প্রেম_আমার♥ #পার্ট-৩৮♥ #Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥ . 🌺

0
321

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩৮♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
—- আপনার কি মাথা ঠিক আছে? কিসব বলে যাচ্ছেন বলুন তো? দেখুন আপনি এই বিয়েটা মানেন না সেটা আপনার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু ইসলামের রীতিমতো আমাদের বিয়েটা হয়েছে! আপনি মানলেও হয়েছে, না মানলেও হয়েছে।
.
নীবিড় ভাইয়া এবারও ভাবলেশহীন! কোনো ফারাকই পরছে না উনার আমার কথাগুলোয়। যেনো কোনো ভাঙা টেপ রেকর্ডার বেজে চলেছে ভেবে উনি আমার বলা যুক্তিযুক্ত কথাগুলো কানেই তুলছেন না।
.
তখন আব্বুর কড়া গলা দেওয়া আদেশ শুনে মুখ ফুটিয়ে আর কিছু বলা হয়ে উঠেনি আমার। রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া বলেছিলো যে আমার বয়স আরোও বাড়ুক! সবে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছি। কিন্তু আব্বু ভাইয়াদের নিরাশ করে দিয়ে নিশ্চিন্ত গলায় বলে দিয়েছিলো যে, “পড়াশুনো তো করবেই৷ বিয়ের পর করলে ক্ষতি কি?”
ব্যাস তাতেই হয়ে গেলো। আব্বুর মুখের ওপর আর কারো কথা বলা হয়ে উঠলো না।
.
বর্তমানে আমরা সকলে সাদা বিলাইকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে একের পর এক কথা বলে যাচ্ছি কিন্তু উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আরাম করে গেমস খেলায় ব্যস্ত শুধু!
এতোগুলো কথার বিনিময়ে উনি শুধু ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে এটুকু বলেছেন যে, “বোনের বিয়ের বয়স হয়েছে, বিয়ে তো করতেই হবে! তাতে তোরা এতো চেঁচামেচি করছিস কেনো? যেমন যেমন চলছে, তেমন তেমন চলতে দে!”
ঠিক তারপরই আমি লাগাতার উনাকে এই কথাগুলো বলে যাচ্ছি বাট উনি তা এক কান দিয়ে শুনছেন, সাথে অপর কান দিয়ে খুব সহজেই বের করে দিচ্ছেন!
.
শেষমেশ আমি উনাকে বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত হয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম। আমার সাথেসাথে মাথায় হাত রেখে বসে পড়লো রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়াও।
নিত্য আপু রেগে গিয়ে নীবিড় ভাইয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। চোখেমুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,
.
—- ভাইয়া, তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস? অনন্যা তোর বউ হয়! তুই কি করে তাকে আরেক জায়গায় বিয়ে করতে বলতে পারিস?
.
নীবিড় ভাইয়া জানালার বাহিরে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চুলগুলোর মাঝে ডান হাত চালিয়ে বলে উঠলেন,
—- সো হোয়াট? আমি ওকে বউ বলে মানি না। এন্ড ইটস দ্য মেইন পয়েন্ট।
.
অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়া দুজনই নিজেরদের মুখে একবার তো নীবিড়ের দিকে একবার চেয়েই অবাক হয়ে বলে উঠলো,
—- তো আজ ভার্সিটিতে ওসব…………
.
আর কিছু বলার আগেই নীবিড় ভাইয়া চোখ রাঙালেন। সাথেসাথেই রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া চুপ হয়ে গেলো। রুশো ভাইয়াতো এক ঠেলায় ঠোঁটে আঙুল চেপে চুপ করে রইলো! নীবিড় ভাইয়া অগ্নি ভাইয়াকে চোখের ইশারায় কিছু একটা বোঝাতেই অগ্নি ভাইয়া চুপ হয়ে কিছু একটা ভেবে হঠাৎ হেসে উঠলো। যার কোনো কিছুই আমি বুঝে উঠতে পারলাম না।
শুধু বোকার মতো ড্যাবড্যাব করে চেয়েই রইলাম তাদের দিকে। নিত্য আপু ভ্রু কুঁচকে নীবিড় ভাইয়ার দিকে তাকাতেই আপুকেও ধমক মেড়ে চুপ করিয়ে দিলেন উনি! এদিকে আমি নির্বোধ কিছুই বুঝতে পারছিনা। কি হবে আমার? শেষমেশ দু দুটো জামাই নিয়ে ঘুরতে হবে? না না এটা মানা যায় না। এটা অন্যায়, ঘোর অন্যায়!
