি তোরা?
.
অগ্নি ভাইয়া কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,
— আহ রুশো! এখনই এতো প্রশ্নের কি আছে? এখনোও কোনো কিছুর সলিউশন বের হয়নি।
.
রুশো ভাইয়া মাথা চুলকে ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো,
— ওমা তাইতো!
.
এর পরিপ্রেক্ষিতে অগ্নি ভাইয়া কিছু বলবে তার আগেই নীবিড় ভাইয়া বলে উঠলেন,
— ভাইয়েরা আমার! প্লিজ এখন কিছু বলিস না। খুব জোড় খিদে পেয়েছে। সকালে নাস্তা করেও আসা হয়নি আমার। ভার্সিটির মোড়ের রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খেয়ে নেই চল।
.
অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়া নীবিড় ভাইয়াকে এতোটা স্বাভাবিক দেখে অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দুজন দুজনের মুখের দিকে কিছুক্ষণ চাওয়া-চাওয়ি করে সম্মতি জানালো।
তার মাঝে আমি বলে উঠলাম,
.
— ভাইয়া! আম্মুকে জানিয়েছিস আমরা একসাথে আছি যাতে টেনশন না করে?
.
— বলেছি! বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলো।
.
শুনে কিছুটা দুশ্চিন্তা মুক্ত হলাম। এরপর সবাই গ্রাম থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। সবই ঠিক আছে কিন্তু বিপত্তি ঘটলো আমাকে নিয়ে। কারণ অগ্নি ভাইয়া আর নীবিড় ভাইয়া দুজনেই বাইক নিয়ে এসেছেন আবার রুশো ভাইয়া এসেছে কারে। এর মাঝে আমি আগাছা! কার সাথে যাবো ভেবে পাচ্ছিনা।
আমার কনফিউশন দূর করতে নীবিড় ভাইয়া বলে উঠলেন,
.
— অনন্যা, তুমি রুশোর কারে গিয়ে বসো। অনেক টায়ার্ড তুমি। সিটে হেলান দিয়ে রেস্ট নাও ভালো লাগবে।
.
সবাই উনার কথায় সায় দিলেও, উনার সলিউশনটা ঠিক পছন্দ হলো না আমার। আমার চাই বুক ভরা তীব্র শ্বাস। কিন্তু কারে বসলে ওই সামান্য উইন্ডোও দিয়ে যেটা অসম্ভব। বাইকে বসে তাজা হাওয়া খেতে খেতে যাওয়ার মজাটাই অন্যরকম।
আমি কোনো কিছু না ভেবে টুপ করে সাদা বিলাইয়ের বাইকে উঠে পড়লাম। যা দেখে অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়া কাশতে শুরু করে দিল। এদিকে সাদা বিলাই তো আমার কান্ডে চরম অবাক। উনি আমায় কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আমি বলে উঠলাম,
.
— চলো সবাই!
.
নীবিড় ভাইয়ার আর কিছু বলা হয়ে উঠলো না। চুপচাপ বাইক স্টার্ট দিয়ে ছুটে চললেন। পেছন পেছন অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়াও ভ্যাবাচ্যাকা খেতে খেতে আসতে লাগলো।
আকাশে আজো মেঘ করছে, বৃষ্টি হবে নির্ঘাত। বাইকে চড়ে এই ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়ায় মনটা একদম ফুরফুরে লাগছে। অসম্ভব রকমের ভালোলাগা কাজ করছে আমার। সাথে চোখে নেমে আসছে রাজ্যের ঘুম। যদি পারতাম তো এখানেই ঘুমিয়ে যেতাম। কল্পনাতে দেখতেও শুরু করে দিয়েছি আমি এই সুন্দর পরিবেশে গা হিম করা বাতাসে বিছানা পেতে ঘুমিয়ে আছি। এসব ভাবতে ভাবতেই নীবিড় ভাইয়ার পিঠে মাথা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। হঠাৎ উনি এমন আকস্মিক ঘটনায় চমকে উঠলেন। সাথেসাথে ব্রেক কষে ফেললেন উনি। যার কারণে আমার মাথা ঠাস করে বারি খেলো উনার হেলমেটে।
.
— আহ! কি করলেন এটা? লাগলো তো! (কপালে হাত বুলাতে বুলাতে)
.