.
রুশো ভাইয়া হঠাৎ কিছু একটা ভেবে আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো,
—- ছুটকি রে…! তুই মন খারাপ করছিস কেনো বলতো? তোর দু দুটো বর হলে কিন্তু দারুণ হবে। আমাদের দু দুটো দুলাভাই হবে। আমরা ডাবল ডাবল আদর পাবো! আহা আহা! কি লাইফ হবে ভাব!
.
রুশো ভাইয়ার কথায় অগ্নি ভাইয়া আর নিত্য আপু মুখ টিপে হেসে চলেছে। কিন্তু আমার হাসি পাচ্ছেনা। রাগ লাগছে আমার ভীষণ রাগ! তাই একপ্রকার চেঁচিয়েই বলে উঠলাম আমি,
.
—- ভাইয়ায়ায়ায়া……! কি বলছো এসব?
.
রুশো ভাইয়া আমার চেঁচানোতে জ্বিবে কামড় দিয়ে বসা থেকে উঠে এক ছুটে পালালো! আর আমি এদিকে রাগে ফোসফোস করছি! কি হলো টা কি এদের? সবার মাথার তারতুর ছিঁড়ে গেলো নাকি? উফফফফ….! আর পারা যাচ্ছেনা। আমার ব্রেইন টা কে একটু রেস্ট দেওয়া দরকার।
ভেবেই পা বাড়ালাম আমার রুমের দিকে। এতোক্ষণ সবাই ভাইয়ার রুমেই ছিলাম তাই।
.
🍂
.
রাত ১০ টা বেজে ১২ মিনিট…..!
শুয়া থেকে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো! তখন ৭ টা ৪৫ মিনিটের মাথায় রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তার মানে আমি পুরো আড়াই ঘন্টা ধরে ঘুমিয়েছি? আর কেউ আমায় ডাকলোও না? অবশ্য ভালোই হয়েছে। কষ্ট করে আর খেতে যেতে হবে না। আমি বরং ফ্রেশ হয়ে এসে একটু ফেসবুকে ঘুরে আসি। ব্যস্ততায় ঢোকাই হয়না।
.
ফ্রেশ হয়ে এসে ফেসবুকে ঢুকতেই প্রথমে চোখের সামনে সাদা বিলাইয়ের আইডি চোখে পড়লো। ফেসবুক থেকে ফ্রেন্ড সাজেশন এসেছে। হাহ!
প্রোফাইলে ভাইয়াকে ধরে উনার সেই ভুবন ভুলানো হাসিটা অন্য সময় যেমন অমায়িক লাগতো আজ তার ঠিক উল্টো লাগছে আমার। উনার হাসি দেখে আমার পুরো গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে!
আমাকে এদিকে রাজ্যের চিন্তায় ফেলে কি সুন্দর করে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছেন উনি।
.
অনিচ্ছা সত্ত্বেও উনার আইডি স্ক্রল করতে ঢুকলাম আমি। কভার পিকে এখনোও নিত্য আপুর সাথে ছবিটা দেওয়া আছে উনার। ইশশস! কি বোকামিটাই না করেছিলাম আমি। আপু কে উনার গার্ল ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছিলাম! এখন সেসব কথা ভাবলেই লজ্জা লাগে।
.
প্রোফাইল পিকের কমেন্ট সেকশনে ঢুকতেই সবার প্রথমে যেসব কমেন্ট চোখে পড়লো সেসবের কিছু নমুনা:
— হেই হ্যান্ডসাম রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করো প্লিজ!😭

— ও মাই গড! ক্রাশ!😍

— আই লাভ ইউ নীবিড়….!😘

— ওহ নো…! আই নিড বোথ! উফফফ…..! 😍😘❤
.
আর দেখলাম না। চট করে ফোনের ওয়াইফাই ডিসকানেক্ট করে বের হয়ে আসলাম।
প্রথমে রাগ লাগলেও লাস্ট কমেন্টটা দেখে এখন ভীষণ হাসি পাচ্ছে আমার।
হায় আল্লাহ! শি নিড বোথ! আমার ভোলাভালা ভাইটার সাথে আমার এক্সিডেন্টলি বর দুটোকেই নিতে চায়। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে ফেলেছে মেয়েগুলো। কমেন্টে ডিরেক্টলি প্রপোজ, হাউ ফানি!
.
আমি পেট চেপে হাসছিলাম সেই মুহূর্তেই দরজায় কড়া নাড়লো কেউ। আমি ফোনটা বালিশের পাশে রেখে ভাইয়া এসেছে ভেবে “আয়” বলে উঠে দাঁড়ালাম। ছেড়ে দেওয়া চুলগুলো আয়নার সামনে গিয়ে বাধতে লাগলাম।
ওমনি দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো ৩ জোড়া পা।
আমি পা গুলোকে আড় চোখে লক্ষ্য করে ততক্ষণাৎ পেছন ফিরে তাকালাম।
সাথেসাথেই আমার চোখ রসগোল্লার আকার ধারণ করলো। নিত্য আপুর হাতে থাকা বোলে ফ্রুটস, অগ্নি ভাইয়ার হাতে থাকা প্লেটে অল্প পরিমাণে ভাত তার সাথে মিক্স ভেজিটেবলস! আর রুশো ভাইয়ার হাতে পানির গ্লাস। সব মিলিয়ে যা বুঝলাম, আমায় খুন করার পুরোপুরি প্লানিং করে এসেছে তারা!
.
আমি ভয়ে দুই ধাপ পেছনে ফেলে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠলাম,
—- ভা..ভা..ভাইয়া…! আপু….! এসব কি?
.
সবাই যেনো আমার এমন ভীত হওয়া দেখে এক পৈশাচিক আনন্দ পেলো। রুশো ভাইয়া দাঁত বের করে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো,
—- আমার ছুটকির জন্য ছোট্ট ছোট্ট সারপ্রাইজ!😁
.
অগ্নি ভাইয়া খাবারের প্লেট আমার বেড সাইড টেবিলে রাখতে রাখতে বলে উঠলো,
—- বুঝলি তো অনু, আজকে থেকে তোকে এসবই খেতে হবে। এন্ড শুধু এসবই না আরোও কিছু বাকি আছে।
.
নিত্য আপু ফ্রুটস এর বোলটা টেবিলে রেখে মুচকি হেসে ভাইয়ার কথায় শায় দিলো! এদিকে আমি শুধু এদিকওদিক চোখ বুলিয়ে পালানোর পথ খুঁজে বেরোচ্ছি!
যখন দেখলাম এরা আমায় বেঁধে হলেও এসব খাইয়েই ছাড়বে তখন আর পথ খোলা না পেয়ে এক লাফ মেরে খাটের ওপর উঠে দাঁড়ালাম আমি।
.
রুশো ভাইয়া আমাকে খাটে উঠে এদিক ওদিক লাফাতে দেখে ঠোঁট উল্টে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,
—- ছুটকি…! তুই আবার কাবাডি কাবাডি খেলছিস কেনো? ওটা তো ব্রো আর ভাবীর গেইম।
.