উনি চট করে মাথা ঘুরিয়ে আমায় নামতে বললেন। আমি নেমে গেলেই বাইক স্টান্ড করে নেমে পড়লেন উনি নিজেও। আমাদের নামতে দেখে অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়ায় এসে থেমে গেলো একই স্পটে।
উনি রুশো ভাইয়ার কারের কাছে গিয়ে ভাইয়াকে কি বললেন জানি না তবে খুব তাড়াতাড়িই রুশো ভাইয়া কার থেকে নেমে গিয়ে নীবিড় ভাইয়ার বাইকে উঠে পড়লো।
.
— ছুটকি, ব্রোর সাথে গাড়িতে গিয়ে বোস।
.
রুশো ভাইয়ার কথার মাঝেই নীবিড় ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে গাড়িতে গিয়ে বসিয়ে দিলেন। এতোক্ষণ অগ্নি ভাইয়া শুধু নীরব দর্শকের মতো চেয়ে চেয়ে সব দেখছিলো। এবার মুখ খুললো ভাইয়া,
.
— এই তোরা করছিস টাকি? বদলা বদলি করছিস কেনো?
.
নীবিড় ভাইয়া গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসতে বসতে বলে উঠলো,
— তোর বোনের ঘুম পেয়েছে। ওভাবে বাইকে ঘুমোলে কখন দুম করে পড়ে কোমড় ভাঙ্গত আর দোষ হতো আমার। বাইক স্টার্ট দে। আমরা আসছি পেছন পেছন।
.
ভাইয়া আর কিছু বললো না, বাইক স্টার্ট দিয়ে দুজনেই এগিয়ে গেলো।
এদিকে নীবিড় ভাইয়া ড্রাইভ করার আগে আমায় টেনে নিয়ে নিজের কোলে মাথা দিয়ে শুইয়ে দিলেন। সাথে আমার পাশের উইন্ডোও খুলে দিলেন। যার জন্য বাতাস সোজা আমার মুখে এসে পড়ছে।
.
— আরে আরে কি করছেন? এভাবে ঘুমোবো আমি?
.
উনি সানগ্লাস পড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলে উঠলেন,
— শাট আপ! পিঠ টাকে তো ঠিকই বালিশ বানাতে পারলে। কোল টাকে বানালে দোষের কি? চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো। ইউ উইল ফিল বেটার।
.
বলেই ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলেন উনি। আর আমি বোকার মতো চেয়ে রইলাম উনার মুখ খানায়। কে বলেছে শুধু মেয়েরাই রহস্যময়ী হয়? যারা বলে তাদের বলবো সাদা বলাইকে দেখে যেতে। মিনিটে মিনিটে সেকেন্ডে সেকেন্ডে রং বদলান উনি। অদ্ভুত!
এসব ভাবতে ভাবতেই আমার চোখ বন্ধ হয়ে এলো। তলিয়ে গেলাম আমি রাজ্যের ঘুমে।
.
🍂
.
যখন ঘুম ভাঙলো তখন নিজেকে ড্রয়িংরুমের সোফায় আবিষ্কার করলাম আমি। আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে অগ্নি ভাইয়া, রুশো ভাইয়া, আর নিত্য আপু।
আমি ওদের এভাবে আমার দিকে ঝুঁকে থাকতে দেখে চমকে এক লাফ মেরে উঠে বসলাম। আমায় জেগে উঠতে দেখে যেনো সবার মুখেই হাসি ফুটে এলো।
.
— আ..আমি বাসায় এলাম কখন? আর তোমরা এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো আমার দিকে?
.
আমার এমন প্রশ্নে সবার মুখটা “হা” হয়ে গেলো। রুশো ভাইয়া মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠলো,
— ছুটকি? আর ইউ ওকে? ৩ ঘন্টা ধরে ঘুমিয়েছিলিস তুই! কতো ডাকাডাকি করলাম তাও উঠলিনা। শেষে কোলে করে আনতে হয়েছে তোকে।
.
— এতো মরার মতো ঘুমিয়েছিস! দেখ কটা বাজে ৬ টা বেজে ২০ মিনিট। তোর জন্য তখন খাওয়াও হয় নি আমাদের। সোজা বাসায় এসে নেমেছি।
.