রুশো ভাইয়ার এমন অদ্ভুত কথা শুনে নিত্য আপু আর ভাইয়া দুজনেই অবাক হয়ে “মানে?” বলে চেঁচিয়ে উঠলো। রুশো ভাইয়ার এবার হুশ হলো সে ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে। রুশো ভাইয়া আমতাআমতা করে মাথা চুলকোতে লাগলো।
এই সুযোগ, কারোও দৃষ্টি এখন আর আমার দিকে নেই, এখনই আমাকে মানে মানে কেটে পড়তে হবে।
ভেবেই খাট থেকে নেমে এক দৌড়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলাম আমি।
কিন্তু ভাগ্য আমার এবারেও সহায় হলো না। দরজা দিয়ে বের হতেই একটা লম্বা পিলারের সাথে বারি খেয়ে একটুর জন্যে পড়তে পড়তে বেঁচে গেলাম আমি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো দরজার সামনে পিলার আসলো কোথা থেকে? তা দেখার জন্য আমি মাথা উঠিয়ে উপরে তাকাতেই বড়সড় একটা শক খেলাম।
নীবিড় ভাইয়া কপালে ভাজ ফেলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন আমার দিকে। উনাকে দেখেই আমার বাঁচার সর্বশেষ আশাটাও বিফলে চলে গেলো।
.
অগ্নি ভাইয়া আমাকে পালাতে দেখে নীবিড় ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
—- আরে ওটাকে ধর। নয়তো পুরো বাড়ি ইঁদুরের মতো দৌড়োবে! কিন্তু ধরতে আর পারবোনা।
.
নীবিড় ভাইয়া স্ট্রেইট হয়ে দাঁড়িয়ে ঠোঁটের বাম সাইডে কামড়ে ধরে বলে উঠলেন,
—- আরে বাহ! মানুষ হয়েও ইঁদুরের মতো দৌড়োয়! ইম্প্রেসিভ!
.
বলেই সোজা ঘরের মধ্যে ঢুকতে লাগলেন উনি।
উনি আমার একদম সামনে থাকায় অগত্যা পেছাতে পেছাতে ঘরে ঢুকতে হলো আমায়। উনি ভেতরে ঢুকে নিত্য আপুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,

—- নিত্য…ও ফ্রুটস খাবে না ভালো কথা, জুস বানিয়ে আন। আর অগ্নি, তুই খাবারের প্লেটটা আমায় দে। না খেয়ে কোথায় যায় আমিও দেখতে চাই। তোরা নাহয় এখন যা। আমি ডাকলে চলে আসিস।
.
নীবিড় ভাইয়ার কথায় কেউ আর কথা বাড়ালো না। শুধু রুশো ভাইয়া একবার ঠোঁট উল্টে জিজ্ঞেস কর উঠলো,
—- হেই ব্রো..! ওকে খাওয়াতে পারবে তো?
.
নীবিড় ভাইয়া বাঁকা হেসে পকেটে দু হাত গুঁজে বলে উঠলেন,
—- কই শাখ?
.
—- আরে বাহ নীবিড় ব্রো! তুমহে ভি হিন্দি আতি হ্যায়?
.
নীবিড় ভাইয়া হাসলেন। সামনে এগিয়ে এসে রুশো ভাইয়ার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে উঠলেন,
—- দেখতে হবে না কার ব্রো!
.
বিনিময়ে রুশো ভাইয়া লাফিয়ে নীবিড় ভাইয়াকে একটা ঝাপ্পি মেরে আমার গাল টেনে দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো। এদিকে অগ্নি ভাইয়া নীবিড় ভাইয়ার কাঁধে হাত রেখে কানে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

—- বেস্ট ইফ লাক উডবি শালা!
.
বিনিময়ে নীবিড় ভাইয়া ভ্রু নাচিয়ে ভাইয়ার কোমড়ে কাতুকুতু দিয়ে বলে উঠলো,
—- থ্যাংক ইউ পার্মানেন্টলি শালা!
.
ভাইয়া কোমড়ে কাতুকুতু লাগায় লাফাতে লাফাতে মুখ ফুলিয়ে চলে গেলো। পেছনে নিত্য আপু পেটে চেপে ধরে রাখা হাসির বস্তা খুলে হু হা করে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো।
সবাই চলে যেতেই উনি দরজা লাগিয়ে ভিলেনি স্মাইল দিতে দিতে আমার দিকে এগোতে লাগলেন। আর আমি ভয়ে ঢোক গিলতে গিলতে পেছাতে লাগলাম।
পেছাতে পেছাতে একটা সময়ে খাটের সাথে পা বেজে “আম্মুউউ” বলে চিৎকার দিয়েই ধুপ করে বিছানায় পড়ে গেলাম।
আমায় পড়ে যেতে দেখে উনি যেনো বেশ মজা পেলেন। মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বিছানায় এসে বসলেন উনি।
আমি শুয়া থেকে উঠে বসবো তার আগেই আমার দুহাত খাটের সাথে চেপে ধরে আমার উপর ঝুঁকে শীতল গলায় বলে উঠলেন,
.