—- আহহহ! থাকনা অগ্নি! ক্লান্ত ছিলো, ঘুমিয়ে পড়েছে কাহিনি শেষ।
অনন্যা বোনটি উঠো তো ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো। দুপুরে তো খাওয়াই হয় নি তোমার! (নিত্য)
.
আমি বোকার মতো প্রশ্ন করে বসলাম,
— তোমরা খেয়েছো?
.
ওমনি অগ্নি ভাইয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠলো,
— নাহ! আপনার ঘুম ভাঙার ওয়েট করছিলাম।
বুদ্ধু! যা উঠ! আমরা খেয়েছি শুধু একজন বাদে।
.
ভাইয়ার পুরো কথা না শুনেই আমি পুরো বাড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে আবারও প্রশ্ন করে বসলাম,
— উনি কোথায়?
.
রুশো ভাইয়া মাথা চুলকে বলে উঠলো,
— হা? এই উনি টা আবার কে?
.
অগ্নি ভাইয়ারও একই অবস্থা! মাঝখান থেকে শুধু নিত্য আপু মুখে হাত দিয়ে হেসে যাচ্ছে।
হাসি থামিয়ে আপু বলে উঠলো,
— উনি টুনি সবাই আছে। আপাতত তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। মামনি কে জানাচ্ছি তুমি উঠেছো। সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছিলো।
.
এবার আমার হুশ এলো। আরে নিত্য আপু এখানে কেনো? কখন আসলো! আমি চোখটা হাত দিয়ে ডলে নিয়ে আবারও ডাগর ডাগর চোখে আপুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
.
— আপু! তুমি কখন এলে?
.
আমি মিষ্টি করে হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
— মেডিকেল থেকে সোজা এখানেই এসেছি। মামুনি ফোন করে আসতে বলেছিলো। কিসব এনগেজমেন্টের কেনাকাটার ডিসকাশনের জন্য। এসে শুনলাম তোমরা সবাই এক সাথেই আছো তাই থেকে গেলাম। এক ঘন্টা পর তোমরা এলে। আর এই এখন তুমি ঘুম থেকে উঠলে।
.
আমি নিজের মরার মতো ঘুমানোর জন্য নিজেই নিজের মাথায় চাটি মেরে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
.
🍁
.
ছাদের রেলিং এর কোল ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে নীবিড়। মেঘলা আকাশে মাঝে মাঝে আলোর ঝিলিক ফুটে উঠছে। প্রকৃতির এই ঠান্ডা বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ছে তার ঘন কালো সিল্কি চুলগুলো।
সে আপন মনে ভাবনার জগতে ভাসতে ব্যস্ত!
ভাবছে সে কিভাবে কি করবে! সে তো এমনটা চায় নি। চেয়েছিলো নিজের পায়ে দাঁড়াবে, অনন্যা আরোও বড় হবে। পড়াশুনো করবে, বাস্তবতা বুঝবে তাই তো দূরে দূরে থাকতে চাইতো সে। রুড বিহেভ করতো যাতে অনন্যা কোনোভাবেই তার কাছে না আসে আর সে উইক না হয়ে পড়ে। নাহলে সে তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। যেমনটা পারে না অনন্যার কাছাকাছি থাকলে। কিন্তু কিছুনা কিছু অঘটন সে ঘটাবেই তাই তো নীবিড় চেয়েও দূরে সরে যেতে পারে না।
কিন্তু এখন তো তারা বিবাহিত। অনন্যাকে কিভাবে দূরে ঠেলে দেবে সে? না দিয়েও তো উপায় নেই।
সে চায় অনন্যা কোনো মানুষিক চাপে না ভুগুক। আগে যেমন চলতো সেভাবেই চলুক।
.
আপন মনেই কথাগুলো ভাবছিলো নীবিড় সেই মুহূর্তেই তার কাঁধে কেউ হাত রাখায় চমকে উঠে ঘুরে দাড়ালো সে।
.
— ভাইয়া, কি ভাবছিস?
.
নীবিড় জোড়পূর্বক হেসে আবারও দৃষ্টি শুণ্যে নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,
— ভাবছি, কি হবে ভবিষ্যতে? কয়দিন লুকিয়ে রাখবো এসব? সবার সামনে আমি স্বাভাবিক থাকলেও থাকতে পারছিনা নিত্য। কি করবো আমি? আইন মেনে বিয়েও তো হয়নি যে কাগজ কলমে সই করে মুক্ত করে দেবো ওকে।
.
নীবিড়ের কথায় রেগে গিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফেরায় নিত্য।
— কি বলছিস এসব? ডিভোর্স কেনো ভাইয়া? তোর কি অনন্যা কে এতোটাই অপছন্দ? বিয়ে তো কাউকে না কাউকে করতেই হতো। ওর সাথে যেহেতু হয়েই গিয়েছে তাহলে বিচ্ছেদের প্রসঙ্গ আসছে কেনো?
.
— জানি না আমি। কিচ্ছু জানি না। এদিকে মামনি বাপি! ওদিকে আব্বু! কিভাবে ম্যানেজ করবো? ইনফ্যাক্ট অনন্যার লাইফে আমার জন্য কোনো রকম বাঁধা আসুক তা চাইনা আমি। হ্যা এটা ঠিক কোনো খারাপ কিছু এলাউ করবো না আমি। বাট এতো তাড়াতাড়ি এরকম একটা অঘটন! ওর স্টাডিতে প্রবলেম হবে। ও এখনোও ছোট৷ রাত্রির থেকেও ছোট কয়েক মাসের ও। কি বোঝে বল।
.
— ভালোবাসিস অনন্যাকে ভাইয়া?
.
নিত্য হঠাৎ এমন একটা প্রশ্ন করে বসবে ভাবতে পারে নি নীবিড়। জোড়ে একটা শ্বাস টেনে মাথা নিচু করে ফেলে সে।
.
— কি হলো ভাইয়া! বল আমাকে। দেখ আমি কিন্তু তোর অনেক কিছুই লক্ষ্য করি। আর অগ্নি তো বলেই। শুধু আমি না অগ্নিও ডাউট করতো তোকে৷ কিন্তু কখনোও বলে নি তোকে। কি ভেবেছিস শুধু তুই ই একা সবার চোখের ভাষা পড়তে পারিস! আর আমরা পারিনা?
.
নীবিড় এবারও নিশ্চুপ। মুখ ফুটে কিচ্ছু বলছে না সে।
— আমার চোখের দিকে তাকা ভাইয়া! তারপর বল। জানি মিথ্যে বলতে পারবি না তুই। তাই মাথা নিচু করে রেখেছিস।
.
নীবিড় এবার মাথা তুলে তাকায়। নিজেকে শক্ত করে বলে উঠে,
— হ্যা হ্যা হ্যা! ভালোবাসি আমি ওকে। শুনেছিস তুই? ভালোবাসি আমি অনন্যাকে। আম ম্যাডলি ফল ইন লাভ লাভ উইথ হার!
.
নিত্য মুচকি হেসে নীবিড়ের গাল টেনে দিয়ে বলে উঠলো,
— আই নিউ ইট! চল খেয়ে নে। অগ্নি বলেছে তোর নাকি তখন চরম খিদে পেয়েছিলো তাও অনন্যার জন্য খাস নি। ও ঘুম থেকে উঠেছে এবার তো আয়।
.
নীবিড় খাবে না বলে আবারোও জানিয়ে দিলো। নিত্য জানে হাজার বললেও সে তাকে মানাতে পারবে না তাই নিচে নেমে এলো।
.
🌼
.
সেই কখন থেকে সাদা বিলাই কে খুঁজে যাচ্ছি কিন্তু কোথাউ খুঁজে পাচ্ছিনা। উফফফ! এমনি সময় তো যখন তখন এক্সিডেন্ট হতে থাকে উনার সাথে। আজ বাড়িতে থেকেও হাওয়া! হাহ!
.
— কাকে খুঁজছে হবু ননদিনী টা?
.
নিত্য আপু গলা পেয়ে চমকে উঠলাম আমি। মুখে জোড়পূর্বক হাসির রেশ টেনে বলে উঠলাম,
—- ক…ক…কই কাউকে না তো হবু ভাবী!😅
.
আপুর বোধহয় আমার উত্তরটা বিশ্বাস হলো না। অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে হুট করেই বলে উঠলো আপু,
— যাকে খুঁজছো সে ছাদে আছে। সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছে সে।
.
হা? বলে কি? উনি খান নি! এতোক্ষণ না খেয়ে রয়েছেন?