—– চুপচাপ যা খাওয়ানো হচ্ছে তা খেয়ে নাও। একটা টু শব্দও হলে কিন্তু ফল ভালো হবে না।
.
উনার এমন কার্যকলাপে আমি চোখ বড়বড় করে উনার চোখের দিকে তাকাতেই যেনো হারিয়ে যেতে লাগলাম উনার মাঝে। অদ্ভুত এক গভীরতা রয়েছে উনার চোখে। রয়েছে মাতাল করা এক মায়া। যেথায় তাকালেই আমি ডুব দেই উনার চোখের সেই অতল গহীনে। আমায় এভাবে ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি মুচকি হেসে আমায় ততক্ষণাত ছেড়ে দিয়ে উঠে বসালেন।
.
খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে ভাত সবজি দিয়ে অল্প করে মেখে আমার মুখের সামনে তুলে বলে উঠলেন,
—- হা করো!
.
আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়েই কিছু না ভেবে হা করতেই ভাতের লোকমাটা মুখে পুরে দিলেন উনি। হঠাৎ আমার হুশ আসতেই বুঝতে পারলাম আমায় উনি এমন কিছু খাইয়ে দিয়েছেন যা আমি অপছন্দ করি। এক কথায় ভীষণ রকমের অপছন্দ করি।
আমায় খাবার মুখে নিয়ে চুপচাপ গাল ফুলিয়ে থাকতে দেখে উনি ধমকে উঠলেন,
.
—– কি হলো খাও….!
.
উনার ধমক শুনে কেঁপে উঠলাম আমি। তাড়াহুড়ো করে টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে না চিবিয়েই পানি দিয়ে গিলে খেয়ে ফেললাম। উনি আমার এমন খাওয়া দেখে রেগেমেগে আবারও ধমকে উঠলেন,
.
—- স্টুপিড! না চিবিয়ে গিলে ফেললে কেনো? খাওয়া শিখো নাই? লাস্ট টাইম আস্ক করছি, সুন্দর ভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে কি না?
নাকি আমি তোমার চাপা ভাঙবো তাই বলো?
.
আমি উনার ধমক শুনেও কোনো রিয়াকশন দিলাম না এবার। কারণ আমার সম্পূর্ণ এটেনশন এখন উনার বলা “চাপা” শব্দের ওপর। যেটার অর্থ আমার অজানা।
তাই বোকার মতো উল্টো প্রশ্ন করে বসলাম,
.
—- আচ্ছা এই “চাপা” টা কি?
.
উনি আমার এমন প্রশ্নে যেনো আহম্মক বনে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও ধমক দিয়ে উঠলেন উনি,
—- শাট আপ! চুপচাপ খাও নাহলে আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন।
.
উনার ধমক খেয়ে ভয়ে চুপসে গেলাম আমি। শেষমেশ আর কোনো উপায় না পেয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কষ্ট করে একটু একটু করে চিবিয়ে খেতে লাগলাম।
উফফফ…..! পুরো ১৯ টা বছরের রেকর্ড ব্রেক করে দিলেন উনি আমার। যে কাজ আমার পরিবারের কেউ করতে পারলো না, তা আজ উনি করে দেখালেন।
একটু পরই নিত্য আপু দরজায় নক করে বাইরে থেকেই বলে উঠলো,
.
—- আসতে পারি?
.
নীবিড় ভাইয়া কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন,
—- আস্ক করে আসার কি আছে? চলে আয়।
.
নিত্য আপু ভেতরে এসে মুচকি হেসে জুসের গ্লাসটা টেবিলে রেখে দিলো।
—- বাব্বাহ! ভাইয়া তুই আমার ননদটাকে এতো সহজে খাইয়ে দিলি!
.
নীবিড় ভাইয়া ওমনি ভাব নিয়ে বলে উঠলেন,
—- নীবিড় পারেনা এমন কিছুই নেই।
.
নিত্য আপু মুখ বাঁকিয়ে নীবিড় ভাইয়ার নাক টেনে দিলো। এবার আমার ফুলিয়ে রাখা মুখের দিকে চেয়ে বলে উঠলো,
—- অনন্যা! তোমার ভালোর জন্যই এসব খাওয়ানো হচ্ছে পাখি! প্লিজ লক্ষ্মী মেয়ের মতো খেয়ে নাও।
.
বলেই আমার গাল টেনে দিয়ে চলে গেলো আপু।
আমায় ভাত খাওয়ানো হয়ে গেলে জুসের গ্লাস সামনে ধরে নীবিড় ভাইয়া বলে উঠলেন,
—- পুরো গ্লাস ফিনিশ করো ফাস্ট!
.
আমি আবারও অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম উনার দিকে। তাতে উনার বিন্দুমাত্রও ভ্রুক্ষেপ হলো না। উনি আগের মতোই চোখমুখ শক্ত করে আবারও আমায় জুসের গ্লাসের দিকে ইশারা করে খেতে বললেন।
আমি নাক মুখ সিটকে এক চুমুক খেয়েই ঠোঁট উল্টে বলে উঠলাম,
.
—- ভাইয়া…..! এটা তো ফ্রুটোর মতো খেতে না। আমি খাবো না।
.
ওমনি উনি ধমক মেরে বলে উঠলেন,
—- হ্যা তো, তোমার তো ওসব কুমড়োর ঝোলই ভালো লাগবে। ম্যাংগোর ফ্লেবারই শুধু দেয় ওরা। ফ্রুটস নাম মাত্রও দেয় না।
পুরোটা খেয়ে নাও নয়তো দুধ গরম দেওয়াই আছে। আজই ওটাও খাইয়ে দেবো।
.
আমি আর কিছু বললাম না দুধ আমার জাত শত্রু তাই আর উপায় না পেয়েই একটা ছন্নছাড়া বেড়ালের মতো লেজ গুটিয়ে জুসের গ্লাস ধীরে ধীরে শেষ করতে লাগলাম।
.
🍁
.
এক সপ্তাহ পর………..

আজ ছেলেপক্ষ আমায় দেখতে এসেছে বলে চুপচাপ ঘোমটা টেনে বসিয়ে রাখা হয়েছে আমায় তাদের সামনে। আমার পাশে আম্মু-আব্বু বসা।
বাম পাশে রুশো ভাইয়া অগ্নি ভাইয়া আর তার পাশে নিত্য আপু। নীবিড় ভাইয়া কিছুটা দূরে চেয়ার টেনে বসে আরাম করে গেমস খেলছেন। আর এদিকে আমার ঘাম ছুটে যাচ্ছে। হায় কি দূর্দিন এলো আমার!
আমার বরের সামনেই পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে আমায়। আর আমার শুধু নামের বর সাদা বিলাইয়ের তাতে কোনো যায়ই আসছেনা।
.
আমি এখনও তাদের কাউকেই দেখিনি। নিত্য আপু আমায় শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে এত্তোবড় ঘোমটা টেনে দিয়ে ধরে ধরে এনেছে।
কিন্তু পাশ থেকে রুশো ভাইয়ার ফিসফিসানো কথায় এটা বেশ বুঝতে পারছি ছেলে হয়তো চশমা পরে এসেছে।
.
—- হেই ব্রো, আমাদের সেকেন্ড দুলাভাই তো দেখি কান্টুস!
.
—- ওই “কান্টুস” আবার কি?
.
—- আরে ব্রো ডাবল ব্যাটারি বোঝোনা? ওই দেখো চোখে ইয়া মোটা ফ্রেমের চশমা। ব্যাটায় এখনই চোখের মাথা খেয়ে ফেলেছে। তাই কানার বদলে একটু স্টাইল করে “কান্টুস” বললাম আরকি।
.
.
.
চলবে…………..💕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here