আমার ভাবনার মাঝে আবারোও নিত্য আপু বলে উঠলো,
— আমরা সবাই ট্রাই করেছি বাট কেউই মহাশয় কে খাওয়াতে পারিনি। তুমি প্লিজ ভাইয়াকে নিয়ে এসো। নাহলে অসুস্থ হয়ে পড়বে তো ভাইয়া।
.
— তোমাদের কথাই শুনেন নি। আর উনি শুনবেন আমার কথা? আছাড় মেরে ফেলে দেবেন সোজা। যে পরিমাণ বদমেজাজি। তাও শুধু আমার সাথেই। আর তুমি আমাকে পাঠাচ্ছো উনাকে ডাকতে?
.
— বদমেজাজির পেছনেও অনেক কিছু লুকিয়ে থাকে। যেটা তোমার এই ছোট্ট মাথায় ঢুকে না। এখন যাও প্লিজ।
.
🌹
.
নিত্য আপুর জোড়াজুড়িতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অগত্যা ছাদের দিকে পা বাঁড়ালাম আমি। মনে মনে দোয়া দরুদপাঠ করে যাচ্ছি। হঠাৎ খাচ্ছেন না কেনো উনি আল্লাহ জানেন। তখন তো খিদে পেয়েছে বলে ছুটছিলেন। এখন আবার কি হলো?
.
ছাদে উঠে উনাকে রেলিং ঘেঁষে উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটা জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলে পা টিপেটিপে উনার পেছনে গিয়ে দাঁড়ানো মাত্রই উল্টো দিকে মুখ রেখেই ধমকে উঠলেন উনি,
— আহহ! নিত্য! বলেছি না খাবো না আমি। যা তুই…! মামনির সাথে কি বলার বলে নে। একটু পরই রওনা দিবো বাসায়।
.
উনার ধমক শুনে কেঁপে উঠলাম। কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠলাম,
— আমি আপু না ভাইয়া!
.
উনি আমার গলা পেয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে আবারোও সামনে মুখ ঘুরিয়ে বলে উঠলেন,
— খেয়েছো?
.
— না! আসুন আপনিও খেয়ে নিবেন প্লিজ।
.
উনি যেনো পরের কথাটা শুনেও শুনলেন না। খানিকটা রেগে আবারোও বলে উঠলেন,
— এখনোও খাও নি কেনো? যাও খাও। কুইক।
.
উনার কথা শুনে রাগ উঠে গেলো আমার। আরে নিজেই সকাল থেকে না খেয়ে বসে আছেন আর উল্টো আমাকে না খাওয়ার জন্য বকছেন! এটা তো মানা যায় না।
তাই রেগেমেগে উনার হাত চেপে ধরে টেনে আনতে আনতে বলে উঠলাম,
— আমি তো খাবোই সাথে খাবেন আপনিও।
.
উনিও বাধ্য ছেলের মতো হাটতে লাগলেন আমার পেছন পেছন। ভেবেছিলাম দু-চারটে ধমক দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেবেন। অথচ কতো শান্তশিষ্ট ভাবে চলে আসছেন। হা! কেমনে কি?
.
🌸
.
খাবারের প্লেট সামনে ধরে শুধু আঙুল ঘুরিয়ে যাচ্ছেন নীবিড় ভাইয়া। পাশে অগ্নি ভাইয়া আর নিত্য আপু দাঁড়িয়ে।
উনার খাওয়ার প্রতি অনিহা দেখে আমি আবারও রেগে গেলাম।
.
— ভাইয়া….! খাচ্ছেন না কেনো?
.
আমার কথায় নীবিড় ভাইয়া একটু চমকে গেলেও নিত্য আপু আর অগ্নি ভাইয়া বিষম খাওয়া শুরু করে দিলো।
নিত্য আপু ভাইয়ার কানে কানে কিছু একটা বলা শুরু করলো কথাটা অবশ্য আমার কান পর্যন্ত পৌঁছোয় নি। কথাটা ছিলো এরকম ” হায় আল্লাহ! নিজের সদ্য বিবাহিত বরকে ভাইয়া বলছে তোমার বোন!”
নিত্য আপুর কথা শুনে অগ্নি ভাইয়া কপালে হাত দিয়ে পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। এদিকে আমার ধমক শুনে ভালো বিড়ালের মতো লেজ গুটিয়ে খাওয়া শুরু করলো নীবিড় ভাইয়া। যা দেখে নিত্য আপু হু হা করে হেসে উঠলো।
.
.
.
চলবে…………………💕